somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়েদের ইজ্জত

০৯ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অ্যামেরিকান জীবনের একদম প্রথম দিকের কথা। কাজ করি ওয়ালমার্টে। ক্যাশিয়ার। মানুষ ঘন্টা খানেক সময় নিয়ে বাজার করে, আমি হাসিমুখে তাঁদের 'চেক আউট' করি। বাজার করার সময়ে তাদের যে আনন্দ ছিল, বিল দেখে মুহূর্তেই তা উধাও হয়ে যায়।
"বলকি! এইটুকু গ্রোসারীর বিল দুইশো ডলার!! মানুষ বাঁচবে কিভাবে?"
আমাকে তবু হেসে যেতে হয়। নকল হাসি হলেও। খুবই একঘেয়ে কাজ।

এক মহিলা আমাকে বললেন, "তোমার ম্যানেজারকে ডাকো!"
আমি মহিলার দিকে তাকালাম। মধ্যবয়ষ্ক ভদ্রমহিলা। সাদা চামড়ার অ্যামেরিকান।
সাধারণত কাস্টমাররা তখনই ম্যানেজারকে ডাকতে বলেন যখন তাঁদের কোন অভিযোগ থাকে।
ওয়ালমার্টের ম্যানেজাররা ভাব নেন যে তাঁরা সবসময়েই খুব ব্যস্ত থাকে। আসলে আমি যখনই তাঁদের দেখেছি, তাঁদের আড্ডা দিতেই দেখেছি। কলেজে ম্যানেজারের আভিধানিক সংজ্ঞাতে পড়ানো হয়, "ম্যানেজার হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি অন্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে অর্গানাইজেশনের লক্ষ্য অর্জন করে থাকেন।"
কাজেই ম্যানেজারের শুধু মানুষ ম্যানেজ করা ছাড়া আর কোন কাজ থাকার কথা নয়। ওয়ালমার্টের ম্যানেজাররা সেটাই মেনে চলেন। ছোটখাট সমস্যায় তাঁদের বিরক্ত করা নিষেধ।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কোন সমস্যা? আমাকে বলতে পারো। আমি হয়তো সাহায্য করতে পারবো।"
মহিলা আতঙ্কিত স্বরে বললেন, "তুমি পুলিশ ডাকতে পারবে?"
আমি চমকে উঠলাম। পুলিশ ডাকা মানেতো ঘটনা গুরুতর।
"অবশ্যই ডাকতে পারি। কিন্তু হঠাৎ পুলিশ কেন?"
মহিলা বললেন, "ঐ লোকটা আমাকে গত এক ঘন্টা ধরে অনুসরণ করছে। তার মতলব আমার কাছে ভাল ঠেকছে না।"
মহিলা গেটের দিকে দেখালেন। ওয়ালমার্টের গেটে রেলস্টেশনের গেটের মত সবসময়েই ভিড় থাকে। এখানে অনবরত লোকজন ঢুকছে এবং বেরোচ্ছে।
আমি বুঝতে পারলাম না কার কথা বলছেন।
"ঐ যে ক্যাপ পড়া লোকটা, যে দাঁড়িয়ে আছে। ও মাই গড! ও এখন এদিকেই তাকাচ্ছে! Call the cops! Please! Call the cops!"
অ্যামেরিকানরা পুলিশকে 'cops' ডাকে।
আমি এইবার লোকটাকে দেখলাম। আমার সাথে চোখাচোখি হতে সে দৃষ্টি সরিয়ে নিল।
মহিলাকে প্যানিক করতে দেখে তাঁর পেছনের দুই যুবতি জিজ্ঞেস করলো, "কোন সমস্যা?"
মহিলা তাদের নিজের সমস্যা খুলে বললেন।
দুই যুবতির বয়স চব্বিশ পঁচিশ হবে। কথার উচ্চারণে বুঝা যাচ্ছে খাঁটি টেক্সান। একজন বলল, "চিন্তা করোনা, আমার কাছে পিস্তল আছে। আমরা তোমাকে তোমার গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেব।"
অ্যামেরিকার সংবিধানে "Right to keep and bear arms" বলে একটি সংশোধনী আছে। এটি অ্যামেরিকানদের আত্মরক্ষার খাতিরে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার অধিকার দেয়। টেক্সানরা একে বাইবেলের মত মেনে চলে। তাই আপনি যদি কখনও কোন টেক্সান তথা অ্যামেরিকানের বাড়িতে চার পাঁচটা অ্যাসল্ট রাইফেল দেখেন, তাহলে মোটেও অবাক হবেন না। তার দেশের সংবিধান তাকে এই অধিকার দিয়েছে।
এই দুই তরুনিও সংবিধান অনুযায়ীই পিস্তল সাথে রেখেছে।
আমি মনে মনে বলি, "খাইছে! এ যে ফিল্মি অবস্থা!"
মহিলা বললেন, "তোমরা নাহয় আমাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিবে। কিন্তু এই লোক যদি আমার পিছু নিয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌছে যায়, তাহলে?"
আমার অত্যন্ত প্রিয় সিনেমা 'সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্ব্স'র কথা মনে পড়ে গেল। বুঝে নিলাম ম্যানেজার ডাকতেই হবে। রেজিস্টারে ম্যানেজার ডাকার কোড প্রেস করলাম।

অ্যামেরিকায় এই আগ্নেয়াস্ত্র রাখার আইন নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা হয়েছে। এখানে কিছুদিন পরপর দেখা যায় কোন এক উন্মাদ বাচ্চাদের স্কুলে, ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে, সিনেমা হল থিয়েটারে ব্রাশ ফায়ার করে মানুষ মেরে ফেলছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘটনা তদন্তে বেরোয় যে নিজের জীবনের প্রতি বিরক্ত হয়ে সে আত্মহত্যার আগে আগে এই কাজটি করেছে।
মানুষ তখন এই আইন রহিত করতে আওয়াজ তোলেন। যদি লোকটির কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি না থাকতো, তাহলে অবশ্যই সে এতগুলো মানুষ মারতে পারতো না।
আর যারা এই আইনের পক্ষে, তাঁরা বলেন, ওখানে ভিকটিমদের কাছেও যদি অস্ত্র থাকতো, তাহলে তাদের কেউ আততায়ী গুলি চালানোর আগেই তাকে গুলি করে ভূপাতিত করতো। নিরস্ত্র অবস্থায় থাকাতেই ড্যামেজ বেশি হয়েছে।
দুই পক্ষের যুক্তিই পরিষ্কার। কাজেই সরকার স্রেফ কিছু অঞ্চল ছাড়া বাকি সব জায়গায় আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার আইন বহাল রেখেছে।
আমারও শখ ছিল এই সুযোগে একটা পিস্তল এবং একটা রাইফেল কিনে ফেলার। ঘরের মধ্যে একটা অটোমেটিক রাইফেল আছে, আলমারিতে পিস্তল, ভাবতেই তো ভাল লাগে! অহিংসবাদী বউয়ের কারনে কেনা হচ্ছে না।

সেটা যাক। যে ঘটনা বলতে এত লম্বা ভূমিকা টানলাম তা হচ্ছে, আজকে ফেসবুকে দেখি একটা ঘটনা ভাইরালভাবে শেয়ারড হয়েছে। তা হচ্ছে, ধানমন্ডির ৯/এ তে একটি ছেলে একটি মেয়ের সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে গুলি খেয়েছে।
একদল বদমাশ একটি মেয়েকে জোর করে তাদের গাড়িতে উঠাতে চেষ্টা করছিল। সেই ছেলেটি এবং তাঁর বন্ধুবান্ধবেরা ইট হাতে ছুটে এসেছিল মেয়েটিকে বাঁচাতে।
বদমাইশগুলো গাড়ি করে পালিয়ে যাবার সময়ে পেছনে কিছু গুলি ছুড়ে। এতে ছেলেটি আহত হয়।
দেশের এই উন্নয়নের জোয়ার আজকের নয়। সেই আদি যুগ থেকেই আমি দেখে এসেছি আমার মা রাতে বেরোনোর সময়ে নিজের গয়না খুলে আমার পকেটে লুকিয়ে রাখতে বলতেন। আব্বু কখনই মানিব্যাগে খুব বেশি ক্যাশ টাকা রাখতেন না। আমাদের দেশের সূর্যসন্তানদের উপর তাঁদের চরম আস্থা ছিল কিনা!
এখন দেখা যাচ্ছে তারা কেবল টাকা পয়সা গয়না নিয়েই শান্ত হচ্ছে না। মেয়েদেরও ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করছে।
এদের প্রতিরোধের উপায় কি?
আমার শুধু সেই টেক্সান যুবতিদের কথা মনে পড়ছে।
তারা বলেছিল, "চিন্তা করোনা! আমাদের কাছে পিস্তল আছে।"

কি নির্ভিক ছিল তাঁদের কন্ঠস্বর। একটি অস্ত্র মানুষকে কতটা সহসী আর আত্মবিশ্বাসী করে দিতে পারে!
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×