somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীরবতার রাজনীতি: স্করসেজির চলচ্চিত্র এবং বাংলাদেশের দলবিশ্বাস

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মার্টিন স্করসেজির The Silence চলচ্চিত্রের মূল সংকট এক বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব। যেখানে যিশুর অনুসারীরা জাপানে তাদের বিশ্বাসের জন্য নিপীড়নের শিকার হয়, সেখানে অন্যদিকে কিছু খ্রিস্টান নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য আপোষ করে, এমনকি বাইরের দুনিয়ার কাছে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় আড়াল করে। বাংলাদেশেও রাজনৈতিক অঙ্গনে আমরা একই রকমের এক বিশ্বাস সংকট দেখতে পাই—একটা দলের প্রতি আনুগত্য দেখালেও, বাস্তবে অনেকেই তাদের আদর্শের ধারক নয়।

বাংলাদেশে কিছু মানুষ নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি কৃতজ্ঞতার অভিনয় করেন, দলের সভায় হাজির হন, স্লোগান দেন, এমনকি সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের দলীয় পরিচয় জাহির করেন। কিন্তু যখন বাস্তব সংকট আসে—ক্ষমতার পালাবদল ঘটে, রাষ্ট্রের রূপরেখা বদলায়—তখন তাদের চেহারার আসল রঙ প্রকাশ পায়। যেমন The Silence-এ কিছু চরিত্র যিশুকে অস্বীকার করে বেঁচে থাকে, তেমনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছু ব্যক্তি সুবিধাবাদী হয়ে নতুন ক্ষমতাসীনদের ছায়ায় চলে যান।

এই প্রতারণার রাজনীতি নতুন কিছু নয়। অতীতের স্বৈরাচারী আমলে যারা তাদের শাসন টিকিয়ে রাখতে আপোষ করেছিল, গণতন্ত্র এলে তারা হয়ে ওঠে গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তা। আবার যখন দমননীতি ফিরে আসে, তখন তারাও ক্ষমতার স্রোতে ভেসে চলে। এ যেন এক অনবরত পরিবর্তনশীল মুখোশের খেলা।

স্করসেজির চলচ্চিত্রের যাজক চরিত্ররা নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে লড়াই করে, কিছুজন ত্যাগ স্বীকার করে শহীদ হয়, আর কিছুজন পরিস্থিতির চাপে নিজেদের ভিন্ন পরিচয়ে মানিয়ে নেয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও কেউ কেউ আদর্শ নিয়ে অবিচল থাকেন, মূল্য দিতে হয় তাদের, আবার কেউ সুবিধার জন্য নীরবতা অবলম্বন করেন।

প্রশ্ন হলো, এই নীরব বিশ্বাসীদের অবস্থান কোথায়? তারা কি আদর্শের সঙ্গে প্রতারণা করছে, নাকি বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে? যদি বিশ্বাসী হয়েও বিশ্বাসের প্রতিকূলে চলে যেতে হয়, তবে তারা কাদের প্রতিনিধি? বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলভক্তি কি আদৌ কোনো বিশ্বাস, নাকি শুধুই টিকে থাকার হাতিয়ার?

একটা দেশের রাজনীতি যখন সুবিধাবাদীদের হাতে বন্দী হয়, তখন বিশ্বাসও রূপ নেয় এক নিরব যন্ত্রণায়। স্করসেজির The Silence আমাদের শিখিয়েছে যে কখনো কখনো নীরবতাই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ হতে পারে। কিন্তু যখন এই নীরবতা সুবিধাবাদের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে, তখন তা আর প্রতিবাদ থাকে না, হয়ে যায় নিছক অস্তিত্ব রক্ষার এক অভিনয়।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৩২
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাকশাল নিয়ে কুৎসা রটনাকারিদের জন্য॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৯



গ্রীক দার্শনিক প্লোটো, অ্যারিস্টটল, ফার্সি এজমালি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন। বঙ্গবন্ধুর ফিলোসফির একটি শাখা হচ্ছে সমাজতন্ত্র। এরিস্টটল পোয়েটিকস লিখেছেন আর বঙ্গবন্ধু লিখেছেন আমার দেখা নয়া চীন ও কারাগারের রোজনামচা।

ফ্রাঁসোয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামিদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিজদের লেখা নারকীয়তার স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫




একাত্তরের নারী নির্যাতন আজ অনেকের কাছেই বিতর্ক , কারণ তারা বিশ্বাস করতে চায় না যে একটি রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এতটা নৃশংস হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম সত্য হলো: পাকিস্তানের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭১

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬



মানুষ দুনিয়াতে ন্যাংটা আসে।
ধীরে ধীরে বড় হয়। যোগ্যতা দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন করে। তারপর ইনকাম শুরু করে। সমাজের বহু মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা ইনকাম করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হত্যাকাণ্ড বন্ধে কেন ম্যাজিক জানা জরুরি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৪


জাতি হিসাবে আমরা বড়োই অভাগা। ইতিহাসের মঞ্চে রাজা বদল হয়, কিন্তু চিত্রনাট্য বদল হয় না। এক রাজা যায়, আরেক রাজা আসে; কিন্তু পর্দার পেছনের কলকাঠি নাড়া সেই একই হাত।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:০০


২০০১ সাল। নির্বাচনে বিএনপির ভুমিধস বিজয় হয় হাসিনা সেটআপ প্রশাসনে। এতে ভারত প্রচন্ড ভিত হয়ে যায় যে, ভোটে তাদের দোসর আম্লিগ আর কখনো জয়ী হতে পারবেনা। আম্লিগকে জয়ী করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×