somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডোনাল্ড ট্রাম্প ভাইকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ট্রাম্প ভাই অ্যাকশনে নেমে পড়েছেন। শুরুতেই সাত দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এবং ধীরে ধীরে এই তালিকা আরও বড় হবে তাতে সন্দেহ নেই।
তার উৎসাহী সমর্থকেরা এতে খুশি হয়ে দিলেন টেক্সাসের এক মসজিদে আগুন ধরিয়ে। এক রাতেই মুসলিমদের ইবাদতখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আমাদের শহর থেকে মাত্রই কয়েক ঘন্টা ড্রাইভিং দূরত্বে ঘটেছে এই ঘটনা।
ক্যানাডায়তো মাগরিবের সময়ে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে কয়েকজন মুসল্লিকে। ক্যানাডার মতন দেশে এই ঘটনা ঘটলে অ্যামেরিকায় ঘটতে কতক্ষন? এখন প্রতিটা মসজিদের বাইরে পুলিশের সতর্ক প্রহরা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু রাষ্ট্রপতিই যদি হন মুসলিম বিদ্বেষী, তাহলে কিই বা করার আছে।
কয়েকদিন আগেই বলেছিলাম, তখন (মসজিদে আগুন, মুসলিম নারীর গায়ে আগুন, নিউইয়র্কে মুসলিমের উপর আক্রমন ইত্যাদি) গিটারের টিউনিং চলছিল, আসল বাজনা বাজা শুরু হবে শপথ গ্রহণের পর। এখনও কনসার্ট শুরু হয়েছে বলা যাচ্ছেনা। এটাও ধরে নিন সাউন্ড চেকিং চলছে। এখনও তিন বছর ৫০ সপ্তাহ বাকি আছে। এবং ট্রাম্প ভাই একটি জমজমাট কনসার্ট উপহার দিবেন এমন পূর্বাভাস দেয়াই যায়। আমরা শুধু বলতে পারি, "হাসবুনাল্লাহি ওয়া নি'মাল ওয়াকিল।"
কথা এগুবার আগে ট্রাম্পের আগের অ্যামেরিকার বর্ণনা দেয়াটা জরুরি।
নয় এগারোর দুর্ঘটনার পর এয়ারপোর্টে "মুসলিম" শব্দটি ছিল "আত্মঘাতী বোমা হামলার" সমার্থক। কারও নামের সাথে মোহাম্মদ, আহমেদ, রহমান ইত্যাদি থাকলে তাঁকে একটু বেশিই জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো। দাড়িওয়ালা বা হিজাব মাথার হলেতো কথাই নেই। এই কিছুদিন আগেই দুই যুবক নিজেদের মধ্যে আরবিতে কথা বলছিল দেখে ওদের প্লেন থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল। পরহেজগার মুসলিম তাঁর ইসলামী পোশাক পরিহিত অবস্থায় প্লেনে যাতায়াতের সময়ে সবসময়েই লক্ষ্য করেন মানুষজনের ভীত ও সন্দেহপ্রবন চেহারা। একবার এয়ারপোর্টে গেটের সামনে একজনকে আসরের নামাজ পড়তে দেখায় এক শ্বেতাঙ্গ নিজের বোর্ড করা ফ্লাইট বদলে ফেললেন।
ট্রাম্প সাহেব এসে দিলেন মুসলিমদের ব্যান করে। ফুঁসে উঠলো অ্যামেরিকান সমাজ। এয়ারপোর্টে ভিড় করলেন মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি জনগোষ্ঠী। সমবেত স্বরে স্লোগান তুললেন, "'No hate, no fear, refugees are welcome here!"
এবং সবচেয়ে মজার ঘটনা হলো, নামাজের সময় হলে এয়ারপোর্টে আজান দিয়ে জামাতে নামাজ পড়া হয়। প্রতিটা মুসলিম একসাথে সিজদাহ দেয়। এবং অমুসলিম জনসাধারণ পাশে দাঁড়িয়ে চিয়ার করে।
এয়ারপোর্টে যেখানে একসময়ে কিছু মুসলিম নারী মাথার হিজাব খুলে স্কার্ফের মতন ব্যবহার করতেন, সেখানে অমুসলিম নারীরা নিজেদের স্কার্ফকে হিজাব বানিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এখন দাড়িওয়ালা জোব্বা পরিহিত মুসলিমদের এয়ারপোর্টে খুঁজে খুঁজে বের করে জড়িয়ে ধরে বলা হচ্ছে, "আমরা তোমাদের পাশে আছি।"
টেক্সাসে পুড়িয়ে দেয়া মসজিদের পুনঃনির্মাণের জন্য ফান্ড রেইজ করা হলো। এক রাতেই হাফ মিলিয়ন ডলার উঠে গেল। যার সিংহভাগ এসেছে অমুসলিমদের কাছ থেকে।
জায়গায় জায়গায় মুসলিম-খ্রিষ্টান ইন্টারফেইথ কনফারেন্স হচ্ছে। মুসলিমদের সম্পর্কে যেসব একপেশে ধারণা ফক্স নিউজ ছড়ায় - সেসব ধারণা অনেকটাই দূর করছে এসব সামনা সামনি আলোচনা।
এবং ক্যানাডার মসজিদের বাইরে হাজারো মানুষ (এইবারও বেশিরভাগই অমুসলিম) জড়ো হলেন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং নিহতদের আত্মার প্রতি সমবেদনা জানাতে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছেন, "আমরা তোমাদের পাশে আছি। ৩৬ মিলিয়ন হৃদয় তোমাদের সাথেই ভেঙেছে। আমরা তোমাদের সাথেই শোকাহত হবো, তোমাদের প্রতিরক্ষা করবো, এবং আমরা তোমাদের পাশে দাঁড়াবো!"
এইটা আল্লাহর "সুন্নাহ" যে কেউ যখন কোন অস্ত্র দিয়ে কোন নির্দোষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে - আল্লাহ সেই অস্ত্র দিয়েই অত্যাচারীকে নাস্তানাবুদ করেন। তিনি শ্রেষ্ঠ কৌশলী, তিনি সর্বশক্তিমান। তবে শর্ত একটাই, ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করা যাবেনা। মুসলিমদের ডিসিপ্লিনড থাকতে হবে - যাই ঘটুক না কেন।
অন্যায়ের শিকার হওয়ায় এখন যে ভালবাসা পাচ্ছে, মানুষের অনেক ভ্রান্ত ধারণা ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে - সেসব ধরে রাখতে হলে কোন অবস্থাতেই ফাত্রামি করা যাবেনা।
এবং সেই সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভাইকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে! তিনি এমন না করলে আজও এয়ারপোর্টে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর সমার্থক শব্দটি "মুসলিম" ই থাকতো।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৫৮
১৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×