কিছুদিন আর ঘর থেকে বেরোয়না মকু। বউ'র প্রেমে পাগল হয়ে তার আঁচল ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছে করতোনা তার। এমনকি দেলোয়ার, ইউসুফ, আবদালের মতো বন্ধুদের কথাও ভুলে গেলো সে। মাস ছয়েকের মধ্যে বাড়ির পরিবেশ অসহ্য হয়ে ওঠলো তার কাছে। বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা দিয়ে কাটলো কিছুদিন। বোহেমিয়ান জীবন যার, তারতো এক জায়গায় বেশিদিন চলেনা। দুয়েকদিনের মধ্যেই শোনা গেল, মকু মৃধা আবার বাড়ি থেকে উধাও।
এবার গিয়ে ওঠলো জাজিরা চরের অবস্থাপন্ন গৃহস্থ রুস্তম চাকলাদারের বাড়িতে। চাকলাদারের ছোট দুই ছেলে-মেয়ে পড়ানোর চাকরি নিলো সে। অর্থাৎ লজিং মাষ্টার। বড়মেয়ে ফুলবানুর দায়িত্ব ছিলো লজিং মাষ্টারের সেবা-যতœ করা। ফুলবানু নিজেও ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত লেখা-পড়া করে আর পড়তে পারেনি। সুযোগ পেয়ে লজিং মাষ্টারের কাছে যেতো লেখা-পড়া করতে। আসা যাওয়া করতে করতে ভালো লেগে যায় লজিং মাষ্টার মকুকে। মকুও ফিরিয়ে দেয়না ফুলবানুকে। গোপন রাখে প্রথম বউ মিতার কথা। ফুলবানুর সাথে প্রেম-পর্ব চালিয়ে যায় পুরোদমে। এ কান, সে কান হয়ে কথাটা চলে যায় ফুলবানুর বাবা রুস্তম চাকলাদারের কাছে। চাকলাদারও মকুকে পছন্দ করতেন। একদিন সন্ধ্যায় কাজী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে দেয় মকু আর ফুলবানুর। বছর খানেক আরাম আয়েশে কাটে তার। ভুলে যায় মা আছিয়া খাতুন আর প্রথম বউ মিতার কথা। ফুলবানুই তার সব। আর কিছু মনে পড়েনা তার। শশুর-শাশুড়ি-শ্যালক-শ্যালিকা এই নিয়ে মকুর ভাবনা ঘুরপাক খায়। একদিন হঠাৎ মা’র জন্য মনটা কেমন কেমন করে। ব্যাস, আবার উধাও হয় অন্তস্বত্তা ফুলবানুকে ফেলে রেখে।
ছেলেকে ফিরে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে যান মা আছিয়ার। মকুকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করেন মা। অভিমানে মকুর সামনে আসেনা মিতা। একমাত্র সন্তান জরিকে বুকে নিয়ে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদে সে। বাবা হওয়ার খুশিতে বউয়ের মাথায় হাত রাখে মকু। প্রতিজ্ঞা করে বউ সন্তান ফেলে আর কোথাও না যাবার। গোপন রাখে জাজিরার চরে ঘটে যাওয়ার ঘটনা। অভিমান ভাঙ্গে মিতার। মহাসুখে কেটে যায় তাদের কিছুদিন। মাস তিনেক পর আবারো উধাও হওয়ার ভুত তার কাঁধে চাপে।
এবার চলে যায় মুন্সিগঞ্জের এক ধানগোলায়। ধানগোলায় মহিলারা ধান সিদ্ধকরে, রোদে শুকায়, এরপর মেশিনে তুলে দেয় সেই ধান। সেখানে তার দায়িত্ব পড়ে মহিলারা কে, কি পরিমাণ ধান মেশিনে তোলে, কি পরিমাণ পারিশ্রমিক দিতে হবে, সেই হিসেব রাখার। সেখানে পরিচয় হয় রাহেলা নামের একজন যুবতী মহিলার সাথে। কিছুদিন চলে তাদের মন দেয়া-নেয়ার পালা। এরপর একদিন রাহেলাকে নিয়ে ফুরত করে উড়ে যায় মকু। রাহেলা যেন পায়ের নিচে মাটি পায়। রাহেলার সাথে মকু গড়ে তোলে সুখের সংসার। একটা ছোট্ট দোকান নিয়ে দর্জির কাজ করে সে। রাহেলাও তাকে সেলাইয়ের কাজে সাহায্য করে। কিছুদিন দর্জির কাজ করার পর আর ভালো লাগেনা তার। এক কাজে বেশিদিন স্থির থাকতে পারেনা সে। মাস ছয়েকের মধ্যে আবার রাহেলা-ধ্যান ভঙ্গ হয় মকুর। চলে আসে রাজধানী ঢাকায়।
মালিবাগের এক গার্মেন্টস-এ কাজ নেয় মকু। সেলাই কাজ যেহেতু আগেই জানা ছিলো; সুতরাং কাজের ক্ষেত্রে তার সুবিধাই হলো। কুষ্টিয়ার মর্জিনা আর তার টেবিল পাশাপাশি। কাজের ক্ষেত্রে মর্জিনা তার সিনিয়র হওয়াতে অনেক কিছুই শিখতেই পারছে সে। হাতে কলমে শেখানোর পাশাপাশি হাসি-ঠাট্টা, খুনসুটি থেকে শুরু করে চিমটি কিল-ঘুসি সবই চলে আড়ালে আবডালে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



