আফসোস লীগ বলেন আর যাই বলেন "বন্যার্তদের জন্য তোলা ত্রাণ পঁচে যাচ্ছে" - এমন একটা খবর নিয়ে অনেকেই আলোচনা চলছে।
আমি এমন আলোচনাকে স্বাগত জানাই। কারন এই "বাক স্বাধীনতা" এইযে সরকারের অনেক প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলা, টাকার হিসাব চাওয়া, সরকারকে মনে করিয়ে দেয়া যে ওদেরকে জনতার কাছেই জবাবদিহি করতে হয়, এই চর্চাটাই আমার মনে হয়না ১৯৭১ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে কোন সরকারের আমলে ছিল।
যদিও এরাই শত শত কোটি টাকার ভাস্কর্য/মূর্তি স্থাপন বা আতশবাজি পোড়ানোর মতন unfruitful কাজে নষ্ট করার সময়ে বা লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতিতে মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিল, তার মানে এই না যে এখন কথা বলতে পারবে না। অভ্যাসটা হোক।
একই সাথে, গত সরকারকে দেখতে পারিনা বলে এই সরকারের ভুলত্রুটি ও অপরাধকে ইচ্ছা করে প্রশ্রয় দিলে এরাও একটা সময়ে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত হবে। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা খুনি/স্বৈরাচারী/একনায়ক ইত্যাদি কিছুই হতে পারতেন না যদি বছরের পর বছর ধরে চ্যালা চামচারা আপা আপা বলতে বলতে পা না চাটতেন। যখনই উনি কোন ভুল কাজ করেছেন, তখনই ওনার লোকেরা যদি ধরিয়ে দিত, এবং উনি ওদের পরামর্শ শুনতেন, তাহলে আজকে নিজের জন্মভূমি থেকে এইভাবে চোরের মতন পালাতে হতো না।
একই কথা সবার জন্য প্রযোজ্য। ড ইউনুসও মানুষের উর্দ্ধে কিছু নন। উনারও ভুল ত্রুটি হবেই।
এখন শোনা যাক বন্যার্তদের জন্য যারা মাঠে নেমে কাজ করেছেন, উনাদের অভিজ্ঞতা।
প্রথমত, একজন বলেছেন, পঁচে যাওয়া ত্রাণের বেশিরভাগই হচ্ছে ব্যবহৃত কাপড় যা ত্রাণ হিসেবে দেয়া হয়েছে। যারা রিসিভ করেছেন, ওদের ভাষায়, ময়লা অধোয়া কাপড় যা দেখলেই বুঝা যায় যে এগুলোকে ডাস্টবিনে ফেলতে গিয়ে "দান" করা হয়েছে। গন্ধ বেরুচ্ছে, দাগ লেগে আছে, কোন কোনটাতো ছেড়া। ফেনী/নোয়াখালীর লোকজন বন্যার্ত হতে পারেন, কিন্তু ফকির না যে এই কাপড় উনাদের পরতে হবে।
আমি নিজেও বহুবার "used clothing drive" এ অংশ নিয়েছে। আমাদের gently used কাপড়চোপড় যা ক্লসেটে অবহৃত পড়ে আছে, সেগুলো যাতে অন্য কেউ (সাধারণত গরিব বা হোমলেস বা রিফিউজি) পরতে পারে, সেজন্য এমন ড্রাইভ চালানো হয়। দেখা গেছে, আমরা বাংলাদেশি অনেকেই ক্লসেট থেকে কাপড় বের করেই বস্তায় ভরে দান বাক্সে ফেলে আসি। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে এগুলো ধুয়ে, ইস্ত্রি করে ভাজ করে পারলে প্যাকেটে করে দান করা। কেন? যাতে যে দুস্থ, যাকে দেয়া হচ্ছে, সে যেন মনে না করে যে ওকে ভিক্ষা দেয়া হয়েছে। ও যেন এটাকে উপহার হিসেবে গ্রহণ করে। জুতা, স্যান্ডেল ইত্যাদি দানের ক্ষেত্রেও ধুয়ে, ধুলা কাদা পরিষ্কার করে যেটুকু সম্ভব পরার উপযোগী করে যেন "উপহার" দেয়া হয়। ঘামের বা তরকারির গন্ধ থাকলে আপনি নিজেই কি সেটা পরবেন? তাহলে অন্যে কেন আপনার ঘামের গন্ধওয়ালা ড্রেস পরবে?
প্রচুর পানির বোতল দেখলাম। এখানেও একটা গিট্টু বেঁধে গেছে। সেটা হচ্ছে, বেশিরভাগ মিনারেল ওয়াটারের বোতলের মুখের সিল ভাঙ্গা ছিল, মানে ওটা রিফিল করা পানি ছিল। এখন আপনি আমাকে বলেন, কিভাবে বুঝবেন যে সেই পানি ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে রিফিল করা হয়েছিল? গ্যারান্টি কি যে শুধু ট্যাপের পানি সেখানে ভরা হয়নাই? হয়তো আপনি ট্যাপের পানি বিশুদ্ধ না করেই খান, কিন্তু অন্যের জন্য সেটা দেয়া কি ঠিক? আপনার হয়তো ইমিউন সিস্টেম ভাল, অন্যের নাও থাকতে পারে। দেশে টাইফয়েড, জন্ডিস, ডায়রিয়া ইত্যাদি যাবতীয় রোগ পানির কারণেই ঘটে থাকে। এই বিষয়েও একটু সাবধান হওয়া উচিত। ফোটানো পানি যদি প্লাস্টিকের বোতলে ভরেন, তাহলে অবশ্যই কাগজে সেটা লিখে দিবেন। যাতে সবাই নিশ্চিন্ত থাকতে পারে।
এত বিপুল পরিমান মানুষ এই প্রথম এগিয়ে এসেছেন। ভুলত্রুটি হবেই। দুই পক্ষেরই। মিসম্যানেজমেন্টও কিছুটা হবে। মাথায় রাখতে হবে, প্রয়োজন এখনও ফুরিয়ে যায়নি। কাজেই "সব গেল" রব তোলার পরিস্থিতি আসেনি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


