somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতরের ইতরামি

১৪ ই আগস্ট, ২০১৯ ভোর ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফুড রিভিউ দিয়ে ফেসবুক পেজ খোলা কোন বিষয় না। সারা বিশ্বেই চলছে, বাংলাদেশেও আছে।
সেই পেজ বা গ্রূপে লাখ লাখ সদস্যের উপস্থিতি অতি স্বাভাবিক। আমরা সবাই খাই, খেতে পছন্দ করি, এবং খাবারের গল্প শুনতে আগ্রহী। কোন দেশের কোন রেস্টুরেন্টের কী কী খাবার অতুলনীয়, এই নিয়ে বিশ্বজুড়ে তুমুল দর্শকপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। ফেসবুক পেজগুলো পিছিয়ে থাকবে কেন? মান সম্মত ফুড রিভিউ আমাদের আনন্দিত করে। এতে অপরাধের কিছু নাই।
লাখ লাখ সদস্যের পেজগুলো যদি কোন নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টের প্রোমোশনের জন্য কাজ করে থাকে, তখন সামান্য ভ্রু কুঞ্চিত হলেও, আমার মনে হয়না এইটা খুব উচ্চ পর্যায়ের অপরাধ। যেমন ধরেন, আমি "আমেরিকান বার্গারের" কাছ থেকে টাকা নিয়ে বললাম আমি তাঁদের প্রোডাক্টের প্রশংসা করে পোস্ট দিব। বাস্তবেই আমি আমেরিকান বার্গারের বার্গার পছন্দ করি। দেশে গেলে অবশ্যই যা করি, তার একটি হচ্ছে এই রেস্টুরেন্টের বার্গার খাওয়া। প্যাটির মধ্যে ওদের স্মোকি ফ্লেভারটা আমার অসাধারন লাগে। তাই আমি একটি ভাল প্রোডাক্টের প্রশংসা করতেই পারি। বিনিময়ে কিছুটা টাকা পেলে ক্ষতি কী?
ভ্রু কুঞ্চনের কারন হচ্ছে, আমি পেজটা খুলেছি ফুড রিভিউর উদ্দেশ্যে। আমার কাজ হবে লোকজনকে ভাল খাবারের দোকান সম্পর্কে অবহিত করা, এবং আমার কাছে যা কুৎসিত লেগেছে, সেই সম্পর্কে সতর্ক করা। আমি যদি টাকা খেয়ে জব্বার এন্ড সন্স রেস্টুরেন্টের বাসি পঁচা বার্গারকে shake shack এর বার্গারের চেয়েও ভাল বলি, তাহলে আমার লাখো ফলোয়ারের সাথে বেইমানি করা হবে। কাজটা অনৈতিক হয়ে যাবে। হ্যা, যদি আমার পেজটা কমার্শিয়াল পেজ হতো, ফুড "রিভিউ" না, বরং ফুড "প্রোমোশনের" গ্রূপ হতো, তখন এই কাজটি ভুল হতো না। আমাদের শাবনূরকে দেখতাম তিব্বতের এড করতে, ঐশ্বরিয়াকে লাক্সের। আপনাদের কী ধারণা তাঁরা ওসব প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন? পকেটে সামান্য টাকা আসা শুরু করলেই বাঙালি লাক্স ফেলে ডাভ ধরে। ইহা নিপাতনে সিদ্ধ সত্য।
এখন বলি বাঙালি ফুড রিভিউ পেজের এক এডমিন কী করেছে সেই কথা।
সে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টকে গিয়ে বলেছে তাকে মাসে মোটা অংকের টাকা দিতে হবে। তাহলে সে নিজের পেজে সেসব রেস্টুরেন্টের প্রশংসা করবে। এতে ওসব রেস্টুরেন্টের ব্যবসা দাঁড়িয়ে যাবে।
খুবই উত্তম প্রস্তাব। রেস্টুরেন্ট মালিক নিজের ব্যবসার প্রোমোশনের জন্য এমন করতেই পারেন।
তারপরে ঐ এডমিন হুমকিও দিয়েছে যে যদি টাকা না দেয়, তাহলে নেগেটিভ রিভিউ দিয়ে এমন ব্যবস্থা করবে যে রেস্টুরেন্টের মালিককে তাঁর দোকানে তালা ঝুলাতে হবে। এইটাকে বলে ব্ল্যাকমেইল। অনৈতিকই না, অপরাধও।
বদমাইশটা নিজের পালতু বন্ধুবান্ধব লেলিয়ে দিয়ে ইচ্ছা করেই নেগেটিভ রিভিউ দিয়ে রেস্টুরেন্টের মালিকের সাথে যোগাযোগ করে। প্রস্তাব দেয় টাকার বিনিময়ে অনেকগুলো পজিটিভ রিভিউ দিবে। তাহলে এই নেগেটিভিটি ধুয়ে মুছে যাবে।
সামান্য এক ফেসবুক পেজের চার আনার এডমিনের হাতে রেস্টুরেন্ট মালিকরা জিম্মি হয়ে গেলেন। কারোর কারোর ব্যবসা লাটে উঠলো।

এই কাজটা শুধু ফুড পেজগুলোই নয়, অনেক গ্রূপ ও পেজও করে থাকে। মেম্বারদের থেকে টাকা নিয়ে নিজেরা লাল হয়ে যাচ্ছে। ক্যানভাসের সদস্যসংখ্যা সাড়ে তিন লাখ শোনার পরে অনেকেই বলেন, আমরা কেন টাকা কামাচ্ছি না? আমরা নাকি বোকা।
আপনারাই বলেন, কালকে এইভাবে অবৈধ টাকা কামাতে গিয়ে ধরা পড়ার পরে আপনারা যখন আমাদের মুখে থুথু দিবেন, সেটা কী আমাদের ভাল লাগবে? দুই চারপয়সার লোভে নিজের ঈমান বিক্রি করবো কেন? এই কারণেই ক্যানভাস চ্যারিটি/হেল্প পোস্ট ছাড়া অন্য কোন প্রমোশনে বিশ্বাসী নয়। তাও তৃতীয় পক্ষ হিসেবেও আমরা কাজ করিনা। আমরা সরাসরি সাহায্যপ্রার্থীর নাম, ঠিকানা ও একাউন্ট নম্বর দিয়ে দিই। কারোর সন্দেহ থাকলে সে যোগাযোগ করে ভ্যারিফাই করুক। কেউ সাহায্য করতে চাইলে সরাসরিই করুক। ক্যানভাস এক পয়সাও নিবে না।

একটু গভীরভাবে চিন্তা করে বলুনতো, আমরা বাঙালিরা কোথায় গিয়ে ঠেকছি কেউ কী বুঝতে পারছেন? সবকিছুতে বদমাইশি, দুর্নীতি ঢুকিয়ে দিচ্ছি। ঈদের পশুর চামড়া, যার বিক্রির অর্থ আমাদের ৯০% এরও বেশি মানুষ গরিবদের জন্য তুলে রাখেন, সেই পশুর চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরী করে ইতরের ইতরামি শুরু করে দিয়েছি। কোরবানির চামড়া নিয়েও ব্যবসা?
ফেসবুকে পশুর চামড়ার রেসিপি খুব শেয়ার হচ্ছে। গা ঘিন ঘিন করার কিছু নেই। হাঁস মুরগি পাখি ও মাছের চামড়া মশলা দিয়ে খেয়ে আমরা অভ্যস্ত। পশুর লোম ছাড়িয়ে নিয়ে ঠিক মতন রান্না করতে পারলে সেটাও খেতে সমস্যা হবার কথা না। আমার ধারণা চাইনিজরা খায়। ওদের দোকানে গেলে কাউ ব্লাড, পোর্ক ব্লাড, গরু ও শুকরের কান ইত্যাদি বয়ামে করে বিক্রি হয়। ডালাসেরই এক ফার্মে আফ্রিকার এক নারীকে দেখেছিলাম ram এর (এক জাতের ভেড়া) চামড়া পুড়িয়ে কসাইকে দিয়ে পিস্ পিস্ করে কাটিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে। খেতে কুৎসিত হলে নিশ্চই তিনি তা করতেন না।
ছোট বেলায় সিলেটে আমাদের পশুর চামড়া নিয়ে এইভাবে ইতরামি করতে দেখিনি। ঢাকায় আসার পর দেখেছি এলাকার বড় ভাই, দুই পয়সার গুন্ডা লোকজনকে পরোক্ষ হুমকি ধামকি দিয়ে সস্তায় চামড়া কিনে নিত। তখনই বুঝেছিলাম একদিন এইদিন আসবেই। আপনাদের কাছ থেকে কোরবানির পশু ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না এইতো অনেক। আরও অপেক্ষা করুন, আগামীতে কোরবানির দেয়ার জন্যও এদের চাঁদা দিতে হবে।

লিংকের ভিডিওটি দেখুন। টিভি উপস্থাপকের উপস্থাপনা অতিমাত্রায় বিরক্তিকর হলেও ভিতরের কন্টেন্ট ভাল। চিনে নিন "ফেসবুক সেলিব্রেটিদের।"

https://www.youtube.com/watch?v=1Nb-5Nm_Mro
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৯ ভোর ৪:০২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×