somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'বিবাহ স্থগিত' - রহস্যপত্রিকা, নভেম্বর, ২০১৩

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এমন না যে খালা এ বিয়েতে একদমই রাজী ছিলেন না। হ্যাঁ, চিন্টু ভাই নিজে মেয়ে পছন্দ করেছেন শুনে প্রথমটায় বেশ খানিক গাঁই-গুঁই করেছিলেন। তবে, চিন্টু ভাই অর্থাৎ কিনা আমাদেরও প্রস্তুতি নেয়াই ছিল। কাজিন-মহলে বিপুল জনপ্রিয় চিন্টু ভাইয়ের প্রিয়তমা বলে কথা! হবু ভাবীর সাথে তার হৃদয় + মনের যোগাযোগ হওয়ার খবরটা ভোগ অর্থাৎ পেস্ট্রি-কোক সহযোগে প্রথম আমাকেই দেন তিনি। একই সাথে নেন হবু ভাবী সংক্রান্ত সম্ভাব্য পারিবারিক দ্বন্দ্ব মোকাবেলায় বেলা থাকতেই প্রস্তুতির পরামর্শ। বরাবরের মতো আবারো উপদেষ্টার ভূমিকায় জোর প্রচেষ্টা চালাই আমি। কোন পথে গেলে পলি খালার মতো মহিলা গলে যাবেন, তা জানা আছে।
প্ল্যান মোতাবেক আমরা আগে হবু ভাবীর সাথে অন্য দুই খালা আর কয়েকজন কাজিনের পরিচয় করাই, অবশ্যই চিন্টু ভাইয়ের সাথে তার প্রেমের কথাটা সরাসরি না বলে। মেয়েকে দেখে আর কথা বলে তারা তো পুরোই মুগ্ধ। ফলে, আমাদের সাপোর্ট গ্রুপও ভালই তৈরী ছিল। তারাই পলি খালাকে পটিয়ে মেয়ে দেখতে রাজী করায়। নইলে, সরাসরি চিন্টু ভাই দেখতে বললে তার মা ক্যাটরিনা কাইফকেও যে দেখতে যেতে রাজী হতেন না, তা আমরা জানি। আমাদের হবু ভাবীকে দেখে খালা তেমন আপত্তি করার কিছু খুঁজে পেলেন না, শুধু ‘চিন্টু মেয়ে পছন্দ করেছে’ এই ‘অযোগ্যতা’টুকু ছাড়া। অন্য খালা আর কাজিনদের চাপে এই ‘অযোগ্যতা’টুকু ধোপে টিকল না। এরপর আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব, বিয়ের তারিখ ঠিক করা- সবকিছুতেই খালা স্বতঃস্ফূর্ত। ঠিক হয়েছে, আকদ আগে হয়ে যাবে। বিয়ের অনুষ্ঠান হবে পরে। সেই মতো, ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আত্মীয়কে দাওয়াত দেয়া হলো। আগের দিন আমরা থাকবো পলি খালার বাসায়। পর দিন দলবল নিয়ে যাব মেয়ের বাড়ি।

ঝামেলা বাধল সে-ই আগের দিন-ই, মানে আগের রাতে। আত্মীয়-স্বজনের ভীড় বাড়িতে। সবাই মিলে প্ল্যান করছে, কে কি পরে যাবে, কি করবে সেখানে গিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি। বড়রা এক রুমে, চিন্টু ভাইসহ আমরা কাজিনের দল অন্য রুমে। হঠাৎ পাশের রুমে পলি খালার হাউমাউ কান্নার আওয়াজ। কি ব্যাপার, কি ব্যাপার? আমরা ছুটে যাই।

কান্নার ফাঁকে ফাঁকে খালার বিলাপ শোনা যায়- ‘ওরে আমার ছেলের কি হবে গো, ওরে আমার মানিকের পায়ে শিকল পড়ে গেল গো, আমার ছেলে তো পর হয়ে গেল রে, ওর সব স্বাধীনতা তো শেষ হয়ে গেল, ওরে তোরা আমার সোনাকে দেখ রে, ওরে এইটুকু ছেলে এত দায়িত্ব কেমনে সামলাবে গো’ ইত্যাদি ইত্যাদি.....সব মনে রাখাও সম্ভব না।

চিন্টু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি বেকুব-মার্কা চেহারা বানিয়ে খালার দিকে তাকিয়ে আছেন। তবে, এই ঘটনা কাজিন-মহলে বিপুল আনন্দের জন্ম দিল। ছোটরা সবাই চিন্টু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ফিচকেমি হাসি হাসা শুরু করলো। আমি চিন্টু ভাইয়ের দিকে কিছুটা সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু আমার প্রতি চিন্টু ভাইয়ের অগ্নিদৃষ্টি দেখে বুঝলাম, চোখের তারায় কৌতুকানন্দ লুকাতে পুরোই ব্যর্থ হয়েছি।

বড়রা খালাকে সান্ত¦না দিচ্ছেন- ‘আরে ছেলে তো তোমারই থাকলো, সে তো আর পরের বাড়ি যাচ্ছে না, তোমরা মেয়েকেই তো উঠায়া নিয়া আসবা।’ এক চাচা চিন্টু ভাইকে ডেকে বললেন, ‘আসো বাবা, তোমার মায়ের কাছে বসো, সান্ত¦না দাও তারে।’ চিন্টু ভাই আর কি সান্ত¦না দেবেন? মা-এর এহেন আচরণে তিনিই তো পড়ে গেছেন বিপুল যন্ত্রণায়। এইটা কি শোকের ঘটনা!

খালার কাছে গিয়ে তিনি রাগত স্বরে বললেন- ‘আম্মা তুমি কাঁইদো নাতো।’ খালার বিলাপ আর কান্নার সুর আরও উচ্চগ্রামে উঠলো। চিন্টু ভাইকে ঐ রুমে রেখে আমাদের সকলকে জোরপূর্বক পাশের রুমে পাঠিয়ে দিলেন বড়রা। এই ট্র্যাজিক দৃশ্যের ‘লাইভ’ চিত্রায়ণ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ-বঞ্চিত হয়ে আমরা যার-পর-নাই মনক্ষুণœ হলাম। যাহোক, সে রাতে প্রায় ঘন্টা চারেক বিলাপের পর খালা শান্ত হলেন।

পর দিন সকালে তাকে সবাই মিলে কিরে-কসম কাটিয়ে নেয়া হলো, ঐ বাড়িতে গিয়ে তিনি কান্নাকাটি করবেন না। তাহলে অনুষ্ঠানটা মাটি হয়ে যাবে।

মেয়ের বাড়িতে গিয়ে আমরা বেশ শংকায় রইলাম, খালা আবার কান্না জুড়ে দেন কিনা। এক খালাকে সব সময় তার সাথে থাকতে বলে দিলেন চিন্টু ভাই। নাহ, বেশ হাসি-খুশী ভাবেই তিনি সবার সাথে পরিচিত হচ্ছেন, মানিয়ে নিচ্ছেন। আমরাও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।

কাবিনের সময় মেয়েকে যখন কবুল বলানো হচ্ছে, পলি খালা গেলেন মেয়ের ওখানে। চিন্টু ভাই লজ্জিত মুখভঙ্গি করে বসে আছেন বাবা-চাচাদের সাথে।
হঠাৎ পাশের রুম থেকে হৈ-চৈ-এর শব্দ ভেসে এলো। কি ব্যাপার? চেঁচামেচির মধ্যে কানে এলো- ‘জামাইয়ের মা অজ্ঞান হয়ে গেছেন।’ এ কি মুসিবত! এর চেয়ে তো কান্নাকাটিও ভাল ছিল। গিয়ে দেখি, ধরাধরি করে খালাকে বিছানায় শোয়ানো হয়েছে, কনের পাশে। হবু বউ তার হবু শাশুড়ির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেয়ের এক ডাক্তার আত্মীয় প্রেসার মেপে, দেখে-টেখে বললেন, ‘তেমন সিরিয়াস কিছু নয়। বেশী টেনশনের কারণে বোধহয় জ্ঞান হারিয়েছেন।’

মুখে পানির ছিটা দিয়ে খালার জ্ঞান ফেরানো হলো। এদিকে চারদিকের ফিসফাস কানে আসছে, জামাইয়ের মায়ের নিশ্চয়ই মেয়ে পছন্দ হয় নাই; জামাই মায়ের অমতে বিয়ে করতে আসছে, তাই তো মায়ের এই অবস্থা!
ততক্ষণে দুই বাড়ির মুরব্বীরা মিটিংয়ে বসেছেন পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে। সেইখানেও দুই দল হয়ে গেল। এক দলের মত, অসুবিধা নেই, বিয়ে পড়িয়ে ফেলা হোক। আরেক দলের প্রবল যুক্তি, মায়ের এই অবস্থায় বিয়ে হলে ঐ সংসারে কোনদিনও সুখ হবে না। মেয়ের সুখের তমসাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের আশংকায় মেয়ে-পক্ষের অধিকাংশই দ্বিতীয়োক্ত দলে ভীড় করলেন। জয়ীও হলেন তারাই। অর্থাৎ অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেল পুরো প্রোগ্রাম। চিন্টু ভাই বাকশক্তিরহিত। আমরা ‘চলৎ-শক্তিহীন’ খালাকে পাঁজাকোলা করে গাড়িতে বসিয়ে ফিরে এলাম।

বাসায় এসে পলি খালা পুরোপুরিই সুস্থ। পরবর্তীতে তার কাছে ঐ ঘটনার ব্যাখ্যা চাইলে তিনি তেমন কিছু বলেন না। উভয়পক্ষের গুরুজনেরা এখন বিবাহের উপযুক্ত আরেকটি তারিখ নির্ধারণে ব্যস্ত। চিন্টু ভাই গোমড়া মুখে ঘুরে বেড়ান। আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, পরের তারিখে যেন তার মা পুরো দিন সজ্ঞান থাকেন। প্রার্থনা করেন গোপনে, কিন্তু আমি জানি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:০৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×