somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিনয় মজুমদার : শয়ন ভঙ্গির মতো স্বাভাবিক, সহজ জীবন

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ ভোর ৪:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিনয় মজুমদারকে নিয়ে একটা লেখা লিখছিলাম। আকারে ছোট সেই লেখাটি পোস্ট করলাম।
11 ডিসেম্বর কলকাতা থেকে দূরে ঠাকুরনগরের শিমুলপুরে মারা গেলেন কবি বিনয় মজুমদার। 72 বছর বয়সে মৃতু্য হয়তো আশ্চর্য কোনো সংবাদ নয়। বরং তার মতো কবি এতোদিন বেচে ছিলেন এটাই আশ্চর্য এক ঘটনা। চাল নেই চুলো নেই, প্রতিষ্ঠা নেই প্রতিষ্ঠান নেই, আত্মীয়-পরিজন নেই, পরিবার সংসার নেই। তবু কয়েকটি পলকা কবিতার বই লিখে তিনি বেচে ছিলেন অবাক 72 বছর; খানিকটা বিস্মৃত খানিকটা অবিস্মৃত থেকে, খানিকটা প্রকৃতিস্থ খানিকটা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায়, সুস্থতা ও অসুস্থতার দোলাচলে। তিনি ছিলেন আজীবন প্রেমিক, তবু আজীবন অকৃতদার। প্রেমে পড়েছিলেন এখনকার তুখোড় তাত্তি্বক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের। তখনকার গায়ত্রী চক্রবর্তীর সঙ্গে বিনয়ের দেখাসাক্ষাতের কিছু আলামত পাওয়া গেলেও, ভাব বিনিময়ের তেমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবু বিনয়ের অধিকাংশ কবিতা সেই চক্রবর্তী বা চাকাকে লক্ষ্য করে রচিত। এই রহস্যময় প্রেমকে কেন্দ্র করে রচিত ফিরে এসো চাকা বইটি বাংলা কবিতার জগতে যতো গুঞ্জনের জন্ম দিয়েছে আর কোনো একক বই ততোটা পারেনি। গায়ত্রীর প্রতি বিনয়ের রহস্যময় প্রেমই আধুনিক বাংলা কবিতার জগতে একমাত্র অমর প্রেমগাথা।
বিনয় 1957 সালে কলকাতার বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়েছিলেন। গণিতের প্রতি প্রচ- অনুরাগ ছিল। কখনো তার কবিতাও হয়ে উঠেছে গণিতময়। একটি বইয়ের নাম দিয়েছিলেন আমিই গণিতের শূন্য। তার কবিতা, ডায়েরি ও গদ্য এক ধরনের সরল উন্মাদনাকে ধারণ করেছে। খানিকটা বিস্রসত্দ ভঙ্গিমার বর্ণনাগুলো অন্তঃশীল ও অনর্গত সুরে আচ্ছন্ন। প্রেম ও গণিতের বাইরে আর একটি বিষয়কে তার কবিতার মৌল সুর বলে চিহ্নিত করা যায়। সেটি যৌনতা। অঘ্রাণের অনুভূতিমালা বইয়ের দীর্ঘ কবিতাগুলোতে তিনি যৌনতার রম্নদ্ধশ্বাস কিন্তু নিরাসক্ত বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু তারই ভুট্টা সিরিজের কবিতাগুলোতে যৌনতার আসক্ত বর্ণনা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী বাংলা কবিতায় আধুনিক চেতনার যে বিপুল উত্থান ঘটেছিল, তাকে ব্যাপকভাবে ধারণ করেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। পরবর্তী কালের কবিতা ও কবিদের ওপর জীবনানন্দের প্রভাবের বিষয়টি এখন সাহিত্যের ইতিহাসের বিশেষ পর্যবেক্ষণের বিষয়। বিনয় মজুমদার সে অর্থে জীবনানন্দ বলয়েরই কবি। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের রক্তাক্ত কঠিন পৃথিবী যে কবিদের ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়েছে তাদের মধ্যে হয়তো বিনয় একজন। হয়তো বলছি এ কারণে যে, বিনয় কখনোই উচ্চকিত হননি। বাচনভঙ্গিতে কোথাও প্রচণ্ড সরব হয়ে প্রচুর কেজো কথা বলে ওঠেননি। বরং সব সময়ই তিনি থেকেছেন একানত্দ ইট্রোভার্ট হয়ে। এমনকি সত্তরের দশকের অগি্নময়তাও তাকে খুব একটা নাড়াতে পারেনি। কিন্তু সময় তার ছাপ রেখে যাবেই। বিনয়ের জীবনে সময় এক তীব্র রেখা একে রেখে গেছে। বেশ কয়েক দফা তিনি পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। তাকে পাগলাগারদেও যেতে হয়েছিল। এমনি এক পাগলাগারদেই তার সময়ের আরেক প্রতিভাবান পাগল ঋতি্বক ঘটকের সঙ্গে তার দেখা ও বন্ধুত্ব হয়েছিল।
বিনয় কি বড় কবি? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো সাহিত্যের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিশেষভাবে জানা প্রয়োজন। কিন্তু কবি ও কবিতা পাঠকের কাছে এটি তেমন কোনো প্রশ্ন নয়। কারণ বিনয় অবশ্যই বড় কবি। সবচেয়ে বড় কথা শুধু কবিতায় নয়, কবিজীবনেও বিনয় শেষ পর্যন্ত একজন কবিই। জীবননান্দের পর সব তরম্নণ কবিই তার মতো করে লিখেই কবিতা লেখা মকশো করেছিলেন। এখনও অনেকে করেন। অনেক বড় কবির কবিতাতেও তার ইমেজ চকিত ছায়াপাত করে। বিনয়ের ক্ষেত্রেও তেমন ঘটনাই ঘটেছে। পঞ্চাশ পরবর্তী দশকগুলোর কবিদের সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন বিনয় মজুমদার। তরম্নণ কবিদের ভালোবাসা ছাড়া জীবনে স্বীকৃতি খুব বেশি পাননি। চাকরি তো ছিলই না। 2005-এ ইনডিয়ার সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
বিনয়ের জন্ম 1934 সালের 17 সেপ্টেম্বর, বার্মায়। তার পৈত্রিক বাড়ি ছিল বাংলাদেশের ফরিদপুরে। কলকাতায় জীবনের দীর্ঘ সময় পার করলেও তিনি সব সময়ই বাংলাদেশের জন্য টান অনুভব করেছেন। একবার সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাকি দিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন থেকে যাবেন বলে। থাকা হয়নি। আর এখন তো পৃথিবী ছেড়েই চলে গেলেন।

স্কেচটি এঁকেছেন মাকসুদুর রহমান
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×