somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরবানির ব্যপারে সংক্ষেপে কিছু কথা

০৩ রা আগস্ট, ২০১৯ ভোর ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জিলহজ্ব মাস চলে এসেছে। মুসলিমদের জন্য এই মাসের প্রথম দশদিন বছরের (চন্দ্র বর্ষ) বাকি ৩৪৫ দিনের চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যারা হালাল টাকা উপার্জন করে পবিত্র হজ্বে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য দোয়া রইলো তাঁরা যেন আমাদের জন্য দোয়া করেন যাতে আমরাও নিজেদের কামানো হালাল উপার্জনে হজ্ব করতে পারি।

এবং যারা হজ্বে যাচ্ছেন না, তাঁদের জন্যও এই সময়টা উৎসবের। কারন কোরবানির ঈদ! দুই ঈদের মধ্যে যদিও আমরা মনে করে থাকি যে ঈদুল ফিতর "বড় ঈদ" আসলে কিন্তু ঠিক উল্টা। "ঈদুল আজহা" আমাদের ধর্মে বড় ঈদ।

আজকে অফিসে কাজের চাপ থাকায় এখন কিছু কথা পয়েন্টাকারে বলে যাচ্ছি। বিস্তারিত লেখার ও ব্যাখ্যা করার সময় নাই। আশা করি কারোর বুঝতে সমস্যা হবেনা।

১. ঈদুল আজহাকে কেউ যদি "আদহা" উচ্চারণ করে, তবে তা নিয়ে হাসি তামাশা করবেন না। রমজানকে রামাদান, ওযুকে উদু ইত্যাদি বললে দেখি কেউ কেউ হাসাহাসি করেন। তাই ধরে নিচ্ছি এই ক্ষেত্রেও তাই করবেন। জেনে রাখুন "ডেঙ্গু"কে "ডেঙ্গি", "ইস্কুল" কে "স্কুল", "টেবিল" কে কেউ যদি "টেবল" বলে, এখানেও ব্যাপারটা তাই। ব্যাপারটা স্রেফ উচ্চারণের পার্থক্য। একেক অঞ্চলে একেকভাবে শব্দগুলো উচ্চারিত হয়। কিন্তু কেউ যদি ব্রিটিশ উচ্চারনে ইংলিশ শেখার চেষ্টা করে, তাঁকে নিয়ে যেমন হাসাহাসি করা উচিৎ না, তেমনই কেউ যখন আরবি উচ্চারনে আরবি শব্দ বলার চেষ্টা করবে, তাঁকেও নিয়ে হাসা হাসি করা উচিত না। অন্যের ভুল ধরার আগে নিজেরও একটু সহনশীল হবার চেষ্টা থাকা উচিৎ।

২. কুরবানী দেয়া ফরজ বা ওয়াজিব না, একটি একটি উচ্চপর্যায়ের সুন্নত। জ্বি, অনেকেই অবাক হবেন জেনে, এবং আমি নিজেও অবাক হয়েছিলাম যখন প্রথম পড়েছিলাম। কিন্তু আমরা বাংলাদেশিরা যেহেতু হানাফী সুন্নি, আমাদের সহজে জানার কথাও না। শুধুমাত্র হানাফী মাজহাব ছাড়া দুনিয়ার আর বাকি সব মাজহাবেই (স্কুল অফ থটস) কোরবানি দেয়া "ওয়াজিব" না। এটি একটি সুন্নত। দিতে পারলে প্রচুর সওয়াব পাওয়া যায়, তাই মিস করা উচিৎ না। কিন্তু দিতে না পারলে কাফের হয়ে যাবেন না। তাই সামর্থ্যে থাকলে দিন। সামর্থ্যে না থাকলে অন্যের গলা কেটে, চুরি চামারি করে, লোক দেখাতে এই কাজ করার চেষ্টা করবেন না। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি দিন। তারও আগে নিজের মনের পশুর গলায় ছুরি চালান।

৩. শ্বশুর বাড়ির থেকে যদি কোরবানির পশু পাঠায়, তবে আল্লাহর ওয়াস্তে সেটা ফেরত পাঠান। আমাদের বাংলাদেশের একটি জঘন্য সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই বর্বরতা। শ্বশুর শ্বাশুড়ি আল্লাদ করেও যদি পাঠান, তারপরেও বলুন আপনি আপনার নিজের সামর্থ্যে পারলে কোরবানি দিবেন, না পারলে না। মেরুদন্ড শক্ত করুন।

সামর্থ্যে থাকলে নিজেই আস্ত গরু দিন। আত্মীয়ের এক ভাগ থেকে শ্বশুরবাড়িতে মাংস পাঠান।

আর সামর্থ্যে না থাকলে শ্বশুর বাড়ির লোকেদের সাথে ভাগে জবাই দিন, গরুর দাম নির্ধারণ করে, সাত ভাগ করে নিজে যত ভাগ দিবেন সেই অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করুন। শ্বশুর যদি জিভ কেটে টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানান, তবুও তাঁকে জোর করে হলেও টাকা দিন। কারন আপনার মাথায় থাকতে হবে আপনার প্রতিটা অ্যাকশন আপনার ছেলেমেয়ে দেখে বড় হবে। আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নষ্ট হয়ে যাবে যদি আপনি এমন ভুল করেন।

৪. আমাদের দেশের সমস্যা হচ্ছে আমরা "আদর" দেখাতে গিয়ে অনেক সময়ে অনেক অপসংস্কৃতির জন্ম দেই। যেমন, আমার হয়তো সামর্থ্য আছে আমার মেয়ের জামাইকে আস্ত একটা টেক্সাস থেকে ইম্পোর্টেড এঙ্গাস গরু পাঠিয়ে দেয়ার। কিন্তু আমাকে এও মাথায় রাখতে হবে যে আমার এই আহ্লাদীপনার জন্য সমাজে একটি অসুস্থ সংস্কৃতির প্রবর্তন হবে। আমার দেখাদেখি আমার কোন প্রতিবেশী বা আত্মীয় তাঁর মেয়ের জামাইকে বেলজিয়াম ব্লু গরু পাঠিয়ে দিবে। আরেকজন পাঠাবে টেক্সাস লং হৰ্ণ। সমস্যা বাঁধবে তখন যখন এইসব জামাইদের বন্ধু বান্ধবরা চিন্তা করা শুরু করবে আমাদের শ্বশুরবাড়ি থেকে কেন কোন গরু আসলো না? বেচারা মধ্যবিত্ত শ্বশুর "মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে" নিজের জায়গা জমি বেঁচে হলেও মোটাতাজা গরু পাঠাবেন। তারপরেও জামাইর মন ভরবে না। কারন "বন্ধুর শ্বশুরবাড়ির উপহারের ওজন ছিল এক হাজার কেজি, আমার শ্বশুরের গরু "মাত্র" নয়শো পঞ্চাশ কেজি। এ কোন ছোটলোকের ঘরে বিয়ে করলাম?"

৫. কোরবানি কোন শো অফের বিষয় না। আপনি আপনার সামর্থ্যানুযায়ী পশু কোরবান করবেন। "পাশের বাড়িতে গরু দিয়েছে, আমি ছাগল দিলে প্রেস্টিজ পাংচার হবে" - এই চিন্তা মাথায় রাখলে আপনার পশু কোরবান না দেয়াই ভাল। আপনার সাথে ডিরেক্ট লেনদেন হবার কথা আল্লাহর, আপনি এখন যদি লোকে কী বলবে তা নিয়ে ভাবেন, তাহলে লোকে কী বলবে?

৬. চেষ্টা করবেন কোরবানির পবিত্রতা বজায় রাখতে। মানে মাংস বিতরণ যেন সুষ্ঠু হয়। তিনভাগের যে দুইভাগ লোকজনের মধ্যে বিলিয়ে দিবেন, সেখানে শুধু হাড্ডি দিয়ে ভরবেন না। প্রথমে মাংস তিনভাগ করবেন। তারপরে চোখ বন্ধ করে যেকোন দুইভাগ বাছাই করে একভাগ নিজের জন্য রাখবেন। তাহলেই দেখবেন সব ভাগে সমান মাংসের ভাগ পড়বে। মাথায় রাখবেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই থাকবেন যাদের বছরের কেবল এই দিনগুলিতে মাংস খাবার সৌভাগ্য হয়। তাঁদের সেই আনন্দে শরিক হতে দিন।

চেষ্টা করুন নিজের গরিব আত্মীয়দের বেশি মাংস দিতে এবং ধনীদের (যাদের প্রয়োজন নেই, নিজেরাই হাতি সমান গরু কোরবান করেছেন) একটু কম দিতে। কোরবানির মাংস দিয়ে তেলবাজি স্বার্থহাসিল ইত্যাদি গেম খেলার চেষ্টা করবেন না। এখানেও মাথায় রাখুন আল্লাহু আকবার। যার অর্থ কেবল "আল্লাহ শ্রেষ্ঠ" না, এর মানে আমি সবকিছু ছেড়ে কেবলই আল্লাহর জন্য করছি, এই "তাকওয়া"টাই শ্রেষ্ঠ।

পশুর বর্জ্য, রক্ত যেখানে সেখানে ফেলবেন না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। আমাদের ধর্মে আল্লাহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায়কারীদের ভালবাসেন। যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলার ফলে যে রোগজীবাণুর সৃষ্টি হবে, এবং তার ফলে যত মানুষের যত রকমের অসুবিধা হবে, প্রতিটার জন্য আপনি দায়ী থাকবেন। তাই সাবধান।

কিছু ইতরপ্রাণী ইতরামি করার জন্য গরুর বর্জ্য ইচ্ছা করে মন্দিদের দেয়ালে ফেলে। কয়েক বছর আগে এমন ছবি ফেসবুকে দেখেছি। আল্লাহ কুরআনে নিষেধ করেছেন কারোর দেবদেবীকে গালাগালি বা কটূক্তি করতে। আমাদের নবীরও নিষেধ আছে। কাজেই আপনি এই ধরনের অসভ্যতা করলে কুরআন হাদিসের বিরুদ্ধে যাবেন। মানে কাফের (আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের অবিশ্বাসী ও অবাধ্য) হয়ে যাবেন। সাবধান!

আরও অনেক কিছু লেখার আছে। আপাতত এই থাক। সবাই ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৯ ভোর ৫:১৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×