somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শনিবার সন্ধ্যা (আমি তোমার কথা বলবো কাকে !)

০৩ রা জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব

এটা একটি অমিথ্যা গল্প। জীবিত অথবা মৃত কারো সাথে মিলে গেলে লেখক স্বয়ং দায়ী। উপযুক্ত প্রমান দিয়ে ক্ষতি পূরন আদায় করতে পারেন !

আমার বিয়ে হয়ে গেছে অর্ণব। তুই খুশি হয়েছিস? অবন্তী ফোন করে অর্ণবকে বললো । আমার নিজের বিয়ে হলেও এতো খুসি হতাম না। অভিনন্দন !অর্ণব বললো। তোর ঘাড়ে কি আমি সিন্দাবাদের ভুতের মতো চেপে ছিলাম। অবন্তি হাসতে হাসতে বললো। আমি সিন্দাবাদ না আর তুইও ভূত্নি না। ভুত্নি বলে কোন শব্দ নাই। পেত্নী বলতে পারতি। অবন্তী বললো। শোন, শব্দ থাকে না, আবিস্কার করতে হয়। অর্ণব বললো। থাক আমার কলম্বাস, তোর আর কিছু আবিস্কার করা লাগবে না। তোর কলম্বাস ! অর্ণব মুচকি হেসে বললো। আচ্ছা রাখিরে বর ফোন দিচ্ছে। অবন্তী ফোন রাখার জন্য ব্যাস্ত হয়ে গেলো। আচ্ছা রাখ, দেখ সে আবার কি আবিস্কার করতে চাই, তুই তো অজানা দ্বীপ এখনো। অর্ণব বললো। মার খাবি, বদ লোক ! অবন্তী ফোন রেখে দিলো।
অবন্তি অর্ণবের প্রাইমারী স্কুলের বন্ধু। অর্ণবের এখনো মনে আছে একটা মেয়ে বিড়াল মার্কা লাল প্যান্ট আর সাদা ফ্রক পড়ে বেনী দুলিয়ে স্কুলে আসতো। ওর ছিল হরিন কালো চোখ। প্রাইমারী স্কুলের পূর্ব দিক দিয়ে লম্বা ক্যানাল চলে গিয়েছিল । সেই ক্যানালের এক পাশে ছিল ওদের সাদা কালো টিভি ওয়ালা বাড়ী। অর্ণব প্রতি শুক্রবারে সিনেমা দেখার জন্য ওদের বাড়িতে যে্তো। সাবানার কান্না দেখে চোখ মুছতে মুছতে অর্ণবের চোখ চলে যেত ওদের বাড়ির দেয়ালে । সেখানে ফিডার মুখে দেয়া একটা বাচ্চার বড় পোস্টার টাংগানো থাকতো। অর্ণব ভাবতো এটা অবন্তীদের ছোট ভাই। বাচ্চা চোরদের ভয়ে কোথাও লুকিয়ে রেখেছে। এই সব বোকা বোকা চিন্তা করতে করতে অর্ণবের চোখ পড়তো শ্রাবন্তি আপার দিকে। অবন্তীর বড় বোন । তার ছিল খুনি চোখ। সিনেমা দেখতে যাওয়া ছাড়াও অর্ণব মাঝে মাঝে খুন হতে যেতো অবন্তীদের বাড়ি।
প্রাইমারী স্কুল ছাড়ার পর অবন্তীর সাথে অর্ণবের আর দেখা হয় নাই। একটা সাদা ফ্রক পড়া মেয়ে কতবড় হয়েছে অর্ণবের কখনো মনে পড়ে নাই। কয়েক বছর আগে ফেইসবুক স্ক্রল করতে করতে একটা লেখায় চোখ আটকে যায়। যতদুর মনে পড়ে অর্ণবের । সেখানে একটা মেয়ে লিখছে, " কোন এক বর্ষার সন্ধায় সে গেছে বাজারে। আলু ,পটল, ঢেড়শ, মুলার দাম মুলামুলি করে সে যখন বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছে তখন পেছন থকে এক অচেনা যুবক এক টুকরো কাগজ তার হাতের ভেতর গুজে দিয়ে ভোজবাজির মতো উধাও হয়ে যায়। সেই কাগজে লেখা ছিল, কোন এক বর্ষার রাতে , অবিরত বৃষ্টির শব্দে যদি কখনো একা একা লাগে তাহলে আপনি আমার সাথে কথা বলতে পারেন, যদি কোন খা খা দুপুরে কোন অজানা কারনে মন আনচান করে তাহলেও আপনি এই অজানা মানুষের সাথে কথা বলতে পারেন। আপনার কথা শোনার জন্য আমি কান পেতে রই । এইটা আমার নাম্বার। মেয়েটি নিতান্ত অবহেলায় সেই কাগজটা রাস্তাই ফেলে দিলো। সেই রাতে আকাশ ভেংগে বৃষ্টি নামলো। মেয়েটার সেই কাগজটার জন্য মন খারাপ হয়ে গেলো। সেই ভাবতে থাকলো, কাগজটা কি ভিজে চুপসে গেছে, নাকি বৃষ্টির তোড়ে ভেসে গেছে, লেখাগুলো কি ক্ষয়ে গেছে বৃষ্টির ঝাপটাই। মেয়েটা কাগজের কথা ভেবে সারা রাত জেগে কাটিয়ে দিলো ।"
অর্ণব এই পর্যন্ত পড়ে দেখলো সেই রাত জাগা মেয়ের নাম অবন্তী। সে ছোট কালে বিড়াল মার্কা লাল হাফ প্যান্ট পড়তো।
অবন্তী আর অর্ণবের কথা হতে থাকলো। ছোট বেলার নানা ছোট ছোট কথা । তাদের বড় হয়ে যাওয়ার গল্প। প্রেম এবং বিরহ এর গল্প।
একসময় দুজনে আবিস্কার করলো তার প্রেমে পড়ে গেছে। একটা মানুষকে যতটুকু ভালোবাসা যায় ঠিক ততটুকু অথবা তার চেয়ে বেশি অর্নবকে অবন্তী ভালোবেসিছিল। অবন্তীর মুহুর্ত জুড়ে অর্ণবের বিচরন ছিলো সারাক্ষন। অর্ণব ছিল ঘুমকাতুরে। সকালে অবন্তী ফোন করে বলতো, এই যে কুম্ভকর্ণ ওঠো। তুমি যদি না ওঠো ক্যামনে সকাল হবে। কেমন করে যেন তার তুই থেকে তুমিতে চলে এসেছিলো। তুমি বলতে লজ্জাও করতো । কিন্তু তুই আর তারা বলতে পারতো না। সবকিছু ঠিক ঠাক ছিল। কিন্তু অর্ণবের মনের ভেতর কোথায় যেন দ্বীধা কাজ করতো। সে ভাবতো এখন যদি জোহরার দেখা পেয়ে যায় তাহলে সবকিছু তুচ্ছ করে তার জোহরার কাছে নিজেকে সপে দিতে হবে। দুনিয়ার কোন কিছু তাকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। অর্ণব ক্রামাগত নিজের সাথে যুদ্ধ করছিলো আর বারে বারে জোহরার কাছে হেরে যাচ্ছিলো। একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে অর্ণব ফোন দেই অবন্তীকে। বলে তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। অবন্তী ওপাশ থেকে বলে, তুমি আমাকে তুই করে বলছো কেন। কি হয়েছে তোমার । অর্ণব বলে আমার কিছুই হয় নি।দেখ আমি ভুল করে ফেলেছি। তোর সাথে সম্পর্কে জড়ানো আমার ঠিক হয় নাই। আমি তোর সাথে কোন ভাবে অভিনয় করতে পারবো না। তুই আমাকে মাফ করে দে।
সে দিন রাতে অবন্তি এমন ভাবে কাদলো যেন ওর প্রিয়জন মারা গেছে। অর্ণব বন্ধু হিসাবে যতটুকু সময় দেয়ার দিয়েছে অবন্তীকে। অবন্তী যদি অর্ণবের বাসার সামনে এসে বলতো , একটু নিচে নামবে প্লিজ। অর্ণব শত কাজ ফেলে নামতো। অর্ণবের পাশে অবন্তী ঘন্টার পর ঘন্টা চুপচাপ বসে থাকতো । কথা বলতো না। এক সময় উঠে চলে যেতো।
অর্ণব ভেবেছিলো সবকিছি ঠিক হয়ে গেছে। একদিন রাতে অবন্তী ফোন করে অর্ণবকে বলে , তুই আমাকে বিয়ে কর প্লিজ। একদিনের জন্য হলেও কর। আমি শুধু একদিন তোর বউ হবো। সেদিন অর্ণব জোহরার কথা অবন্তীকে বলে। বলে যে, একটা মেয়ের জন্য আমি অনেক বছর অপেক্ষা করছি। আমি জানিনা সে কোথায় আছে। আদৌ তার সাথে আমার দেখা হবে কিনা। দেখা হলে সে আমাকে চিনবে কিনা অথবা ভালোবাসবে কিনা । আমি কিছুই জানিনা। কিন্তু আমি চাতক পুরুষ। আমি বৃষ্টির জল ছাড়া আর কোন জলেই আমার তৃষ্ণা মেটাবো না। তার পরে অবন্তী আর ফোন করে নি অর্ণবকে।
এই সেদিন বিয়ের খবর দেয়ার পর অর্ণব কি মনে করে অবন্তীকে ফোন করে বললো, আমি জোহরাকে পেয়েছি।
অবন্তি বললো, সত্যি সত্যি পেয়েছিস না শুধু দেখা পেয়েছিস। অর্ণব দ্বীর্ঘশ্বাস চেপে রেখে বললো, শুধু দেখা পেয়েছি। অবন্তী বললো, সাথে সাথে থাকিস, আর হারিয়ে যেতে দিস না। অর্ণব বললো, এতগুলো বছর তো সাথে সাথেই ছিলাম । শুধু সে জানেনা।

আমি থাকি তোমার প্রহরী।
তোমাকে যখন দেখি, তার চেয়ে বেশি দেখি
যখন দেখি না
শুকনো ফুলের মালা যে-রকম বলে দেয়
সে এসেছে
চড়ুই পাখিরা জানে
আমি কার প্রতিক্ষায় বসে আছি
এলাচের দানা জানে
কার ঠোঁট গন্ধময় হবে-

- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়---জাগরণ হেমবর্ণ





সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৯ সকাল ১০:৪০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×