অনেক বাহানা ও আকাঙ্খার সমাপ্তী ঘটলেও ঘটতে পারে ৬ই সেপ্টেম্বরে ভারত প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে। এমনই আলাপ আলোচনার জমজমাট সময় খরচা করছে স্থানীয় পত্র-পত্রিকাসহ অন্যান্য গণ-মাধ্যমগুলো। সকল পাওয়া না পাওয়া কিম্বা চাওয়া না চাওয়ার বিষয়গুলো স্থান করে নিয়েছে ঢাকা-দিল্লীর সম্পর্কের মাপকাঠি নির্ণয়ের ক্ষেত্র হিসাবে।
পানি, ট্রানজিট ও বাণিজ্য বিষযের সাথে ছিটমহল, সীমান্ত হত্যা, ডাঙ্গা ও সমুদ্রের সীমানা নির্দ্ধারণ ইত্যাদি তালিকাগুলো সকল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। এই সকল বিষয়গুলো রাজনীতিবিদ, আমলা, সুশিল সমাজ, মোল্লা ও বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি গণের মুখ্য আলোচনায় দেশের সংবাদপত্রের প্রচারে আশার উষ্ণতা বিলাচ্ছে। তারপরও কিন্তু থেকে যাচ্ছে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে সংশয় !
প্রতিবেশী ভারত চায় বাংলাদেশের সীমান্তে বিভিন্ন রাজ্যের ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিশেষ করে সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে যেন মদদ না দেওয়া হয়। আর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘‘সাত-বোন’’ রাজ্যগুলোর সাথে পানি পথের মতো রেল ও সড়ক পথ ব্যবহারের অনুমতি। পাশাপাশী বাংলাদেশের পূর্ব ও পশ্চিমের সমুদ্রবন্দর পণ্য আনা নেওয়ার সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে চাচ্ছে।
সকল সুবিধা প্রাপ্তির বিনিময়ে সম্ভাব্য তালিকায় তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি, নেপাল ও ভূটানের সাথে সড়কপথে ও রেলের মাধ্যমে সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক। আরো শুনা যাচ্ছে ৬১টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধীকারের সম্ভাবনা। যদিও বণিক ফেডারেশণ ৪৮০টি পণ্যেও শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চাচ্ছে। ভারতে আবার অশুল্ক বাঁধার ফ্লাটারিং মাধ্যম ব্যবহার হয় পণ্য চলাচলে প্রশাসনের দ্বারা রাজনৈতিক উদাসিনতায়।
সরকারী ভাষ্যমতে, পানি, জ্বালানী, সীমান্ত ও ব্যবসা ইত্যাদি বিষয়গুলোই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দৃঢ় করতে সহায়তা করবে। বিশেষ করে যে সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ভারতের মাধ্যমে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে সরকার। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মানের দিক দিয়ে ‘মুচি খদ্দেরের ঘেয়ো কাঠাল’ যেন না হয়। সেদিকে ভারত সরকারের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
পণ্য ও কল-কব্জা ইত্যাদি বিষয়ে বাজারি গুজব ভারত চীনাদের থেকে পিছায়ে আছে এই কথাটা যেন প্রমাণ না হয়। বিষয়গুলো যতটা না আমাদের সরকারের সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল তার থেকে ভারত সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ বাংলাদেশ সকল সময় সহযোগীতার হাত প্রসার করলেও ভারত তাঁর অতীতের কচ্ছপ মুখো নীতির জন্য সমালোচিত হচ্ছে প্রতিবেশীদের কাছে।
রাষ্ট্র ও অন্যান্য সকলের আলোচনায় এই কথাই প্রকাশ পাচ্ছে ১৯৭২ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির আলোকে নৌপথে ভারতীয় পণ্য চলাচল করতে পুনরায় শুরু করে। তাই একই উপায়ে সড়ক ও রেল পথ ব্যবহার করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সকল সরকার কমবেশী ভারত সম্পর্কে ধূম্রজ্বাল সৃষ্টি করে গেছেন শুধুই রাজনীতির স্বার্থে। ভারত নিজেই সংকুচিত নীতিমালার আলোকে পরিচালিত হতে যেয়ে নিজেকে চিনতে সময় লেগেছে। বরং বর্তমান সরকার আগাগোড়া ভারতের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে।
কিন্তু ভারত বলেই কথা, কখন যে খোলোশ ছেড়ে আন্তরিক হবে বোঝাই ভার ! এখনকার প্রেক্ষাপটে তাদের জন্য ভিন্ন সংবাদ পাচ্ছি। বিশ্বরাজনীতি তাকে হাতছানি দিচ্ছে জগতের শ্রেষ্ট অবস্থান নিশ্চিত করতে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধতায় রূপান্তরিত বাজার ব্যবস্থার সক্ষমতা বিশ্ব রাজনীতিতে পাদপ্রদীপে পৌছে দেবে। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ থেকে যাত্রা শুরু করতে চাচ্ছে কিনা বোঝা যাবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর সমাপ্তীর মাধ্যমে।
আমাদের অর্থনীতি শিশু অবস্থা অতিক্রম করে কৈশোরের খাতায় নাম লিখিয়েছে। তার নগদ প্রয়োজন ব্যাপক বৃহৎ বাজার এবং সমৃদ্ধ ভোক্তা। সেই প্রয়োজন বেশ কিছুটা ভারত ভালভাবে মিটাতে পারে তাঁর বাজার ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে। বাজার সুবিধাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো প্রতিবেশী বৃহৎ রাষ্ট্রের কাছে গুরুত্ব পেলে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধান হতে বাধ্য।
ঐতিহাসিক সূত্রের মাধ্যমে আমরা একই সাথে বাঁধা আছি। সভ্যতার উষালগ্নে উভয়েরই হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়ো থেকে যাত্রা শুরু। মৌর্য-অশোক বা অশ্বঘোষের কনিষ্ককে রেখে হুন গুপ্তদের মহাকবি কালিদাশ এবং মোগল পালা। সবই ইতিহাসের একই বিষয় হলেও বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়ীকতা গত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দখলদারীর হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার হয়েছিল। উপমহাদেশের উত্তরাধীকারে প্রাপ্ত কলুষিত রাজনৈতিক সামজে কম-বেশী বিচরণ করছে ঐ একই ব্যবস্থা শাসনের হাতিয়ার হিসেবে।
সুতরাং ফল জানার জন্য অপেক্ষাই উত্তম ভারত প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর শেষ হওয়া পর্যন্ত
লেখাটি খুলনা জার্নালে পুর্বে প্রকাশিত।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



