somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উত্তরার কোপাকোপির ভিডিও

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ সোশ্যাল মিডিয়া কুয়েন্টিন টারান্টিনোর স্ক্রিপ্ট থেকে কোন অংশেই কম না। টুইস্ট, টার্নস, কমেডি, ট্র্যাজেডি, অ্যাকশন সব উপস্থিত।
উত্তরার কোপাকোপির ভিডিও নিয়েই বলা যাক।
মূল ঘটনা: একটা লোককে আরেকটা লোক কোপাচ্ছিল। এক হিজাবি নারী ওকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। এবং কোপানো ব্যক্তি কোপাকুপি বন্ধ করে চলে যায়।
এই ঘটনায় একদল হঠাৎ করেই সমাজ সচেতন আদর্শ দেশপ্রেমিক হয়ে গেলেন। "এই দেশে আর থাকা যাবেনা। এদেশে আমার নিরাপত্তা কই রইলো? সুদী ইউনুস এদেশকে "ধংঘর্ষ" করে ফেলেছে। এই মুহূর্তে দরকার, শেখ হাসিনার সরকার। উনার সময়েই ভাল ছিলাম। মনের সুখে কোপাকুপি করে বিশ্বজিৎকে মেরেছি, সিলেট এমসি কলেজের বিপ্লব, এবং বরগুনার নয়ন বন্ড সবাই মহানন্দে কুপিয়েছে, কিন্তু নিজের মরার কথা চিন্তাও করতে হয়নি। আর আজ আমাকে রিক্সায় চরলে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে হয়। কেনু? কেনু?? কেনু??? নোবেল কমিটির কাছে দরখাস্ত, সুদী ইউসুফের পুরস্কার বাতিল করা হোক।"
আরেকদল এত বড় ঘটনাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। যেন এইটা পান খেয়ে রাস্তায় পিক ফেলার মতন ঘটনা। কিছু বললেই বলে "গত পনেরো বছর কই ছিলেন? স্বৈরাচার, খুনি হাসিনার সময়ে এমন ঘটনা ঘটে নাই? তখন কেন কিছু বলেন নাই? আজকে হঠাৎ মুখে খই ফুটেছে?"
একদল লিখলেন "কিশোর গ্যাংয়ের কাজ।"
আরেকদল পোস্ট করলেন "ছাত্রলীগ বর্তমানে দা বটি হাতে কোপানো লীগ। যে ছেলেটা কুপিয়েছে, ওটা সজীব ওয়াজেদ জয়। প্লাস্টিক সার্জারি করে চেহারা পাল্টে কুপিয়ে আবার প্লাস্টিক সার্জারি করে আমেরিকায় ফেরত গিয়ে অনলাইন ডেটিং এপ থেকে কোন ফস্রা সুন্দ্রি মেয়ে খুঁজে বের করে ডেটিং করবে।"
সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দল জানালেন, "অমুক তমুকের সাথে ঝামেলা হচ্ছিল, এই দম্পতি নেমে তর্কে সামিল হলে অমুক দা দিয়ে কোপানো শুরু করে।"
নতুন এক দল ভিডিও প্রকাশ করলো যে, জনতা অপরাধীকে ধরে পুলিশে দিয়েছে। তো এই ঘটনাতেও কিছু শার্লক হোমস বেরিয়ে এলো যারা প্রমান করছে যে কোপানো ব্যক্তি আর ধরা খাওয়া ব্যক্তি এক না। সবই আইওয়াস। আপার আমলে কখনই এমন হতো না। সব মেটিকুলাসলি প্ল্যান করা।
এদিকে একটি বিশাল অংশের জনতা ঐ নারীকে মহিয়সী নারী, সিংহী রমণী, সুপার হিরো, গার্ডিয়ান এঞ্জেল ইত্যাদি ঘোষণা দিয়ে পোস্ট করতে লাগলেন। ঘরে ঘরে এমনই নারী দরকার।
"আমার বৌ এমন না কেন? ইউনুস সরকার, জবাব চাই!" - এই দাবিতে নিখিল বাংলা স্বামী সমাজ শাহবাগে অবস্থান ধর্মঢক আহ্বান করেছে।
এত সব ঘটনা চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই।
দেখলেন কারবার? একই ঘটনায় ট্রাজেডি, অ্যাকশন, সাসপেন্স, থ্রিল সব চলে এসেছে। তা ড্রামা বাদ যাবে কেন? ড্রামা এলো পরেরদিন। ভদ্রলোকের আসল বৌ ভিডিও প্রকাশ করলেন "যে মহিলা ওকে বাঁচাতে এসেছে, সে আসলে ওর বিয়ে করা বৌ না। ওরা পরকীয়া করছিল, আমিই ওর বিবাহিতা স্ত্রী।"
মুহূর্তেই ড্রামার সাথে সাথে কমেডি ঢুকে গেল। লোকে ধরে নিল আরেকটি মানবিক বিবাহের কাহিনী শোনা যাবে। এরই মাঝে মহিয়সী রমণী, সিংহী হৃদয় রমণী ইত্যাদি ঘোষণা দেয়া লোকজন দ্বিধায় পড়ে গেলেন। মন্তব্য ফেরত নেয়া যায়না, আবার ঠিকঠাক হজমও হচ্ছে না।
"বিয়ে হয়নি তো কি হয়েছে? মানুষ হিসেবে এগিয়েছে। পুরুষ আর নারীর মধ্যে কি বন্ধুত্ব থাকতে পারেনা? বাঙালি কারোর ভাল দেখতে পারে না।"
যুক্ত হলো এক চিমটি বিবেক, "একটি রমণী কোপাকুপির মাঝে একটা লোককে প্রাণে বাঁচিয়েছে, আর বাঙালি এই ঘটনাকে সাইডে রেখে পড়ে আছে ওদের সম্পর্ক নিয়ে? ছিঃ! বাঙালি জীবনেও ভাল হবেনা।"
ঘটনার নায়ক, ট্র্যাজিক হিরো বেচারা অরিজিনাল বৌকে ফোনকে হুমকি ধামকি দিল। বুঝেও নাই এই বৌ আরও ত্যাদড়। পুরো ফোন কনভারসেশন ভিডিও করে ফেসবুকে দিয়ে দিয়েছে। ভাইরাল হিরো ভাই মুহূর্তেই ভিলেন হয়ে গেলেন। এই প্লট টুইস্টেও ফাজিল পোলাপান কমেডি খুঁজে পেয়ে হাসতে লাগলো। শেষবার এমনটা ঘটেছিল ফুডাপ্পির বেলায়, যখন উনি আগের জামাইকে ভিলেন বানিয়ে দেশব্যাপী আদর্শ নারীর প্রতীক হয়েছিলেন, এবং পরে ধরা খেলেন যে উনি এবং উনার পরিবার একটা পুরুষকে কিভাবে চুষে খেয়ে রিভিউ না দিয়েই ছেড়ে দিয়েছিল।
এদিকে কোপাকুপির মতন মূল ঘটনা, মূল আসামি, সবাই সাইড লাইনে চলে গেলেন। এখন সিনেমার মূল বিষয় পরকীয়া, চিটিং, ডমেস্টিক ভায়োলেন্স ইত্যাদি।
ঘটনাটা নিয়ে লিখতে বসেছিলাম। পরে দেখি কাহিনী ক্ষনে ক্ষনে রং বদলাচ্ছে। কিছু লেখার আগেই ঘটনার মোড় পাল্টে যাচ্ছে। তারপরে বিরক্ত হয়ে আগের লেখা মুছতে হচ্ছে। কোন মানে হয়?

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:২০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন নারী শিক্ষিকা কীভাবে কন্যা শিশুর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতে পারেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩


বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন সব মানুষ রূপী শয়তানের সন্ধান মেলে যাদের দেখে আসল শয়তানেরও নিজের উপর হতাশ হওয়ার কথা। এমন সব প্রজাতির মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করেন যাদের মস্তিষ্ক খুলে দেখার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×