আমি 'ও' বর্ণটাকে একটু টেনে লম্বা করে বলি,
'ও ললিতা!'
ললিতা চুপচাপ নিজের চেয়ারে বসেছিল। হঠাৎ ডাক শুনে সামান্য চমকে ঘুরে তাকাল। তাকিয়ে হেসে ফেলল। খিলখিল করা হাসি। আমার পাশে কম্পিউটারে কাজ করতে থাকা শেরিলও চমকে উঠল। বলল, -'ইউ ক্রেইজি!'
তারপর শেরিলও হেসে ফেলল। নামের আগে যুক্ত করা 'ও' বর্ণর টেনে উচ্চারণে এরা বেশ মজা পেয়েছে।
আমি আবার বলি, 'শোন ললিতা, সবাই খালি স্মাইল করতে বলে। আর আমি বলি লাফিং করতে। হাসিতে কোনও পরিমিতি বোধ থাকা চলবে না। আকাশ-পাতাল হাসি দিতে হবে। তাহলে তোমার হার্ট ভালো থাকবে। তোমার মুখের মাংসপেশির ব্যায়াম হবে।'
ললিতা আবারও হাসতে লাগল। তার হাসিতে এখন পরিমিতিভাব কম। সেটাকে আড়াল করতে সে মুখে হাত চাপা দিল।
আমি বলি, 'আকাশ-পাতাল হাসি বোঝ?' ললিতা আর শেরিল দুজনেই মাথা নাড়ল। বোঝে না।
আমি ইংরেজিতে অনুবাদ করার চেষ্টা করি, 'ওভার দ্য স্কাই, আন্ডার দ্য সী যারা যারা বসবাস করে তাদের সকলেই তোমার হাসি শুনতে পাবে।'
শেরিল আবারও বলে উঠল, -'ইউ ক্রেইজি!'
কথায় কথায় মাথা খারাপ বলে বিশেষায়িত হওয়া কোনও কাজের কথা নয়। আমি আসলে কৌতুক করতে পারি না। কৌতুক করতে গিয়ে বারবার ধরা খাই। লোকজন খেপে যায়। খেপে গিয়ে আমার হাড়গোড় গুঁড়া করে দেয় না বলে ভাগ্য বলে যে সত্যিই একটা কিছু আছে সেটা আমার বিশ্বাস করতে মন চায়। তবু শেষ রক্ষা হয় না। কেউ কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়। কেউ জ্বালাময়ী কাব্য রচনা করে। কেউ প্রতিরোধ করবে বলে হুমকিও দেয়। এইত সেদিন এক বাল্যবন্ধু খেপে গিয়ে কথাবার্তা বন্ধ করে দিয়েছিল। কথা সত্যই বড় ভয়ানক জিনিস।
আমার বড় আপাকে ছেলেবেলা থেকেই বলতে শুনি, আমি নাকি খালি হাতেপায়ে লম্বা হয়েছি। সার বস্তু বলে কিছু নাকি আমার মাথায় নেই। এইরকম সত্য বাক্য আমি কোন্ প্রাণে ধরে অস্বীকার করি! তার ওপর যদি আর সকলের সে বাক্যে সমর্থন থাকে তাহলে মুখে কুলুপ এঁটেই থাকা উচিত, তাই না?
আমি কুলুপ জোগার করে মুখে কুলুপ আঁটি। মুখে না বলেও সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করি আপা আসলে সাম্রাজ্যবাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এই সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করা কর্তব্য। সবাই সাম্রাজ্যবাদের ভেবে দেওয়া ভাবনায় ভাবতে শুরু করেছে। এই ভাবনা থেকে বেরুতে হবে। বেরিয়ে নতুন ফরমেটে ভাবতে হবে। যে ভাবনা আমরা কখনও ভাবতে পারি বলে সাম্রাজ্যবাদ কখনও ভাবতে পারে না, সেইভাবে ভাবতে হবে।
এসব কথা যতই বোঝাতে চেষ্টা করি কোনও কাজ হয় না। ফলে আমাকে শতভাগ স্বরূপে আবির্ভূত হয়ে বেচারা হিসেবেই সকলের সম্মুখে পদচারণ করতে হয়। বোঝা গেল, সেই পদচারণা কন্টকমুক্ত ছিল না। কন্টকের খোঁচাতেই সম্ভবত বাকরহিত হয়ে থাকবেন। সকলের সময়ই মহামূল্যবান। সকলের মতো আমার নিজের সময়ও। কথা হলো, মূল্য নিজেকে ছাড়িয়ে যখন আর কেউ বুঝে ফেলে তখন নাকমুখ-চোখকান তটস্থ হয়ে ওঠে, রহস্য কী!
রহস্য নিশ্চুপ। কোনও কথা কয় না। কথা সত্যিই বড় ভয়াবহ ব্যাপার। রামছাগলের মতো কথা বলে শুধু শুধু নিজের যন্ত্রণা টেনে না আনাই শ্রেয়। তারচেয়ে আসেন রোহিঙ্গা নিয়া বাক্যালাপ করি। নাকি বাংলা কবিতা নিয়া আলাপ করতে চান? অথবা যন্ত্র কিংবা আমলা?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৪