অনেক অনেক অনেক কাল আগে ব্লগে রান্না-বান্নার অনেক পোষ্ট আসতো। আমি অনেক রান্না শিখেছি ব্লগের একেক জনের পোষ্ট দেখে। আজকাল মনে হয় আর কেউ সেরকম পোষ্ট দেয় না। সবাই খুব সিরিয়াস সিরিয়াস পোস্ট, গল্প, কবিতা আর উপন্যাস লেখে। আমি পুরনো আমলের মানুষ, পান চিবুনোর মত করে স্মৃতি চিবুতেই ভালবাসি। তাই আজ একটি থুক্কু দুটি অতি সাধারন রেসিপি নিয়ে এসেছি । রেসিপি সাধারন হলেও ভাব ধরেছি সেটা অসাধারন। দূর্মূল্যের বাজারে ভাব না নিলে আজকাল কেউ দাম দিতেই চায় না, কী করার বলেন?
আম্মা আব্বা গ্রামে গেছেন মেলা দিন হল। তো রান্না ঘরের একচ্ছত্র আধিপত্য আমার, তাই সেটার মোটামুটি পূর্ণ ব্যবহার করি। তাই তো আমি নীল-দর্পণ ওরফে আপনাদের নীলু হাজির হয়েছি রান্না-বাটি নিয়ে।

আমি আজ যেই রান্নাটার গল্পো করবো সেটার প্রস্তুতি আগের রাত থেকে চলেছে। ধাপে ধাপেই বর্ণনা করি তাহলে।

রান্নার আগের রাত:
একদিন ছোট্টবেলার বান্ধবী বলল বাসায় আসবে। খাবে গরুর তিহারী। রাতের বেলা খাবারের পরে মাংস নামায় রাখলাম যাতে সারারাত বরফ ছুটে নরমাল হয় আর সকালে কাজ করতে সুবিধা হয়। রাতে দেখি সে মেসেজ দিয়েছে মেয়ের পরীক্ষা আছে সেটা মনে ছিল না, তাই আসতে পারবে না। জানে যে আমি রেগে মানবিক থুক্কু পারমানবিক বোমা হয়ে যাবো তাই সুন্দর করে সরি বলেছে কয়েক বার। কীসের কী সরি-তে কী আর রাগ কমে! কাউকে খাওয়াবো মনে করে রাখলে না খাওয়াতে পারলে খুব-ই খারাপ লাগে। যাক মেয়ের পরীক্ষা, কী আর করা। বান্ধবীকে আচ্ছা মতন বকে-টকে (বকা খেয়ে হাসে, পাত্তাই দিল না)

রান্নার দিন:
সকালে নাস্তার পরে মাংস ধুয়ে কেবল লবন মেখে ঢেকে নরমাল ফ্রীজে রেখে দিলাম রান্না অনেক দেরি তাই।
ভেবেছিলাম ভুনা করবো, পরে ঠিক করলাম গরুর মাংসের কোরমা রান্না করিনাই কখনো, সেটাই দেখি। ইউটিউব ঘেটে-ঘুটে এক রেসিপি দেখলাম। আমি আবার হুবহু রেসিপি অনুসরণ করি খুব কম। ধারনা নিয়েই নেমে গেলাম।
চুলায় কড়াই চাপিয়ে তাতে তেল গরম করে ৪টা এলাচ, একটুকরা দারচিনি, দুইটা তেজপাতা (অযথা একটা জিনিস, আমি এর ঘ্রান পাইনা কিছুতে। দিতে হয় তাই দেই আরকি) দিয়ে একটু নেড়ে হাফ কাপের কম পেঁয়াজ বাটা দিয়ে দিয়ে হালকা ভাজলাম (লাল করা যাবে না) । এবার তাতে দুই কিউব রসুন আর আদা দিয়ে দিলাম (আমাদের আদা, রসুন বাটা বরফের কিউব বক্সে রাখে) । কোরমায় নাকি জিরা দেয় না (এটা কিছু হইল! সব মশলা দিতে না পারলে কেম্নে কী)

যাই হোক মাংস মাঝে মাঝে নাড়াচাড়া চলছে। মাঝে দুধ একটু কম ছিল বলে এক চামচের মত কনডেন্স মিল্ক দিয়েছি। এরপর পানিও দিয়েছি মাংস সেদ্ধ হবার জন্যে। সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে এককাপ পরিমান আগে জ্বাল দিয়ে রাখা ঘন দুধে সামান্য হাকিমপুরী জর্দা সরি জর্দা রং অর্থাৎ জাফরান রং গুলে দুধটা ঢেলে দিয়েছি। আবার জ্বাল হতে থাকল। এবার পছন্দ মত একটু বেশি ঝোল রেখে নামিয়ে নিলাম। নামানোর আগে একটা এলাচি লেবুর অর্ধেকটা রস দিলাম, চিনি চেখে একটু চিনি দিলাম, আর দুইটা কাচা মরিচ ফালি করে দিলাম। আমি কোরমা বা তেহারিতে একটু মিষ্টি, একটু টক আর অনেক ঝাল পছন্দ করি। আমি একটা ভুল করে ফেলেছিলাম যেটা প্রায় রান্নাতেই একটা না একটা ভুল থাকেই। এবার যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে নামানোর আগে একটু ঘি দিতে ভুলে গেছিলাম। খাওয়া দাওয়ার শেষে (মনে হয় একদিন পরে) মনে পড়েছিল যে আমি তো ঘি দেইনি!
যাগ্গে কিচ্ছু আসে যায় না। খাওয়া হয়ে গেছে। ঘি বেঁচে গেছে।

এই হচ্ছে আমার রান্না করা কোরমা :
কম তেলে রান্না করার জন্যে সুনাম , দূর্নাম দুই-ই আছে আমার। নিজে খাবো তাই তেল কম-ই দিয়েছি। মেহমানের জন্যে করলে আরেকটু বেশি হতো, তখন উপরে একটু বেরেস্তাও যেতো।

কোর্মা রান্না শেষ, অন্য কী এক তরকারীও শেষ। ভাত হচ্ছিল এমন সময় ইউটিউবে ঘুরতে ঘুরতে চিতই পিঠার ভিডিও দেখে মনে হল চিতই পিঠা বানাই। আমার আবার চোখের পাপ, মনের পাপ সব আছে খাবারে ব্যাপারে। কিছু খাবো মনে হলে না খাওয়া পর্যন্ত শান্তি নাই (ভাল হয়ে যাবার ট্রাই করছি আপ্রান, দোয়া করবেন সবাই আমার জন্যে)!
তো যাই হোক ফ্রিজ থেকে চালের গুড়ার পোটলা বের করলাম। এককাপ পরিমান গুড়ায় একটু লবন আর ফুটন্তু গরম পানি দিয়ে মাখা মাখা কাই বানালাম। রেখে দিলাম একটু রেস্টে। এটা হচ্ছে দুনিয়ায় ঝামেলার এক পিঠা। গ্রামের অভিজ্ঞরাই ঠিক ঠাক বানাতে পারে না আর তো আমার মত নবিশ! যাই হোক আমি চেষ্টায় আছি এটা সফল ভাবে বানানোর। একজনে রেসিপিতে পড়েছিলাম তার দাদী নাকি এই পিঠার গোলায় ভাতের মার দিতেন একটু, তাতে পিঠা নরম হয় আর ফুলে। ভাতের জ্বাল কমানোর সময় সেটা মনে হয়। ভাবলাম কী আছে জীবনে দেই একটু মাড়! দিয়ে আবার গোলালাম। এরপর ঠিক ঠাক ঘনত্ব এনে রেখে দিলাম কিছুক্ষণ। এর মাঝে ভাতের মাড় ঢেলে পিঠার ছাঁচ চুলায় দিয়ে গরম করলাম। ঠিক ঠাক গরম হলে পিঠা ভেজে নিলাম।
দেখুন কী বানিয়েছিলাম!

প্লেটে ময়লা বলে যারা ছ্যা ছ্যা করে নাক কুচকাচ্ছেন তারা এক্ষুণি নাক সোজা করুন...করুন বলছি..নয়ত বাড়ি মেরে সোজা করে দেব!
ওটা পিঠার নিচের অংশের দাগ লেগেছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য-১: এত কাজ করার শুরুতে যদি চুলাটাই না জ্বালান তবে কিন্তু কিচ্ছুটি হবে না।

বিশেষ দ্রষ্টব্য-২: রান্না হোক যেমন তেমন খেতে হবে ইয়াম ইয়াম।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:১৭