somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজয়টা আসলে কই?

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গেল বছর কয় ধরে বছরের এই সময়টায় আমার মেজাজ খুবই খারাপ থাকে। এইবারে এইটা মাত্রাছাড়া হয়ে গেছে। এই মাত্রাছাড়া বিষয়টা আমারে উৎকৃষ্ট মানের ছোটলোক বানায়ে দিয়েছে।

কালকে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করতে গেছি। তিনি কিংবদন্তী মানুষ। আমার বাসনা কথাবার্তা আলোচনাদের ইন্টারভিউ হিসেবে লিখে ফেলতে পারলে একটা এক্সক্লুসিভ কিছু হয়ে যাবে। তা দিয়ে অন্তত দুইটা দিন মাছ-মাংস দিয়ে ভাত খাইতে পারব। কাঁচামরিচ ডলে ডলে ডাল-ভাত খাইতে খাইতে জিহ্বায় আর অন্তরে কহর পড়ে গেছে।

কিন্তু এক্সক্লুসিভ হওয়ানো যায় নাই। আমারে কাঁচা মরিচ ডলে ডলে জিহ্বায় কহর ফেলতে থাকতে থাকা লাগবে। কিংবদন্তী মানুষ কিছু বলতে রাজি না। এই বলতে রাজি থাকতে থাকা না থাকার মধ্যবার্তী অবস্থানে তার কাছে আমি যা যা শুনে ফেললাম, সেগুলা লিখে ফেললে আমার মাছ-মাংস দিয়ে ভাত খাওয়া হবে না। লোকেরা ঘেটিটা ধরে বাংলাদেশ থেকে বের করে দিবে। আর কোনোদিন ঢুকতে পারব কিনা সেইটা নিয়ে বিস্তর সন্দেহ করবার পর্যাপ্ত কারণ আছে।

আজকে আমার বাংলাদেশটার পঞ্চাশতম বিজয় দিবস। একজন কিংবদন্তি মানুষ নির্ভয়ে নিজের কথাবার্তা বলতে পারবেন, কিংবা কাঁচামরিচ ডলে ডলে ডাল দিয়ে ভাত খাওয়া খুব সাধারণ একটা লোকে সেগুলা শুনে খোলামেলা আলোচনা করতে থাকতে পারবে- এই পঞ্চাশ বছরে আমার বাংলাদেশটা এই পরিবেশ বানাতে পারে নাই।

তো কথাবার্তা শেষে ফিরতেছি। পাড়ার কলেজটার কাছে আসতে নানানরকম গান ভেসে এল। এইসব গান স্বাধীন বাংলা বেতারে বাজত। মুক্তিযোদ্ধারা শোনা যায় কি যায় না- এমন শব্দে রেডিওটা কানের কাছে রেখে এসব গান শুনতেন। শুনে শুনে দেশমাতৃকার জন্যে চোখের জল ফেলতে ফেলতে নিজের জীবনটারে উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ হতেন। আজকে এইখানে এই গানগুলো ভীষণ চড়া শব্দে বাজছে শুধুই ১৬ ডিসেম্বরকে উপলক্ষ্য করে। যারা বাজাচ্ছে তারা নিজেদের আলাপে মশগুল, কাল গরু জবাই হবে। আচ্ছা, খিচুড়িই করবে? নাকি তেহারি করলে ভালো হয়?

১৭ ডিসেম্বর এলেই এরা বলবে, পঞ্চাশ বছর আগে কি হয়েছিল সেসব এখন বলে লাভ কি!

গেল তিনদিনে আমাকে চার চারজন মানুষে ইংরেজিতে চিঠি লিখেছেন। ইংরেজিতে কেউ কাউকে চিঠি লিখতেই পারেন। তাছাড়া তাঁরা উচ্চ শিক্ষিত মানুষ, ইংরেজি জানেন, তাহলে কেন লিখবেন না! অবশ্যই লিখবেন। কিন্তু যাকে লিখলেন তাঁকে তো সে ভাষা বুঝতে হবে। মজার ব্যাপার হলো এই চারজনের সঙ্গেই আমার পরিচয় লেখালেখি মাধ্যমে। আমার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের ভাষাটা তাই বাংলাতেই। তাঁরা ইংরেজিতে লিখেছেন ভীষণ রেখে গিয়ে। কারও লেখা ছাপি নি বলে রাগ। কেউ মতে অনৈক্য জানিয়েছেন। কেউ হয়ত গালাগালিও করেছেন। হয়ত বলে দেবার কারণ হলো, অকাট মূর্খ এই আমিটা আসলেই ইংরেজি জানিবুঝি না। একজন ভীষণভাবে শিক্ষিত মানুষ কাগজে লেখা পাঠিয়ে তাঁর লেখাটা ছাপতেই হবে কেন ধরে নেবেন! এবং ছাপা না হলে শিশুদের মতো রাগ-অভিমান করে নিজেরে প্রমাণ করতে কেন ইংরেজিতে চিঠি লিখবেন! পত্রিকা, পত্রিকার দায়িত্বে যিনি, এবং তিনি নিজে- সকলই তো বাংলা!
গেল পঞ্চাশটা বছরে আমরা এমন একটা শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারি নাই যেটা মানুষকে পরমতসহিষ্ণু হতে শেখায়, নিরহঙ্কার হতে শেখায়।

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে আজকে অর্ধশত বছর। আজকে আমরা বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি।

অথচ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করেছিল চারটা নীতি। আমরা যখন পূর্ব পাকিস্তান ছিলাম, তখন আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার বলে কিছু ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তানিরা হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এসে যোগ্যতা না থাকলেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করত। আমরা কিছুই বলতে পারতাম না। আমরা বলতে চাইলাম। আমরা গণতন্ত্রের অভাব অনুভব করে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলাম।
মানুষে মানুষে সমতা ছিল না। সকলের সমান অধিকার ছিল না। আমরা সকলকে সমান চোখে দেখবার দাবি তুললাম।

যদিও পাকিস্তান রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল ধর্মর ভিত্তিতে। এবং সেই ধর্মকে সামনে রেখেই পূর্ব বাংলাকে 'লড়কে লেঙ্গে' পাকিস্তানের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছিল সম্পূর্ণ আবেগ থেকে। একটা দেশে একটা ধর্মেরই মানুষ বসবাস করবে- এর চেয়ে অবাস্তব চিন্তা আর কিছু হতে পারে না। পাকিস্তান হওয়ার পরে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের শেকড় উপড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান আর পাকিস্তান থেকে ভারত গিয়েছে, কিন্তু ভারত কি মুসলমান মুক্ত হয়েছে? কিংবা পাকিস্তানই কি হিন্দু-বৌদ্ধ-খিস্টান মুক্ত হয়েছিল? হয় নি তো। সেকারণেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে ধর্মনিরপেক্ষতা। কেননা রাষ্ট্র কখনও ধর্ম পালন করে না। রাষ্ট্র একটা প্রতিষ্ঠান। ধর্ম মানুষের জন্যে। যে যার ধর্ম নিজের মতো করে পালন করবে। রাষ্ট্র সকলকে যার যার ধর্ম পালনের পরিবেশ আর স্বাধীনতা দেবে। এই বাংলাদেশে এখন ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হয়ে গেছে ধর্মহীনতা।

পঞ্চাশটা বছরে বাংলাদেশটার রাষ্ট্র পরিচালকরা ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা তো দূর, শব্দটির অর্থই তার নাগরিককে শেখাতে পারে নি।

আরেকটি হলো জাতীয়তাবাদ। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ থাকা সত্ত্বেও মাথার ওপর লাঠি ঘোরাত পশ্চিম পাকিস্তানিরা। শাসন ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানিরাই কুক্ষিগত করেছিল। সকল সুবিধা তাই পশ্চিমের নাগরিকেরাই পেত। এমন কি বাঙালি শব্দটাকেই তারা গালাগালের ভঙ্গীতে উচ্চারণ করত। আমরা জাতীয়তাবাদের কথা বললাম। মানে পূর্ব বা পশ্চিম নয়, পাকিস্তানের নাগরিক হলেই যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে।

যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে আজ বিজয়ের পঞ্চাশ বছর উদযাপন করছি। আমরা আজও জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারি নি। আমরা এখন বাঙালি আর বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিভাজিত। এবং বাঙালি শব্দটাকে এখন নিজেরাই গালাগাল বানিয়ে ফেলে একে অন্যকে তাচ্ছিল্য করতে বলেই চলেছি, 'জাতে বাঙ্গালি না!'

এইসব ভেবে ভেবে গেল বছর কয় ধরে বছরের এই সময়টায় মেজাজ খুবই খারাপ থাকে। লোকেরা ভালো কথা বললেও ঘুরায়ে পেঁচায়ে কিসব কিসব বলে দেই। আমার ভালো লাগে না। লোকেরা আমারে আউলা ডেকে ফেলে ঘাপটি মারে।

এখন আমি জানতে চাই, আমাদের বিজয়টা আসলে কই?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×