somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কালোই সুন্দর : কালো মেয়েদের পক্ষে অভিনব আন্দোলন

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আপনি একজন ভালো পাত্র খুঁজছেন, বন্ধুত্ব করতে চান, কর্মক্ষেত্রে নিজেকে সাবলীলভাবে এগিয়ে নিতে চান? তাহলে আপনার প্রথম যোগ্যতাই হচ্ছে আপনাকে ফর্সা হতে হবে। আশ্চর্যের বিষয় হলেও এটাই সত্যি যে, গোটা ভারতের বর্তমান চিত্রই এটা। শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশেও একই পরিস্থিতি। আর এই চিত্রকে পাল্টে দেয়ার জন্য ভারতীয় অভিনেত্রী নন্দিতা দাশ শুরু করেছেন এক অভিনব লড়াই।
নন্দিতা দাশ সম্প্রতি 'কালোই সুন্দর' শিরোনামে একটি পোস্টার ছাপিয়েছেন। কালো আর ফসার্র প্রতি বদ্ধমূল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার আহবান সম্বলিত এই পোস্টার ভারতের সর্বত্র সেঁটে দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি ব্যাপকভাবে প্রচারভিযান শুরু করেছেন। তিনি মনে করেন, গায়ের রং নিয়ে হীনমন্ম্যতার কারণে অনেক মেয়ে আত্মহত্যার মতো কাজে প্ররোচিত হচ্ছে।
নন্দিতা বলেন, ম্যাগাজিন, টেলিভিশন, সবখানেই প্রচার করা হচ্ছে ফর্সা মুখ মানেই সুন্দরী। এখানে সৌন্দর্যকে এমনভাবে উপস্হাপন করা হচ্ছে যেন, ফর্সার বিপরীত শব্দ 'কালো'। অর্থাত্‍ সৌন্দর্য এবং কালো পরস্পর বিপরীত শব্দ। দেখা যাচ্ছে, একজন নারী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বয়স ৪৩ হলেও জায়গা করে নিতে পারেন শুধু মাত্র ফর্সা গায়ের রঙের কারণে। শরীরের রঙের কারনে অন্যান্য যোগ্যতা গৌন হয়ে যায়।
রঙ কালো হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে আত্মবিশ্বাসী থাকবেন? নন্দিতা সব জায়গাতেই এই প্রশ্নটির উত্তর তুলে ধরেন। দেখা যায়, কালো রঙের মেয়েরা বিষয় ভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলোতে অগতানুগতিক ও শুধু চরিত্রের প্রয়োজনে কাজ করার সুযোগ পায়। ধরা হয় এগুলোতেই তারা মানানসই। কিন্তু মূলধারার বলিউডি চলচ্চিত্রে কাজ করতে হলে তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।
'রঙের উর্ধ্বে সৌন্দর্য'
নন্দিতা দাশ ২০০৯ সালের মে মাসে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং এই সংগঠন থেকে 'কালো মুখই সুন্দর' শীর্ষক প্রচারণা শুরু করেন। 'রঙের উর্ধ্বে সৌন্দর্য' এই স্লোগান নিয়ে তারা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও সক্ষম হয়েছে। ফর্সা ত্বকের প্রতি বদ্ধমূল আগ্রহ বিলোপ করার জন্য এতে সমাজের উঁচু শ্রেণীকে সম্পৃক্ত করার প্রয়াস চালান তিনি।
নন্দিতা বলেন, সম্প্রতি আমার কাছে হাজার হাজার তরুণীর হৃদয় নিংড়ানো মেইল আসতে শরু করেছে। তারা প্রত্যেকেই জানতে চায়, এই বর্ণবৈষম্য থেকে কিভাবে তারা পরিত্রাণ পেতে পারেন। অনেকে সুস্পষ্টভাবে আত্মহত্যার শপথ করে মেইল পাঠিয়েছে এবং এর কারণ হিসেবে তারা আক্ষেপের সাথে জানিয়েছে তারা ফর্সা নয়।
পত্র-পত্রিকায় নন্দিতা তার নিজের ছবিই প্রচারণার জন্য ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। তিনি সামনের সকল প্রচারভিযানেও এটা চালিয়ে যেতে চান । তিনি কালো হলেও বলেন, 'এটা উজ্জ্বল শ্যামল, এটাই সুন্দর'
ইউরো মনিটর ইন্টারন্যাশনালের এক বাজার সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে গত চারবছরে ভারতের রং ফর্সাকারী ক্রিমের বাজার ৩৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৬৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গতবছর সৌন্দর্য বর্ধনকারী প্রসাধনের মধ্যে শতকরা ৮৪ ভাগই ছিল রঙ ফর্সাকারী ক্রিম।
সম্প্রতি ভারতীয় বংশোদ্ভূদ মেয়ে নিনা দালুভারি 'মিস আমেরিকা' নির্বাচিত হওয়ার পর ভারতে বৈষম্যের শিকার কালো গাত্রবর্ণের মেয়েরা নতুন করে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেন। কারন নিনা দালুভারি একজন কালো গাত্রবর্ণের মেয়ে।
এই ব্যাপারে দ্য হিন্দু পত্রিকায় একটা সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে নিনা যদি ভারতীয় সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠতেন আর ভারতে এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন তাহলে কালো গাত্রবর্ণের কারণে অবশ্যই তাকে উপেক্ষিত হতে হত। এমনকি তীর্যক মন্তব্যও শুনতে হত।
নন্দিতা এখন বাজারে প্রচলিত বেশ কয়েক ধরনের রঙ ফর্সাকারী ক্রিমের বিজ্ঞাপনচিত্রের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
গতবছর দেখা গেছে বাজারে এসেছে নিম্নাঙ্গ ফর্সাকারী ক্রিম। বিজ্ঞাপনচিত্রে দেখা যায়, তরুণীরা ক্রিম ব্যবহার করে নিম্নাঙ্গ ফর্সা করছে। আর এর ফলে প্রেমিকের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন এখন অহরহ চোখে পড়ছে। বিয়ে ও সমন্ধ তৈরিতে সহায়তাকারী ওয়েবসাইট ও পত্রিকায় নারীদের ফর্সা, সুন্দর মুখচ্ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে। সর্বোপরি এ কথা প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে যে 'একটি সুন্দর মুখ'ই স্বামীকে ধরে রাখতে পারে।' মাঝে মাঝে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছেলেরা পাত্রীর জন্য সরাসরি ফর্সা মেয়েই চেয়ে বসছে। যথারীতি মেয়েরা তাদের কাছে নিজেদের উপস্হাপন করছে এবং যে মেয়েরা তুলনামূলকভাবে উজ্জ্বল ফর্সা তারাই এগিয়ে যাচ্ছে।
মুম্বাইয়ের বিয়ের পোশাক ডিজাইনার একতা ঘোষ জানান, পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবেই ছেলেরা এখন ফর্সা মেয়েই কামনা করে। তিনি বলেন, এ কথা ভেবেই বাবা-মা আত্মীয়স্বজন মেয়েদের মুখ উজ্জ্বল করার তাগিদ দেন।
ভারতের খোলাবাজারে রং ফর্সা করা ক্রিমগুলোর পথিকৃত্‍ ফেয়ার এন্ড লাভলি ১৯৭৫ সালে নিয়ে আসে হিন্দুস্তান লিভার। এই ক্রিম এখন বিবর্ণ মুখে মুখশ্রী ফিরিয়ে আনার প্রচারণা চালিয়ে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে বিক্রির তালিকায় শীর্ষে চলে এসেছে। আরেকটি ভারতীয় ভোগ্যপণ্য কোম্পানি অনেক পরে মেয়েদের জন্য 'ফেয়ার এন্ড টিন' এবং ছেলেদের জন্য 'ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম' দুটি রঙ ফর্সাকারী বাজারে নিয়ে আসে। এই পন্যকে বলিউড অভিনেতা শাহরুখ বিজ্ঞাপনচিত্রের মাধ্যমে সকলের নিকট পরিচিত করে তোলেন। তার সর্বশেষ বিজ্ঞাপনচিত্রটি ছিল এমন- শাহরুখ খান লালগালিচায় হেঁটে যেতে যেতে ক্রিমটি আলতো তার এক মেয়ে ভক্তের দিকে ছুঁড়ে দেন।
এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে নন্দিতা দাশের 'কালোই সুন্দর' গোষ্ঠী প্রতিবাদ জানায়। এ জন্য তারা গণস্বাক্ষর কার্যক্রম শুরু করেন। এই কর্মসূচিতে ১৫ হাজারেরও মানুষ সাক্ষর করেছেন। কিন্তু শাহরুখ এ ব্যাপারে সাড়া দেননি। নন্দিতা বলেন, মানুষকে এসব বোঝানোই যথেষ্ঠ নয়। রঙ ফর্সাকারী ক্রিম একজন মানুষের জন্য লজ্জাজনকও বটে।
রঙ ফর্সাকারী ক্রিম উত্‍পাদনকারীরা পরামর্শ দেন যে, উঠতি বয়সীদের এটা আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। কিন্তু ইমামি এবং হিন্দুস্তান লিভার কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজী হয়নি।
ভারতের একটি প্রতিষ্ঠানে রিসেপশনিস্ট হিসেবে কর্মরত প্রাচী চৌহান বলেন, গত তিনবছর ধরে তিনি ফেয়ার এন্ড লাভলি ব্যবহার করে আসছেন যা তার নিত্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি উল্লেখযোগ্য কোনো পরির্বতন দেখতে পান নি। তিনি বলেন, এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই ঠিক কিন্তু এর কোনো কার্যকারিতাও নেই।
নন্দিতা বিশ্বাস করেন, রঙ ফর্সাকারী কোম্পানিগুলো ভারতে বর্ণবৈষম্য ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ হতে চায় না। কিন্তু এটা না চাইলেও হচ্ছে। কলংকজনক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।
এই অভিনেত্রী বলেন, একদিক থেকে যেমন পুরুষের ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধনীগুলো বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে, অপরদিকে নারীরা তাদের গায়ের রং নিয়ে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। যেটাকে তারা অসম্মান এবং অসমতার প্রতীক বলেই মনে করেন।
যতক্ষণ আমরা নারীদের সমকক্ষ ভাবতে পারবো না, নারীদের মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে পারবো না ততদিন এই বৈষম্য চলতেই থাকবে। -

হয়তো ইতোমধ্যে অনেকেই পড়েছেন এখান থেকে


কালোই সুন্দর : কালো মেয়েদের পক্ষে অভিনব আন্দোলন
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×