স্বর্ণঃ ওহ মাই গড, আমার হল তো বন্ধ হয়ে গেছে। মন তোমার জন্যই আজ এ অবস্থায় পড়তে হলো। আমাকে মনে করে দিলেনা কেন যে সাড়ে নয়টায় হল বন্ধ হয়ে যায়। এখন কি করবো? কোথায় যাবো? তোমার হলেতো রাত বারোটায় গেলেও সমস্যা নেই।
সুমনঃ আমি আবার কি করেছি। ডিনার শেষে গানের আসর বসাতে গিয়েইতো এ অবস্থা। দাদা বলেন, আমি কি এজন্য দায়ী?
আমি ওদের শান্ত করে বলি, 'তামাদের কারোরই কোনো দোষ নেই। ডিনার শেষে আমিইতো সুমনের গান শোনার বায়না ধরলাম। সো এজন্য তোমরা আমাকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট দায়ী করতে পারো'।
স্বর্ণঃ চলো আজ আমরা এখানেই গল্প করে সারা রাত কাটিয়ে দিই।
সুমনঃ পাগল হয়েছো, স্বর্ণ? নিরিবিলি কি সারারাত আমাদের জন্য খোলা থাকবে?
স্বর্ণঃ তাতো ঠিকই বলেছো। বাট এখন আমার কি হবে? তোমরা দুজন পুরুষ মানুষ। যেকোন সময়, যেকোন জায়গায় যেতে কোনো অসুবিধে নেই।
আমি আবার ওদের থামাই। 'আচ্ছা আমি থাকতে তোমরা অতো চিন্তা করছো কেন? উপায় একটা ঠিকই বেরোবে। তোমরা একটা কাজ করতে পারো, অবশ্য তোমাদের কোন আপত্তি না থাকলে, তোমরা দুজন আমার বাসায় যেতে পারো। এর চেয়ে নিরাপদ আশ্রয় এই মুহূর্তে তোমরা পাবেনা'।
স্বর্ণঃ ভেরি গুড আইডিয়া। তবে একটা শর্ত, আজ রাতে কেউ ঘুমোতে পারবেনা। সবাই সারারাত গল্প করবো।
সুমনঃ তুমি যেতে পারো স্বর্ণ, কিন্তু আমার হলে যেতে হবে। কাজ আছে।
স্বর্ণঃ নাহ। তোমাকেও যেতে হবে। আজ সারারাত তিনজনে মিলে আড্ডা দিবো। কাউকেই ঘুমোতে দেবোনা।
সুমনঃ কিন্তু দাদাকে অযথাই ঝামেলায় ফেলছি আমরা।
তোমরা খামোখা বাজে চিন্তা করে সময় নষ্ট করছো। চলো ওঠা যাক। আমাদের আড্ডা হবে ঠিকই। তবে সারা রাত নয়। যতক্ষণ সম্ভব গান, কবিতা আর জোকস, গল্প চলবে। সকালে আমাকে অফিসে যেতে হবে, তোমাদেরও ক্লাশ আছে। আড্ডা শেষে আমি আর সুমন একরুমে থাকবো। অন্য একটা রুমে স্বর্ণ থাকবে সো নো প্রবলেম। লেটস গো।
সুমনঃ ঠিক আছে, দাদা যখন অভয় দিচ্ছেন, তাহলে যাওয়া যায়। চলো।
স্বর্ণঃ এইতো লক্ষী ছেলের মতো কথা। তবে আমাকে এখনই আমার রুমমেট পুজাকে একটা ফোন করতে হবে। বেচারি আমার জন্য টেনশনে এতক্ষণে ছটফট করতে শুরু করে দিয়েছে। ওয়ান মিনিট প্লিজ...। হ্যালো পুজা। আমি একটা কাজে আটকে গেছি। তুই টেনশন করিসনা। আজ রাত আমার এক মাসীর বাসায় থাকবো। আরে তুই চিনবি কি করে? আমিই কি জানতাম যে মাসী ধানমন্ডি থাকেন। এই মাসী হলো আমার মার মেসতুতো বোন। ছোট বেলা থেকেই মাসী আমাকে অনেক আদর করেন। নিউমার্কেটে শপিং করতে যেয়েইতো মাসী আর ভাইয়ার দেখা পেলাম। মাসী কিছুতেই ছাড়লেন না। এতক্ষণ ছুটতে চেষ্টা করছিলাম বলে তোকে জানানো হয়নি। আরে যাহ্। তোর মুখে কিছুই আটকায়না। ভাইয়া একটু অন্য রকম। কবি। কবিতা ছাড়া অন্য কিছুই বোঝেন না। তুই যে এতো সুন্দরী, তোকে যদি ভাইয়ার সামনে বসিয়ে রাখি, তবুও তার ধ্যান ভাঙবেনা। অবশ্য তুই চাইলে তোর ব্যাপারে একটু চেষ্টা তদবির করে দেখতে পারি। হি হি হি। আরে একটু ফান করলাম তোর সাথে। তুই এতো সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেনো? তুই তো আবার তোর জয় নাকি টয়, তাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারিসনা। তবে আমার ভাইয়াকে যদি একবার দেখিস, বা আলাপ করিস, পৃথিবীর সব পুরুষই তোর কাছে তুচ্ছ মনে হবে বলে রাখলাম। হুম।
স্বর্ণ'র দীঘ আলাপে সুমন অধৈর্য হয়ে ফিসফিসিয়ে বললো- কি করছো সোনা, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ। ওরা নিরিবিলি বন্ধ করে দেবে। ফোনটা এখন রাখো প্লিজ, পরে কথা বলো।
স্বর্ণঃ ঠিক আছে পুজা, কালকে হলে ফিরে তোকে ডিটেইলস বলবো। এখন রাখছি। বাই।
নিরিবিলি থেকে বেরিয়ে আরেক ঝামেলায় পড়লাম। কোনো যানবাহনই পাচ্ছিনা। কোনো ট্যাক্সি ক্যাব, কিংবা সিএনজি অটোরিক্সা অথবা রিক্সাও চোখে পড়লোনা। বাধ্য হয়ে হাঁটা শুরু করলাম। এতো ক্লান্ত শরীরে হাঁটতে ইচ্ছে করছিলোনা। কিন্তু স্বর্ণ আর সুমন মহা উল্লাশে গল্প করতে করতে হাঁটছে। ওদের কাছে হাঁটাটা যেনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিনোদন। হাসাহাসি করে যেনো একজন আরেকজনের ওপর লুটিয়ে পড়ছে। কি নিয়ে হাসছে, খুউব জানতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমি যানবাহন নিয়ে আছি টেনশনে। দু'একটা খালি পাওয়া গেলেও রাজি হচ্ছেনা। আমি আগে আগে থেকে যানবাহনের চেষ্টা করছি আর পেছনে থেকে ওদের গুণগুণ করা গান ভেসে আসছে। কোন্ গানটা যেনো! ওহ্ হ্যা সুরটা পরিচিত মনে হচ্ছে। একটু দাঁড়িয়ে ওদের গানটা ধরতে চেষ্টা করলাম। 'এ্যাই পথ যদি না শেষ হয়, তবে ক্যামন হতো তুমি বলো তো! যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়, তবে ক্যামন হতো তুমি বলো তো'।
অবশেষে একটা রিক্সাকে রাজি করানো গেলো কিন্তু ভাড়া হাঁকলো তিনগুণ। রাজি হয়ে গেলাম। এক রিক্সায় ৩/৪ জন চড়তাম ছাত্র জীবনে। কিন্তু এখন তেমন অভ্যেস নেই। সুমন উপরে বসলো, আমরা দুজন দুপাশে। আমার খুউব কষ্ট হলেও ওদের দুজনের যেনো কোনো ক্লান্তি নেই। অবিরত হেসেই চলেছে। মাঝে মাঝে ইচির মিচির করে কি যেন বলছে। দুর্বোধ্য ভাষা। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। ইচির মিচির ভাষার স্রষ্টা কে তা জানিনা। তবে ওদের আনন্দ দেখে আমারও খুউব ভালো লাগছে। এরি মধ্যে রিক্সা সাইন্সল্যাবরেটরি সিগন্যালে রিক্সা থামার সাথে সাথে দু’দিক থেকে দুজন অল্প বয়সী ছেলে আমাদের রিক্সা ঘিরে ধরলো। অন্যরা ভাবলো আমাদের পরিচিত কেউ কুশল বিনিময় করছে। ছেলে দুটি আমাকে সালাম দিয়ে বললো স্যার আপনার সাথে ভাইয়ের একটু কথা আছে, আপনি একটু নামেন। ওইযে দোকানের সামনে ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। আপনাকে সালাম দিয়েছে। আমি বললাম, কোন ভাই? তোমাদের যা কথা আছে, এখানেই বলো। আমি নামতে পারবোনা। ওদের মধ্যে স্মার্ট ছেলেটি বললো, আপনি নামবেন কিনা বলেন, নাকি আমাদের টাচ করতে হবে।
স্বর্ণ এরি মধ্যে মনে হলো ভড়কে গেছে। আমিও যে ভয় পাইনি, তা নয়। কিন্তু আমি এমন ভান করছি, যাতে ওরা মনে করে এটা কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু ব্যাপারটা ওদের নজর এড়ায়নি। কারণ, আমি ভয় অথবা নার্ভাস হলে কথা জড়িয়ে আসে। বাকযন্ত্র গুলো কাজ করেনা। বিশেষ করে চোয়ালগুলো অসাঢ় হয়ে পড়ে। অনেক সময় তোতলাতে থাকি। তবুও ওদের বলি, বললামতো, তো...তো... তোমরা যা বলার এখানেই ব...বলো। আমি নামতে পা...পারবোনা।
এরি মধ্যে গ্রিণ সিগন্যাল চলে এসেছে। সবাই যার যার মতো ছুটে চলেছে। কেউ কারো দিকে নজর দেয়ার কেউ নেই। ১৫/২০ মিটার দুরে দুটো পুলিশ নিজেদের মধ্যে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ব্যস্ত। রাত তখন সাড়ে এগারটা। যুবক দুটো আমাদের রিক্সা সাইড করতে বললো। আমি রিক্সাঅলাকে বললাম, তুমি ভাই চলো। রিক্সাঅলা এগুতে পারলোনা। কারণ যুবকদের একজন রিক্সার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সুমন এতক্ষণ চুপচাপ ব্যাপারটা দেখছিলো। এবার একটু নড়ে চড়ে বসলো। স্বর্ণ ওর বাম হাতটা জোরে চেপে ধরে আছে। ওর হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে রিক্সা থেকে নামলো। ওদের একজনকে বললো, 'তোরা কি চাস বল।' যুবকরা বোধহয় একটু আলোর মুখ দেখলো। খুশীতে গদগদ হয়ে ওদের একজন বললো, 'এইতো ভাইজান আসল জায়গায় আইছে। ওই জুয়েল তুই ক। থাক থাক আমিই কই। শোনেন, নিজেরাতো (স্বর্ণ'র দিকে একবার তাকালো) সুন্দরী মাইয়া লইয়া ফুর্তি কইরা আসছেন। মনেতো কয় সারা রাইত মজা লইবেন। আমাগো একটু মিষ্টিমুখ করাইয়া যান।' এমন অশালীন আর কুরুচিপূর্ণ কথাগুলো সুমন আর সহ্য করতে পারলোনা। ওর সামনে যে অশালীনমার্কা ছেলেটা ছিলো, ওর সামনের দিকটায় সমস্ত শক্তি দিয়ে লাথি মারলো। সাথে সাথে ছিটকে পড়লো রাস্তায়। সুমন গিয়ে জুয়েল নামের অন্য ছেলেটির চুলের মুঠি ধরলো। ধরে বললো, 'রঙ নম্বরে কল দিছিস চান্দু মিয়া। তোদের মতো শতেক খানি চান্দু আমি লালন পালন করি' বলেই দিলো কষে আরেকটি কেডস সম্মেলিত লাথি। বেচারা জুয়েলও ছিটকে পড়লো রাস্তায়। দুজনেই উউ করে নিজেদের লিঙ্গ চেপে ধরে কাতরাতে লাগলো। সুমন বীরের মতো রিক্সায় ওঠে রিক্সা অলাকে বললো, চলো।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ২:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



