গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল কাদের গভীর রাতে খিলগাঁও থানার পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন। তারপর মর্মান্তিক সংবাদটা বেশ কিছুদিন ফ্রিজ থাকার পর প্রথমে একটি ব্লগে প্রকাশ পায়, পরবর্তীতে সেই সংবাদ জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। পরের দিন হাইকোর্ট ব্যবস্থা নিলে তবেই দেশে ঢি ঢি পড়ে যায়, গেল গেল বলে। পুলিশ কাদের’র বিরুদ্ধে ডাকাতি প্রস্ত্ততি, অবৈধ অস্ত্র রাখা ও গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করে। প্রজাতন্ত্রের আইনের পোষাকী নির্যাতনের হাত থেকে আজ পর্যন্ত নিস্তার পায় নাই কোনো প্রজা বা নাগরিক, তেমনি কাদেরও। মিথ্যা মামলা সত্যেও ফৌজদারী আইনের ঘোরপ্যাঁচে বলি হয়ে কয়েকদিন বাদে জামিন নিয়ে বের হতে হয় আব্দুল কাদেরকে।
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো অন লাইনে ১৪.০৯.২০১১তারিখ প্রকাশিত যে, ‘‘পুলিশের নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল কাদের নির্দোষ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ’র সত্যতা পায়নি। তদন্ত তদারক অফিসার, ডিবির উপকমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কাদেরের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্ত্ততি, অবৈধ অস্ত্র রাখা ও গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগে তিনটি মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন পর্যন্ত তাঁর অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। গত ১৫ জুলাই গভীর রাতে খিলগাঁও থানার পুলিশ রাজধানীর সেগুন বাগিচা থেকে কাদেরকে বিনা কারণে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন করে। তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মিথ্যা মামলাও করা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত পুলিশের তদন্ত কমিটিও কাদের’র বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়নি বলে জানা গেছে। ডিবি পুলিশ ও তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য জানান, খিলগাঁও থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত অফিসারসহ (ওসি) তিন পুলিশ অফিসার কাদেরকে নির্যাতনের জন্য দায়ী।’’
১৮৪০সালে প্রস্তাবিত এবং ১৮৬১ সালের পুলিশ অধ্যাদেশের বলে সৃষ্ট হয়েছিল আজকের পুলিশ বাহিনী। কোম্পানী এবং ভিক্টোরিয়ার সৃষ্ট পেটোয়া পুলিশ বাহিনী, এখনও সেই একই অধ্যাদেশ বলে সগৌরবে বিরাজ করছে পিপলস্ রিপাবলিক অব বাংলাদেশে ! যে দেশে শাসক গোষ্ঠী পর পর পাঁচবার এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত তালিকা নিজের কব্জায় রেখেছিলেন গৌরবের সাথে। সেই ভাগাড়ের মধ্যে থেকে সুভ চিন্তার উদ্দ্যোগতা সাবেক আই জি পি নূর মহম্মোদ, ‘১৮৬১ পুলিশ অধ্যাদেশ’ পরিবর্তনের জন্য দেন-দরবার করেও বিফল হন। দেশের ক্লাইভ ও ভিক্টোরিয়ার উত্তম পুরুষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিজেদের প্রয়োজনীয় পোটায়া বাহিনীর মর্যাদায় পুলিশকে ব্যবহার করে আসছেন। এদের মনেই হয় না দেশটা পিপলস্ রিপাবলিক। বরং নামেই পিপলস্ রিপাবলিক, কিন্তু এখনও ভিক্টোরিয়ান কিংডমের প্রেতাত্মার রাজত্ব চলছে। তাই সদয় শিক্ষিত নাগরিক, বুদ্ধিজীবি, সুশিল সমাজ, মানবাধিকার সংস্থা ও আইনজ্ঞ ইত্যাদি সকলেরই সুরক্ষা কবজ হিসাবে বিরাজ করছে ১৮৬১ পুলিশ অধ্যাদেশ’র পুলিশ বাহিনী। ধারাবাহিকভাবে সমাজপতিদের নেটিভ ওয়ারেশী সত্বায় বিরাজ করছে এই দুষ্ট বিধান।
সেই কোম্পানী বা রানীর আমলের শুরুতে অর্থাৎ যখন ক্যালকাটা প্রাচ্যের লন্ডন। ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ও সাহিত্য-রসিক কালীপ্রসন্ন সিংহ(জন্ম-১৮৪০/ মৃত্যু-১৮৭০সাল) তাঁর ‘হুতুম প্যাঁচার নক্শা’ গ্রন্থে পুলিশ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। ওনার গ্রন্থ থেকে উল্লেখ করছি, ‘‘পুলিসের সার্জন, দারোগা, জমাদার, প্রভৃতি গরীবের যমেরা রোঁদ, সেরে মস্ মস্ করে থানায় ফিরে যাচেচন, সকলেরই সিকি, আধুলি, পয়সা ও টাকায় ট্যাক ও পকেট পরিপূর্ণ – হুজুরদের কাছে চ্যালা কাঠখানা, তামাক ছিলিমটে ও পানের খিলিটে ফেরে না, অনেকের মনের মত হয় নাই বলে শহরের উপর চটেছেন, রাগে গা ঘস্ ঘস্ কচ্চে, মনে মনে নতুন ফিকির আঁটতে আঁটতে চলেছেন, কাল সকালেই একজন নিরীহ ভদ্র সন্তানের প্রতি কার্দনি ও ক্যারামত জাহির করবেন -’’।
১৮৬১ সালের পুলিশ অধ্যাদেশ পরিবর্তনের চিন্তা না করলে কাদের, লিমন বা আমিন বাজার ইত্যাদি ঘটনা দমন না হয়ে পুনঃ পুনঃ ঘটতে থাকবে নিশ্চিত। তাও ঘটবে জনগণের অর্থে লালিত-পালিত সকল পাবলিক সার্ভেন্টদের দ্বারা বিভিন্ন রূপে ভিন্ন আঙ্গিকে। আমরাও কেউ কেউ কিছুদিন পরে আবার নীরব হয়ে যাবো নগদ বেঁচে থাকার প্রয়োজনের জোয়ারে। সুতরাং ভাবতে হবে আমরা কি চাই ? উত্তর, অবশ্যই পরিবর্তন। প্রশ্ন কোন বিষয় পরিবর্তন প্রয়োজন ? লক্ষ্য নির্দ্ধারিত না হলে গড়ে হরি বোল হবে বারে বারে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



