somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - সমাধান

২৫ শে মে, ২০০৯ সকাল ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধ্যা নেমেছে। একা হাঁটছি রাস্তায়। আধো আলো আধো ছায়ার এক আধো ভৌতিক পরিবেশ। মাথার ভেতর বিক্ষিপ্ত চিন্তা ভাবনা সব ছুটোছুটি করছে। মনের মাঝে চরম অস্থিরতা। রাস্তার পাশের ডাস্টবিনে শুয়ে আছে ৭-৮ বছরের একটি ছেলে। তার সাথের আরেকটি ছেলে ময়লা ঘেটে কিসব যেন বের করছে। দেখে আমার খুব একটা ভাবান্তর হল না। যেন খুবই সাধারন একটি ঘটনা। আমি খুবই স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে পার হয়ে আসলাম ডাস্টবিনটা। গন্তব্য শহীদ ভাইয়ের চায়ের দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যায় হাঁটতে বের হই তারপর শহীদ ভাইয়ের দোকানে এক কাপ চা আর একটা বনরুটি এই পর্যন্ত রুটিন ঠিক আছে। কিন্তু এরপর যে কি করব তা ঠিক কর হয় তাৎক্ষনিকভাবে। যখন মাথায় যা আসে।

আজ কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ একটা রিক্সাওয়ালকে ডাকলাম। রিক্সাওয়ালা কাছে আসতেই এক ভাবনায় ডুবে গেলাম। আচ্ছা আমরা রিক্সাওয়ালকে 'এই রিক্সা' বা 'এই খালি' বলে ডাকি কেন? এই চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছি এইদিকে রিক্সাওয়ালা আমাকে ডাকছেই। শেষের 'পাগল নি কোন?' ছাড়া তার কোন কথাই আমার কানে যায়নি। খেয়াল হতেই হুট করে বললাম "ঈদগাহ ঝর্ণা পাড়া যাবেন? " জবাবে রিক্সাওয়াল বলল "হ যামু" আমি রিক্সায় উঠে বললাম "রিক্সা চালান" রিক্সাওয়ালা বলল "দাম করবেন না?" আমি বললাম "আগে জায়গা মত নিয়ে চলেন তারপর ওখানে গিয়ে দাম করব"। রিক্সাওয়ালার মনেহয় খুব অবাক হলো। তবে আর কিছু না বলে রিক্সা চালানো শুরু করল। আমার হঠাৎ মনে হল কি ব্যাপার আমি ঝর্ণা পাড়া কেন যাচ্ছি? যদিও ওখানে আমার খালার বাসা তবুও হঠাৎ ওই জায়গার নাম কেন মনে আসলো? আর খালার বাসায় আমি নিয়মিত যাই তাও নয়। বছরে দুইদিন যাই তাও দুই ঈদে।

খালার বাসায় পৌছে দরজায় টোকা দিলাম। মেজাজ খুবই খারাপ হয়ে আছে। সুযোগ পেয়ে রিক্সাওয়ালা ২০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা নিয়েছে। আমার বড়খালার একমাত্র মেয়ে শিল্পী আপু দরজা খুলে দিল। আমাকে দেখে এমন ভাবে তাকাল যেন ভূত একটা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের ভেতর থেকে খালার গলার আওয়াজ পেলাম-

"কিরে শিল্পী কে এসেছে?"
"রোবট এসেছে" জবাবে শিল্পী আপু বলল।

কোন এক কারণে শিল্পী আপুর ধারনা আমি রোবট টাইপের মানুষ তাই তার এই নামকরণ। আমি ঘরে ঢুকেই খালাকে সালাম করলাম। খালা একটু রেগে আছেন মনেহয়। অন্তত আমার তাই মনে হল। উনি রাগত স্বরে বললেন-

"এতদিন পরে খালার কথা মনে পড়ল? তুই কি এমন কাজ করিস যে একটু দেখতে আসার সময় পাস না?"

"তুমি তো জান আমি বছরে দুইদিন বেড়াই। তারপরও সব সময় এক কথা বল কেন?"

"তবে আজকে এলি কোন দুঃখে? আজকে তোর ঈদের দিনের মত মনে হচ্ছে?"

কি আর উত্তর দিব? কেন এসেছি তা তো নিজেই জানি না। তাই বললাম-

"তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হল তাই...।" এতটুকু বলার পর আর মুখ দিয়ে কিছুই বেরুচ্ছিল না।

শিল্পী আপু বলল-

"না আম্মু তুমি জানোনা রোবটের মাথায় একটা সেন্সর চিপ থাকে? ওর ওই চিপটাতেতো আগে থেকেই গন্ডগোল ছিল এবার মনেহয় পুরা অচল হয়ে গেছে"। বলে নিজের কথায় নিজেই হেসে উঠলো।

প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে নিজের বিপক্ষে ওনাদের অভিযোগ শুনে ক্লান্ত হয়ে পরলাম। আর সহ্য হচ্ছিল না তাই হুট করে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম "খালা আমি আসি এখন, আরেকদিন আসব"। খালা তো ছাড়বেই না। রাতে না খেয়ে যেতে দেবেন না। তবে আমিও নাছোড়বান্দা যাবই যাব। অবশেষে আমার জয় হল। তবে অনেকগুলো গালির বিনিময়ে ছাড়া পেলাম।

খালার বাসা থেকে বের হয়ে ঠিক করলাম হেঁটে বাসায় ফিরব। পথে সেই রিক্সাওয়ালটাকে দেখলাম দাঁড়িয়ে আছে রিক্সা নিয়ে আর আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে যেন আমি লাফিং গ্যাস দিয়ে তৈরী, আমার উপস্থিতি হাসির উৎপত্তির করণ। মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে দেখে আকাশের দিকে তাকালাম। আজকের রাতটা চমৎকার। চাঁদনী রাত। চারিদিকে চাঁদের আলো ঝলমল করছে। ইস এখন যদি কারেন্ট চলে যেত আরো ভাল হত। চাঁদনী রাত ভালই উপভোগ করতে পারতাম। এই ভেবে গান শুরু করে দিলাম "চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙ্গেছে..........."।

চলবে.................
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×