somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“ছয় বছরের প্রতীক্ষা শেষে ফিরে এলেন আরিফ—মরুভূমি পেরিয়ে স্বপ্ন ফিরল তার বাড়ি, সুমি আর ছোট্ট আয়রার বুকে।”

আরিফের চোখে ক্লান্তির ছাপ। মরুভূমির তপ্ত বালিতে দিনের পর দিন কাজ করতে করতে শরীরটাই যেন ধুঁকতে ধুঁকতে বুজে যাচ্ছে। দুবাইয়ের নির্মাণ সাইটে হাজারো শ্রমিকের মাঝে সে নিজেকে একাকার মনে করে, কিন্তু মনে মনে একটাই আশার আলো—সে বাড়ি ফিরবে। একদিন সে সুমিকে জানাবে, তাদের ছোট্ট পৃথিবী আবার এক হবে। আয়রা, তার ছোট্ট মেয়ে, যাকে সে কখনও হাতেও ধরতে পারেনি, তার মুখ দেখতে পাবার স্বপ্ন।

ছয় বছর হয়ে গেছে, সুমি আর আয়রা একা। সুমি মা হিসেবে যুদ্ধ করে গেছে, এক হাতে সংসার সামলেছে, আরেক হাতে সন্তানকে বড় করেছে। কিন্তু গ্রামে লোকজনের কটূক্তি, প্রতিবেশীদের উক্তি তাকে কষ্ট দিত। “স্বামী বিদেশে, তুই একাই মেয়ে বড় করছিস?”—এগুলো ছিল তার প্রতিদিনের সংগ্রাম।

তবে আয়রার মনস্তত্ত্ব ছিল আরও জটিল। পাঁচ বছর বয়সী মেয়েটি বারবার মায়ের কাছে প্রশ্ন করতো, "বাবা কোথায়, মা?" তার মনে এই প্রশ্ন ছিল—একদিন কি বাবাকে দেখা যাবে? সেই শিশুটির হৃদয়ে ছিল মিশ্র অনুভূতি—অপেক্ষা, একাকীত্ব, আর ধীরে ধীরে বাবার অভাব।

আরিফ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল, দেশে ফিরলে আর কখনও বিদেশে যাবে না। কিন্তু অভাব আর সংসারের চাহিদা তাকে বাধ্য করেছিল আরও কিছু সময় সেখানে থাকতে। একদিন তার দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হয়। সে শিডিউল নিয়ে প্রস্তুত হলো, কিন্তু একটি অদ্ভুত দ্বিধা তার মনে জায়গা নিল—সুমি কি জানবে? না, সে কি জানত আরিফ ফিরে আসবে?

আরিফের মন আজ অস্থির, কিছুটা শঙ্কিত। সে জানত না সুমি কতটা প্রস্তুত। সে চুপচাপ গ্রামের পথে পা বাড়ায়, সেই পথ যা সে বহু বছর আগে ত্যাগ করেছিল। পথে ধীরেধীরে পেরিয়ে যায় একের পর এক স্মৃতির পাহাড়। সেই পুরনো টং দোকান, যেখানে একসাথে বসে চা খেত, সেই নদীর পাশ দিয়ে হাঁটার সময়ের চেনা গন্ধ—সব কিছু যেন তার দিকে তাকিয়ে ছিল। একে একে স্মৃতিগুলো চোখে ভাসে। কখনোই এত দীর্ঘ সময় এভাবে বাইরে থাকার অভিজ্ঞতা হয়নি তার। কিন্তু আজ তাকে ফিরতেই হবে। ফিরে আসতেই হবে।

সুমি তখন বাড়ির উঠোনে, আয়রাকে বুকে আঁকড়ে ধরে গোসলের কাপড় ধোয়ার কাজ করছিল। তবুও, তার মন ছিল দূরে, স্বপ্নে। সে জানত না তার স্বামী ফেরত আসবে, আর যদি আসে, কীভাবে সে তার সঙ্গে মিলে এক নতুন জীবন শুরু করবে। এমন সময় সুমির পেছন থেকে এক সশব্দে তার স্বামীর কণ্ঠ শোনা যায়, "ফিরেছি... স্থায়ীভাবে।"

সুমি হঠাৎ চমকে ওঠে, তার শরীরে যেন বিদ্যুৎ চলে আসে। সে মুহূর্তেই পিছনে ফিরে তাকায়, এবং দেখল আরিফ তার সামনে দাঁড়িয়ে। অনেকটা সময় সে কেবল তাকিয়ে রইল, তারপর হঠাৎ সে আরিফকে জড়িয়ে ধরে, অশ্রু বিসর্জন দিয়ে ফুঁপিয়ে উঠল। সমস্ত দুঃখ-কষ্ট, অভিমান, আর অপেক্ষার শেষ যেন সেই মুহূর্তে আছড়ে পড়ল।

ঠিক তখনই, আয়রা ছোট্ট পায়ের শব্দ নিয়ে আসে। সে তার মায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়ে দেখে, মা আর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।

আয়রা কিছুটা বিভ্রান্ত, কিছুটা অবাক, সে তো বাবা সম্পর্কে কিছুই জানতো না। মা যখন তাকে বাবার দিকে ইশারা করল, আয়রা ছোট্ট হাতটা বাড়িয়ে দেয়। তার বাবা তাকে কোলে তুলে নেয়। সে আনন্দিত। সেই ক্ষণটি যেন আরিফের জীবনের সবচেয়ে পূর্ণতম মুহূর্ত ছিল।

আরিফ, সুমি, এবং আয়রা—তিনজন একে অপরকে জড়িয়ে থাকে। আরিফের চোখে অশ্রু ছিল না, কিন্তু তার হৃদয়ে ছিল এক অদ্ভুত শান্তি। সে জানত, এই পৃথিবীটা এখন পূর্ণতা পেয়েছে। তার স্বপ্ন, সুমির অপেক্ষা, আয়রার অবাধ আনন্দ—সব কিছু এক হয়ে গেছে।
"এবার আর কখনও বিদেশে যাব না," মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল আরিফ। জীবনটা সে এখন নিজের দেশে, নিজের পরিবারের সঙ্গে কাটাবে।

এটি ছিল সেই সময়, যখন "স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার"—এবং এক নতুন পৃথিবী তাদের অপেক্ষায় ছিল।

স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার—অবশেষে এক নতুন ভোরের শুরু।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×