হোটেলে এসেই স্বরসতির সাথে দেখা, সে তার ছোট বোনকে সাথে নিয়ে আমার রুমে খেলা করছে। আমাকে জিজ্ঞেস করলো কোথায় কোথায় গিয়েছি। আমি ওর অনেক কথাই বুঝিনা আবার ও আমার অনেক কথাই বোঝেনা। প্রায় কথাই আমাদেরকে ইশারায় বোঝাতে হয়। আমি ওর উত্তরে বলেছি ফিউয়া লেক। এরপর জানতে চাইলো আগামীকাল কোথায় যাব? বললাম, এভারেস্টে। ওদেরও এভারেস্টে যাওয়ার খুব ইচ্ছা। বললাম, তোমার মাকে বল, গেলে আমরা আগামীকাল খুব ভোরে একত্রে যাব। স্বরস্বতি নিচে চলে গেল ওর মায়ের সাথে কথা বলতে।
এইফাকে আমি বাথরুমে গেলাম ফ্রেশ হলাম। বাথরুম থেকে বের হতেই দেখলাম স্বরস্বতি এসে হাজির। জিঙ্গেস করলাম, কিখবর ? বলল, আমরা যাব একত্রে। আরও বলল ওদের পরিচিত একজনের মাইক্রো বাসে খুব সকালে যাওয়া যাবে আমি রাজি থাকলে তাকে খবর দিয়ে রাখা হবে। আমি খুব খুশি হলাম এবং রাজি হয়ে গেলাম।
ভোর রাতই প্রায় আমাকে জাগিয়ে তোলা হলো। আমি কোন রকমে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এলাম। দেখলাম স্বরস্বতি ও তা ছোট ও বড় বোন সেজে গুজে বের হচ্ছে সঙ্গে ওদের মা। আমরা এই পাঁচজনই। স্বরস্বতি ও তার বড় বোনকে পরির মতো লাগছে। আজ আমার মনটাও বেশ ভাল লাগছে। খুবই আনন্দের মধ্য দিয়ে আজকের দিনটা শুরু হলো যা ঢাকার বাসা থেকে বের হওয়ার পর এই প্রথম। আমরা সবাই গাড়ীতে উঠতেই ড্রাইভার গাড়ী ছেড়ে কিছুদূর গিয়ে একটা হোটেলের সামনে গিয়ে দাড়ালো। এখানের কয়েকজন পর্যটক এসে গাড়ীতে উঠলো। এরপর আবার গাড়ী ছুটে চললো এভারেস্টের দিকে। পাহাড়ী এলাকার মনোরম পরিবেশে আমরা ছুটে চললাম এভারেস্টের দিকে। আমাদের মাইক্রোবাস নাগরকোট এসে থামলো। সুর্যদয়ের আগে আগেই আমরা পৌছে গেলাম স্বপ্নের এভারেস্টে। মেঘলা আকাশ, আমরা সূর্যদয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু আকাশ পরিষ্কার না হওয়ায় আমাদের সূর্যদয় দেখার সৌভাগ্য হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় কম। আকাশের সাথে যার মিতালী মেঘ যাকে নিয়ে খেলা করে সাদা তুষার তার পোশাক আর যার আছে মাথা উচু করে সমগ্র পৃথিবীকে দেখার সুযোগ সেইতো হিমালয়ের মাউন্ট এভারেস্ট যার গোড়ায় আমরা দাড়িয়ে সূর্যদলেয় অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। মেঘেরা আমাদের সাথে খেলা করছে। বারবার সূর্যউড্ডয়নের দিকে চোখ রাখছি এই বুঝি সূর্যদয় দেখা যাবে না সম্ভব হলো না বিরূপ আবহাওয়ার কারণে। উপরের দিকে শুধুই এভারেস্ট। যা হাতছানী দিকে আমাকে ডাকছে। তার হাতছানীতে সাড়া দিয়ে কোন দিন কি জয় করতে পারবো ওই চুড়ায় উঠতে?
সৃষ্টির অপুর্ব সৃষ্টি দেখে এবং স্বরস্বতি, তার ছোট বড় দুই বোন ও মায়ের সাথে খুব আনন্দ বিনোদনে কাটিয়ে দিলাম পুরো সকাল। দুপুরের মধ্যেই বাসায় ফিরে এলাম। বিকালে মার্কেটিং এ বের হলাম। দোকানে দোকানে ঘুরে অনেক কিছুই কিনলাম যখন যেটা পছ্ন্দ হয়েছে। একটা সিডি ক্যাসেটের দোকান থেকে চড়া দামে কিছু নেপালী গানের ক্যাসেট কিনে নিলাম। বেশির ভাগ দোকানেই মেয়েরা দোকান সেলস এর কাজ করছে। এক দোকানে আমি যতই ইংরেজীতে কথা বলছি দোকানী ইয়াং লেডি বার বারই নেপালী ভাষায় আমার সাথে কথা বলছে। আমিতো কিছুই বুঝিনা। পরে মেয়েটার স্বামী আসার পর তার স্বামী মেয়েটাকে জানালো আমি নেপালী ভাষা জানিনা আমি বিদেশী। মেয়েটি অভাক হয়ে আমাকে ইংরেজীতে বলল, আমি ভেবেছিলাম আপনি নেপালী কারণ আপনার চেহারায় বলেনা আপনি বিদেশী। অন্য একটি ইলেট্রনিক্স এর দোকান থেকে একটা চাইনিজ পোর্টেবল ডিভিডি প্লেয়ার কিনলাম। এক পর্যায়ে একটি ছেলে আমাকে জিজ্ঞেস করলো আপনার বাড়ী কোথায় (ইংরেজীতে)। আমি বললাম, বাংলাদেশে। ছেলেটা আমাকে বাংলায় বলল, আমি বাংলাতে অনেক দিন ছিলাম। গত সাত আট দিনে এই প্রথম আমি কারও মুখে বাংলায় কথা শুনলাম। আমার চোখ থেকে পানি চলে এল। আমি বাংলায় বললাম, কোথায় ছিলেন আপনি? সে আমাকে পশ্চিম বঙ্গের কোন একটা জেলার নাম বলল। এর পর আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কাঁদছেন কেন? এখানে কোন সমস্যা? আমি বললাম, না। কারও সাথে নিজের ভাষায় কথা বলতে পারিনিতো। কতদিন পর এই প্রথম আপনার সাথে বাংলায় কথা বলছি। তাই মনটা কেদে উঠলো। চোখ মুছে ছেলেটাকে বললাম, একটু বাইরে আসবেন আমরা দুজনে কোন রেস্টুরেন্টে বসে কিছু খাবো? ছেলেটি বলল, আমার এখন ডিউটি চলছে বের হওয়ার সুযোগ নেই। আমি তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:৪৮