somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের সম্ভাবনাময় মেরিন সেক্টর ধ্বংসের মুখে (একটি রিপোষ্ট ও গুরুত্বপূর্ন মন্তব্য সমূহ)

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জনসচেতনা সৃষ্টির পাশপাশি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ পোষ্টটির মূল লক্ষ্য। সামু কর্তৃপক্ষের প্রতি পোষ্টটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার অনুরোধ রইলো।

বলা হচ্ছে একজন সনদপ্রাপ্ত মেরিন ক্যাপ্টেন অথবা ইঞ্জিনিয়ার মাসিক ১০ হাজার ইউএস ডলার আয় করে থাকেন, যা অন্যান্য চাকরির আয়ের তুলনায় প্রায় দশগুণ বেশি। বাংলাদেশে ছয়টি নতুন মেরিন একাডেমী স্থাপন করা গেলে অনেক মেরিন প্রফেসনাল তৈরি সম্ভব হবে এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, সেই সঙ্গে বেকারত্ব হ্রাস পাবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের কর্তারা মনে করেন যথাযথ ট্রেনিং ও শিক্ষার অভাবে এই শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না। ফলে আর্ন্তজাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। অথচ আন্তর্জাতি ভাবে মেরিন প্রফেসনালদের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রপথে বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোতে মেরিন প্রফেসনালদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমীতে ক্যাডেট ভর্তির সংখ্যা ৭০ থেকে বৃদ্ধি করে ২০০তে উন্নীত করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. মোহাম্মদ ফজলুল বারীর মত হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা বৃদ্ধির দিক বিবেচনা করে ছয়টি নতুন মেরিন একাডেমী (এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে তিনটি) স্থাপন করা হলে আরও ৬শ’ ক্যাডেট প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে। এর ফলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে বর্তমানের তুলনায় ৬ গুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।
১.ছয়টি নতুন মেরিন একাডেমী স্থাপন করা হচ্ছে-আন্তর্জাতিক বাজারে দক্ষ কর্মীর ব্যাপক চাহিদা
২.পাবনায় আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন মেরিন একাডেমীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

বেসরকারীভাবে ব্যপকভাবে প্রচারনা চালানো হচ্ছে মেরিন সেক্টরকে নিয়ে।
১.মেরিন ক্যারিয়ার নিয়ে কিছু কথা...
২.মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুন
৩.দুঃসাহসিক মেরিন প্রফেশনাল শিক্ষার স্বপ্ন পূরনে আটলান্টিক মেরিটাইম একাডেমি
৪.মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সমুদ্রে স্বাগত
৫.সমুদ্রগামী বিদেশী জাহাজে বাড়ছে কর্মসংস্থান
৬.মেরিনদের মাধ্যমে প্রতি বছর আসছে হাজার কোটি টাকা

কিন্তু বাস্তব চিত্র আমরা যারা স্পটে আছি তারা জানি। ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য বর্তমানে প্রাইভেট মেরিনে ক্যাডেট ভর্তি একটি অসামান্য লাভজনক ব্যবসা। আর সরকারী নীতিনির্ধারকরা তাদের মূর্খামীর কারনে বর্হিবিশ্বে মেরিনারদের চাকরীর বাজার বৃদ্ধি না করে ক্রমাগত মেরিন একাডেমী বৃদ্ধি ও বেসরকারী মেরিন একাডেমীর অনুমোদন দিয়ে এই সেক্টরটির উন্নয়নের পরিবর্তে পঙ্গু করেছে।

সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণঃ

এবার জাহাজে জয়েন করার সময় আমার সাথে স্যালারি নিয়ে বার্গেডিং এর এক পর্যায়ে অফিসের ছেলেটি বলেছিল জাহাজে গেলে দেখবেন COC ধারী ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার চারশ ডলারে সেইল করছে। আমি তখন বিশ্বাস করিনি। ধুর তা কি হতে পারে? কিন্তু চাকরীর বাজার এখন কতটা খারাপ তা সম্পর্কে আমার পূর্ন ধারনা ছিল না।

সাইন অন (Sign On) করার সময় শিপিং অফিসে আমার সমসাময়িক ক্লাস থ্রি (Class-3) দেওয়া চারজন বড় ভাইয়ের সাথে দেখা হল। আমি ক্লাস থ্রি দিয়েছি ২০১১ সালে। এবং এই চারজনের প্রত্যেকেই আমার তিনমাস কি ছয় মাস আগে থেকে পরিক্ষায় বসেছিল। আমি বেনিফিটেড যে আমি খুব তাড়াতাড়ি ডিজি শিপিংয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম। আমার অভিজ্ঞতায় বলে ডিজি শিপিংয়ের জালটা এমন যে এক দৌড়ে পার হতে হয়। কোন রকমে একবার যদি স্লিপ করেছ তো জালে আটকেছ। আর সেই জাল থেকে রক্ষা পাওয়া বন্ধ্যা নারীর গর্ভে সন্তান জন্ম দেয়ার মতোই কঠিন।

সে যাই হোক ডিজি শিপিং এর প্রসঙ্গে আরো ডিটেইলস পরে আলোচনা করবো। এখন যেটা বলছিলাম সেই প্রসঙ্গে আসি। আমি ২০১২ তে সিওসি নিয়ে মার্কেটে আসার পরে খুব বেশী ভালো মার্কেট পাইনি। এর আগে আই মিন ২০১০ এর আগ পর্যন্ত মিনিং এজেন্টগুলো ডিজি শিপিংএ খোঁজ রাখতো কারা সিওসি পাচ্ছে। সিওসি হাতে আসার আগে চাকরি রেডি হয়ে যেত। সেখানে থাকতো স্যালারি নিয়ে বার্গেডিং এর সুযোগ। কোন থার্ড অফিসার বা ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার কে শুনিনি পচিশশো ডলারের কমে জয়েন করতে। ২০১১ র ডিসেম্বরে আমি সিওসি পাই। সিওসি পাবার পরে আমার কাছে যে কোন অফার আসে নি তা নয়। বাংলাদেশী একটা জাহাজ যেটা থেকে নেমে আমি পরিক্ষায় বসেছিলাম ঐ জাহাজের জন্য আমার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোম্পানি অনবোর্ড থার্ড অফিসারকে আরো তিন মাসের এক্সটেনশনে রাজি করিয়ে ফেলায় আমার ২২০০ ডলারের চাকরীটা হতে হতেও হলো না। এর পরে শুরু হল আমার চাকরি খোঁজা।

আমার সাথে কথা হল আমার শহর যশোরের এক ক্যাপ্টেনের সাথে। চিটাগাং কমার্স কলেজ এলাকায় অফিস। নাম বলবো না। আমি মেইল করে আমার সব ডকুমেন্টস পাঠানোর পরে আমাকে সরাসরি অফিসে যেতে বললেন। খুবই স্নেহপূর্ন ব্যবহার উনার।

আমি ঢাকা থেকে চিটাগাং গেলাম। উনি এবং অফিসে উনার ওপরের আরো একজন ক্যাপ্টেন আমাকে ইন্টারভিউ নেয়ার শেষে আমাকে তাদের একটা জাহাজের জন্য সিলেক্ট করলেন। আমি জিজ্ঞসা করলাম স্যালারি কত দিবেন?

উনার উত্তরটা তখন আমার কাছে বেশ বিনোদনমূলক মনে হয়েছিল। উনি বললেন, আমাদের কোম্পানির স্টান্ডার্ড ৭০০ ডলার কিন্তু তোমার মেরিট দেখে তোমাকে আমরা নিতে চাচ্ছি তাই তোমাকে ১০০০ ডলার দিব।

আমি মজা পাইলাম। মেরিটের এত দাম!! স্টান্ডার্ড ব্রেক করে ৩০০ ডলার বাড়িয়ে দিল? ক্যাপ্টেন সাহেবকে ধন্যবাদ দিয়ে আমি চলে আসলাম। এটা ছিল ২০১২ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। জেনেছিলাম ঐ কোম্পানিতে অলরেডি কিছু থার্ড অফিসার ঐ রকম স্টান্ডার্ডে জয়েন করেছে। সেই তখন থেকেই শুরু। কিন্তু তখনও অবস্থা ওতটা খারাপ হয়নি তাই আমি ঐ ওফার এ্যভয়েড করতে পেরেছিলাম।

এখন আসি বর্তমান প্রেক্ষাপটে। শিপিং আফিসে আমার যে চারজন সিনিয়েরর সাথে দেখা হল সিওসি নামক সোনার হরিণ হাতে নিয়ে চাকরীরর জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে তাদের অবস্থা দেখে মনে হল অফিসার হিসেবে একটা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তারা যে কোন কিছু ছাড় দিতে রাজি আছে। এখন তাদের কাউকে যদি চারশো ডলারের অফার দেয়া হয় আমার মনে সে না করবে না।

আমি একটা জিনিস দেখেছি। আমরা যখন চাকরি খোঁজা শুরু করি প্রথম দিকে আমাদের ডিমান্ড বেশী থাকে। তারপর যত দিন গড়াতে থাকে তত আমাদের মনোবল দূর্বল হতে থাকে এবং চাকরীর প্রয়োজনটা তত বাড়তে থাকে। এবং শেষ পর্যন্ত আমরা নূন্যতম কোন অফারেও রাজি হয়ে যাই। এই ব্যাপারাটা ফ্রেশারদের জন্য বেশী প্রযোজ্য। মার্কেটে এখন অভিজ্ঞ জুনিয়র অফিসারের অভাব নেই সেখানে নতুনরা জায়গা পাবে কিভাবে? যে কোন অফিসে গেলেই শোনানো হয় এক কন্ট্রাক্ট অভিজ্ঞতা নিয়ে আসুন। আরে বাপ অভিজ্ঞতা তো আর মায়ের পেট থেকে পাওয়া যায় না। অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয় এবং তার জন্য দরকার সুযোগের। কেউ যদি সুযোগ না দেয় তবে অভিজ্ঞতাটা আসবে কোথেকে? এই কারনে সকলের টেন্ডেন্সি থাকে এ্যট এনি হাউ একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করার। তাই আমি জাহাজে এসে সত্যি সত্যি চারশো ডলারের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার দেখেছি।

এই অবস্থা আসলে কিভাবে সৃষ্টি হল?
সুনির্দিষ্ট একটি বিষয় নয়। বেশ অনেকগুলো ব্যপার জড়িত এই অবস্থা তৈরি হবার জন্য। ইদানিং সোস্যাল মিডিয়াতে প্রাইভেট মেরিন একাডেমীর অনুমোদন দেয়াকে প্রধান কারন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু আমার মতে প্রাইভেট মেরিন একাডেমী কতৃক চাকরীর বাজার খারাপ করার মতো সময় এখনো পার হয়নি। প্রাইভেট মেরিন একাডেমী গুলো থেকে ক্যাডেট বের হয়ে অফিসার হওয়ার সংখ্যা এখনো বেশী নয়।

চাকরীর বাজার খারাপের পেছনে যে কারনটি মূখ্য তা হল বিদেশী জাহাজে বাংলাদেশী মেরিনারদের চাকরী কমে যাওয়া। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশি নাবিকেরা বিদেশী জাহাজে সুনামের সাথে চাকরি করে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের মেরিনারদের একটা ভালো চাকরীর বাজার সৃষ্টি করেছে। হ্যা হয়তো আমাদের সুনামের ঘাটতি নেই। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই সুনামের সাথে মূনাফাও জড়িত। জাহাজ মালিকদের কাছে তাদের মুনাফাটা মূখ্য বিষয়। কিছুদিন আগে কোন একভাবে আকিজ গ্রুপের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক শেখ বসির উদ্দিনের চেম্বারে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছিল আমার। আকিজ গ্রুপের দুইটা জাহাজ আছে। আমি জানতে চাইছিলাম তারা আরো জাহাজ কিনছে না কেন? তিনি আমাকে দেখালেন গত পাঁচ বছরে শিপিং ফ্রাইট(ভাড়া) কমতে কমতে অর্ধেকে নেমে গেছে। একেবারে প্রতিষ্টিত কিছু কোম্পানি ছাড়া যারা দুই চার পাচটা জাহাজ নিয়ে ব্যবসায় নেমেছে তারা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যস্ত। বসির উদ্দিন সাহেব জানালেন তিনি চাইলে এক সাথে আরো দশটা জাহাজ কিনতে পারেন। কিন্তু তিনি আমার সামনে তার ইনবক্স খুলে কয়েকশত আনরিড মেইল সোজা ট্রাসে পাঠিয়ে দিলেন যেগুলো শিপিং ব্রোকারদের কাছ থেকে জাহাজ কেনার আমন্ত্রন ছিল।

এখন এই ইন্টারন্যাশনাল শিপিং বিজনেজ খারাপের সাথে আমাদের চাকরির বাজারের সম্পর্কটা একটু খতিয়ে দেখি। ব্যপারাটা খুবই সিম্পল। একটা জাহাজ থেকে মালিকের আয় যদি কমে যায় তবে জাহাজের পেছনে তার ব্যায় কমানোর প্রবণতাও বেড়ে যাবে। এবং এই প্রবনতার চাপটা সোজা এসে পড়ে আমাদের স্যালারির ওপর। কারন জাহাজের দৈনন্দিন ফুয়েল খরচ বা প্রয়োজনীয় মেইনটেনেন্স নিয়ে কোন চাপাচাপি করা সম্ভব নয়।

কোম্পানিগুলোর এই স্যালারি কমানোর চাপটা আমাদের গায়ে ততক্ষন লাগবে না যতক্ষন পর্যন্ত বাজারে অফিসারের সহজলভ্যতা তৈরি না হবে। কিন্তু এখন ইন্টান্যাশনাল মার্কেটে শুধু আমাদের দেশেই অফিসার সহজলভ্য হয়ে যায়নি। আমার গত জাহাজের ইন্ডিয়ান ক্যাপ্টেনের কাছে শুনেছি ইন্ডিয়াতে প্রতিবছর পনেরশো ছেলে সিওসি পাচ্ছে। যদিও ইন্ডিয়ানদের জন্য চাকরির বাজার অনেক প্রশস্ত কিন্তু তবু তার ইফেক্ট আমাদের গায়ে এসে পড়ছে।

প্রমান সরূপ বলতে পারি,ইউনাইটেড ওশান কোম্পানির কথা। গত দুইতিন বছরে প্রায় একশটা জাহাজের এই কোম্পানিতে বাংলাদেশী অফিসারদের একটা ভালো মার্কেট তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এই কোম্পানিতে নতুন করে কোন বাংলাদেশী জুনিয়ার অফিসার নিচ্ছে না। কারন হিসেবে বিএনএফ শিপিং এবং ইউনিকর্ন শিপিং থেকে জানা যায় তারা নাকি মাত্র ১৫০০ ডলারে ইন্ডিয়ান থার্ড অফিসার পাচ্ছে। সেখানে ২৫০০ থেকে ৩০০০ ডলারে বাংলাদেশী থার্ড অফিসার নিবে কেন? গত বছর আমি যখন হক এন্ড সন্স থেকে ভি শীপস (V Ships) এর একটা জাহাজে জয়েন করেছিলাম তখন তাদের মিনিং এ ভি শীপসের চারটা বাল্ক কেরিয়ার (bulk Carrier) জাহাজ ছিল। কিন্তু আমি যখন নেমে আসি তখন আমারটা ছাড়া বাকি তিনটা জাহাজের মিনিংই তারা হারিয়ে ফেলে। যার কারনে জাহাজ থেকে নেমে আসার পরে আমার জন্য পুনরায় চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আমি ভি শিপসের এর বাংলাদেশ ফ্লিটে যোগাযোগ করলে তারা জানায় তারা ভি শীপসের যে কোন জাহাজে সিনিয়র অফিসার পাঠাতে পারে কিন্তু গত এক বছর ধরে তারা কোন জুনিয়র অফিসার রিক্রুট করতে পারে নি। আমার প্রসঙ্গটা এখানে একটা উদাহরণ মাত্র। মূল ব্যপার হল এই ভাবেই বিদেশী কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশি জুনিয়র অফিসারের চাকরির বাজার খারাপ হচ্ছে।

আর বিদেশী জাহাজে জুনিয়র অফিসারের চাকরী কমে যাওয়ার প্রভাব এসে পড়ছে দেশী জাহাজ গুলোতে। যে সমস্ত জুনিয়র অফিসাররা বিদেশী জাহাজে চাকরি করতো তারাও দেশী কোম্পানীগুলোতে এসে ভিড় জমাচ্ছে। আর স্বভাবতই বিদেশী কোম্পানীর অভিজ্ঞ অফিসার পেলে কোন কোম্পানি ফ্রেশ অফিসার নিতে চাইবে না।

বিদেশি কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশী অফিসার নিয়োগে অনিহা সৃষ্টি হবার পাশাপাশি মার্কেটে অফিসারের সংখ্যা বেড়ে যাবার কারনে চাকরির সহজলোভ্যতা নষ্ট হয়েছে। বর্তমান সময়ে যেভাবে অফিসার বের হচ্ছে এটাকে ফ্লাডিং বলা যেতে পারে।
ডিজি শিপিং এ যদি সঠিক ভাবে মেধা যাচায় করে সিওসি দেয়া হয় তবে সিওসি পাবার হার কমে যাবে। আমি পরীক্ষার উদ্দেশ্যে দেশে যতদিন ছিলাম প্রতি সিডিউলে আমি ত্রিশ জনকে পাশ করতে দেখেছি। মানে আমি যে নয় মাস দেশে ছিলাম সেই নয় মাসে নব্বই জন অফিসার মার্কেটে এসেছে। কিন্তু এই নয়মাসে নব্বইজন অফিসারকে চাকরি দেয়ার মতো কোন ক্ষেত্র ছিল না আমাদের দেশে। এই ভাবেই একেরপর এক অফিসার মার্কেটে এসেছে আর অপরদিকে সীমাবদ্ধ হয়েছে চাকরীর বাজার।

যদিও পরিসংখ্যান করলে দেখা যাবে পরীক্ষার্থীর তুলনায় এই পাশের হার অনেক কম। কিন্তু এই পরিক্ষার্থী বেড়ে গেল কিভাবে? এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৮ সাল থেকে। ২০০৬ থেকে মেরিন একাডেমীর আসন সংখ্যা এক লাফে ষাট থেকে বাড়িয়ে দুইশত করা হয়। সেই তখন থেকে শুরু। এরপর শুরু হয় প্রাইভেট একাডেমী গুলোর অনুমোদন। এর আগে ডাইরেক্ট এন্ট্রি ক্যাডেট হিসেবে যে পরিমান ছেলে সিডিসি পেত ডাইরেক্ট এন্ট্রি বন্ধ করে সেগুলোকে প্রাইভেট একাডেমীর আওতায় আনার ফলে এখানেও ক্যাডেটের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
মোটকথা নানা ভাবে এই সেক্টরে ক্যাডেটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু চাকরির সীমাব্ধতা কমেনি। এবং এ বিষয়ে আমাদের সরকারের ভূমিকা সৎ মায়ের মতো। আমাদের মাননীয় নৌপরিবহন মন্ত্রী মহোদয়ের জাহাজ বা জাহাজের নাবিক সম্পর্কে কতোটুকু ধারনা রাখেন তা বলা বাহূল্য। উনাকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর থেকে যে ট্রাক ড্রাইভার কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে ভালো মানায় তা আমরা সবাই ভালো করেই জানি। দেশের অব্যন্তরীণ নৌ ব্যবস্থা নিয়ে উনার স্পষ্ট ধারনা আছে কিনা আমার সন্দেহ হয় সেখানে আন্তর্জার্তিক বাজারে বাংলাদেশের মেরিন সেক্টরটাকে সমৃদ্ধ কিভাবে করা যায় এটা নিয়ে উনার কোন মাথা ব্যাথা অনেক দুরের ব্যপার। তা যদি না হতো তবে বিভিন্ন একাডেমীর মাধ্যমে ক্যাডেট বাড়ানোর পাশাপাশী বিভিন্ন বিদেশী কোম্পানিতে বাংলাদেশী নাবিকের চাকরীর পথ সুগম করতে সরকারী উদ্যোগ নেয়া হতো। কিন্তু এটা হয়নি। বরং সরকারী কুটনৈতিক সমস্যার কারনে বাংলাদেশী নাবিকেরা বিদেশের মাটিতে অবাঞ্ছিত হচ্ছে।

এই অবাঞ্ছিত কথাটা ব্যবহারের পেছনে দুটি কারন আছে। একটা নাবিকের হিউম্যান রাইটস আর একটা দেশের চাকরীর বাজার। প্রথম প্রসঙ্গটি আসছে আমাদের সোর লিভ(বিদেশের মাটিতে ভ্রমনের অনুমতি) নিয়ে। আজ বাঙালী নাবিকেদেরকে বিদেশের অধিকাংশ দেশে সোর লিভ দেয়া হয় না। সন্ত্রাসবাদের বদনামে পার্শবর্তী দেশ ইন্ডিয়াতে পর্যন্ত আমাদের সোর লিভ নেই। মুসলমান হিসেবে আমরা দুবাইতে ভ্রমণের অনুমতি পাচ্ছি না যেটা ইন্ডিয়ানদের জন্য উম্মুক্ত। এই রকম আরো অনেক উদাহরণ আছে। তবে এটা না হয় বাদই দিলাম। একজন নাবিকের কাজ বন্দরে জাহাজ পৌছে দেয়া। তার দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমনের সুযোগ না পাওয়াতে এই সেক্টরের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। তবে ক্ষতি যেটা দিয়ে হচ্ছে তা আমাদের ভিসা প্রবলেম। সোর লিভের মতো একই কারনে আমাদের জন্য বিভিন্ন দেশের ভিসা অনেক কঠিন হয়ে গেছে। আর এইটার ইফেক্ট পড়ছে বিদেশী জাহাজের মিনিং গুলাতে। অনেক সময় দেখা যায় ভিসা জনিত জটিলতার কারনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের নাবিক রিপ্লেসমেন্ট কঠিন হয়ে দাড়ায়। একজন বাঙ্গালি নাবিককে যে কোন দেশে জাহাজে জয়েনিংএর জন্য ভিসা নিতে অনেক দেরি হয়। এমনকি অনেক দেশে বাংলাদেশী হিসেবে ভিসা পাওয়া সম্ভব পর্যন্ত হয় না। এই কারনে বিদেশী কোম্পানি গুলো বাঙ্গালী নাবিক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিহা প্রকাশ করে থাকে।

এছাড়া আর একটি বিষয় আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের চাকরি নষ্ট করছে। কিছু কিছু মিনিং এজেন্ট ভূয়া সনদ ধারী অফিসার পাঠাচ্ছে বাইরের বিভিন্ন কোম্পানিতে। আমি নিজে ব্যাক্তিগত ভাবে এমন কিছু নাবিক কে চিনি যারা ভূয়া সনদ নিয়ে চাকরী বাইরের কোম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরি করছে। কিছু টাকার বিনিময়ে মিনিং এজেন্ট গুলা ভূয়া সনদ বানিয়ে এবি বা বোসান কে সেকেন্ড বা চিফ অফিসার হিসেবে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফিটার যাচ্ছে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হয়ে। শুধু তাই নয় একেবারে নন প্রফিশনাল লোকদেরকেও অনেক সময় কোনরকম ট্রেনিং ছাড়াই পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে জাহাজে। আর শুধু যে তাদের কাজের পারফরমেন্স আমাদের সুনাম নষ্ট করছে তা নয় তারা বিদেশী বন্দরে নানা অথরিটির কাছে ধরা খেয়ে নিষেধাজ্ঞা বয়ে আনছে আমাদের দেশের বৈধ নাবিকদের জন্য। এই ধরনের জালিয়াতির সাথে প্রকাশ্যে কয়েকটি প্রতিষ্টিত কোম্পানিও যেমন কেএসএফ, সিগমা, ব্রাদারস, প্রবর্তনা শিপিংও জড়িত। এছাড়াও চিটাগাং এর বিভিন্ন আনাচে কানাচে এই ধরনের মিনিং এজেন্ট খুজে পেতে দেরি হবে না। এই দুর্নিতির কারনে গত বছর কেএসএফ এবং প্রবর্তনা শিপিং এর লাইসেন্স বাতিল হয়। কিন্তু ইতিমধ্যে জেনেছি তারা তাদের লাইসেন্স পুনরায় ভ্যালিড করে নিয়েছে।

এবার দেশে থাকতে দেখলাম টিভিতে ফলাও করে দেখানো হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার MLC 2006 কনভেনশনে সাক্ষর করে বাংলাদেশী নাবিকের জন্য কল্যাণ বয়ে আনছে। কিন্তু এটা বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পরে আমজনতাকে নিয়ে দেওয়ালি খেলায় মেতেছে তার অংশ ছাড়া আর কিছুই নয়। পাবলিকের সামনে এক একটা রঙিন পোষ্টার ঝুলিয়ে নিজেদের কে উন্নয়নের পথিকৃত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা আমরা হুজুকে বাঙ্গালীরা সহজে ধরতে পারি না। এই কথা বলছি এই কারনে যে মেরিন সেক্টরটিকে সমৃদ্ধ করার জন্য আজ পর্যন্ত সরকারীভাবে কি কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে? হয় নি। বরং নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য একের পর এক প্রাইভেট একাডেমীর অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। সবথেকে ভয়ানক ব্যাপার মেরিনের সাথে মোটেও সম্পৃক্ত নয় এমন কিছু প্রতিষ্ঠানও মেরিনে ক্যাডেট ভর্তির অনুমোদন পেয়েছে। ইদানিং পত্র পত্রিকা খুললেই অমুক তমুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের বিদেশী ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে বিজ্ঞাপণ চোখে পড়ে। কিন্তু প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন জাহাজে চাকরি করার জন্য আই মিন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হবার জন্য প্রাথমিকভাবে কোন বিদেশী ডিগ্রীর দরকার পড়ে না।

তবে এবার সব থেকে বেশী অবাক হয়েছিলাম একটা খবর শুনে। মাস মেরিন (MAS Maritine Acedamy) কে প্রাইভেটে ক্রু বানানোর অনুমোদন হয়েছে নাকি। খোঁজ নিয়ে জানলাম ইতিমধ্যে পঞ্চাশ জন রেটিংস তারা বাহির করে ফেলেছে। বুঝতে পারছিলাম ব্যাপারটা আসলেই অনেক খারাপের দিকে গড়াচ্ছে। বাংলাদেশে মিনিং এজেন্টদের মধ্যে মাস মেরিটাইম (MAS Maritine Acedamy) একটা বেশ বড় একটা এজেন্ট। প্রচুর রেটিং ওখানে চাকরি করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। কিন্তু এই বছর তারা নিজেরা রেটিং প্রডিউচ করার পরে সেখানে আর বাইরের ক্রুরা চাকরীর সুবিধা কতটা পাবে তা সন্ধিহান।

আমরা জানি ন্যাশনাল মেরিটাইম ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে ক্রুরা সিডিসি পায়। ২০০৫ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রুদের চাকরী কল্পনাতীত খারাপ ছিল। ২০০১ সাল এবং তার আগে প্রতি ব্যাচে ন্যাশনাল মেরিটাইম ইন্সিটিউট থেকে তিনশ র অধিক ছেলে সিডিসি পায়। তখনই চকারির বাজার অনেক খারাপ ছিল। এই সময় কিছু উদ্যোগি ছেলের তৎপরতায় প্রতিষ্টানটির রিক্রুট বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে ক্রমেই ভালো হতে থেকে তাদের চাকরির বাজার। এই ভালো হওয়াটা ২০০৫ সাল থেকে নতুন ছেলে রিক্রুটিং হবার পরেও থমকে যায় না তার কারণ মাত্র তিন ডিপার্টমেন্ট মিলিয়ে মাত্র চল্লিশ ছেলে ভর্তি করা হতো ওখানে। পক্ষান্তরে ঐ সময়টাতে বাংলাদেশী প্রাইভেট জাহাজের সংখ্যাও বাড়তে থেকে । যার ফলে ক্রুদের চাকরির বাজার অনেকটা সাবলীল হয়ে ওঠে। কিন্তু রেটিংসদের এই সাবলীল চাকরীর বাজারে আবারো আমাদের নীতিনীর্ধারকের হার পড়ে আইডি (ID)ইস্যু করার মাধ্যমে। আইডি এমন একটা ডকুমেন্ট যেটাতে অবৈধ নাবিকদের কে বৈধতা দেয়া হয়।

অনেক আগে থেকে দেশী বিদেশী বিভিন্ন জাহাজে বাংলাদেশী কিছু লোক কোন সিডিসি ছাড়া ওয়াইল্ডার বা ফিটার হয়ে কয়ে কাজ করতো। আইডি প্রদানের মাধ্যমে এই সমস্ত অবৈধ লোকদের কে জাহাজে চাকরির জন্য বৈধতা দেয়া হয়। কিন্তু ব্যপারটা যদি এখানেই থেমে থাকতো তবুও মেনে নেয়া যেত। কিন্তু এখানে থেমে থাকেননি আমাদের নীতিনির্ধারকরা। তারা নিজের পকেট ভারি করে একেবারে অপ্রফিশনাল লোকদেরকে ডেক ইঞ্জিনের সকল র‍্যাঙ্কে আইডি দেয়া শুরু করে। যে সমস্ত ওয়াইল্ডার ফিটার দীর্ঘদিন ধরে বৈধ বা অবৈধ যেকোনভাবে জাহাজে চাকরি করে আসছিলেন তাদের বৈধতা যদিও মেনে নেয়া যায় কিন্তু এই গন হারে কোন নীতিমালার বাইরে কোন ট্রেনিং ছাড়া কোন প্রাথমিক যোগ্যতা ছাড়া কোন বয়সের সীমারেখা ছাড়া যেকোন লোককে ধরে ধরে জাহাজে চাকরির বৈধতা দেয়া হতে থাকে। এর পরে শুরু হয় নেভির অবসর প্রাপ্তদের সিডিসি প্রদান। ডিজি শিপিং এর কর্নধার আমাদের মাননীয় ডিজি মহোদয় একজন প্রাক্তন নেভী অফিসার। তিনি নতুন নীতিমালা জারি করে নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের জন্য মার্চেন্ট মেরিন সেক্টরকে উন্মুক্ত করে দেন। মার্কেটে আসতে থাকে নেভী ক্রু। আমরা দেখছি ইউকে আর আমেরিকার অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের কে নিয়ে মেরিটাইম সিক্যুরিটি নামে একটা বাহিনি গঠন করা হয়েছে যাদেরকে সোমালিয়া আতঙ্কিত এলাকা মানে হাই রিস্ক এরিয়া ট্রাভেল করে এমন জাহাজ প্রটেকশনের জন্য সাময়িক ভাবে ভাড়া করা হয়ে থাকে। অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের কর্মসংস্থানের জন্য এটা একটা ভালো পদ্ধতি বলা যায়। কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশে মার্চেন্ট মেরিনে নেভাল লোক আনা হয় নি। এই নজির সৃষ্টি করলেন আমাদের ডিজি মহোদয়।

এইভাবে একের পর এক সরকারী উদ্যোগে মেরিন সেক্টরটাকে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। আমি একটা ব্যপার লক্ষ্য করছি। আমাদের সরকার এমন একটা ভাব দেখাচ্ছে সে তারা এই সেক্টরের উন্নয়ন করছে। কিন্তু সরকারের কাছে এই উন্নয়নের মানে মেরিন একাডেমীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করা। নতুন নতুন প্রাইভেট একাডেমীর অনুমোদন দেয়া। কিন্তু মেরিনাররা কোথায় কিভাবে চাকরি করে সেটা সম্পর্কে তারা আসলেই একেবারে অজ্ঞ।

আমি সঙ্কিত নতুন প্রজন্ম যারা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার নামের জৌলুসে আকৃষ্ট হয়ে উজ্জল ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে মেরিনে ভর্তি হচ্ছে তাদের জন্য ভবিষ্যৎ আসলে কি রেখেছে। এবং আমার দুঃখ হয় সেই সমস্ত অভিভাবকের জন্য যারা বিশ লক্ষ টাকা দিয়ে তাদের সন্তানকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আমরা শুধু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলেই উদ্ভুত এই পরিস্থিতির কোন উন্নতি হবে না। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের সরকারকে ভাবতে হবে। নিঃসন্দেহে এই সেক্টরটি আমাদের দেশের অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের বৈদেশিক রেমিটেন্সের একটা বিরাট অংশ আসে এই সেক্টর থেকে। ফিলিপাইন ও ইন্ডিয়ার মতো বিশ্ব বাজারে আমাদের চাকরীর বাজার প্রসারিত করার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু দেশের মধ্যে নতুন নতুন একাডেমী সৃষ্টি না করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সহজ চুক্তিতে আসতে হবে। সহজ কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে নাবিকের ভিসা জটিলতা দূর করতে হবে।

---------------------------------------------------------

মূল লেখার লিঙ্ক

প্রথম প্রকাশের পরে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যসমূহঃ

১. কান্ডারি অথর্ব বলেছেন: অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের সব সেক্টরের এই যে এত বেহাল দশা এই নিয়ে সরকারের কি কোন মাথা ব্যথা আছে !!! এক তোবা গার্মেন্টস শ্রমিকদের কথাই চিন্তা করুন বেতন বোনাসের জন্য অনশন করছে অথচ সরকার এখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। অথচ এর কি পরিনতি কি এফেক্ট হতে পারে এই শিল্পে সেটা কি বোঝার ক্ষমতা সরকারের আছে ?

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তুলে ধরার জন্য।

২. সোহানী বলেছেন: প্রথমেই ধন্যবাদ দেই আপনার এ সময়োপযোগী দীর্ঘ লিখার জন্য। যদিও লিখাটি কয়েকটি পর্বে ভাগ করে দিলে পাঠক মনোযোগ ধরে রাখতে সুবিধা হতো।

আমি আপনার লিখায় সম্পূর্ন সহমত পোষন করছি কারন বাবা ও চাচার কারনে কিছুটা হলে ও আপনাদের পেশা সম্পর্কে জানি।

অনেক পুরোনো হিস্ট্রি শেয়ার করি... মেরিন একাডেমির প্রথম ধ্বংস শুরু হয়েছে যেদিন একাডেমিটি ফিসারিজ থেকে নেভিতে নিল (অনেকে হয়তো দ্বিমত পোষন করবেন)।

আর আসল ধ্বংস হলো যখন এরশাদ সরকারের পোষ্যরা বাংলাদেশ ফিসারিজের মিলিয়ন ডলার লাভ দেখে একের পর এক প্রজেক্ট প্রাইভেটলি বিক্রি করে দেয় আর অতো লাভজনক প্রতিস্ঠানটি ধ্বংস করে দেয়।

একমাত্র সরকারী পৃস্ঠপোসকতা ছাড়া এ সেক্টর উঠে আসবে না আর একক বা বিদেশী দয়ার চাকরীতে কয়দিন চলবে ????

ধন্যবাদ।

৩. কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়ে লিখেছেন! এই বিষয়ে অবশ্যই আলোচনার প্রয়োজন আছে।

কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, এই পোষ্টটি স্টিকি করা হোক!!

৪. সুমন কর বলেছেন: এ বিষয়ে তেমন ধারনা নেই। তাই পরে সময় করে পড়তে হবে।
তবে একটি কথা, দেশের সব সেক্টরে যে করুন দশা তার চেয়ে এটি ব্যতিক্রম হবার নয়।

৫. বেকার সব ০০৭ বলেছেন: কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, এই পোষ্টটি স্টিকি করা হোক

৬. ইমিনা বলেছেন: এই শিল্প সম্পর্কে এবং এর বর্তমান ও বাস্তব চিত্র সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারনা তেমন ভালো না। যেহেতু উক্ত পোস্টে এই শিল্পের বর্তমান অবস্থাটা ফুটে উঠেছে, তাই এটিকে স্টিকি করে সবাইকে পড়ার সুযোগ করে দেয়া হোক।
ব্যক্তিগত ভাবে এইটুকুই বলবো যে, দেশের প্রতিটা শিল্পের অবস্থাই খারাপ। প্রশাসন তার নজর কোথায় রেখেছেন তা ই এখন ভাবার বিষয় ...

৭. হিমুস্টাইন বলেছেন: সময়োপযোগি লেখা ।
কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, এই পোষ্টটি স্টিকি করা হোক।

৮. স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: সারা বছর বাইরে থাকতে হয়, আব্বুর এই যুক্তির কারণে 2008 এ মেরিনের পরীক্ষা দেয়া হয়নি, নিজের ও যে খুব ইচ্ছে ছিল তা বলবোনা!
কিন্তু সেদিন এক স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হলো, আমি গ্রাজুয়েশন শেষ করে সবে চাকুরি শুরু করলাম আর ও দেখি বিয়ে সেরে ফেলেছে :(
তাই আফসোস, অবশ্যই অবশ্যই সম্ভাবনাময় খাত, সরকারের উচিৎ যত্নে নেয়া

৯. মামুন রশিদ বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, এই সেক্টর বিশেষ মনযোগ দাবি করে ।

১০. মোঃ মোশাররফ হোসাইন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনাকে অনুরোধ করছি সচেতনতা তৈরীর কাজ চালিয়ে যেতে।

১১.গৃহ বন্দিনী বলেছেন: আমাদের সরকার সব ক্ষেত্রকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে , সেখানে মেরিন সেক্টর আর বাদ যাবে কেন ?

খুব সুন্দরভাবে সামগ্রিক বিষয়টা বিশ্লেষণ করেছেন লেখাতে । কিন্তু আফসোস এসবের নীতিনির্ধারক শ্রেনীর চোখে এইগুলো পড়বে না ।
এখন, যারা মেরিনার হবার ঝকমকে স্বপ্ন দেখছে , তাদেরই বরং সচেতন হতে হবে ।

১২. ডি মুন বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।

স্টিকি করার দাবী জানাই মডারেটরদের কাছে।

১৩. সমুদ্র_বাংলা বলেছেন: অত্যন্ত জনসচেতনতামুলক এবং সময়োপযোগী পোস্ট । কয়েদিন পর ইন্টার পাশ করা ছেলেরা যাতে এই ভূল পথে পা না বাড়ায়--- মেরিনা পড়া মানে ভবিষ্যত অনিশ্চিত । আমি দেখেছি অনেক বুয়েট মেডিক্যাল চান্স পাওয়া ছাত্র মেরিনে ভর্তি হয় আর ভুল করে । আর লেখাটা আরও সাজিয়ে লেখলে খুব ভাল হত । যাই হোক , পোস্টা স্টিকি করার জন্য কর্তৃপক্ষের বিনীত দৃষ্টি আকর্ষন করছি ।

১৬.গৃহ বন্দিনী বলেছেন: সমুদ্র_বাংলা বলেছেন: কয়েদিন পর ইন্টার পাশ করা ছেলেরা যাতে এই ভূল পথে পা না বাড়ায়--- মেরিনা পড়া মানে ভবিষ্যত অনিশ্চিত ।

@সমুদ্র_বাংলা - আপনার এই ধরনের চিন্তা ভাবনা কেন হল ঠিক ধরতে পারলাম না ।
মেরিনারদের চাকরির বাজার কমে যাচ্ছে দেখে কি আপনার মনে হচ্ছে , এই পেশায় আর কারো আসা উচিত না ? যারা আছেন তারাই সারা জীবন জাহাজে চাকরী করে যেতে পারবে ?

আর মেরিনে পড়েই যে সবাই কেবল জাহাজেই চাকরী করে এমন তো না ।অনেকেই পোর্টে বা শপিং কোম্প্যানিসহ বিভিন্ন জায়গায় দেশে বিদেশে কাজ করছে । তাই মেরিনা পড়া মানে ভবিষ্যত অনিশ্চিত এটা বলাটা একেবারেই ভুল ।বরং অনেক বেশি প্রসারিত । যেটা বর্তমানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আর দুর্নীতির কারনে হুমকির মুখে পড়েছে অন্যসব কর্মক্ষেত্রের মত ।

আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি ,যারা প্রকৃতভাবে এই পেশায় আগ্রহী তাদেরকে অভিজ্ঞরা সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করা । সেই সাথে কিভাবে আরও চাকরির সুযোগ তৈরী করা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা করা । মাথা ব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলা কোন সমাধান না ।

১৭. অথৈ সাগর বলেছেন: অপরিকল্পিত ভাবে আগাচ্ছে মেরিন সেক্টর । কোন অভিভাবক নেই ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×