somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফালতু বাত - ১

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিন এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা নিয়ে দশ হাত লম্বা লেখার কোন মানে হয় না। আবার ইগনোর করলেও সেগুলি ভুলে যাব দ্রুত। অথচ ব্যাপারগুলি মজার। তাই ভাবছি, ওসব নিয়েই একটা সিরিজ লিখবো। যেহেতু এগুলো সব ফালতু ঘটনা, তাই এর নাম দিলাম #ফালতু_বাত। ইচ্ছা করলে পড়তে পারেন, ইচ্ছা করলে "ফালতু বাত মাত কারো" বলে ইগনোরও করতে পারেন।

গতকাল ছেলেকে মন্টিসরি থেকে আনতে গেলাম। এখন ডে লাইট সেভিংয়ের জন্য ঘড়ির কাঁটা এক ঘন্টা পিছিয়ে গেছে। মানে সন্ধ্যা এখন আগে আগে হয়ে যাচ্ছে। তো, পুত্র বেচারা তাঁর আউটডোর একটিভিটি শেষে বন্ধুবান্ধবের সাথে টিভি দেখছিল। "Wheels on the bus go round and round...."
আমি যেতেই পুত্র চাক্কা ঘুরানো থামায় আমার দিকে হাসিমুখে দৌড়ে এলো।
যেহেতু "আউটডোর একটিভিটি" ছিল, তাই তাঁর সারা হাত, জামা, প্যান্ট সব মাটিতে মাখামাখি। টিচাররা বেচারার হাত পানি দিয়ে কতটুকু ধুয়েছেন জানিনা, আমার কাছে বেশ নোংরা লাগলো। তাই তাঁকে নিয়ে বাথরুমে হাত ধোঁয়াতে নিয়ে গেলাম।
ভাল মতন সাবান দিয়ে রগড়ে রগড়ে ধোয়ার পর হাত মুছতে বেরোতেই একটি মেয়ে তাঁর বাবাকে বললো, "বাবা! এই ছেলে আমাকে আজকে মেরেছে!"
আফ্রিকান অ্যামেরিকান মেয়েটা সাইজে আমার ছেলের চেয়ে ছোট। কিন্তু তাঁর আফ্রিকান অ্যামেরিকান পিতা দৈর্ঘ্যে প্রস্থে আমার চেয়ে কমসেকম আড়াই থেকে তিনগুন বড় হবেন। একে দেখেলেই যে কারোর মনে হবে লোকটার জীবনের প্রথম লক্ষ্য ছিল ডব্লিউ ডব্লিউ ইর রেসলার হয়ে আন্ডারটেকারের বিরুদ্ধে রেসলম্যানিয়ায় হেল ইন আ সেল লড়বে। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় নিজের সেই স্বপ্নের বিসর্জন দিয়ে বর্তমান জীবন বেছে নিয়েছে। এখন মেয়েকে মন্টেসরিতে আনা নেয়া ছাড়াও কিছু একটা করে খায়।
পুত্রের উপর মেজাজ খারাপ হলো। এক হচ্ছে, যেকোন বয়সে মারামারি করা খুবই খারাপ। এই নিয়ে তাঁকে নিয়মিত ধমকানো হয়, তারপরেও দেখা যায় খেলার সময়ে মাঝেমধ্যে অমুক তমুককে মেরে দিয়েছে।
তবে তারচেয়ে বেশি মেজাজ খারাপ হলো এই কারনে যে পিটাবিই যখন, ভিকটিমের বাপ দেখে পিটাবি না? এই ব্যাটা ফুঁ দিলেই তোর বাপের মতন দশটা ছেলে বাতাসে উড়ে যাবে।
যাই হোক - আমি পুরোপুরি না শোনার ভঙ্গি করলাম। পেপার ন্যাপকিন নিয়ে এমন ব্যস্ত হয়ে গেলাম যেন আমি এবং আমার ছেলের এই পেপার ন্যাপকিনে হাত মোছা ছাড়া ত্রিভুবনে আর কোন কাজ কর্ম নাই।
হলেও হতে পারতেন কুস্তিগীর ভদ্রলোক কন্যার অভিযোগ শুনে বললেন, "ও কি স্যরি বলেছে?"
মেয়েটি সাথে সাথে বলল, "না।"
তাঁর বলার ভঙ্গিতেই বুঝা যাচ্ছে সে অ্যাকশনের মুডে আছে। ও চাইছে তাঁর বাপ কোন অ্যাকশন নিক। ভিলেন এবং ভিলেনের বাপকে পিটিয়ে ছাতু বানিয়ে দিক।
আমি আবারও পুত্রের উপর মেজাজ খারাপ করলাম। মারধর করলি, স্যরিও বললি না! অসভ্য কোথাকার!
কুস্তিগীর (হলেও হতে পারতেন) তখন দরাজ স্বরে বললেন, "ইট্স ওকে। খেলাধুলায় একটু আধটু ব্যথা লাগেই।"
অাহ্! কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেল। এই নাহলে কুস্তিগীর! মনে মনে পুত্রের দ্বিতীয় অপরাধ মাফ করে দিলাম। প্রথমটি ছিল মারামারির - যার কোন মাফ নেই। কঠিন শাস্তি পেতে হবে। আরেকটু বড় হয়ে নিক।
দ্বিতীয়টি ছিল কুস্তিগীরের কন্যাকে মারধর। আজকে যদি নরমাল কোন বাপ মায়ের সন্তানকে পিটাতো, সাথে সাথে প্রিন্সিপালের কাছে বিচার যেত। কুস্তিগীর বলেই বলছেন, ইট্স ওকে। ওরকম কত মাইর খাইলাম, দিলাম!
গুড চয়েজ! হাই ফাইভ!
ফেরার সময়ে পার্কিং লটে আবার তাঁদের সাথে দেখা। এইবার আমি আমার পুত্রকে বললাম, "বল, বাই ফ্রেন্ডস!"
পুত্র তখন ছুটি শেষে বাড়ি যাবার উত্তেজনায় আনন্দিত। সে চোখমুখ উজ্জ্বল করে মিষ্টি হেসে মেয়েটি ও তাঁর বড় বোনকে বলল, "বাই ফ্রেন্ডস!"
মেয়েগুলি এতক্ষন তাঁকে ঘৃণা করছিল। এই এক হাসিতেই পটে গেল। তাঁরাও খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললো, "বাই ফ্রেন্ড!"
ওদের জবাব শুনে ছেলে আরও খুশি মনে বলে, "বাই!"
এই "বাই" "বাই" চলল বেশ কিছুক্ষন। দুই পার্টিরই কার সিটে বসে সিটবেল্ট বেঁধে দরজা লাগানো পর্যন্ত। হলেও হতে পারতেন কুস্তিগীর ভদ্রলোক হাসিমুখে বললেন, "কিউট বয়। হেহেহে।"
আমার যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো। চোরের মতন মনে খোঁচা দিচ্ছিল, এই না ভদ্রলোক বিচার দেয় পোলা সামলাও!
গাড়িতে উঠতে উঠতে একটি ব্যাপার উপলব্ধি করলাম। রূপবান বা রূপবতীরা খুব সহজেই নানান অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। এই যেমন আমার পুত্র পেয়ে গেল। যেমন আমার বৌও পেয়ে যায়। ধোয়ার সময়ে সমানে কাঁচের গ্লাস থালা বাটি ভেঙে সাফ হয়ে যাচ্ছে। কিছু জিজ্ঞেস করলে একটা হাসি দেয় - আমিও উল্টো মনে করি what's the big deal! একটা বাটিইতো। সপ্তাহে এইটা তৃতীয়, তারপরেও, একটা বাটিইতো।
অথচ আমি সময়মতোন ময়লা গার্বেজে না ফেললেও এক হাজারটা কথা শুনি।
"সারাদিন শুয়ে শুয়ে আশায় থাকো বুয়া কাজটা করবে। বিয়ে করেতো দেশ থেকে বৌ না, বুয়া এনেছো।....."
তখন হাসি দিলে উল্টা কেয়ামত নেমে যায়।
আফসোস!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:২২
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×