somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কষ্ট মিশে শূন্যে- ( পর্ব-৩)

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রেশমাকে ইমারজেন্সেী ইউনিটে ভর্তি করানো হয়েছে। ডাক্তার রেশমাকে দেখছে। ভিতরে শুধুমাত্র রাহাতের বড় বোন আছে। আর সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে।গভীর উৎকণ্ঠা নিয়ে রাহাতের বাবা বার বার জানতে চাইছে যে ডাক্তার কি বলছে ? একটু পরে ডাক্তার জানালো যে রেশমা আর নেই। বাক্যটা শোনার সাথে সাথে রাহাতের মনে হলো পৃথিবীটা যেন দুলছে। রাহাত আর দাঁড়াতে পারছে না। বারান্দার ফ্লোরে বসে হাত দিয়ে চুল টেনে ধরে। কত আদরের বোন। পরিবারের কারো কাছেই কোন কিছুর জন্য কোন দিনই আবদার করে নাই। একারণে সবাই যে যার মত করে রেশমার জন্য কিছু নিয়ে যেত।লেখাপড়ায় খুবই ভাল ছিল। পরীক্ষায় প্রথম হয়েই নাইনে উঠে, কিন্তু শুধু ব্যারিস্টারী পড়ার ইচ্ছার কারণেই সাইন্স নেয় নাই। রেশমা বলতো ভাইয়া আমি অনেক পড়ালেখা করুম। খুবই ভালো একজন ব্যারিস্টার হমু। আমাকে তুমি বিলাত পাঠাইবা ভাইয়া। আমি বিলাত যাইয়া পড়ালেখা করমু। মাথা নেড়ে সায় দিত রাহাত। হুম তোরে বিলাত পাঠামু। পরিবারে একজন ব্যারেস্টার না হইলে চলে ! তুই হবি ব্যারিস্টার আর রিমন হইবো ডাক্তার- আর কি চাই। হঠাৎ বুকের ভেতর কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠে। রাহাত উঠে দাঁড়ায়। বাবার কাছে যায়। রাহাতের বাবা বুকে হাত দিয়ে বসে কান্না করছে। সব ব্যবস্থা শেষ করে রেশমার লাশ এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হয়।
:
পুকুর পাড়ের নীচে ফাঁকা জায়গাতেই রেশমার কবর দেয়া হয়েছে। আর কোন দিনও আসবে না রেশমা। সবাই জানাজা শেষ করে চলে যাচ্ছে। রাহাত আর রাহাতের ছোট ভাই রিমন কবরের কাছে দাঁড়ায়ে আছে। রিমন কান্না করছে। রাহাত রিমনকে জড়ায়ে ধরে। জোড় করে পুকুর ঘাটে নিয়ে আসে। একটা বেঞ্চে বসে। রিমনকে ডান হাত দিয়ে জড়ায়ে ধরে। হীম শীতল বাতাস ওদের ভেদ করে কত বার আসা যাওয়া করে তা ওরা বুজতেই পারে না।
:
বাড়ির ভিতর হতে মাঝে মাঝে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। রিমন বলছে ভাইয়া, জান ! রেশমা ওর বান্ধবীদের সাথে স্কুলে যাইতেছিল। বুলেট আর ওর বন্ধুরা রাস্তার ধারের শিমুল গাছের নীচে দাঁড়ায়ে ছিল। ওখান হতে রেশমাকে জোড় করে টেনে অটোতে তুলে। রেশমা সিএনজি হতে লাফ দেয়। পিছন দিক হতে ট্রাক আসতেছিল। আর ট্রাকটা আমাদের বেশমার উপর দিয়া উইঠা যায়। ট্রাকের চালক আর হেলপারকে জনতা ধইরা পিটায়ে তারপর পুলিশে দিছে। বুলেট ওর হুন্ডায় উইঠা পালাইতে চাইছিল। কিন্তু পারে নাই। জনতা ওরেও ধইরা থানায় দিয়া আইছে। রিমনের দুচোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে। রাহাতের চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। রাহাতের মনে হচ্ছে যে বুলেটকে এখন কাছে পেলে ওর দেহটা ছিন্নভিন্ন করতে ফেলতো। একটা সিগারেট ধরায়ে একটা টান দেয়। ছোট ভাই বলে, ভাইয়া তুমি অন্তত আজকে সিগারেট খাইয়ো না। এটা এখন ফালাইয়া দাও। রাহাতের মা ওদের দুজনের কাছে আসে। রাহাত সিগারেট দূরে ফেলে দেয়। রাহাতের মা দুই সন্তানকে জড়ায়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
:
ভোরের আলো এখনো ভালোভাবে ফুটেনি। দূর প্রান্তে আকাশ জুড়ে লাল আভা ছড়িয়ে আছে। রাহাত বিছানা ছেড়ে বালিশের নীচ হতে সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার নিয়ে পুকুর ঘাটের আম গাছের নীচে দাঁড়ালো। হিম শীতল বায়ু রাহাতের মুখে এসে লাগছে। সে ভাবতে থাকে জীবন কেন এত ছোট ! রেশমা কত আদরের, কত আশা ছিল ওকে নিয়ে। দুই ভাইয়রে কত যত্ন করতো এই পুচকে মেয়েটা। কে এখন এই যত্ন করবে-এত মমতা মাখা ভাইয়া বলে ডাক দিবে ! কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচেই চিরশায়িত হয়েছে তারই বোন। দেখতে দেখতে সাত দিন হয়ে গেল। কেনরে চলে গেলি পাগলি! নিজের অজান্তেই বলে ওঠে, বুলেট তোর সাচ্চা বিচার যদি না হয়, আমি রাহাত তোর মুন্ডটা দেহ থিকা ফালাইয়া দিমু-। একটা সিগারেট ধরায়, জোড়ে জোড়ে টান দেয়, এক জায়গায় দাঁড়িয়েই পাঁচটি সিগারেট সাবাড় করে ফেলে।
পিছন দিক হতে একজন নারীকণ্ঠ রাহাতের ভাবনার জগতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রাহাত ভাই ! আপনি এত সিগারেট খান কেন ! এত সিগারেট খাওয়া কি ভালো রাহত ভাই ?
রাহাত ঐ নারীর দিকে ফিরে তাকায়। একহারা গড়ন, একটু খাট, গায়ের রং ফর্সা, ডাগড় নয়নে মেয়েটি রাহাতের দিকে তাকায়ে আছে।
মেয়েটি খুবই দ্রুত আবার কথা বলে উঠে, আমি আপনাগো টিউবওয়েল থিকা পানি নেওনের জন্য আইছিলাম। দেখি আপনি একটার পর পর একটা সিগারেট খাইতেছেন। কেন এত সিগারেট খান?
এবার রাহাত বলে, আমার কাজের জন্য আমি কারো কাছে কৈফত দেই না। তুমি এবার আস। মেয়েটি আবারো কথা বলে, শুনেন, রেশমা আমার ছোট বোনের সাথে পড়তো, এটা তো আপনি জানেন। ওর জন্য আমারো খুবই কষ্ট হইতেছে। আল্লাহ রেশমারে জান্নাতবাসী করুন।
রাহাত এবার মেয়েটি নাম ধরে বলে, বীনা তুমি এখন আসতে পারো। আমার এখন কথা কইতে ভাল্লাগতেছে না।
বীনা মাথা নেড়ে পানির জগ হাতে নিয়ে দ্রুত হাটতে থাকে।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। রাহাত পুকুরের চালা দিয়ে পায়চারি করতে থাকে। আর পনের দিন পর হতেই পরীক্ষা শুরু। রাহাত ভাবতে থাকে-কি হবে পরীক্ষা দিয়ে! পায়ের নীচের ইটের টুকরা লাত্থি দিয়ে দূরে ফেলে দেয়। দূরে বিলের সবুজে রাহাতের দৃষ্টি মিশে যায়-মনে হয় নীলা সবুজ শাড়ি পরে তার দিকেই যেন এগিয়ে আসছে।
:
-- চলবে--
:
নোট: আপনাদের যে কোন ইতিবাচক পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা হবে।
:
আগের পর্বসমূহের লিংক
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-১)
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-২)
:
লায়লা
২৮ জানুয়ারী,২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:২২
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×