somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা, প্রবাসী ছেলেও কাঁদে, বুঝতে দেয় না

৩০ শে মে, ২০২০ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সৌদি আরব পশ্চিমাঞ্চলের বন্দর নগরী জেদ্দা। লোহিত সাগরতীরে গড়ে ওঠা এ শহর পর্যটকদের কাছে পছন্দের একটি জায়গা। সৌদি সরকারের ভিশন ২০৩০ মাথায় রেখে সাগরপাড়ে গড়ে ওঠা ইন্টারন্যাশনাল হোটেলগুলোর সামনের ৫ কিলোমিটার পথ বিশ্বমানের আদলে গড়ে তুলেছে শহর কর্তৃপক্ষ। এই আলো–ঝলমলে শহরের শারাফিয়ায় ২০১২ সাল থেকে আমার বসবাস। আমার বাসা থেকে লোহিত সাগরতীর গাড়িতে ১০-১৫ মিনিটের দূরত্ব।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমি সমুদ্রের কাছে যাই। আর সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করি। প্রবাসীদের জীবন এই ঢেউয়ের মতো, কখনো উত্থান কখনো পতন। সমুদ্রের ঢেউ দেখলেই নিজের জীবনের সঙ্গে মিল খুঁজে পাই। এভাবে কখনো সন্ধ্যা কখনো মধ্যরাত পর্যন্ত সাগরের কাছে কাটিয়ে ফিরে আসি চিরাচরিত কর্মময় পরিবেশে।

মূল কথায় আসি। যে শহর ২৪ ঘণ্টা কর্মমুখর, সেই শহর আজ করোনা মহামারিতে অচেনা এক শহর। জেদ্দা শহরের প্রাণকেন্দ্র বালাদে, যাকে শপিংয়ের রাজধানী বলা হতো, সেখানে প্রবেশ করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে থাকতে হতো। করোনা এই সময়ে মাত্র পাঁচ মিনিটে পুরো বালাদ আপনি গাড়ি দিয়ে চক্কর দিতে পারবেন। গত তিন মাসে একবারও যাওয়া হয়নি আমার প্রিয় জায়গা লোহিত সাগরতীরে। করোনা মহামারিতে আমার সীমিত ডিউটি চালু ছিল এবং ২৯ মার্চ থেকে জেদ্দায় ২৪ ঘণ্টা লকডাউনের সময় বাসায় থেকে রাসুলের জীবনী ও ‘প্রথম আলো ভাষারীতি’ পড়েছি। নামাজ শিক্ষা বই শেষ করতে পারিনি।

সৌদি আরবে প্রায় ২১ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন। আমি যেহেতু জেদ্দা কনস্যুলেটের সঙ্গে যুক্ত, প্রায় দিনই ফোন আসে করোনায় মৃত ব্যক্তির কাগজপত্র বিষয়ে। কষ্ট লাগত আমার মতো আরেকজন প্রবাসী ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে। কত রঙিন স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল এই মরুর দেশে। কত মা তাঁর সন্তানকে দেখতে পাবেন না, সন্তান তার বাবাকে দেখতে পায়নি। এভাবে অসংখ্য প্রবাসী চলে যাচ্ছেন সুন্দর এই দুনিয়া থেকে। আমি যখন এই লেখা লিখছি , তখন মেসেজ পেলাম ২৮ মে পর্যন্ত করোনায় বাংলাদেশির মৃত্যুর সংখ্যা এ দেশে ১৭১।


প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের মতে, অসচেতন হওয়ায় বাংলাদেশিদের মৃত্যুহার বেশি। অসুস্থ হলে দেরিতে হাসপাতালে যাওয়াকে মূল কারণ হিসেবে তাঁরা চিহ্নিত করেছেন। করোনায় বন্দী এই জীবনে মায়ের সঙ্গে প্রায় দিনই কথা হতো, কিন্তু মায়ের মন কী আর মানে? সৌদি আরবে মৃত্যুসংবাদ দেখলেই মা ছোট ভাইদের বলে, ‘মোবারককে কল দাও! মেসেজ করো!’

মায়ের সঙ্গে প্রায়ই কথা হয় দীর্ঘ সময়। মা আমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। ‘তোর একটা আলাদা ঘর যদি আমি দেখে যেতে পারতাম। তোর ঘরে যদি আমি কিছুদিন থেকে যেতে দেখে পারতাম।’ এই কথা বলে আর কাঁদে। এ পাশে থাকা প্রবাসী ছেলেও কাঁদে, কিন্তু বুঝতে দেয় না। কারণ, প্রবাসী ছেলে জানে, সে কাজ করে যে বেতন পায়, ঠিকমতো নিজেই চলতে পারে না। ঘর তো দূরের কথা। বেঁচে থাকতে মায়ের স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, জানি না। রবের কাছে প্রার্থনা করি, মা যেন বেচে থাকে তার সন্তানের ঘর দেওয়া পর্যন্ত।

২৬ এপ্রিল সৌদি আরব সরকার কারফিউ শিথিল করায় আমার কাছে ঈদের খুশি লেগেছে। কারণ, প্রবাসীদের অনেকেরই পকেট শূন্য, আমি তার ব্যতিক্রম নই। আমার মতো হাজারো প্রবাসী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এই কারণে আমাদের দিকে হাজারো প্রবাসী পরিবার চেয়ে থাকে। করোনামুক্ত পৃথিবীর প্রত্যাশা করি। এই শহরে আবার প্রাণ খুলে হাসতে–বাঁচতে চাই।


প্রথম আলো দূর প্রবাস

প্রথম আলো দূর প্রবাসে প্রকাশিত আমার লেখা ।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২০ রাত ৮:২৯
১০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×