somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসে: পর্ব ২

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব ১

ইমিগ্রেসন পার হলাম । আর কাউকে দেখা গেল না । আমার কাছে একটা ব্যাকপ্যাক । সেটা নিয়ে ওয়েটিং লাউঞ্জে এ বসে আছি । আশেপাশে অনেক ফরেনার ঘোরাঘুরি করছে । এত ফরেনার একসঙ্গে এর আগে দেখিনি ।

বুঝলাম একদল শ্রমিক ও যাচ্ছে আমাদের সাথে ।পুলিস টাইপের কয়েকজন লোক আমাকে জেরা করল। তাদের সন্দেহের তালিকায় ছিলাম কিনা জানি না । তবু সব উত্তর ভালভাবে দিলাম ।

ক্যাম্পাসের এক আপুর সাথে দেখা হল । উনিও আমেরিকা যাচ্ছেন । পরমানু শক্তি কমিশন থেকে একটা কনফারেন্স এ যোগ দিতে। এমিরেট্‌সেই যাচ্ছেন। আপুর সাথে গল্প হল অনেক ।

আপু জিজ্ঞেস করলেন , “ভয় পাচ্ছিস” ? বললাম হু । আপু আমাকে খাওয়াতে নিয়ে গেলেন । বার্গার টাইপ কিছু কিনলেন ।এয়ারপোর্টে অনেক লোককেই দেখলাম খাওয়া দাওয়া করতে । অনেকেই রোজা ভাংছে । শুনলাম কালকেই ঈদ ।

আমরা খেতে খেতে হাঁটছিলাম । একজন অফিসার এসে জেরা শুরু করলেন , কোথায় যাচ্ছি , কেন যাচ্ছি ......... । আমি সব উত্তর দিলাম , কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে কাগজ পত্র দেখালাম । আপু কিছু দেখাতে চাইলেন না । জানালেন , তিনি উত্তর দিতে বাধ্য নন । তার কাগজ পত্র ইমিগ্রসনে চেক করে , তবেই এখানে পাঠানো হয়েছে ।

লোকটিও নাছোড় ।

- “আমি ইমিগ্রেসন পুলিশ , আমার কাজ তদন্ত করা , আপনার কাগজে নিশ্চয়ই ঝামেলা আছে” ।

-“থাকতে পারে । আপনি ইমিগ্রেসনে যেয়ে সেটা তদন্ত করুন । আমার কাছে নয় ।“

আপুর কথা শুনে বেশ রাগ হল। আগেও দেখেছি সামান্য কিছুতেই আপু প্রতিবাদী হয়ে যায় । তর্ক জমে উঠল । ঝামেলার গন্ধ পেলাম ।
ইউনিফর্ম পরা একজন লোক এসে বলল ,” স্যার ওনার কাছে জি ও (গভারনমেন্ট অর্ডার ) আছে” । অফিসারটা মুখ শুকনা করে চলে গেল ।

আপু জিগ্যেস করল , “কিরে ভয় পেয়েছিলি ?”
- “হু”
-“এদের আসলে কোন কাজ নেই, একা মেয়ে দেখলেই হেরেস করে” ।

প্লেনে উঠে পড়েছি আমি , আমার আর আপুর অনেক দূরে সিট । আমরা আলাদা হয়ে গেলাম । আব্বু –আম্মুকে ফোন করে বললাম প্লেনে উঠেছি .........এক সময় ফোন বন্ধ করতে হল ।প্লেন ছেড়ে দিবে ।

বিভিন্ন এনাউন্সমেন্ট ভেসে আসছে আর আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্লেন দেখছি । এটাই আমার প্রথম প্লেন ভ্রমন । একটা নব ঘোরালাম । একটা খাবার টেবিল বেরিয়ে এল । গ্লাস যাতে না পড়ে যায় তার জন্য আলাদা একটা ফুটো দেখলাম । বাসে খাওয়ার সময় খুব অসুবিধায় পড়তাম । কোথায় খাবার , কোথায় পানির বোতল রাখব , এ নিয়ে ঝামেলা হত । এখানে এত অল্প স্থানে এত ব্যাবস্থা । মানুষের বুদ্ধিমত্তা আমাকে বেশ মুগ্ধ করল ।

সিট বেল্ট বাঁধার নির্দেশ আসল । একটি এয়ারহোস্টেস মেয়ে এসে পরীক্ষা করে গেল সিট বেল্ট বেধেছি কিনা । জীবনানন্দের লাইন মনে পড়ল “ পৃথিবীর আর রাঙ্গা রাজকন্যাদের মত সে চলে গেছে রুপ নিয়ে দূরে “। আরও অনেক রাঙ্গা রাজকন্যা দেখলাম । রাঙা রাজকন্যাতে প্লেন ভরে গেল । প্লেন ছেড়েও দিল হয়ত কোন রাজপুত্র ।

আমি মাটি থেকে উপরে উঠছি অনেক উপরে । মাটির মানুষের সাথে দুরত্ত্ব বাড়ছে আমার । একসময় বিন্দুর মত হয়ে গেল সবকিছু । প্লেন আরও উপরে উঠছে ।আমার কানে কানে বো বো আওয়াজ আসছে । ভাবছিলাম , আর কত উপরে উঠবো আমরা , পুরা বাংলাদেশটা কি দেখা যাবে? যেরকম বইতে দেখছি সেরকম?

এক সময় অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলাম না ।

আমি ফুঁপিয়ে কাঁদছি । আমার পাশে দাড়িয়ে আছে এক রাঙ্গা রাজকন্যা। হাতে একটা গরম রুমাল । দেখলাম বাকিরা ওটা দিয়ে হাত মুছল । আমিও মুছলাম ।প্লেনের জানালা দিয়ে বাইরেটা দেখছি , সব অন্ধকার আর কিছু তারা দেখা যাচ্ছিল ।

প্লেনে দেওয়া খাবার খেলাম । খারাপ লাগেনি তেমন । মোটামুটি মনে হল । আর কখন খাবার দিবে , এই ভয়ে সব খাবার খেয়ে ফেললাম ।

দুবাই পৌঁছে গেছি। সিট বেল্ট খুলতে হবে । কিছুতেই খুলতে পারছিনা । এদিক না ওদিক , বুঝতে পারছিনা । এক সুদর্শন আরব্য যুবক এসে খুলে দিল । লাগেজ নিয়ে ইমিগ্রেসনে দাঁড়ালাম । ভারি ব্যাগ তুলতে সমস্যা হচ্ছিল । সেই ছেলেটিই তুলে দিল। দেখি সে পিছনেই ছিল । তাড়াহুড়ায় ধন্যবাদ দেওয়া হল না । চেক ইন করলাম ।

তারপর ছেলেটির কথা খেয়াল হল। আমার অবচেতন মন ওকে অনেক খুঁজল। কোথাও দেখলাম না। আপুকেও খুজলাম। পেলাম না । এবার আমি আমেরিকা যাবার প্লেনে। এই জার্নিটা ছিল ভীষণ লম্বা আর ক্লান্তিকর ।

২১ অগাস্ট, ২০১২।
আমেরিকা পৌঁছেছি । টেক্সাস এর ডালাসে ইমিগ্রেসন এ দাড়িয়ে ।ভীষণ লম্বা লাইন । আমার আশেপাশে অনেক মেয়ে দাড়িয়ে । সবাই খুব ছোট ছোট প্যান্ট পরা । ভিসন ফর্সা পা বেরিয়ে আছে তাঁদের । ইমিগ্রেসন পার হয়ে আসলাম ।

আট ঘণ্টা পর পরবর্তী ফ্লাইট ।গন্তব্য সাউথ ডাকোটা । সাউথ ডাকোটায় সাজ্জাদ নামে আমাদের ব্যাচের , ক্যাম্পাসেরই একটা ছেলে ছিল । ওকে ফোন করলাম । ফোন করতে কয়েন লাগে । আমার কাছে কয়েন ছিল না ,একজন সাহায্য করল ।

হঠাৎ খুব খিদে পেল । দুই ডলার দিয়ে একটা চিপ্স কিনলাম । কেনার পর মাত্র দুই ডলার এর গুরুত্ত মাথায় আসল । দুইকে চুরাশি দিয়ে গুন করে প্রকৃত দাম বের করে ফেললাম ।

একজন ব্লাক আমেরিকান পুলিসের সাথে পরিচয় হল, নাম স্ট্যানলি । স্ট্যানলি অনেক গল্প করল । মনে মনে আমাকে অনেক ইংরেজি অনুবাদ করতে হল । তার গল্পে আমি রীতিমত হাঁপিয়ে গেলাম । আমার ইমেইল এড্রেস নিল সে। স্ট্যানলি চলে গেল । যদি হারিয়ে যায় এই ভয়ে আমি এয়ারপোর্ট থেকে বেরুলাম না । চুপচাপ এক জায়গায় বসে ছিলাম ।

কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না । ঘুম ভেঙ্গে খুব ভয় পেয়ে গেলাম , প্লেন ছেড়ে দেইনি তো ? রাতে কোথায় থাকব , আবার কি প্লেন ফেয়ার দিতে হবে ? এই সব ভাবতে ভাবতে হাটছিলাম ।

দেখি , প্লেনে বোর্ডিং শুরু করছে । প্লেন ছেড়ে দিল । আমি রাতের টেক্সাস দেখলাম । এত আলো ঝলমলে শহর । দুবাইেও দেখেছি । একটা ফ্লাই ওভার এর লুপ দেখেছিলাম বাংলায় চার এর মত । আমার ছোট ভাইকে এ বিষয়ে কি কি গল্প করব সেগুলো সাজালাম ।

রাত সাড়ে এগারোটা , আমি সাউথ ডাকোটা স্যুফলস এয়ারপোর্টে । আমার লাগেজ খুজে পাওয়া যাচ্ছে না । আমি বিমর্ষ চিত্তে বসে আছি । ইউনিভার্সিটি থেকে দুজন, আমাকে আর কিছু ছাত্রকে নিতে এসেছে । ওরাই দৌড়া দৌড়ি করছে লাগেজের জন্য । আমি লাগেজ এর জিনিসপত্র কিনতে কত টাকা লাগবে , কি কি না কিনলেও চলে এই হিসেব করছি ।

পরের পর্বঃ



সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪২
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×