কেউ দ্বিমত করলে করতে পারেন, কিন্তু আমার বিশ্বাস এবং মত হচ্ছে, জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের দেশের সেনাবাহিনীর সাথে মিলানো একটি আহাম্মকি কর্মকান্ড।
বর্তমান যুগে ক্রিকেট বা যেকোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয় মূলত বিনোদনের উদ্দেশ্যে। এ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ উপার্জন হয়। একে দেশের সম্মান, ইজ্জত ইত্যাদির সাথে মিলিয়ে মিশিয়ে গুলিয়ে ফেলার কোন মানে হয়না। আবেগ আবেগের জায়গায় ঠিক আছে, এবং বাস্তবতা বাস্তবতার জায়গায়। খেলোয়াড়রা জাতীয় দলে খেলেন, এটাই তাঁদের পেশা। দেশপ্রেম জড়িত থাকে অবশ্যই, কিন্তু এই অনুভূতি আর আট দশটা পেশার মতই।
ব্যাখ্যায় যাই।
ভিরাট কোহলির পরিবারে প্রথম সন্তান আসবে। যেহেতু আনুশকা শর্মা একজন বলিউড অভিনেত্রী, ধরে নিতে পারি এটিই হতে যাচ্ছে তাঁদের একমাত্র সন্তান। খুব বেশি হলে আরেকটা, তবে সেটারও নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া, প্রথম সন্তানের জন্মতিথি অবশ্যই বিশেষ কিছু। কারোর এক হাজারটা সন্তান জন্ম নিলেও প্রথম সন্তানকে প্রথমবারের মতন কোলে তোলার অনুভূতি সে কখনই ভুলতে পারবেনা।
এই পরিস্থিতিতে ভিরাট সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি তাঁর প্রথম সন্তান জন্মদেয়ার সময়ে স্ত্রীর পাশে থাকবেন।
অবশ্যই এই সিদ্ধান্তে সম্মান জানাই। আর আট দশটা সাধারণ পেশায় যে কেউ অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এই দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখেন। ফুটবলার কিংবা ক্রিকেটাররা কেন নয়? তাও আবার আমাদের বিনোদনের জন্য? যারা অতি দ্রুত পল্টি মারতে ওস্তাদ। কয়েকটা ম্যাচ বাজে খেললেই ওদের বাড়িতে গিয়েই ঢিল মারি। ওদের পরিবারের লোকজনকে বুলি করি। ওদের কন্যা সন্তানকে ধর্ষণের হুমকি পর্যন্ত আসে "দর্শকের" কাছ থেকেই।
শুধুমাত্র দেশের ইমার্জেন্সি সময়ে সীমান্তে দায়িত্বরত সেনাবাহিনী বা কর্তব্যরত পুলিশ বা এইরকম পেশার লোকজনের কথা আলাদা। ওরা ব্যাটে বলে লড়ে না। শত্রুপক্ষ যে গোলাবারুদ ছুড়ে, সেটা তাঁদের হত্যার উদ্দেশ্যেই। দেশের মানুষের নিরাপত্তা তাঁদের হাতে ন্যস্ত থাকে। এক দুইটা ক্রিকেট ম্যাচ হারলে কারোর জীবনেই কোন পরিবর্তন ঘটেনা।
আবারও বলি, ক্রিকেট শুধুই একটি খেলা, দুই দেশের মধ্যকার খেলা হয় শুধুই বিনোদনের উদ্দেশ্যে, যার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে আইসিসি ও ক্রিকেট বোর্ড। কালকে যদি বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট বা ফুটবল চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়, আমাদের জিডিপি চার পাঁচশোগুন বেড়ে যাবেনা, আমাদের গড় আয়ু কয়েক দশক বেড়ে যাবেনা, মোট কথা কিছুই হবে না। চায়না, আমেরিকা কোন দেশই ক্রিকেট ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়নি, পাকিস্তান ভারত শ্রীলংকা ওয়েস্ট ইন্ডিজরা হয়েছে। নিজেরাই পার্থক্য বুঝেন।
কাজেই "দেশের সাথে গাদ্দারি করে ভিরাট বৌয়ের শাড়ির আঁচলে স্থান নিয়েছে" কিংবা "ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে পলায়নরত নাবিক এবং ভিরাটের মাঝে কোন পার্থক্য নেই" জাতীয় চিন্তাভাবনা খুবই বিরক্তিকর। আমাদের তামিম যখন একই কারনে ছুটি নিয়েছিলেন, অনেক পাবলিকও একই মন্তব্য করেছিলেন। অনেক ফুটবলারকে নিয়েও এমন কুমন্তব্য করতে দেখি অনেককেই। ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, এরাই কিন্তু নিজেদের বাচ্চাদের জন্মের সময়ে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নেয়। অফিসের যতই ব্যস্ততা থাকুক, অফিস যতই বিপদে থাকুক। নিজের বেলা এরাই ষোলআনা শেয়ানা।
"কথা কি ঠিক না একটুখানি ভ্যাজাল আছে?"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৩৭