somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০শে ডিসেম্বরে

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পরিবাগ গার্ডেন টাওয়ারের সামনে একটাই রিকশা। যুবক রিকশাওয়ালা আয়েশি ভংগিতে বিড়ি টানছে।এদের ধারণা বিড়ি টালনে এদের দক্ষিনী সিনেমার নায়ক লাগে!এদের কে বোঝাবে? একই সিন্ড্রোমে ভোগে কিশোর ছেলেগুলো।
"এই যে, সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র যাবেন?"
উনি আকাশের দিকে ধোঁয়া ছেড়ে একদলা থুতু ফেলে বললো,"না, ঐদিকে যামু না।ঐদিকে বিশাল জাম!"
সে সিটে পা তুলে আগেরমতই বিড়ি টানতে লাগলো।
আমি অন্যদিকে ঘুরে গুগল ম্যাপ গুতাগুতি শুরু করলাম, দেখি যদি জায়গাটা কাছাকাছি হয় তবে হেটেই যাবো। প্রায় সাথে সাথেই কিন্নরকন্ঠী একজন বললো,"ভাইয়া, পরিবাগ সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র ভবন যাবেন?"
আমি রিকশাওয়ালার দিকে তাকিয়েছি, দেখি *লার বেটা এবার কি বলে?

আমি কিন্নরকণ্ঠীর পিছন দিকটা দেখছি। নীল শাড়ি পড়েছেন, ডান হাত ভরা বেগুনি রেশমি চুড়ি, বাম হাত দেখতে পাচ্ছি না, বেগুনি ব্লাউজের হাত কনুই অবধি আর বডি নিশ্চয়ই কোমড় পর্যন্ত লম্বা!আধুনিকা মেয়েদের মত কোমড়-পিঠ দেখা যাচ্ছে না। পারফিউমের ঘ্রাণ আচ্ছন্ন করলো, রয়াল মিরাস হবে। এই পারফিউম বিয়ের কনে মাখে, এই মেয়েটির নিশ্চয়ই আজ বিয়ে নয়। আজ সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে সামু ব্লগের ব্লগ'ডে উৎযাপন, মেয়েটা ওখানেই যেতে চাচ্ছে। উনার খোলা চুল মুখের পুরোটা ঢেকে রেখেছে, আমি দেখতে পাচ্ছি না।
"ভাইয়া, চলুন না।প্লিজ, ভাইয়া।"
রিকশাওয়ালা কিছু বললো না।যেন আমাকে দেখতে পায়নি, আমি অদৃশ্য!

আমি বেটারে কষে একটা চড় দিতে যাবো। বেটা বদের বদ, সুন্দরী মেয়ে দেখেই জ্যামের কথা ভুলে গেছে!
মেয়েটি স্পষ্ট করে বললো,"ধন্যবাদ, ভাইয়া।" রিকশাওয়ালা প্লেনের গতিতে চলে গেল।
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। সামুর শায়মাপুও সবাইকে সুন্দর করে ভাইয়া ডাকে!আচ্ছা, মেয়েটি শায়মাপু নয়তো? চট করে আমার রাগ আলফা লেভেল থেকে থিটা লেভেলে চলে এল। ইশ!আপুর সাথে গল্প করতে করতে যাওয়া যেত!আপুকে সারপ্রাইজ দিতে পারতাম, অবশ্য সারপ্রাইজ শকও হয়ে যেতে পারতো।

আমি সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। উঁকি দিয়ে দেখলাম, সামনে বেশ একটু ফাঁকা জায়গা, চা-কফিও পাওয়া যাবে। যাক, বিখ্যাত লোকদের বাণী শোনার ফাকে ফাকে এখানে দাঁড়িয়ে সময় কাটানো যাবে। শুধু দরকার একজন সঙ্গী। আমি লম্বা সময় ধরে জ্ঞানী কথা শুনতে পারি না, ক্লান্তি গলা টিপে ধরে।
লোকজন এজন্য অহংকারী অপবাদ দেয়। আমি গায়ে মাখি না, যে যাই ভাবুক। মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা আমাদের সংবিধান সবাইকে দিয়েছে।

একটু সামনেই গাড়ি থেকে নামলেন তিনজন। তিন সংখ্যাটা আমার প্রিয়; ত্রিকুল, ত্রিভূবন, ত্রিনয়ন আরও কত কি!
সম্ভবত নীল পাড় আকাশী শাড়ি পড়া মেয়েটির শাড়ির আঁচলের সেফটি পিন খুলে গেছে। নীল পাঞ্জাবি পড়া ভদ্রলোক দারুণ বিরক্তি নিয়ে পিন লাগিয়ে দিচ্ছেন।
"সুরভী, তুমি বাসায় এত সময় নিয়ে সাজলে। তোমার জন্য দেরি হয়ে যাবে!"
উনাদের সাথে পরীরমত শিশুকন্যা!সে আরও বিরক্ত।
"আম্মু, তোমার জন্য দেরি হয়ে যাবে, পরে আমি কবিতাটা শোনাতেই পারবো না।"
বাবার দিকে তাকিয়ে আবার বললো,"আচ্ছা, বাবা, আমাকে "কাজলা দিদি" কবিতাটা বলতে দিবেতো?"
ভদ্রলোক উত্তর দিলেন না।
পিন লাগানো শেষ।
"রাজীব, আমাকে ভালো লাগছে তো!"
"সুরভী, তোমাকে সব সময় ভালো লাগে।এবার চল।" ইনারা কে, বলাই বাহুল্য।

আমি ভেতরে চলে এলাম।মঞ্চের সামনের কয়েকটি চেয়ার ছাড়া প্রায় সব কয়টি ভরে গেছে। সামনে বসবো কিনা, বুঝতে পারছি না।
মুজিব কোট পড়া বুড়ো ধরণের লোক কম বয়সী একজনকে বকাঝকা করছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মুজিব কোট পড়ার একটা ঝোক দেখা যায়। এরা রাজনীতিবিদদের মত "আমি মুজিব প্রেমী" বোঝানোর জন্য পড়ে না, মন থেকেই পোশাকটা পড়ে।
"তুমি হে ছোকরা, সবার সামনে বসে পায়ে পা তুলে বসে আছ।কেন?"
"আমি যেভাবে বসি তাতে আপনার কি?"
"আমার কিছুই না, তুমি পিছনে গিয়ে যেভাবে ইচ্ছে বস।"
কিছুলোক থাকে যেখানে অনিয়ম, বিশৃঙখলা দেখে ঠিক করে দেয়া নিজ দায়িত্ব মনে করে।হয়তো সাময়িক ভাবে তাকে কেউ কেউ অপছন্দ করে কিন্তু একটু সময় গেলেই বুঝতে পারেন, সে-ই ঠিক ছিলেন। সামু ব্লগেও এমন একজন আছেন! কিছুটা নিন্দিত, একটু বেশিই নন্দিত। উনি চাঁদগাজী!

আমি বসিনি, চেয়ারের সাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে আছি। একজন লোক কারণে-অকারণে মঞ্চের এপাশ ওপাশ দৌড়াদৌড়ি করছে। একবার এখানে আরেকবার ওখানে যাচ্ছে, যেন ব্লগ'ডে উৎযাপন সফল করার গুরু দায়িত্ব পুরোটাই তার কাধে।
আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি বললেন,"উনাকে চেনেন?"
"না, আমি কাউকেই চিনি না।"
"উনি সম্ভবত কাল্পনিক-ভালোবাসা নামে ব্লগে লিখেন।"
"আপনি কিডনি বিক্রি করতে পেরেছেন?"
আমার প্রশ্নে লোকটি হকচকিয়ে গেলেন। ভ্রু কুচকে, সরু চোখে তাকিয়ে বললেন,"আপনি কে বলুনতো?"
আমি হেসে বললাম,"দেখুন, কিডনি বেঁচে আপনার সমস্যার সমাধান কিছুতেই হবে না, আবার সমস্যায় পড়বেন।এরচেয়ে কিডনি দুটোই থাক, আপনি বীরদর্পে সমস্যার মুখোমুখি হতে থাকুন।লিখালিখি করে যান, কিছুটা সময় হলেও সমস্যামুক্ত থাকবেন।তবে হ্যা, ডোনার পেলে আমায় জানাবেন!"
স্বপ্নবাজ সৌরভ সন্দেহ মেশানো চোখে তাকিয়ে রইলেন। কবিরা সহজেই আশ্চর্য হন।

আমার একটু সামনেই হাত নাড়িয়ে গল্প করছেন একজন। তর পরনে ধবধবে সাদা শাড়ি, সাদা জমিনে সাদা সূতোয় লতাপাতার নকশা করা। হাতে লাল চুড়ি, গলায় লাল মাটির গয়না, কপালে লাল টিপ। বাহ!উনাকে আকাশের মত লাগছে, গোধুলীবেলার আকাশ! পুরোটা আকাশ সাদা, কেবল ক্ষণে ক্ষণে লাল।
একদিন পার্টিতে যাবার সময় ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের স্ত্রী সাদা শাড়ির সাথে লাল চুড়ি পরেছিলেন, উনি তাকে সাদা কাচের চুড়ি পড়তে বলেছিলেন। তাকে নাকি মানাচ্ছিল না!
ইনাকে দারুণ মানিয়েছে।
আমি উনাকে সম্ভবত চিনি! উনি আমার একটা গল্পে লিখেছেন, "সমসাময়িক যাদের গল্প পড়ি তাদের মাঝে আপনার গল্প ভালো লাগে।"
আমি কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করেছিলাম, ওগুলো নিয়ে লিখবো।দেখা গেল, এই লেখিকা ওগুলো আগেই লিখে ফেলেছেন। ইনি কাজী ফাতেমা ছবি আপা ছাড়া আর কে?
উনাকে অনেকে ঘিরে রেখেছেন। আমি কাউকেই চিনি না।
আমি উনার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ধেমে থেমে গেলাম। দেখা করলেই আকর্ষণ শেষ, হাতে সময় আছে দেখা হবেক্ষণ! অনিশ্চয়তা আরও কিছুক্ষণ থাকুক।

আমি দোটানায় পড়ে গেলাম, যাবো কি যাবো না! পায়ে পায়ে পিছিয়ে আসছি।কেউ একজনের সাথে ধাক্কা খেলাম। প্রায় পরে যাচ্ছিলাম, কোট টাই পড়া নিপাট ভদ্রলোক আমায় ধরে ফেললেন।
"আরে! আপনি মেহরাব হাসান খান না?"
আমি কিছুই বললাম না।
"আপনার লেখা পড়েছি। আপনি নিশ্চয়ই ফুল টাইম গাজা খান!আসলে গাজা না খেয়ে এমন লেখা লিখা যায় না। আমি ঠিক বলেছি কিনা? বলুন, বলুন।"
আমি হ্যা বলবো, ভদ্রলোক এই আশায় তাকিয়ে রইলেন।
আর যাইহোক, এমন লোকের সাথে গল্প করা যায় না।

আমি একা একাই দাঁড়িয়ে আছি। রাজীব ভাই তার পরিবার নিয়ে একটু দূরেই।পরী মাঝে মাঝেই প্রশ্ন করছে,"বাবা, অনুষ্ঠান কখন শুরু হবে? আমি "কাজলা দিদি" কবিতাটা বলতে পারবো তো?এই বাবা, কিছু বলছো না কেন?"

এই ভীড়ের মাঝেও একজন হাসিমুখে এগিয়ে এলেন। বললেন,"আপনি মেহরাব ভাই না? বাব্বা, আমিতো আপনাকে বড় মানুষ ভেবেছিলাম!"
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। যাক ইসিয়াক ভাইয়ের সাথে গল্প করতে করতে চা-কফি গেলা যাবে! উনার সাথে ব্লগ ডে উৎযাপন খারাপ হবার কথা না। উনাকে মাঝেমধ্যে এডাল্ট যোক বলতে বলবো, সময় দারুণ কাটার কথা!


পরিশিষ্ঠঃ ইনিয়েবিনিয়ে আজেবাজে কল্পনা করে লিখে ফেলেছি। আমি ইনাদের কাউকে এখনো দেখিনি। পরিচিত অপরিচিত সবাইকে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫০
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×