সেই ব্রিটিশ আমলে আমাদের দুখু মিঞা কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ঐ সময়কার মোল্লা, মুন্সি ও কথিত আলেম, ধর্মের স্বঘোষিত ইজারাদাররা ‘কাফের’ নামে ফতোয়া দিয়াছিলো। আবার সময়ের হেরফেরে সেই একই কবি নজরুলকে নব্য সৃষ্ট পাক-মোল্লাতন্ত্রের জামানায় ঐ একই মোল্লারা মোসলমানদের ধ্বজাধারী হিসাবে ফতোয়া দিলেন ‘কাফের’ ’র জায়গা নব্য পাক রাষ্ট্রে হবেনা ! বর্তমান বাংলাদেশেও আমাদের প্রিয় কবিকে জাতীয় তকমায় বাংলাদেশী লেবাসের ফতুয়া পরানো হলো নিকৃষ্ট সাম্প্রদায়ীক মানসিকতায়। অথচ আমাদের দুখুমিঞা ছিলেন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের উর্দ্ধে ওঠা মানুষ এবং মানবিকতার ধ্যানী। আর বাংলাতো তাঁর মাতৃভাষা, যেখানে বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলিম ও খ্রীস্টান ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মানুষের নিত্য ব্যবহারিক ভাষা বাংলা । সেখানে মোল্লাতন্ত্রের এমন সামাজিক চিন্তার বৈকল্যতা কেন ?
আমাদের বর্তমান মোল্লা উৎপাদনের পীঠ স্থান হিসাবে পাওয়া যাবে ব্রিটিস তষ্কর হেস্টিংসের প্রতিষ্ঠিত ক্যালকাটা মাদ্রাসা। হঠাৎ এই তস্কর হেস্টিংস কেন নিজ ধর্মের পাদ্রী উৎপাদন না করে মোল্লার খোপ খুল্লেন ? বিষয়টা কিন্তু খুবই মজার। তস্কর ক্লাইভের বাংলা দখলের পর স্থানীয়দের লুণ্ঠনকৃত ধন-সম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার হতে থাকে বিশাল পরিমাণ। সেই পাচার কার্য ভয়াবহ রূপধারণ করে তস্কর হেস্টিংসের সময়। তখন ব্যাপক সংখ্যক বেসামরিক কর্মচারীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় লুন্ঠনকৃত ধন-সম্পদ জাহাজে করে ইংল্যান্ডে পাচার কার্য তদারকির ও তালিকাভুক্ত করার জন্য। এই সকল তদারককারীগণ কোম্পানীর খাতায় মুন্সি পদে তালিকাভুক্ত হতো। আরও মজার ব্যাপার হলো, ইংরেজ তস্কররা এখানে পদচারনা শুরু করলেও ইংরেজি ভাষার কদর তখনও শুরু হয়নি। বাংলায় লেনদেন ও খাতা কলমের ভাষা তখন ফারসির দখলে। তাইতো তস্কর হেস্টিংস ক্যালকাটায় মাদ্রাসা চালু করলো ফারসি জানা মুন্সি সরবরাহের জন্য। যেখানে আলেম সৃষ্টির জন্য নয় বরং বলা চলে চোরের স্বাক্ষী গাটকাটা তৈয়ারী করাই ছিল ওদের উদ্দেশ্য।
আমরা কি জানি কুখ্যাত দুই ব্রিটিশ তস্কর ক্লাইভ ও হেষ্টিংস লুন্ঠনকৃত বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ সহ ইংল্যান্ডে ফিরে যায়। যাহাদের আগমন সংবাদে দুই তস্করের প্রভু রানী ও তার পারিষদবর্গ বিভিন্ন অজুহাতে বিচারের নামে প্রহসন সৃষ্টি করে লুণ্ঠিত ধন-সম্পদ আত্মসাত করে চোরের উপর বাটপাড়ির মাধ্যমে। এমনতরো দেশ বা উদ্দ্যোগতাদের সৃষ্ট ব্যবস্থা থেকে কোনো ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উত্তম চিন্তা বা সমাজ অগ্রসরের কথা শুনতে পাবো ? হোক সে আধুনীক বা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ! আমাদের দেশের মোল্লা মুন্সিদের আদি গুরু তস্কর হেস্টিংস হওয়ায় এদের মধ্যে মানুষ বা মানবিকতার বোধ অনুপস্থিত। যে কারনে এদের প্রতিষ্ঠত ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে বর্তমানেও একই আচরণ বজায় আছে। যেহেতু দেশে এই ফেরেববাজী দেখার লোক নাই। তাই উনারা বেশ তেলেঝোলে আছেন।
পাঠক দেশের মধ্যে এদের আশ্রিত ও তালিকা ভুক্ত ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত ছাত্র শিক্ষক, কর্মচারী ও কমিটিওয়ালাদের অতীত বর্তমান হাল হকিকত ও হিসাব-নিকাশে একবার ঝাঁকা দেন ! দিলেই জানতে পারবেন দেশের মধ্যে বিরাজমান বর্তমান ধর্মীয় লোকাল লেবাসধারী হেস্টিংসদের মোসলমান প্রেমের ইতিবৃত্ত।
লেখাটি খুলনা জার্নালে পুর্বে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ১:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



