অসাম্প্রদায়িকতা বলতে আমি বুঝি
সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় অথবা অন্যান্য গোষ্ঠীদের দ্বারা অপরাপর সংখ্যালঘিষ্ঠ ধর্মীয় সম্প্রদায় অথবা অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো নিগৃহীত না হয়ে,একে অপরের ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, প্রথা প্রভৃতিতে আঘাত না করে, পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয়, সামাজিক,রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারা।
অসাম্প্রদায়িকতা এটা নয় যে, আমি খ্রিস্টান- মণ্ডপে গিয়ে বলবো দূর্গা দূর্গা, আবার আমি হিন্দু- মসজিদে গিয়ে বলবো আল্লাহ্ মোরে রক্ষা করো অথবা আমি বৌদ্ধ- চার্চে গিয়ে স্মরণ করবো জিশু অথবা মাতা মেরীর নাম অথবা আমি মুসলিম- প্যাগোডায় গিয়ে গৌতম বুদ্ধের নির্বাণ লাভ করবো। এমনটা করতে গেলে একজন হিন্দু তাঁর সম্প্রদায়ে ক্ষোভের মুখে পড়বেন, একজন মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধও একইভাবে তাঁদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ে ক্ষোভের মুখে পড়বেন এবং এটি নিজ সম্প্রদায়ের সৌহার্দ নষ্টের পাশাপাশি অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্প্রীতি নষ্টের কারণ হবে।
ধরুন, আপনি কোনো সামাজিক অথবা রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন, সেখানে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী আছেন; সেখানে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে আপনি অকারণে ধর্মীয় বিষয়ের অবতারণা করেন বা কোনো কারণে আপনার সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় বেশি সুযোগসুবিধা দাবি করেন, তখন সেটাই হবে সাম্প্রদায়িকতা। আর যদি সেখানে সকলের সমান অথবা সংখ্যানুপাতিক অধিকার রক্ষিত হয় তবেই সেটাই হবে অসাম্প্রদায়িকতা। এখন অনেককেই দেখা যায়, ধর্মের বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা লিখে নিজেকে অসাম্প্রদায়িক এবং মানবিক গুণের অধিকারী হিসেবে জাহির করেন। আমার কাছে মনে হয়, এদের চেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ আর হয় না। কারণ বিদ্বেষ সৃষ্টিকারীরা কখনই অসাম্প্রদায়িক অথবা মানবিক হতে পারে না। তবে হ্যাঁ, আপনি ধর্মীয় অনাচার, কুসংস্কার, গোঁড়ামি নিয়ে যৌক্তিক সমালোচনা করতেই পারেন। লক্ষ্য রাখতে হবে, ওই সমালোচনা যেন বিদ্বেষের পর্যায়ে না যায়।
দেখা যাচ্ছে, ইসলাম ধর্মবিরুদ্ধ, হিন্দু ধর্মবিরুদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মবিরুদ্ধ প্রভৃতি গ্রুপ অর্থাৎ সরাসরি ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলার একেকটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে৷ এদের কাজই হলো বিদ্বেষমূলক কথা বলা এবং জনমনে বিদ্বেষ তৈরি করা। তারা নিজেরা এটাকে নাস্তিকতা অথবা মত প্রকাশের স্বাধীনতা মনে করছেন; কিন্ত বস্তুতপক্ষে এটা তা নয়। এই কাজের জন্য যেমন তাঁদের ব্যক্তিগত ইমেজ নষ্ট হচ্ছে, তেমনই তাঁরা যে সংগঠনগুলোর সাথে যুক্ত আছেন বা হচ্ছেন- সেই সংগঠনও ইমেজ সংকটে পড়ছে এবং কিছু সংগঠন শুধুমাত্র এই কারণে সর্বজনীন হতে পারছে না। একটি সংগঠনের সর্বজনীন জনপ্রিয়তার জন্য এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়,অন্যথায় আপনি তাদের জন্য জীবনভর লড়াই-সংগ্রাম করে গেলেও তাদের নিকট থেকে সামান্য স্বীকৃতিটুকুই আদায় করতে পারবেন না।
আপনি ধর্মে বিশ্বাস করেন না, ধর্ম মানেন না- সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার এবং আপনার মানা না মানার ওপর জগতের কোনো পরিবর্তন বা ক্ষতি সাধিত হবে না যতোক্ষণ না আপনি আপনার বিশ্বাস অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে উদ্যত হচ্ছেন। আপনার বিশ্বাস-অবিশ্বাস একান্তই আপনার নিজস্ব ব্যপার, কিন্তু অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে সরাসরি আঘাত করার অধিকার আপনি রাখেন না। একইভাবে কোনো ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ অপরকে ধর্ম মানার ক্ষেত্রে জোরজবরদস্তি করতে পারেন না বা শারীরিকভাবে আঘাত করা অথবা মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া বা হত্যা করতে পারেন না। আপনার লক্ষ্য যদি হয় শুধুই মানব সেবা, সেটাই মন দিয়ে করুন না; আপনার বিশ্বাস-অবিশ্বাস জনসম্মুখে প্রচার করে আপনি যে বৃহত্তর কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন সেটাই হয়তো আপনি বুঝতে চাইছেন না। তাছাড়া নাস্তিকতা কোনো ধর্ম নয় যে তাকে ঘটা করে প্রচার করতে হবে। এই প্রচার আপনার অথবা মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে এমনটিও নয়। শেষে বলি, কোনো ধর্মই পরিপূর্ণ হবে না যতোক্ষণ না আমরা ধর্মকে মানুষের সার্বিক কল্যাণে কাজে লাগাতে পারবো। আমি বিশ্বাস করি, প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি বিশ্বস্ত অনুসারী ছাড়া তাঁর জীবনের একান্ত দর্শন কখনই প্রকাশ করেন না।
==
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



