মানুষ মাত্রই দুঃখ বিলাসী। তাই নয় কি? এমন একজন কাউকে খুঁজে বের করুন তো, যার কোন দুঃখ নেই। এমন একজন এসে বুকে হাত দিয়ে বলুক তো, "জীবন আমার কেবলই প্রাপ্তিময়। অতৃপ্তির হাহাকার আমাকে কখনো কাঁদায়নি। কিংবা অক্ষমতার বেদনা কখনো আমাকে ভাবায়নি।"
জীবনের আনন্দ তো লুকিয়ে আছে দুঃখের মাঝেই। এই দুঃখের পথ বেয়েই হয়তো কখনো পৌঁছানো যেতে পারে সুখ নামক সোনার হরিণটির কাছে। জগজিৎ গেয়েছেন "দুখ্ কি আন্দার সুখ্ কি জ্যোতি দুখ্ কি সুখ্ কা জান্।" দুঃখ আছে বলেই তো সুখ আজ সোনার হরিণ। নইলে কে কবে সুখের মর্যাদা বুঝত? সেই আলো আর আধারের মতো…"আলো বলে অন্ধকার তুই বড় কালো, অন্ধকার বলে ভাই তাই তুই আলো।"
আশেপাশে কত সুখিজন হয়তো আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখুন, হৃদয়ের কোন্ গহীন কন্দর থেকে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে আসে সুপ্ত দীর্ঘশ্বাস। লুকিয়ে রাখা কোন এক অচেনা দুঃখকে সযত্নে লালন করে কে না রাখে? প্রাচুর্যের চাকচিক্যের আবরণে হাফিয়ে উঠা হৃদয়ও সময় সময়ে সুখের-অসুখ থেকে বাঁচতে… নচিকেতার ভাষায় "দাম দিয়ে যন্ত্রণা কিনতে চায়।" আমরা হয়তো দেখছি, সুখ কারো দুকূল উপচে বয়ে যাচ্ছে অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। ছেলেবেলায় কে না পড়েছে সে কটি লাইন:
"নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস,
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।
নদীর ওপার কহে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে,
যাহা কিছু সুখ ছিল সকলি ওপারে।"
এই দুঃখকে নিয়ে লিখে যুগে যুগে অমর হয়ে গিয়েছেন কত কবি, কত সাহিত্যিক। হয়তো আপন-দুঃখকে বানিয়ে নিয়েছেন লেখার বিষয়বস্তু, কিংবা ধার নিয়েছেন অন্য কারো দুঃখের কাহিনী; কল্পনায় কিংবা বাস্তবে। আজো সেসব লেখা পড়ে দুঃখবিলাসী মানুষের দল নিজেকে সেই দুঃখময় কাহিনীর চরিত্রগুলোর মত করে ভেবে নেয়। সুখময় কোন কাহিনীর চরিত্র হিসেবে নিজেদেরকে কল্পনা করবার সাধ বা আগ্রহ কজনের মনে জাগে? কারণ সবাই যে দুঃখী।
সুখ নিয়ে আপনারা লিখুন। আমি না হয় দুঃখ নিয়েই লিখে গেলাম। সবশেষে জেমসের মতো করে গেয়ে যাই, " আমি এক দুঃখওয়ালা দুঃখ কিনতে চাই, কারো কাছে থাকলে কিছু আমায় দিও ভাই…।"

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



