হন্ত-দন্ত হয়ে প্রায় দৌঁড়ে এলাম ফার্মগেট। অনেক প্রতীক্ষার পর একটা বাস এলো। বি.আর.টি.সি. ডাবল ডেকার। যাবে মীরপুর হয়ে। আমার মতো অপেক্ষমান যাত্রী অনেক। পিচ্চি-পাচ্চা মতো হওয়ায় অনেকের মতো আমিও লাইনের তোয়াক্কা না করে ভীড় ঠেলে উঠে এলাম উপরে। অনেকের আগে আসলেও উপরে এসে সীট পেলাম সিঁড়ির ঠিক কয়েক সারি পেছনে এক ভদ্র মহিলার পাশে। দ্রুত বসে পড়লাম। স্বস্তির নিঃশ্বাষ নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই- এ কি ! গা ঘিনঘিন করতে লাগলো। মহিলা বেচারা লজ্জায় অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আমারও মনে হচ্ছে বড্ড লজ্জাকর অবস্থায় পড়ে গেলাম। আমাদের সামনের সীটের যাত্রীরাও আশে-পাশে, এদিক-ওদিক তাকিয়ে আছে। তারা আরো বিব্রত। ইতোমধ্যে যাত্রীতে বাস ভরে গেছে। সবাই কৌতুহলী দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে আর তাকায়না ওদিকে। ভাবটা এমন যেন- আমি কিছু দেখিনাই ! না, মহিলার পাশে আমার বসা নিয়ে নয়।
সিঁড়ির সাথে লাগানো সলিড ডিভাইডারটা প্রায় ধবধবে ঘিয়ে রঙ। তার পর থেকেই সীট বসানো। এই সাদা অংশটায় একটা স্কেচ্ করা। আপত্তিকর। বেশ করে, কোন্ বিখ্যাত শিল্পী যেন একটা ন্যূড স্কেচ্ করে রেখেছে। একটা পুরুষালী অঙ্গ। এমন কম্পোজিশনে ওটা আঁকা যে বসা-দাঁড়ানো কাউরো চোখ এড়ায়না। কেউ একবার দেখে আর ওদিকে চোখ নেয় না। চোখ তাক করায় ওটার সামনে বসা যাত্রী, বিশেষ করে মহিলা যাত্রীদের দিকে। আমার মনে হচ্ছে তারা আমার দিকেও ট্যারা চোখে তাকাচ্ছে, কারন আমি স্কেচটা দেখতেছি। ভালো করে খেয়াল করতেছি। মুখস্থ করতেছি। আর ভাবছি. . .। কে আঁকলো এটা ? কীভাবে আঁকলো ? ইত্যাদি ইত্যাদি। দেখছি তো দেখছিই, আর ভাবছি এটা এখনো কেউ মুছেনি কেন ? কীভাবে মুছা যায় ? হঠাৎ মাথায় এক দুষ্টু চিন্তা এল। কিন্তু ভয়, লজ্জা, পাছে লোকে কিছু বলে. . .। আমার গা ঘেমে যাচ্ছে।
অবশেষে লাজ শরমের মাথা খেয়ে, সাহস নিয়ে উঠে গেলাম স্কেচটার কাছে দ্রুত কয়েকটা লাইন টেনে স্কেচটার আদল পাল্টে দিলাম পূর্বে আঁকা লাইনগুলো অবিকল রেখেই। এটা এখন একটা পরিত্যক্ত গাছের গুঁড়ি, যাতে কয়েকটা নতুন পাতা গজাচ্ছে। নিচে একটা ব্যাঙ বসে আছে. . .।
লজ্জায় মাথা দিয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। শরীর কাঁপছে। ফিরে এসে মাথা নীচু করে সীটে বসতেই- লক্ষ্য করলাম কে যেন আমার কাঁধ চাপড়াচ্ছে। কৌতুহলী দৃষ্টিতে পেছনে-উপরে তাকাতেই দেখি- ষাটোর্দ্ধ একজন।
“ওয়েল ডান বাবা ওয়েল ডান”।
কিছুটা স্বস্তি পেলাম। ইচ্ছা করছে শিনা টান করে চিৎ হয়ে হাঁটি, মনে হলো গর্বে গর্ভবতী হয়ে গেলাম। কিন্তু তবুও জড়তা কাটছে না। এক্ষুনি গন্তব্যে নামবো। সীট থেকে উঠেছি, পেছন থেকে স্পষ্ট ভেসে এলো-
“এই সমস্ত আট্টিসরাইতো ওই নেংটা ছবিগুইলা আকে . . .”।
(আগের লেখা)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


