বাংলাদেশতো কবিতা ও গানের দেশ হিসাবে পরিচিত। যার মন্তব্য করার কৌশলী পথ পরোক্ষভাবে অর্থাৎ ছন্দ এবং কাব্যিক ভাষায় প্রকাশ করে থাকে। সদ্য সমপ্ত ভারত প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে যে, উচ্ছাস ও উৎসাহ-উদ্দীপনার ভাদরের ভরা জোয়ারের প্লাবন আশা করা হয়েছিল তার প্রকৃত উত্তর লোকাল শ্লোকের ভাষায় বলা চলে, ‘দূর থেকে শোনা যায়, ইংরেজি বাজনা, কাছে যেয়ে দেখি, কাঠি আর চামড়া’ ! ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী, আপনি সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্কের যোগসূত্র গোজামিলের চুক্তিতে অংশগ্রহন করেন নাই।
সম্পর্ক উন্নয়নের দূতিয়ালীর দায়িত্বে ছিলেন তিন চৌকোস মাল। যাদের পরিচয় হলো, দুই নেটিভ সাবেক সিভিল সার্ভেন্ট ও অন্যজন হলেন পাশ্চাত্যের শিক্ষায় সুশিক্ষিত এবং রাজপুত বংশদ্ভুত বাঙলাদেশী। ভারত প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা হলেন, ডঃ মসিউর রহমান ও ডঃ গওহর রিজভী। এই তিন ঝুনো মালই জন’র দায়-দায়িত্বহীন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ওনাদের কাজের সমাপ্তিতে পেলাম ‘বার হাত কাকুড়ের, তের হাত বিচি’র পরিণতি।
পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা হলো ঝ’ড়ো কাক (কংগ্রেস থেকে বিতাড়িত ও বামফ্রন্টের করণে আতংকিত) অল্প হাওয়াতে বেসামাল হয়ে যান। আর বিষয়টা কৌশলের সেটমিল হলেও হতে পারে। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ই সকল বিষয় অবগত হওয়ার পরও সফরের শু্রুতে স্বরূপে প্রকাশ হলেন ভারতীয় নেতৃত্ব। ট্রানজিট তো আগেই চালু আছে নদী পথে পণ্য চলাচলের মাধ্যমে। ওনাদের আবদার নদীর পাশাপাশী সড়ক ও রেল সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা করা। বোনাস হিসাবে দুই সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুযোগ নেয়া। আমদানীর তালিকায় হলদি রামের সোনপাপড়ি এবং রসগোল্লাও বাদ যাচ্ছে না ময়রাহীন দেশের বাজারে বিকোতে ! ডলার সংকটের সময় এই মাল আমদানীতেও বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি ছিল না !
তিস্তা পানি চুক্তি হলো না, সীমান্ত সমাস্যা দুইটি কড়িডোর চবিবশ ঘন্টা খোলার ব্যবস্থা। সান্তনার প্রাপ্তি বাণিজ্যে কেবলই ৪৬ টা গার্মেন্টস আইটেম শুল্ক মুক্ত সুবিধা পাবে বলে কথা। ১৯৭২ সাল থেকে পতনমুখী ভারতের বাণিজ্যিক অংশিদার হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে এই দেশ। যে বাণিজ্য একতরফা ভারতীয় পণ্যের অবাধ বিচরণ। বাংলাদেশ জন্ম থেকে ভারতের চতুর্থ রপ্তানীর ভোক্তার পদ দখল করে আছে। কিন্তু আমাদের পণ্য প্রবেশের বেলায়, অশ্বত্থামা হত ইতি গজ। শেষকালে অভেদাত্মা হরিহর উভয় দেশের রাষ্ট্র প্রধানগণ ‘আন কাপাস, নে তুলো’ সম্পর্কের মধ্যে নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখলো।
‘আজকাল’ পত্রিকাটি লিখেছে, কাজের কাজ কিছুই হলো না। তিস্তার পানি বন্টন না হওয়ার তোড়ে ভেসে গেল ফেনী নদীর পানি বন্টনের চুক্তি ও ভারতের রেল-সড়ক ট্রানজিট পাওয়ার আশা। দুই দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তি, প্রটোকল সম্পর্কে বলা হয়েছে, ও তাতে বাংলাদেশের প্রাপ্তির ঝুলিই ভরল, ভারত পেল আতিথেয়তা, আপ্যায়ন ইত্যাদি। ওনারা যে নৌ-পথে ট্রানজিট ভোগ করছে চল্লিশ বছর ধরে সে কথা আমাদের কি নাদান অজ ভেবে অবাক হলেন ? না কি নেটিভ বিদ্যায় দৃষ্টিহারা গোবর গণেশ সেজেছেন এটেল মালেরা।
এখন পরিস্কার হলো তো পিরিতের সখির পরিচয়। পানি ও বাজার প্রাপ্তীর বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জিগির সমাপ্তি টানলো কৃপনের ছাই দানে ফকিরের আশার মধ্যমে !
লেখাটি খুলনা জার্নালে পুর্বে প্রকাশিত।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



