১৯২৫ সালে হিটলার কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। অতঃপর তিনি তার দলকে নতুন করে সাজানোর কাজে হাত দেন। যা কিছু করার নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে করতে হবে। পরিকল্পনা অনুসারে A State within a State নীতি গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্রের আদলে পার্টিকে সাজানো হয় এবং সেই সাথে খোলা হয় অনেক বিভাগ। সমগ্র দেশজুড়ে নাৎসি পার্টির নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা হিসেবে, জার্মানিকে ভাগ করা হয় ৯৮টি "গাউ(Gau)" এ। গাউ শব্দের বাংলা অর্থ হল "অঞ্চল"। এছাড়া অষ্ট্রিয়াতে, নাৎসি পার্টির অষ্ট্রিয়া শাখার আওতাধীন, অতিরিক্ত ৭টি গাউ সৃষ্টি করা হয়। প্রতিটি গাউ এর দায়িত্ব দেওয়া হয় একজন "গাউলেইতার"(Gaulieter, eng:Gauleader)কে। এদের কাজ হল, পার্টির পক্ষে সর্বাত্মক প্রচালনা চালানো, নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা, সদস্যদের মধ্যে সংহতি রক্ষা করা, সর্বপরি নিজেদের আদর্শে অটল থাকা এবং সেই আদর্শ যথাসম্ভব প্রকাশ করা।
এভাবে হিটলারের মহা পরিকল্পনা অনুযায়ী নাৎসি পার্টি গড়ে উঠতে থাকে। ফলে, ১৯২৯ সাল নাগাদ, সদস্য সংখ্যা গিয়ে দাড়ায় ১,৩০,০০০ এ। পার্টিতে হিটলার হয়ে উঠেছিলেন অবিসংবাদিত নেতা। তার প্রভাব এত বেশী বেড়ে যায় যে, ১৯২৯ সাল নাগাদ, পার্টিতে তার নামে স্লোগান চালু হয়। নাৎসিরা পরস্পরের সাথে সাক্ষাতকারের সময় বলতে শুরু করে, "হাইল হিটলার(heil Hitler)"।
ইতালির মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট দলের স্যালুটের আদলে প্রবর্তন করা হয় "নাৎসি স্যালুট"। ডান হাত আশীর্বাদের ভঙ্গিতে একটু উঁচু করে সোজাসুজি ধরে স্যালুট দেওয়া হত। সেই সাথে সম্বোধন করতে চাইলে বলা হত, "হাইল হিটলার(heil Hitler)"।
***
১৯৩০ সাল।
ওয়াল স্ট্রীট অর্থনৈতিক ধসের কারণে বিপদে পড়েছে অনেক রাষ্ট্র। বিশ্ব অর্থনীতিতে এরকম খারাপ অবস্থা আগে কখনো হয়নি। বিপর্যয়ের মূলকেন্দ্র আমেরিকার ত্রাহী অবস্থা। আর জার্মানি? আমেরিকার সাহায্যে বেড়ে উঠা দেশটি, ১৯৩০ সালে পুনরায় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। বৈশ্বিক মন্দার কোপানলে পড়ে লোকজন সর্বস্বান্ত। অধিকাংশ মানুষের হাতে কোনো কাজ নেই। মুদ্রাস্ফীতি পুনরায় দেখা দিতে শুরু করেছে এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে। চারিদিকে দুর্বিষহ অবস্থা। যেন একটা "দেজা ভু"। সেই ১৯২৩ সালের ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক মন্দা আর মুদ্রা স্ফীতির "দেজা ভু"।
এরকম একটা সময়েরই অপেক্ষায় ছিলেন হিটলার। তিনি বুঝলেন, এবার খেল দেখানোর সময় এসেছে। তার প্রবল বিশ্বাস, ভাগ্যদেবী তার সাথে আছেন। এবার আর কোনো ভুলের অবকাশ নেই।
***
১৯৩০ সালের বৈশ্বিক মন্দার জের ধরে জার্মানিতে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং চ্যান্সেলর হেইনরিখ ব্রুনিং(Heinrich Brüning) এর আদেশে পুনরায় জাতীয় নির্বাচন জারি করা হয়।
নির্বাচনে নাৎসি পার্টিও অংশগ্রহণ করে।
১৯২৮ সালের নির্বাচনে, নাৎসি পার্টি পেয়েছিল ৮,১০,০০০ ভোট। পার্লামেন্টে সীট পেয়েছিল ১২টি।
১৯৩০ সালের এই নির্বাচনে নাৎসিরা ৫০টি সিট পাবে, হিটলার এমনটাই আশা করেছিলেন।
***
কিন্তু হিটলার বড্ড ভুল ভেবেছিলেন। নির্বাচনে নাৎসি পার্টির ফলাফল দেখে তিনি নিজেও অবাক হয়ে যান। সব হিসাব নিকাশ পাল্টে দিয়ে নির্বাচনে নাৎসিরা দ্বিতীয় হয়। ভোট পায় ৬৪,০৯,০০০টি। পার্লামেন্টে সিট ১০৭টি।
১৯৩০ সালের নির্বাচনের পড়ে দেখা গেল, নাৎসিরা জার্মানির দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল।
***
এখন প্রশ্ন হল, কারা নাৎসিদের ভোট দিয়েছিল? ১৯৩০ সালের এই নির্বাচনে অধিকাংশ নিম্ম মধ্যবিত্ত জনগণ ছিল নাৎসিদের পক্ষে। বিশেষ করে, যারা ১ম বিশ্বযুদ্ধে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, যারা ১৯২৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সর্বস্ব হারিয়েছিল, তারাই দলে দলে নাৎসিদের ভোট দেয়। এরকম লোকের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। ১৯৩০ সালের অর্থনৈতিক মন্দা, এসব মানুষের মনে তাদের পুরোনো ভয়ঙ্কর স্মৃতি জাগিয়ে তুলে। ফলে তারা বিশ্বাস করত, ভারসাই চুক্তি এবং শতাব্দী প্রাচীন ধর্মশত্রু ইহুদীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার নাৎসিরাই তাদের প্রকৃত ত্রানকর্তা। তাদের নেতা হিটলার, বাগ্মিতার ক্ষমতা যার কিংবদন্তিতুল্য, তিনি প্রায়ই বলেন, ক্ষমতায় এলে বেকারত্বকে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। হিটলারের এ ধরণের ভবিষ্যতবাণী, এসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মনে আশার সঞ্চার করে।
এছাড়া নাৎসিদের ভোট দেওয়া আরেক বড় অংশ হল, বিশ্ববিদ্যালয়য় পড়ুয়া তরুণ সমাজ। এরা ১ম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। কিন্তু দুঃখ কষ্টের সমান ভাগীদার তারা ক্রমাগত হচ্ছে। ফলে উগ্র জাতীয়তাবাদী নাৎসিদের মাঝেই তারা জার্মানির হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা দেখতে পায়।
***
১৯৩০ সালের এই নির্বাচনে ২য় স্থান দখলের পর নাৎসিদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ভাগ্যদেবী দুহাত ভরে তাদের দিকে থাকে।
***
১৯৩১ সাল।
প্রেমিকা অ্যাঞ্জেল মারিয়া "গেলি" রাউবালের(Angel Maria Geli Raubal) অকস্মাৎ আত্মহত্যার কারণে, হিটলার দারুন মুষড়ে পড়েছিলেন। গেলির আত্মহত্যার জন্যে তিনি নিজে দায়ী ছিলেন। গেলিকে বেশী ভালোবাসতেন তিনি। যার কারনে তাকে নিজের কাছে আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। গেলির অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় সঙ্গীতের উপর পড়াশুনা করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হিটলার তা হতে দেননি। স্বাধীনতার অভাবে হাঁসফাঁস করতে থাকা গেলি একদিন নিজের বুকে গুলি করে চিরদিনের জন্যে হিটলারের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে যান।
গেলির মৃত্যুর প্রভাব পড়েছিল হিটলার কাজের উপর। এর ফলে, প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ(Paul Von HIndenberg) এবং চ্যান্সেলর হেইনরিখ ব্রুনিং এর সাথে দুটো অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পর্ব একেবারে যাচ্ছেতাই হয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গের সাথে এটাই ছিল হিটলারের প্রথম সাক্ষাতকার। এটি ছিল নাৎসিদের সাথে সরকারের উচ্চ মহলের প্রথম অতি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ। অথচ হিটলারের উদাসীনতার কারণে এটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। প্রেসিডেন্টের সামনে হিটলার ছিলেন মাত্রাতিরিক্ত বিমর্ষ এবং উদাস। স্থান, কাল, পাত্র সম্পর্কে যেন কোন ধারণাই তার নেই।
হিটলার বেরিয়ে যাওয়ার পর, প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল কার্ট ভন স্লাইশার(Kurt Von Schleicher)কে বলেন, "এই ছোকড়া হতে চায় প্রেসিডেন্ট? তার তো ডাক বিভাগের প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণের যোগ্যতা নেই।"
প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ হিটলারকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। দুই বছর পড়ে, হিটলার তাকে তার নিজের কথা হজম করতে বাধ্য করে ছাড়েন।
হিন্ডেনবার্গ
***
এই পর্যায়ে এসে কার্ট ভন স্লাইশার(Kurt Von Schleicher) সম্পর্কে কিছু বলে নেওয়া একান্ত জরুরি। ১৯৩১ সালে তিনি ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল, সেই সাথে এক মারাত্মক প্রভাবশালী চরিত্র। তিনি প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ(Paul Von HIndenberg) এর ছেলে অসকার ভন হিন্ডেনবার্গের বন্ধু ছিলেন। ফলে হিন্ডেনবার্গের উপর তার মারাত্মক প্রভাব ছিল। তারই সুপারিশে, প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ, জেনারেল উইলহেম গ্রোনারকে(Wilhelm Groener) মিনিস্টার অফ ডিফেন্স পদে নিযুক্ত করেন। এমনকি ১৯৩০ সালে, হেইনরিখ ব্রুনিংকে(Heinrich Brüning) জার্মান চ্যান্সেলর বানানোর পিছনে তার হাত ছিল বলে শোনা যায়। এই লোক মারাত্মক ধূর্ত। তার নামের অর্থ জানলেই তা বোঝা যায়। উল্লেখ্য, স্লাইশার(Schleicher) শব্দের অর্থ হল, "গোপনে অনুপ্রবেশকারী"।
১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতা গ্রহণ করেন। হিটলার চ্যান্সেলর হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের আগে, স্লাইশার(Schleicher) অল্প মেয়াদে জার্মানির চ্যান্সেলর পদে নিযুক্ত ছিলেন। হিটলারকে তিনি কখনই বুঝতে পারেননি। উল্টো তাকে সমর্থন দিয়ে গিয়েছিলেন। এটাই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। পরবর্তীতে নিজের ভুল বুঝতে পেরে, গনতন্ত্রকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টাটুকু করেন। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল।
হিটলার কখনো তাকে বিশ্বাস করতেন না। কার্য হাসিলের জন্যে তার সাথে মেলামেশা করতেন। পরবর্তীতে ১৯৩৪ সালে হিটলার কর্তৃক পরিচালিত Operation Hummingbird এ, অন্যান্য অনেক S.A নেতাদের সাথে তাকেও হত্যা করা হয়।
স্লাইশার(Schleicher)
***
হিটলারের দ্বিতীয় বৈঠকটি ছিল চ্যান্সেলর হেইনরিখ ব্রুনিংএর(Heinrich Brüning) সাথে। বৈঠকের এক পর্যায়ে হেইনরিখ ব্রুনিং তাকে একটি জটিল প্রস্তাব দেন।
হেইনরিখ ব্রুনিং
***
১৯৩১ সালে, প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গের বয়স ছিল ৮৫ বছর। ১৯৩২ সালে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ৭ বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছিল। বয়স তাকে অনেকাংশে কাবু করে ফেলেছিল। ফলে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছাটুকু তার ছিল না। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিলে, দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে, হিটলারের পাল্লায় নিশ্চিতভাবে বেশী ভোট পড়বে।
উগ্র জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হিটলার প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন, এটা চ্যান্সেলর হেইনরিখ ব্রুনিং কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না।
কিন্তু এদিকে পরিস্থিতি মারাত্মক ঘোলাটে। নতুন মেয়াদে পুনরায় ৭ বছর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করাটা, হিন্ডেনবার্গের পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যাবে। তার জীবনপ্রদীপ নিভে আসছে। অন্যদিকে হিটলারের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এখন হিন্ডেনবার্গ যদি ২-৩ বছর দায়িত্ব পালন করে মারা যান(এই সম্ভাবনা হেইনরিখ ব্রুনিং কোনভাবেই নাকচ করতে পারছিলেন না), তবে পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে এবং নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে নাৎসিরা সেই নির্বাচন জিতে যাবে। এই কারণে হেইনরিখ ব্রুনিং হিটলারকে থামাতে নতুন পরিকল্পনা করেন।
ব্রুনিং হিন্ডেনবার্গকে নির্বাচনে দাঁড়াতে অনুরোধ করেন। হিন্ডেনবার্গ নির্বাচনে দাড়ালে হিটলার জিততে পারবে না। ব্রুনিং হিন্ডেনবার্গকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর, একটি নতুন ডিক্রী জারি করতে বলেন। হিন্ডেনবার্গ যদি ৭ বছর পূরন করতে না পারেন, তবে এই ডিক্রীর ক্ষমতাবলে, তিনি পুরাতন জার্মান রাজপরিবার থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন।
ব্রুনিংএর এই কথা শুনে হিন্ডেনবার্গ মারাত্মক রেগে যান। ব্রুনিংকে ভীতু, কাপুরুষ বলে গালিগালাজ করেন তিনি। তিনি বলেন যে তিনি কোনদিন এমন কাজ করতে পারবেন না। যদি রাজতন্ত্র থেকে কেউ ক্ষমতায় আসে তবে তিনি হবেন স্বয়ং কাইজার দ্বিতীয় উইলহেম(১ম বিশ্বযুদ্ধকালীন জার্মান রাজা। যুদ্ধের পর তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়)। এছাড়া আর কেউ নয়। ব্রুনিংকে তিনি বলেন যে, তিনি এসব ডিক্রী জারি করতে পারবেন না। এসব ডিক্রী জারি করার বাধ্যবোধকতা যদি না থাকে, তবেই তিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন।
***
এখন হিটলারের সাথে প্রথম বৈঠকে, ব্রুনিং, হিটলারকে প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গের নির্বাচনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে অপারগতার কথা জানান। ব্রুনিং হিটলারকে অনুরোধ করেন, যেন তিনি হিন্ডেনবার্গকে নির্বাচনে দাঁড়াতে রাজি করানোর ক্ষেত্রে ব্রুনিংকে সাহায্য করেন। ব্রুনিং প্রথমে হিটলারকে গোপন ডিক্রীর কথা কিছুই বলেননি। কিন্তু হিটলারের চাপে ব্রুনিং তাকে গোপন ডিক্রীর কথা বলতে বাধ্য হন। ডিক্রীর কথা শুনার সাথে সাথে হিটলার বুঝে যান, ডিক্রীটি তাকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।
বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখবেন, এই বলে হিটলার বৈঠক থেকে বেরিয়ে চলে আসেন।
***
অনেক ভেবে চিন্তে, হিটলার চালাকি করে, ব্রুনিংএর সাথে আর একটিবারও দেখা না করে সরাসরি হিন্ডেনবার্গের সাথে দেখা করেন। প্রেসিডেন্টকে তিনি নির্বাচনে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু ডিক্রীর ব্যাপারে বারবার হুশিয়ার করে দেন। এই ডিক্রী জারি করা যাবে না।
হিন্ডেনবার্গ তো আগে থেকেই ডিক্রীর বিরুদ্ধে ছিলেন। হিটলারের কথা শুনে তিনি নির্বাচনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেন। হিটলারকে তিনি কথা দেন, এই ডিক্রী তিনি ভুলেও জারি করবেন না।
***
১৯৩২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় মূলত হিন্ডেনবার্গ এবং হিটলারের মধ্যে।
কিন্তু হিন্ডেনবার্গের জনপ্রিয়তা পাহাড়সম। তাকে কি হারানো যাবে?
নাৎসি কর্তৃক ব্যপক প্রচারনা চালনা সত্ত্বেও, ভোট গ্রহণের পর দেখা যায়, হিন্ডেনবার্গ পেয়েছেন ১,৮৬,৫১,৪৯৭ ভোট(৪৯.৬%)।
আর হিটলার পেয়েছেন, ১,১৩,৩৯,৪৪৬ ভোট(৩০.১%)।
নির্বাচনে হিন্ডেনবার্গ জিতলেও তিনি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেননি। ফলে দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ নির্বাচন ডাকা হয়। এই নির্বাচনে যে জিতবে, তিনিই হবেন প্রেসিডেন্ট।
***
২য় নির্বাচনের জন্যে হিটলার এবং নাৎসি পার্টি হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে। আকাশপথে তিনি প্রতিদিন জার্মানির একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে প্রচারনার কাজে যেতেন। নিজে প্রতিদিন ৪-৫টা র্যালিতে উপস্থিত থাকতেন। নাৎসিরা রেডিও মাধ্যমের মারাত্মক ব্যবহার করেন। এছাড়া সমগ্র দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার গনসভা আয়োজন করা হয়।
কিন্তু ২য় নির্বাচনটাও নাৎসিদের হাতছাড়া হয়ে গেলো।
নির্বাচনে হিন্ডেনবার্গ পান ১,৯৩,৫৯,৯৮৩(৫৩%) ভোট।
হিটলার পান ১,৩৪,১৮,৫৪৭(৩৬.৮%) ভোট।
***
হিন্ডেনবার্গের জয়ে, চ্যান্সেলর হেইনরিখ ব্রুনিং(Heinrich Brüning) সহ অনেক হিটলার বিদ্বেষীগণ তৃপ্তির নিশ্বাস ফেলেন। যাক, এবার তো আপদ দূর হল। টানা দুটি পরাজয়ের কারণে এবার হিটলারের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু করবে।
কিন্তু আসলেই কি তাই?
নাকি শ্বাসরুদ্ধকর নাটকের সবেমাত্র শুরু?
(চলবে)
(এই পর্বটা বেশ জটিল ছিল। আমার নিজেরই বুঝতে অনেক কষ্ট হয়েছে। কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে মাফ করে দিবেন)
উৎসর্গঃ ব্লগার নীলপথিককে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমপর্কে আমার লেখার লিঙ্কস
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:০৯