somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশে উচ্চশিক্ষা: লেখালেখি করা (পর্ব-৫)

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে যে জিনিসটি আপনাকে অনেক প্রতিযোগীর মধ্য থেকে এগিয়ে রাখতে পারে তা হল - 'যোগাযোগ'। ভাল করে বললে প্রফেসর (আপনার হবু সুপারভাইজর) এর সাথে যোগাযোগ। আমি নিজে বিরাট এক্সপার্ট না, তবে ধরা খেয়ে, ঠেকে-শিখে কিছুটা জেনেছি- সেটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করব।



১. কাকে মেইল করব?
নিশ্চয়ই আপনার মনে হয় যে যাদের নাম আপনার কাঙ্ক্ষিত ডিাপার্টমেন্টে আছে তাদের সবাইকে মেইল করে ফেলি। কেউ রাজি হলে হল, আর নাহলে নাই।

আসলে মেইল করতে আপনার কিছুটা সময় খরচ হয়, কেন অযথা সময় নষ্ট করবেন? কোন উইনির সাইটে (মনে হয় কানাডার কুইন্স) দেখেছিলাম লেখা ছিল: Please do not bombard our faculties with mail! কিছুটা ফিল্টার করে নিন।

প্রথমে প্রফেসর এমিরেটাসদের বাদ দিন। তারা বুড়ো মানুষ, তারা কোন স্টুডেন্টের সাথে সাধারণত: জড়াবেন না।

এরপর বাদ দিন ভিজিটিং প্রফেসর/ ফ্যাকাল্টিদের। তারা এসেছেন কদিনের জন্য, সময় শেষে চলেও যাবেন; আপনাকে নিয়ে তাদের কোন চিন্তাই করার সুযোগ নেই। (যদি না তার চাকরি সেই বছর পার্মানেন্ট হয়ে যায় )

এরপর একটু বুড়োদের বাদদিন যারা রিসার্চ করেন না কিন্তু সবাইকে না। যেসব বুড়ো প্রফেসর গত কয়েকবছর ধরে কোন পেপার করেন নি, বা যার পেজে লেখা: "আমার ৬০টি পেপার বিভিন্ন জায়গায় ছাপা হয়েছে" কিন্তু রিসেন্টলি কিছু নেই তাদেরকেই কেবল বাদ দিন। অন্য 'বুড়োদের'ও ট্রাই করুন।

যারা কোন একটা গ্রুপের তত্ত্বাবধান করছেন, তাদের গ্রুপে লোক নেবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

একটা ছোট ঘটনা বলি: আমার এখানে এক ভাইয়ার পিএইচডি প্রায় শেষের দিকে,* উনি নাকি একটা মেইল পেয়েছেন যেখানে একজন তার আন্ডারে পোস্ট-ডক করতে চেয়েছে। এর কারণ হল, ঐ লোক কোন পেপার বা কনফারেন্স প্রসিডিং থেকে নাম আর মেইল আইডি যোগাড় করেই মেইল করে দিয়েছে।

[ *অনেক আগের লেখা, এখন উনি পিএইচডি শেষ করে ইন্টেল এ জব করছেন:) ]

২. কি বলে ডাকব? (কি শুধাইব আমি তারে:D)
সত্য কিনা জানি না, আমার এক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম, একবার এক প্রফেসর ই-মেইল পেয়ে ঢাকায় পত্রপ্রেরককে ফোন করেছিলেন- তাকে ঝাড়ি দেবার জন্য:-/ কারণ, ই-মেইলের সম্বোধন তার পছন্দ হয় নি। (সবাই অবশ্যই এরকম স্পর্শকাতর না)

যা লিখবেন না: SirDear Sir :-*
কারণটা বলি, বিদেশে অনেক সময়ই 'স্যার' সম্বোধন করা হয় সৈজন্যের জন্য। পুলিশ আপনাকে থামিয়ে লাইসেন্স চেক করার সময় আপনাকে স্যার বলবে, দোকানে ক্যাশিয়ারও তাই বলবে এমনকি আমাকে একজন প্রফেসর (যিনি Ph.D. করেছেন ১৯৬২ তে:-/) আমাকে একদিন বললেন, Thank You, Sir. আমি বাস থেকে নামার আগে চালককে বলি Thank You, Sir। কাজেই Dear Sir বা Sir বাদ দেয়া ভালো।(আবারো বলছি সবাই একরকম না, অনেকে হয়ত কিছুই মনে করবে না)

যা লেখা যায়: Dear Dr. Lastname Dear Professor......, Dear Professor Dr. Lastname, Professor Dr. Lastname

একটা জিনিস মনে রাখবেন, এঁদের কাছে Professor কথাটা Dr. এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে। (বেশিরভাগ সময়ে, সবসময় না

সংযোজন: রাগিব ভাই বলেছেন: যাকে লিখবেন, তার ফার্স্ট নেইম ব্যবহার করে লিখলে অন্তত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা বেশ রাগ হতে পারে।

৩. মেইলে কি লিখব?
নানা মুনির নানা মত। এ বিষয়ে অনেক কথা শুনেছি অনেকের থেকে। আমার ব্যক্তিগত মত হল, খুব বেশি কথা না লেখা, অল্প কথায় গুছিয়ে লিখুন আপনার উদ্দেশ্য। সাথে একটা বায়োডাটা অ্যাটাচ করে পাঠাতে পারেন। আপনার ভাগ্য ভাল হলে হয়ত 'তিনি' ওটা খুলেও দেখতে পারেন। [অনেকের মতে মেইলের অ্যাটাচমেন্ট পড়ার সম্ভাবনা কম, তাই মেইলের বডিতে বেশি লেখা ভালো] যাই হোক, এ দুয়ের মাঝামাঝি পথে চলে দেখতে পারেন। (আমি দুরকমই করেছি)

৪. কখন মেইল করবেন?
আপনার সময়ে নয়, আপনার 'প্রিয়':| প্রফেসরের ওয়ার্কিং আওয়ারে মেইল পাঠান। নাহলে, সকালে তাদের মেইল বক্সের নতুনএকগাদা মেইলে আপনি হারিয়ে যেতে পারেন।

একটা দুঃখজনক সত্য হল, আমাদের মেইলের জায়গা বেশিরভাগ সময়ই ঠাঁই হয় তাদের Junk Mail এ:((:((:((

আপনি প্রথমে মেইল করার ৭দিন পর আরেকটা মেইল করতে পারেন, তারপর আর খোঁচাখুঁচি করা নিরর্থক। (এখানেও ব্যতিক্রম আছে :-* )

৫। জিমেইল ব্যাবহারে সাবধানX((:

জিমেইলে মেইল টাইপ করতে করতে, একটা ট্যাব আর স্পেস পরপর দিলে কি হয়? দুম করে অর্ধেক-লেখা মেইলটা চলে যায়X(( আমার সাথে এটা কয়েকবার হয়েছিল।) পরে এখন যেটা করি তা হল, মেইল টাইপ করার সময় TO খালি রাখি, মেইল শেষ করে তারপরে ঠিকানা লিখি।

যা লিখবেন না: (শুধুমাত্র প্রথম মেইলের জন্য, পরের গুলোর জন্য প্রযোজ্য নয়)
"প্লিজ আমাকে ফান্ড দিন"
"আমি আপনার সাথে কাজ করতে চাই, কারণ এই কাজ গুলোর ডিমান্ড আছে বাজারে।"
"আমি খুব ভালো ছাত্র/ছাত্রী"
"আপনার মত বিখ্যাত লোকের সাথে কাজ করার ইচ্ছা আমার অনেক দিনের" (তেল বর্জনীয়)
"আমি অনেক কিছু পারি, যা অন্যরা পারে না" (বরং, কি কি পারেন সেটা লিখুন)
"সবাই বলে, এই বিষয়ে আমি খুব ভালো করব"

৬। আমাকে কি তাহার ধরিয়াছে মনে?:
এটা একটা কঠিন সমস্যা। অনেক সময় তাঁরা এমনভাবে কথা বলেন যে বোঝা যাচ্ছে না, আমাকে পছন্দ করেছেন না করেননি।

তবে, সবচেয়ে কমন ভুলটা আমি শুধরে দিই: অনেক সময়ই প্রফেসররা প্রথম মেইলের জবাবে লিখেন তুমি অ্যাপ্লাই কর। আর আমরা ধরে নিই উনি আমাকে পছন্দ করে ফেলেছেন, কাজেই এইখানে হয়ে যাবে। :) আসলে ব্যাপারটা হল: উনি এই বিষয়ে পজিটিভ নেগেটিভ কোনটাই না। আপনাকে অ্যাপ্লাই করতে বলেছেন, হয়ত উনি আপনার অ্যাপ্লিকেশন দেখতেও পারেন, আবার নাও দেখতে পারেন।

আমি লেখাটা অনেক আগে লিখেছিলাম, (প্রায় ৪ মাস আগে) ইচ্ছা ছিল আরো অনেক কিছু যোগ করে আরো তথ্যবহুল করার; সময়ের অভাবে করা আর হয়নি। তাই যতটুকু লিখেছিলাম সেটাই দিলাম। সবাই ভাল থাকবেন।

বিখ্যাত ব্লগার রাগিব ভাইয়ের একটা পোস্ট আছে আমি তার সাথে দুএকটা কথা যোগ করলাম মাত্র। আর ঐ লেখাতে এটার একটা লিংকও দিয়ে এসেছি।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা: মাস্টার্স ছাড়া পিএচডি অ্যাপ্লাই- এটা কি ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া?(পর্ব-৪)

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১২ রাত ১১:০২
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×