বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাবটি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই নিবন্ধে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংসদীয় পদ্ধতির বৈচিত্র্য এবং বাংলাদেশের বর্তমান সংসদীয় ব্যবস্থার সাথে এর তুলনা করব। বিশেষ করে, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুবিধা ও অসুবিধা, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন এবং আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংসদীয় পদ্ধতি:
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এককক্ষবিশিষ্ট সংসদ রয়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ইত্যাদি দেশে এককক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা প্রচলিত। তবে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ কিছু দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ রয়েছে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে সাধারণত একটি নির্বাচিত নিম্নকক্ষ এবং একটি নিয়োগপ্রাপ্ত বা আংশিকভাবে নির্বাচিত উচ্চকক্ষ থাকে।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুবিধা:
* বিচক্ষণতা: দুটি কক্ষের মধ্যে আলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া আরও বিচক্ষণ ও সুসংহত হয়।
* প্রতিনিধিত্ব: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকে আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করতে পারে।
* সমীক্ষা ও ভারসাম্য: উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষের আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার উপর একটি সমীক্ষার ভূমিকা পালন করে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সহায়তা করে।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের অসুবিধা:
* ধীরগতি: দুটি কক্ষের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টিতে সময় লাগতে পারে, ফলে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া ধীরগতি হতে পারে।
* দ্বন্দ্ব: দুটি কক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে এবং ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন হতে পারে।
* অতিরিক্ত ব্যয়: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত ব্যয় হয়।
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন পদ্ধতি:
বাংলাদেশে এককক্ষবিশিষ্ট সংসদ রয়েছে। নির্বাচন প্রধানত প্রথম অতীত পদ্ধতিতে হয়। সংসদের ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। নারীরা নির্বাচিত হন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নের মাধ্যমে।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ও আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি:
বাংলাদেশের প্রস্তাবিত দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং তারা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। উচ্চকক্ষে আসন থাকবে ১০৫টি এবং নির্বাচন হবে আনুপাতিক পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতি নারীদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করতে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সহায়তা করতে পারে।
সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করা জরুরি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুবিধা ও অসুবিধা, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন এবং আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।