somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এম ডি মুসা
যে জানে জ্ঞানী গুণী তার কাছে শেখার আছে। মাথামোটার কাছে আমার কিছু শেখার নাই। আচরণে তার বংশের এবং ব্যক্তিক আভিজাত্য প্রকাশ পায়।সম্মান যতটুকু দিবেন ততটুকু ফেরত পাবেন।

বাংলা কবিতার ছন্দ

০৩ রা আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা কবিতার ছন্দ
ছন্দ বলতে আমরা অনেকেই জানি শেষ শব্দের মিলন। কবি আনিসুল হক বলেছেন খাই এর সাথে দাই মিলালে তাকে ছন্দ বলে না।

ছন্দ বিষয় জানতে বই কিনে ছন্দ শিখতে পারেন ‌অথবা অনলাইনে প্রচুর পরিমাণে ছন্দের হাতেখড়ি শেখার সংক্ষেপে আলোচনা করা আছে।

ছন্দ সম্পর্কে কিছু বলা যাক, ছন্দ হলো কবিতার ব্যাকরণ। কবিতার রুল । জাতীয় কারিকুলাম প্রণয়ন করে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা নতুন করে বাংলা ব্যাকরণে অন্তর্ভূক্ত করেছে এই ছন্দের নিয়ম। তাই ছন্দ কবিতায় ছন্দ ব্যাকরণ ভুক্ত। চর্যাপদ বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য প্রথম নির্দেশনা আমরা সকলেই জানি চর্যাপদ মাত্রাবৃত্ত ছন্দ এবং অক্ষরবৃত্তে।

ছন্দ হলো নিয়ম মেনে লেখা কবিতার আইন যেখানে কবিতা লেখার জন্য বিশেষ আইন।
অথবা আমরা জানি আকাশ,বাতাস,নদী পাহাড় পর্বত,ঋতু সকল আপনার গতিতে চলে তাই সেটাকে বলি প্রকৃতির ছন্দ। কবিতার ছন্দ কবিতায় অলংকার সততা কবিতাকে আপন গতিতে চলতে শেখায়।


বাংলা কবিতার ছন্দ তিন প্রকার
(ক) স্বরবৃত্ত
(খ) মাত্রাবৃত্ত
(গ) অক্ষরবৃত্ত

(গ)অক্ষরবৃত্তের শাখা
(১) সনেট
(২) অমৃতক্ষার ছন্দ
(৩)পয়ার
(৪)গদ্য ছন্দ

আলোচনা ঃ

(ক) স্বরবৃত্ত ছন্দঃ যে ছন্দের প্রতিটি মাত্রা ৪ করে সু নির্দিষ্ট তাকে স্বরবৃত্ত ছন্দ বলে।

উদাহরণঃ

জসীম উদ্দিনের কবিতা

এই গাঁয়ের এক/ চাষার ছেলে/ লম্বা মাথার/ চুল,
কালো মুখেই/ কালো ভ্রমর/, কিসের রঙিন /ফুল!
কাঁচা ধানের/ পাতার মত/ কচি-মুখের /মায়া,
তার সাথে কে/ মাখিয়ে দেছে /নবীন তৃণের /ছায়া |
জালি লাউয়ের /ডগার মত /বাহু দুখান/ সরু,
গা-খানি তার /শাঙন মাসের /যেমন তমাল/ তরু |
বাদল-ধোয়া /মেঘে কে গো /মাখিয়ে দেছে /তেল,
বিজলী মেয়ে/ পিছলে পড়ে /ছড়িয়ে আলোর/ খেল |
কচি ধানের /তুলতে চারা/ হয়ত কোনো/ চাষী,
মুখে তাহার/ ছড়িয়ে গেছে/ কতকটা তার /হাসি |
কালো চোখের /তারা দিয়েই/ সকল ধরা /দেখি,
কালো দতের/ কালি দিয়েই/ কেতাব কোরাণ/ লেখি |
জনম কালো,/ মরণ কালো,/ কালো ভূবন/ময় ;
চাষীদের ওই /কালো ছেলে /সব করেছে /জয় |
সোনায় যে জন /সোনা বানায়,/ কিসের গরব/ তার’
রঙ পেলে ভাই/ গড়তে পারি /রামধণুকের/ হার |

ব্রেকেডের প্রতিটি ভাগে চার মাত্রা করে আছে। উদাহরণ সহ বিস্তারিত আলোচনা করি, প্রথম দুই লাইন এর বাকিটা আপনারাই পরিমাপ করে নেন
[এই ১ গা১য়ের১ এক১]= মোট ৪
[চা১ ষার২ ছে১ লে১]=মোট ৪
[লম১বা১ মা১থার১]=মোট ৪
চুল ১ অতিরিক্ত পর্ব

[কা১লো১ মু১খেই১ ]=৪
[কা১লো১ ভো১ মোর১]=৪
[কি১সের১ র১ঙিন১]=৪
ফুল ১ অতিরিক্ত পর্ব

পণ্ডশ্রম
- শামসুর রাহমান-

এই নিয়েছে/ ঐ নিল যাঃ!/ কান নিয়েছে /চিলে,
চিলের পিছে/ মরছি ঘুরে /আমরা সবাই /মিলে।
কানের খোঁজে/ ছুটছি মাঠে, /কাটছি সাঁতার/বিলে,
আকাশ থেকে /চিলটাকে আজ/ ফেলব পেড়ে/ ঢিলে।
দিন-দুপুরে/ জ্যান্ত আহা,/ কানটা গেল /উড়ে,
কান না পেলে/ চার দেয়ালে /মরব মাথা/ খুঁড়ে।
কান গেলে আর/ মুখের পাড়ায় /থাকল কি-হে/ বল?
কানের শোকে/ আজকে সবাই/ মিটিং করি/ চল।
যাচ্ছে, গেল/ সবই গেল, /জাত মেরেছে/ চিলে,
পাঁজি চিলের/ ভূত ছাড়াব/ লাথি-জুতো/ কিলে।
সুধী সমাজ!/ শুনুন বলি,/ এই রেখেছি /বাজি,
যে-জন সাধের /কান নিয়েছে/ জান নেব তার /আজই।

মিটিং হল /ফিটিং হল,/ কান মেলে না/ তবু,
ডানে-বাঁয়ে/ ছুটে বেড়াই/ মেলান যদি/ প্রভু!
ছুটতে দেখে /ছোট ছেলে /বলল, কেন/ মিছে

কানের খোঁজে/ মরছ ঘুরে /সোনার চিলের/ পিছে?
নেইকো খালে/, নেইকো বিলে,/ নেইকো মাঠে /গাছে;
কান যেখানে/ ছিল আগে /সেখানটাতেই /আছে।
ঠিক বলেছে,/ চিল তবে কি/ নয়কো কানের/ যম?
বৃথাই মাথার /ঘাম ফেলেছি/, পণ্ড হল /শ্রম।

এই ১ নি১য়ে১ছে১= মোট ৪
ঐ ১নি১লো যা১ =মোট ৪
কান১ নি১য়ে১ছে১=৪

চি১লে১=মোট২ অতিরিক্ত পর্ব
সবগুলো পর্ব ৪ করে বলেই স্বরবৃত্ত।

বদ্ধাক্ষর ১ মুক্তক্ষর ১ মাত্রা

(খ) মাত্রাবৃত্ত
যে কবিতার মাত্রা ৪,৫,৬,৭ করে থাকে
তাকে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ বলে।

এখানে বদ্বাক্ষর ২ মাত্রা মুক্তাক্ষর ১
উদাহরণ
এই খানে তোর/ দাদির কবর/ ডালিম গাছের/ তলে
তিরিশ বছর/ ভিজিয়ে রেখেছি/ দুই নয়নের জলে।
কবর কবিতা- জসীম উদ্দিন

এখানে ৬ করে আছে প্রতিটি মাত্রা যেমন
এই২ খানে ২ তোর২=মোট ৬
এইভাবে সবখানে যে কবিতাটি ৪, করে শুরু করতে হবে পুরো কবিতা চার থাকতে হবে।
যেমন সফদার/ ডাক্তার/মাথা ভরা/ টাক তার
খিদে পেলে/ পানি খায় /চিবিয়ে

কবি হোসনেয়ারা
এখানেই চার করে আছে‌।
এইভাবে আপনি চার, পাঁচ, ছয়,সাতে লেখতে পারেন।

আমার নিজের একটা কবিতা
মাত্রাবৃত্ত উদাহরণ,

ভোরের শরীরে/ লেগে আছে মন/
স্যাঁতস্যাঁতে মাটি /বৃষ্টির জ্বালা/তনে,
জানলার কাছে/ জলের বিভাগে/
আধুনিক হয়ে/ বসে আছি সনা/তনে।

কাঙাল রোদকে /মেঘ অবরোধে/
হরতাল ডাকা/ আকাশের নিচ,/
পশু পাখি ফুল /ফ্যাকাশে ফ্যাকাশে/
প্রকৃতির মনে/ আজ নেই দিশ।/

একাকি আমার/ মনে করে দেয়/
কলিজার কাছে/ প্রিয়জন টানে,/
রবীন্দ্র গানে /গুনগুন সুরে/
কল্পনা জুড়ে /আমাকেই আনে/।


বসে বসে দেখি /আধুনিক ঢালে/
ছেয়ে গেছে আজ/ মানুষের তালে,/
বৃষ্টি বর্ষা /সকাল দুপুর/
আছে সনাতন /এ যাবত কালে।/
৬+৬+৬+৬/২
কোথায় অতিরিক্ত পর্ব ছাড়া

(গ) অক্ষরবৃত্ত ছন্দ
অক্ষরবৃত্ত ছন্দ লেখতে আদি নিয়ম ৮+৬
করে পয়ার লেখা হতো
তারপর সনেট ৮+৬ সহ অনেক নিয়ম রয়েছে
অমৃতক্ষার ছন্দ লেখার জন্য
কিছু কতিপয় নিয়ম আছে
৮+৬+৪
৮+২
৮+৮
১০+৮
৮+৮+৮
৮+৪+৬
৮+৮+৪
এইভাবে পারা যায় বিস্তারিত শিখতে একটি বই কিনে পড়ূন।

উদাহরণ আলোচনা করা হলোঃ

দারিদ্র্য
কাজী নজরুল ইসলাম

হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে/ করেছ মহান্‌।
তুমি মোরে দানিয়াছ/ খ্রীষ্টের সম্মান
কন্টক-মুকুট শোভা।/-দিয়াছ, তাপস,
অসঙ্কোচ প্রকাশের/ দুরন্ত সাহস;
উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি,/ বাণী ক্ষুরধার,
বীণা মোর শাপে তব/ হ’ল তরবার!
দুঃসহ দাহনে তব/ হে দর্পী তাপস,
অম্লান স্বর্ণেরে মোর /করিলে বিরস,
অকালে শুকালে মোর/ রূপ রস প্রাণ!
শীর্ণ করপুট ভরি’/ সুন্দরের দান
যতবার নিতে যাই-/হে বুভুক্ষু তুমি
অগ্রে আসি’ কর পান! /শূন্য মরুভূমি
হেরি মম কল্পলোক/। আমার নয়ন
আমারি সুন্দরে করে /অগ্নি বরিষণ!

এখানেই ৮+৬ করে লেখা প্রথমে ৮ মাত্রা
পরে ৬ তাই অক্ষরবৃত্ত সবচেয়ে সুবিধা হলো
অক্ষর গোনে লেখা যায়।

রকমারি তে বাংলা ছন্দ বই আপনি গুগল সার্চ দিয়ে পেতে পারেন।

লেখা এবং আলোচনা মোঃ মুসা শশীভূষণ,
চরফ্যাশন ভোলা।
ফেসবুক আইডি http://www.facebook.com/musa015754
Email [email protected]
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:৫২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×