দুইটি মামলায় আসামী হওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আত্নগোপনে চলে গেছেন। আমার ধারণা, মামলা হওয়ার আগে থেকেই উনি বাসায় থাকতেন না। তা নাহলে সোমবার ভোরবেলা পুলিশ ওনার বাসা তল্লাসী করেও ওনাকে কেন গ্রেফতার করতে পারল না?
মির্জা ফখরুল আত্নগোপনে যাওয়ার পর থেকে অনেক ধরনের মন্তব্য শুনছি। মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, এক মামলায়ই বিএনপি ঠান্ডা হয়ে গেছে।
অনেক ব্লগারও বলেছেন, মির্জা ফখরুল আত্নগোপনে চলে যাওয়ায় সাধারণ কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বে, আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়বে। আবার অনেকে আত্নগোপন করাকে সমর্থনও করছেন।
আমার মতামত আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করার আগে বলতে চাই, আপনারা হয়তো বিএনপি নেত্রী ডলির উপর আওয়ামী পুলিশের নির্যাতনের কাহিনী ইতোমধ্যে পড়েছেন। না পড়ে থাকলে নিচের লিঙ্কে গিয়ে পড়ে নিন।
Click This Link
আমার সাথে অনেকেই একমত হবেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মির্জা ফখরুল নিপাট ভালমানুষ, ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত। তরুণ সমাজের মধ্যে ওনার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। অনেককে দেখেছি বিএনপি সমর্থন না করলেও মির্জা ফখরুলকে সমর্থন করেন। প্রশ্ন হল, কেন মির্জা ফখরুলের মত ভদ্র রাজনীতিবিদের নামে মামলা দেওয়া হলো? কেন ওনাকে হুকুমের আসামী করা হল? আমার ধারণা, শেখ হাসিনা মির্জা ফখরুলের গ্রহণযোগ্যতা এবং ব্যক্তিত্ত্বকে ভয় করেন। একটা বিষয় মানতেই হবে, আওয়ামীলীগের চেয়ে বিএনপির আন্দোলন অনেক বেশি সহিষ্ণু। এমন কী আগের বিএনপির চেয়ে বর্তমানের বিএনপি অনেক বেশি সহনশীল রাজনীতি করছে। গত তিন বছরে বিএনপি মাত্র ৫ দিন হরতাল করেছে (ইলিয়াস আলীর এই হরতাল বাদে)। এরকম সহনশীল রাজনীতির জন্য মির্জা ফখরুলের মত জ্ঞানী এবং ভদ্র রাজনীতিকের অবদান আছে। আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠার আগেই যদি মির্জা ফখরুলকে মাঠ থেকে আউট করে দেওয়া যায়, তাতে আওয়ামীলীগের লাভ। মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতার করে যদি কোনভাবে রিমান্ডে বা থানায় নেওয়া সম্ভব হয়; আর হারুন বা বিপ্লবের মত প্রাক্তন ছাত্রলীগ, বর্তমানের পুলিশ (আসলে আওয়ামী হায়েনা)কে লেলিয়ে দেওয়া যায়; তাহলে কী ঘটবে কল্পনা করুন। কী ঘটতে পারে তা কল্পনা করার জন্য উপরের লিংকটি সাহায্য করবে। আন্দোলনের এ পর্যায়ে যদি মির্জা ফখরুল এরকম ঘটনার শিকার হন, আমার ধারণা তাতে বিএনপির চলমান আন্দোলন ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে এটাও সত্যি, জেল জুলুমকে ভয় করে আন্দোলন হয় না। তবে সেসব ধারণা সম্ভবত আওয়ামীলীগের ক্ষেত্রে খাটে না। কারণ, আওয়ামীলীগ দিনে দিনে বিরোধীদল দমনে যে রকম হিংস্র হয়ে উঠছে তাতে পুলিশের হাতে ধরা পড়া মানেই জীবনের ঝুঁকিতে পড়া। বিএনপির নেত্রী ৭৪ নং ওয়ার্ডের মহিলা দলের সহ-সভাপতি ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থী রেহানা আক্তার ডলির ওপর অমানুষিক নির্যাতনের চিত্র দেখে আমি আর আওয়ামীলীগকে ন্যুনতম বিশ্বাস করতে পারছি না। আর তাছাড়া সচিবালয়ের ককটেল বিস্ফোরণ এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় ১৮ দলের ১৫০ জন প্রথম সারির নেতাকে আসামী করা হয়েছে। এই মামলার উদ্দেশ্য কী? সচিবালয়ের ভেতর ককটেল কে ফাটালো? আওয়ামীলীগ ফাটায়নি তার প্রমাণ কী? ককটেল ফাটানোর পরপরই যে রকম তড়িৎ গতিতে মামলা এবং মির্জা ফখরুলের বাসায় তল্লাসী চালানো হয়েছে তাতে এটাই প্রমাণীত হয় যে, এটা সাজানো। মির্জা ফখরুল গ্রেফতার না হওয়াতে মাহবুবল আলম হানিফ এবং সৈয়দ আশরাফ দুজনেই সম্ভবত হতাশ হয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে, যখন বিরোধীরা চাইছে যে, মির্জা সাহেব ধরা পড়ুন, তখন তাদের জালে ধরা না দেওয়াই ভাল কৌশল। ২ মে তারিখে জামিনের আবেদনের শুনানি হলে জামিন মোটামুটি নিশ্চিত। কারণ, হুকুমের মামলার মত হাস্যকর মামলায় মির্জা ফখরুলের মত একজন রাজনীতিকের জামিন না দেওয়ার কোন কারণ নেই। সেজন্য আমি মির্জা ফখরুলের আপাত আত্নগোপনকে সমর্থন করছি। তবে শেখ হাসিনার যদি সত্যি সত্যিই মির্জা ফখরুলকে সাইজ করার ইচ্ছা থাকে, তবে আত্নগোপন করেও লাভ হবে না।
আওয়ামীলীগ সরকারের কার্যক্রম ক্রমেই আমাদেরকে আরোও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরী।