somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কি করোনার চেয়েও শক্তিশালি?

১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিশৃংক্ষল ঢাকাবাসি অবশেষে হার্ড ইমিউনিটির পথে।

দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ও জিন রূপান্তর নিয়ে একটি যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে রাজধানী ঢাকার ৪৫ শতাংশ বাসিন্দা ও ৭৪% দরিদ্র বস্তিবাসি এপ্রিল থেকে আগস্টের ভেতর একটা সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। উপসর্গহীন ভাবে। অজান্তে সেরেও গেছিলেন উপসর্গহীন ভাবে। গবেষকদের রক্ত পরীক্ষায় দেখা গেছে অলরেডি তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি উপস্থিতি হার্ড ইমিউনিটি দেখা গেছে।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ও জিন রূপান্তর নিয়ে গবেষণার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (Institute of Epidemiology, Disease Control and Research) ও বেসরকারি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (icddr,b) যৌথভাবে এই গবেষণা্র ফল প্রকাশ করেছে। এই গবেষণায় আর্থিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি এবং বহুল পরিচিত মাইক্রোসফট প্রধানের সাহায্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।

গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকা শহরের বস্তিবাসির তিন চতুর্থাংশ ৭৫% মানুষ ও ৪৫ শতাংশ নগরবাসী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ও রক্ত পরীক্ষায় অ্যান্টিবডি পজিটিভ ধরা পড়েছে। এদের করোনার কোনো লক্ষণ ছিল না। তারা জানতই না কোন এক সময়ে তাদের করোনা ভাইরাস পজিটিভ ছিল।
তারা জানত না সংক্রমিত হয়ে সেরে যাওয়ার পর অলরেডি তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে।

আইইডিসিআর সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান সেমিনারে গবেষণায় প্রাপ্ত নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে জানান, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের
৮২ ভাগের কোনো লক্ষণই ছিল না,
৬ ভাগের সামান্য লক্ষণ ছিল,
১২ ভাগ ছিল প্রিসিম্পটোমেটিক।


গবেষণার জন্য ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্য থেকে দৈবচয়ন ভিত্তিতে ২৫টি ওয়ার্ড বেছে নেওয়া হয়। প্রতি ওয়ার্ড থেকে একটি মহল্লা বাছাই করা হয়। প্রতি মহল্লা থেকে ১২০টি খানা জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া ৮টি বস্তিকে এ জরিপে যুক্ত করা হয়। ঢাকা শহরের সাধারণ খানার নমুনা সংগ্রহ করা হয় মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত। আর বস্তির মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হয় মধ্য জুলাই থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত।

জরিপের তথ্য তুলে ধরে সেমিনারে জানানো হয়, রাজধানী ঢাকার ২৫টি ওয়ার্ডে ১২ হাজার ৬৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে। গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকা শহরে ৪৫ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি পজিটিভ পাওয়া গেছে। এছাড়াও বস্তি এলাকার ৭৪ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব বয়সী ২৪ শতাংশ। অন্যদিকে, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীর পরিমাণ ১৮ শতাংশ।
গবেষণার জন্য ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্য থেকে দৈবচয়ন ভিত্তিতে ২৫টি ওয়ার্ড বেছে নেওয়া হয়।
প্রতি ওয়ার্ড থেকে দৈবচয়ন ভিত্তিতে একটি মহল্লা বাছাই করা হয়।
প্রতি মহল্লা থেকে দৈবচয়ন ভিত্তিতে ১২০টি খানা জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এ ছাড়া ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বস্তি থেকে ৮টি বস্তিকে বাছাই করে এ জরিপে যুক্ত করা হয়।
ঢাকা শহরের সাধারণ খানার নমুনা সংগ্রহ করা হয় মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত। আর বস্তির মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হয় মধ্য জুলাই থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত।
সেমিনারে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা অনুমান করছেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল।
গবেষকেরা বলছেন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসা ও কি পরিমান জনসংখাকে টিকা আওতায় আনতে হবে, সেসব ব্যাপারে এসব তথ্য কাজে লাগবে।



স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘করোনায় আমাদের দেশে মৃত্যুহার বেশ কম, বৃদ্ধ বয়সের মানুষের মৃত্যুও আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান দেশগুলোর তুলনায় কম। যে কারণে মোট মৃত্যুহারও অনেকটাই কম। যদিও বয়স হিসেবে বাংলাদেশে বয়ষ্ক বৃদ্ধরাই বেশী মারা গেছেন।’

আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু। এই ক্ষেত্রে অবশ্য এটাকে কেস ফাইন্ডিং বলা যায় না। পুর্বে ও বর্তমান পরিক্ষা করা জেনম সিকুয়েন্স ডাটা থেকে এটা অনুমান করা হচ্ছে।’
সেমিনারে অংশ নিয়ে আইসিডিডিআরবি’র গবেষক ড. শামস আল আরেফিন বলেন, নানা সমালচনা থাকলেও করোনা চিকিৎসায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে চিকিৎসকরা খুব দ্রুত অ্যাডপ্ট করেছে। এছাড়াও জটিল করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় কিছু দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইটালী ও আমেরিকায় যখন ভেন্টিলেটর নিয়ে জোর দেওয়া হচ্ছিল, তখন আমরা হাই-ফ্লো অক্সিজেন দিয়েছি। এ কারণে মৃত্যুর হার কম হয়েছে। এছাড়া অন্যান্ন দেশের মত আমাদের দেশেও স্টেরয়েডের ব্যবহার হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন আইইডিডিআর ও আইসিডিডিআরবির গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউএসএআইডি মিশনের পরিচালক ডেরিক এস ব্রাউন ও আইসিডিডিআরবি’র ডাইরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ।


গবেষণার তথ্য এমন সময় প্রকাশ করা হলো যখন দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে আলোচনা চলছে। আসন্ন শীত মৌসুমে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকির কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি তাদের আছে।


অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে বলতে চাই,
দেশের জনসংখার বড় অংশ শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে হার্ড ইমুনিটি হয়ে গেছে মনে হলেও বৈজ্ঞানিক ভাবে কোন সিদ্ধান্তে আসার মত এখনো কিছুই হয় নি। অনেক গবেষনা বাকি। আমরা নিরাপদ বলার মত সিদ্ধান্ত এখনো বহু বহু দূর।


আসলে এখনো আমরা কেউই নিরাপদ না।
যারা এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হননি তাদের একটা কারণ হতে পারে যে, তারা হয়তো কোভিড-১৯ আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে আসেননি। আরেকটি কারণ হতে পারে এমন যে, তিনি স্বাস্থ্য বিধির সব কিছুই মেনে চলেছেন।’
সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। এখনও তৃতীয় ফেইজও ট্রায়ালে আছে। ভ্যাকসিন কবে ফাইনাল হবে সেটাও সময়সাপেক্ষ বিষয়। সুতরাং নিরাপদে থাকার জন্য আমাদের সবাইকে আগের মতই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দুরত্ব মেনে চলাটাও অতি গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ যারা পজিটিভ তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ থেকে ৮২ শতাংশের কোনো লক্ষণ-উপসর্গ ছিল না। তার মানে এমন হতে পারে, আপনি যার পাশে বসে আছেন তিনি হয়তো পজিটিভ, কিন্তু লক্ষণ-উপসর্গ না থাকার কারণে বোঝা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞানীরা গবেষনা করবে আমরা জনগন আগের মতই সাবধানে স্বাস্থ বিধি মেনে চলতে হবে।
সুতরাং কার আছে, কার নেই, কার এন্টিবডি হয়েছে, সেই সব চিন্তা না করে আমাদের প্রত্যেকের মাস্ক পড়া উচিত। এর কোনো বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাত ধোয়ার অভ্যাস প্রতিনিয়ত করে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে যেন ভিড় না করি। আজকাল দেখছি অনেকক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না, স্বাস্থ্যবিধি মোটেই মানা হচ্ছে না। আমি আবারো অনুরোধ করে বলব, সবাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন। এর কোনো বিকল্প নেই। সেটাই আমাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ রোধ করতে পারবে।’

সুত্র -
view this link
view this link
view this link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৩০
১৯টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×