মোবাইল নিয়ে আমার বিড়ম্বনার শেষ নেই। আমার মোবাইলে কারো নাম্বার সেইভ করা থাকে না। তাই কে ফোন করল বুঝতে পারি না। একবার আমার বড় মামী ফোন করলেন। আমাকে বললেন "তুই কোথায়?"। আমি বললাম "আপনাকেতো চিনতে পারলাম না আপু"। শুনে মামীতো মহা ক্ষ্যপা আমার উপর। অনেকদিন আমার সাথে কথা বলেননি। সেই থেকে ঠিক করেছি কোন নারীর কন্ঠ শুনলে আপু বলব না।
আজকে অফিস থেকে বাসায় ফিরছি। মনের মাঝে চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ চিন্তায় বাঁধা দিয়ে বেজে উঠল ফোনটা। রিসিভ করতেই একজন মহিলা বললেন
"তুমি কোথায়?"
"আমি রিক্সায়"
"অফিস ছুটি?"
"হ্যাঁ"
"একটু বাসায় আসোতো"
"বাসায়তো যাচ্ছি"
"আরে গাধা আমাদের বাসায়"
"আপনি কে?"
"এতক্ষনে জিজ্ঞেস করছো আমি কে? আমি তোমার ভাবী"
"ওহ! এখনই আসতে হবে?"
"হু এখনই"
"আচ্ছা আসছি"
বাসায় ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে রওনা দিলাম ভাইয়ার বাসার উদ্দ্যেশ্যে। মন একটু খারাপ হয়ে আছে। আজকের সন্ধ্যার রুটিনে হেরফের হবে। কি আর করা? একরকম বাধ্য হয়েই যাচ্ছি। রিক্সাওয়ালাকে বললাম
"মোগলটুলী যাবেন?"
রিক্সাওয়ালা আমার কথা শুনে কেমন যেন উদাস হয়ে গেল। উদাস উদাস ভাব নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভাবলাম বোধহয় মোগলটুলী চিনে না। তাই মোগলটুলী কোন জায়গায় তা বললাম। উত্তরে রিক্সাওয়ালা বলল -
"ভাড়া কত?"
আমি পুরা অবাক হয়ে গেলাম। আরে রিক্সা ওই ব্যাটা চালায় নাকি আমি চালাই। নিজেকে ক্ষনিকের জন্য রিক্সাওয়ালা মনে হল। তাই আর সেখানে দাঁড়ালাম না। সোজা হাঁটা দিলাম। আরেকটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লাম। রিক্সায় উঠতেই হঠাৎ মনে হল আচ্ছা রিক্সা চালানো কি খারাপ কিছু? খারাপ কিছু যদি নাই হবে তাহলে আমার নিজেকে রিক্সাওয়ালা মনে হওয়াতে এমন আচরণ কেন করলাম? মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল।
ভাইয়ার বাসায় যাওয়া মাত্র ভাইয়ার ছোট মেয়েটা দৌড়ে আসল আমার কাছে।
"চাচ্চু আপ্পি দাও"
"আগে সাবান দিয়ে মুখ ধুয়ে আয় যা"
"আপ্পি দাও বলছি নাইলে তোমাকে মিষ্টি কুমড়া খাওয়াবো জোর করে"
মিষ্টি কুমড়া আমার অপ্রিয় খাদ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। আমি বুঝিনা মিষ্টি তরকারী মানুষ খায় কি করে? আমার ভাইয়ার মেয়ে ছোটটা জানে আমি মিষ্টি কুমড়া খাইনা তাই কথায় কথায় আমাকে মিষ্টি কুমড়ার হুমকি দেয়। ওর হুমকিতে চেহারায় কৃত্রিম ভয় ফুটিয়ে তুলে কোলে নিলাম। আপ্পিও দিলাম। এরপর শুরু হল ওর কাহিনী -
"চাচ্চু জানো আমাদের স্কুলে না কিয়া (ক্রীড়া) প্রতিযোগিতা হচ্ছে।"
"তাই নাকি? তুই কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিস?"
"আমি দৌড় খেলায় লাস্ট হয়েছি (বলে এমন একটা হাসি দিল যেন দুনিয়া জয় করেছে)। মার্বেল খেলায় ফার্স্ট হয়েছি। চাচ্চু জানো আমি যেমন খুশি তেমন সাজোতে কি সাজবো?"
"কি? ফকির সাজলে তোকে খুব মানাবে"
"না। আমি রেড ইন্ডিয়ান খিকা সাজবো।"
"রেড ইন্ডিয়ান তো বুঝলাম। কিন্তু খিকা টা কি জিনিস?"
"আরে গাধা বুঝ নাই? আমি রেড ইন্ডিয়ান সাজলে আমার নাম হবে খিকা"
ওর কথা শুনে হাসতে হাসতে আমার পেট ফেটে যাওয়ার উপক্রম তখনই ভাবী আসলো।
"তুমি আমার রুমে আসো তোমার সাথে জরুরী কথা আছে"
এবার আমার বুকে কাঁপুনি ছুটে গেল। ভাবীর জরুরী কথা মানে হল ওনার মাথায় কোন একটা সন্দেহ দানা বেঁধেছে। এখন আমাকে দিয়ে সেই সন্দেহ সত্যি কিনা তা যাচাই করাবে। একবার ওনার মাথায় সন্দেহ জাগলো ভাইয়া কোন মেয়ের সাথে ঘুরা ঘুরি করে। আর ওনার সেই সন্দেহের কারণ হলো উনি স্বপ্নে দেখেছেন ভাইয়া কোন মেয়ের সাথে খুব হাসাহাসি করছেন। আর ওনার সন্দেহ সত্যি কিনা তা দেখার জন্য আমাকে একদিন টানা ৬ ঘন্টা রোদের মধ্যে ভাইয়াকে পাহাড়া দিতে হয়েছে। ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। দুরু দুরু বুকে ভাবীর রুমের দিকে গেলাম। মনের মাঝে প্রশ্ন না জানি ভাবী আবার কোন স্বপ্নে পাওয়া ঔষধের দেখা পেলেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



