আমরা একবিংশ শতাব্দীর হোমো সেপিয়েন্স, বর্তমানে আমাদের জীবনে বিজ্ঞানের কল্যানে সবই আছে এই জীবন উপভোগ করার জন্যে কিছুটা আরামদায়ক ভাবে। আমরা যেভাবে কিছু টা হলেও এই টেকনোলজি এবং বিজ্ঞানের সুবিধা ভোগ করছি, আমাদের পিতা কিংবা পিতামহ সেভাবে উপভোগ করেন নি, তো তাতে কি তারা বিলুপ্ত হোয়ে গিয়েছিল?
মোটেও না, আমি ভাবি বরং তারা আরো ভালো ছিলো।
এই টেকনোলজি আমাদের জীবন কে যেমন আরাম এনে দিয়েছে তেমনি আমাদের বানিয়েছে দুর্বল এবং অন্যের উপর নির্ভরশীল।
আমরা দুই কদম হাটতে চাই না, রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ায় হাত দিয়ে বাস থামাই, আর সেই জন্যে পিছন লাইনে এক এক এক এক করে সব যানবাহন ধীর গতি হয়ে যায়। আমরা সিড়ি দিয়ে উঠতে চাই না, কারোর বাসায় বেল দিতে চাই না, বরং দরজার সামনে দাঁড়ায় কল দিয়ে বলি এই দরজা খোল। আমরা চাই বাজার আমাদের বাসার সামনে বসুক, ১ কিমি হাটতেও আমাদের কষ্ট হয়।
আপনি জানেন আমরা জানি, আমদের উজড়ে চামান মেয়র জানেন রিক্সা আমাদের গতি কিভাবে কমিয়ে দিচ্ছে, এই একবিংশ শতাব্দী তেও আমাদের পায়ে চালিত যানবাহনে চড়তে হচ্ছে, বিষয়টি অপমান জনক। হ্যা কিন্তু রিক্সা বন্ধ হলে, আপনি তো হাটতে পারবেন না, কারন হাটার জন্যে রাস্তা নেই, ফুটপাথ হলো দোকানদার দের, সেখান দিয়ে হাটবেন কেনো? আপনি রাস্তা দিয়ে হাটবেন, হ্যা সেখানেও দোকান পাবেন, অবৈধ পার্কিং পাবেন কিংবা ড্রেনের ঢাকনা খোলা পাবেন, আপনি ঢাকা তে এমন কোনো ফুটপাথ পাবেন না যেখানে মেঝের টাইলস পুরো পুরি পারফেক্ট ভাবে লাগানো, একটু পর পর দেখবেন কোথাও টাইলস দেবে গেসে কিংবা টাইলস উধাও, হ্যা একমাত্র ব্যাতিক্রম বারিধারা, ডিওএইচএস, গুলশান, আর আর্মিদের এলাকা। আর্মিরা ওদের ওইটুকু অঞ্ছল খুব পরিপাটি করে রাখে আর শহরের বাকি অংশ গোল্লায় যাক।
এখন যেহেতু সভ্য হওয়ার কথা বলেছি তাহলে শুরু করি বাস দিয়ে, বাস কেনো এত গুরুত্বপূর্ণ। একটি রাষ্ট্রের সবাই আত্মকেন্দ্রিক সফল কিংবা সচ্ছল থাকতে পারে না, বিভিন্ন শ্রেণীর সংমিশ্রণ থাকে, লেবার ক্লাস,হার্ডওয়ার্কিং মিডল ক্লাস, ফার্স্ট ক্লাস, তারপর সরকারী কর্মকর্তা কিংবা দূর্নীতী তে আংগুল ফুলে কলাগাছ হওয়া প্রাণীসমূহ। চলাফেরার জন্যে যাদের গাড়ী কিংবা বাইক নেই , দূরের যাত্রার জন্যে তাদের বাস অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটা মাধ্যম। এখন আপনি হলেন খেটে খাওয়া স্বল্প বেতন ভুক্ত মানূষ তাই আপনার জন্যে রয়েছে সুবব্যস্থা।
এমনটি নয় যে আপনি বাস স্ট্যান্ড এ দাড়াবেন আর বাস আপনার সামনে থামবে, আর আপনি বিনা কোনো পেরেশানি তে বাস এ উঠবেন, হয়ত আপনি বসবেন নাহয় দাঁড়ায় থাকবেন। এমন হলে তো ভালোই হতো।
আপনি যদি অফিসগামী হন কিংবা কোনো পার্টি/অনুষ্ঠানে যাবেন, আপনি যে সুন্দর আয়রণ করা পোষাক নিয়ে ঊঠবেন, নামার পর দেখবনে সেই আয়রণ করা শার্টে রীতিমত ঘাম কিংবা মানুষের ঘষাঘষি তে একদম আন্দিজ পর্বতমালার মতন ডিজাইন হয়ে গিয়েছে।
আপনি শত কষ্টে বাসে উঠলেন, এখন সিট না থাকলে আপনি কোনো এক সিট ধরে দাঁড়ায় থাকবেন আর মাদকগ্রস্ত চেহারা বিশিষ্ট হেলপার আপানাকে বলবে ভাই আরো পিছে যান আরো পিছে যান আরো পিছে যান পিছে আরো যায়গা আছে। বাসটি পুরো পুরি মুরগীর খামার না হওয়া পর্যন্ত তারা যাত্রী নিতেই থাকবে নিতেই থাকবে আর আপনি ক্রমাগত আরো পিছে সরবেন। তা নাহয় গেলো, এখন আপনার বাস থেকে নামার পালা, আপনাকে নামতে হলে, যারা আপনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে তাদের পাছার সাথে আপনার পাছা ঘষা দিয়ে দিয়ে একটু একটূ করে আগাতে হবে, এখন আপনি চলে আসলেন দরজার সামনে যেখানে দেখবেন একদল বানর যারা দরজায় ঝুলে আছে, তাদের ঠেলতে হবে, তারা যদি নিচে নেমে যায় তাহলে আপনি সেই ছুট্টূ দরজা দিয়ে নামবেন।
এখন এই গেলো মধ্যম শ্রেণীর বাসের সুব্যাবস্থা।
এখন আপনাকে দেখাই আসলে প্যাসেঞ্জার বাস কেমন হওয়া উচিৎ।
বাসের ভিতর একটু চওড়া থাকবে যাতে সবাই নিজ পজিশন মত দাড়াতে পারে। বাসে থাকবে দুটি দরজা, সামনের দরজা দিয়ে যাত্রী বাসে উঠবে আর পিছনের দরজা দিয়ে যাত্রী নামবে, যাতে রেশা রেশি না হয়।
শুনতে অবাক লাগবে যে বাস গুলো আমাদের শহরে চলে সেগুলো মূলত পিকনিক বাস।
এখন আমি সভ্য প্রজাতি কি কেমন কয় প্রকার সেটা বলতে যাবো না, আমি শুধু বাসের উদাহরন দিলাম, আরো অনেক উদাহরন দেওয়া যায়। আপনি মানুষ কে কিভাবে বাধ্য করবেন সভ্য হতে?
১। আইন কানুন কড়া করবেন? ২। সবখানে নজরদাড়ি বাড়াবেন? ৩। শাস্তির পরিমান বাড়াবেন? ৪। সচেতনতার ক্যাম্পেইন করবেন?
নাকি সিস্টেম বদলাবেন? এগুলো সবই করা হয়েছে মোটামুটি। কিছুই হবে না, কারন যারা এইসব আয়োজন করবে কিংবা ব্যাবস্থা নিবে তারাই বা কতটুকু সভ্য আগে সেটা ভেবে দেখেছিন কি? আপনার থালা ময়লা থাকলে যতই ভালো খাবার রাখেন না কেনো খাবার তো ময়লা হবেই।
মোহাম্মাদপুরে কোনো এক এলাকায় সব রাস্তার মোড়ে মোড়ে ডাস্টবিন রাখা হয়েছিল যাতে মানুষ ময়লা সেখানে ফালায়, মাস যেতে না যেতেই সেই ডাস্টবিন ময়লার ঝুড়ি গায়েব।
আপনি আর আপনার পরের প্রজন্ম এই রাস্তাতেই ময়লা ফেলবে চিপসের প্যাকেট কোকের বোতল কিংবা ঝালমুড়ির ঠোংগা।
আসলেই আপনাদের জন্যে এই সরকার ঠিকই ব্যাবস্থা নিয়েছে, ধাক্কা দিয়ে বাসে উঠবেন,বান্দর এর মতন ঝুলবেন, নাক মুখ চেপে দুর্গন্ধ শুংগে শুংগে রাস্তায় হাটবেন।
আপনার সভ্য হওয়ার দরকার নেই। যাদের সভ্য হওয়া দরকার তারা ঠিকই আমলনামা গুছিয়ে আপনার ট্যাক্সের টাকায় ছেলে মেয়েদের অলরেডী কানাডা পাঠিয়ে দিয়েছে আর কিনেছে কয়েকটা বাড়ী।
এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, প্রতিবাদ করার শক্তি নাই, কোনটা নিয়ে প্রতিবাদ করবো সমস্যা তো হাজার টা। অফিস থেকে আমাকে ছুটি দিবে না, পল্টন কিংবা মতিঝিলে গিয়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে আন্দোলন করার জন্যে। করলেও কিবা হতো?
আমি এখন শুধু চাই শনিবার ছুটি বাধ্যাতা মূলক করা হোক সব বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। শুক্র শনি এই দুই দিন শুধু বাসায় থাকতে চাই, রাস্তায় ভালো লাগে না দুর্গন্ধ শুকে রাস্তায় হাটতে কিংবা বান্দর এর মতন ঝুলে ঝুলে অফিস যেতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১১:০৩