somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবশেষে সে-১

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মেয়েদের দেখলেই লজ্জায় লাল হয়ে যেতো মকবুল মৃধা ওরফে মকু। মেয়েরা সামনে এলেই ভোঁ দৌড়। ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াকালীন সময়ে টপটেন না হতে পারলেও একেবারে খারাপ ছাত্র ছিলোনা। গানের গলা ভালো ছিলো। স্কুলের সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মকু চমৎকার করে ভাটিয়ালি-ভাওয়াইয়া গেয়ে শোনাতো। হারমোনিয়ামে দখল ছিলো ভালো। হারমোনিয়ামের প্রেমে পাগল হয়ে লেখাপড়া গোল্লায় তুলে এগ্রাম ওগ্রাম ছুটোছুটি করে গান করতে থাকলো মকু। কিছুদিনের মধ্যেই আবার চুপসে গেলো সে। এখন আর হারমোনিয়াম ভালো লাগেনা। ধা ধিন ধিন তা-তবলার ত্রিতাল কিংবা দাদরা তালে ওর মনটাও নেচে ওঠলো। মাথায় ঝোঁক এলো তবলা শিখবে। তবলা কিনতে হবে। মাকে গিয়ে চেপে ধরলো সে; টাকা দরকার।

একমাত্র ছেলের ইচ্ছের কাছে সবকিছু বিকিয়ে দিতেন বিধাব মা আছিয়া খাতুন। ছেলের আবদার মেটাতে কখনো কার্পণ্য করতেন না। অকাল প্রয়াত স্বামীর রেখে যাওয়া জমিজমা দিয়ে মোটামুটি স্বাচ্ছন্দেই চলে যায় সারাটা বছর। দেরি না করে ছেলেকে তবলা কেনার টাকা দিয়ে দিলেন আছিয়া খাতুন। মাসখানেক তবলায় টুংটাং টুংটাং করে তবলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এবার নজর পড়ে গীটারের পাগল করা সুরের ওপর। আবার মায়ের কাছে জেদ আর বায়না; গীটার কিনে দিতেই হবে। অসহায় মা ছেলের এই আবদারটাও মিটিয়ে দিলেন।

একমাত্র ছেলে বলে কথা! জীবনে কোনো আবদারই না মিটিয়ে থাকেন নি। সেই দাবিতেই এবার ছেলের কাছে মায়ের আবদার। ঘরে লাল টুকটুকে বউ আনতে চান তিনি। মেয়েদের কথা শুনলেই যে কিনা ভয়ে আর লজ্জায় ওখান থেকে পালিযে যায়, সে কিনা করবে বিয়ে! পরদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাড়ি ছাড়লো মকু। গিয়ে ওঠলো মামার বাড়ি।

মামা রুস্তম সরদারতো ভীষণ খুশি ভাগ্নেকে পেয়ে। মামীও পছন্দ করতো মকুকে। অনেক দিনের ইচ্ছে যে, ননদের এই সুদর্শন ছেলের সাথেই বড় মেয় মিতার বিয়ে দিবেন। এ রকম পারিবারিক ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছিলো। মামার বাড়িতে যত্ন-আত্মির কোনো কমতি ছিলোনা। পিঠা পায়েস তৈরি করে খেতে দিতো মকুকে। মামাতো বোন নিতা মকুকে ‘দুলাভাই দুলাভাই’ বলে ক্ষ্যাপাতো। মিতা যেহেতু আগেই জেনে গিয়েছিলো যে, মকুর সাথেই তার বিয়ে হবে, তাই হবুবরকে কাছে পেয়ে সুযোগ মতো সেবাযত্ন করতো। নির্জনে হাতটা ধরতে চাইতো। আবেগপ্রবণ হয়ে মনের কিছু অব্যক্ত কথা বলতে চাইতো। অবশেষে দুই বোনের মিষ্টি অত্যাচারে মামার বাড়ি ছাড়লো মকু।

ফেরার পথে রসুলপুর বাজারে কিছুটা যাত্রা বিরতি দিলো সে। চলছে নৌকা মেলা। সামনে বর্ষা, তাই নৌকা বানিয়ে সারি সারি করে পশরা সাজিয়ে রেখেছে নৌকার বেপারিরা। পাশে চলছে নৌকা তেরির ধুম। গাছ চিরে কাঠে ঘষামাজা করে চমৎকারভাবে নৌকা তৈরি করে কারিগরগণ। ব্যাপারটা মকুর খুউব ভালো লাগলো। ইচ্ছে হলো নৌকা তৈরি করা শিখে নৌকা বানাতে। একজন বয়স্ক কারিগরের কাছে তার ইচ্ছেটা ব্যক্তও করলো সে। অবশেষে নৌকা কারখানায় চাকরি হয়ে গেলো মকুর। সারাদিন নৌকা তৈরি করতো আর রাতে তার গান শুনতো সবাই। অল্পদিনেই ওখানে জনপ্রিয় হয়ে গেলো মকু। এরপর আবার যেই লাউ, সেই কদু। কোনো কাজে তার বেশিদিন মন টেকেনা। এখানেও তার ব্যতিক্রম হলোনা। মাস দুয়েকের মধ্যে নৌকা তৈরির কাজটির প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়লো। আবার পগাড়পার; অবশেষে মায়ের আঁচলেই আশ্রয় নিলো সে।

(চলবে)
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×