somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষণ দমনে আমরা কী করতে পারি!

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি অন্তর্জাল থেকে নেয়া

নোট : ধর্ষণ একটা জাতীয় সমস্যায় রূপান্তরিত হবার পরেও আমরা এটাকে নিয়ে সে অর্থে দমন করতে পারছি না। শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি-- এখানে আমি যা বলতে চাই তার পুরোটা আসবে না। এটা ধরে নিতে পারেন, একটা শুগার কোটেড লেখা। তাই যারা তেজি লেখা পড়তে অভ্যস্ত তারা ক্ষমা করবেন। কারণ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন অনুসারে কোন লেখা কার কখন কোন জায়গায় লাগে বলা মুশকিল। তবে এ লেখাটার ইচ্ছা গত দুই সপ্তাহেও চেষ্টা করে দমন করতে পারিনি বলে, সরি!


এনিওয়ে---

বিভৎস ধর্ষণ-দৃশ্য-সঙ্কট বর্ণনার জন্য এ লেখা নয়। এর উদ্দেশ্য আমার মনে ভেতর জমা থাকা কিছু কথা বলা। নারীর সম্মান, নারীর অধিকার এবং তেতুল নিয়ে বিস্তর আলাপ আমরা শুনি। শুনি- এ জন্য বলছি, কারণ আমাদের সবার বয়স হচ্ছে, আমরা শুনি এবং শোনাতে পছন্দ করি বলেই।

আমাদের উচিত শোনা ও শোনানো না। মানানো। আমরা মানাতে পারছি না। এ ব্যর্থতার দায় আমরা এড়াতে পারি না। সরকার হিসাবে, সমাজ হিসাবে, নাগরিক হিসাবে, বাবা মা হিসাবে --- এ ব্যর্থতার দায় আমাদের নিতেই হবে।

এলাকার নাম না করেই বলছি-- দেশের আনাচে কানাচে যে হারে ধর্ষণ হচ্ছে; এ সব সমস্যা সমাধানে আমাদের করণীয় কি হতে পারে, সেটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। আমরা কি করেছি? সেটি নিয়ে আলোচনা নেই। মানে- আমাদের রাষ্ট্র এর জন্য উদাহরণ দেবার মত কী ধরণের শাস্তি আরোপ করেছে, তা আমাদের সামনে নেই। ঘটনা ঘটলে আমরা হই চই করি। তারপর থেমে যাই। আমাদের সামনে এত এত ইস্যু আসে; এ সব তখন চাপা পড়ে যায়। আর ডিজিটাল যামানায় এতদ্রুত আবেগ এবং ক্ষোভ বাড়ে আবার একই সাথে প্রশমিত হয়ে যায় যে, এটা নিয়ে নীতি নির্ধারকদের কারো প্রচুর ভাবনারও প্রয়োজন পড়ে না।

২০০০ সালে মিলিয়েনিয়াম উদযাপনে দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক নারী লাঞ্চনা নিয়ে আমরা নানা রকমের তর্ক বিতর্ক শুনেছি। তারপর ওই ঘটনার ফলাফল-- রাতের বেলার কোন উৎসবে নারীর ঘরের বাইরে আসা বন্ধ হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পয়লা বৈশাখে রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে একাধিক বড় কুকর্মের খবর আমরা জানি । তার সন্ধ্যার দিকের। সেটি নিয়ে বিস্তর আলাপ-তদন্ত হয়েছে। সেটিও আমরা জানি। কিন্তু ফলাফল শূণ্য।

এ রকম আরো অনেক রকম ঘটনার কথা আমরা জানি। আমরা সব বলি না। বান্দরবানের আলি কদম থেকে সিলেট নগর কিম্বা রাজধানী ঢাকা--- কোথাও নিরাপদ নন নারী। অনিরাপদ জীবন মেনে নিয়েই তাদের দিন চলছে। তাদের পরিবারও বিপর্যস্ত হচ্ছে।

নারীবাদী নেতা নেত্রী এবং শাসক দল নিজেও নারীবাদী হিসাবে নানাভাবে নিজেদের রূপায়িত করেন। এটা নিয়ে আমার মনের ভেতর কোন কষ্ট না। কষ্ট কেবল নারীর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতা সমানতালে শাসক এবং নাগরিক সবার।
এর জন্য কি করা যেতে পারে বা পারতো--- সে বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত একটু বলি; এর সাথে আপনাদের দ্বিমত থাকতে পারে। আমি সে মতামতকেও শ্রদ্ধা করি---

১. যে সব ঘটনা ঘটেছে- সে গুলোর জন্য কষ্ট করে হলেও একটা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে তদন্ত করা উচিৎ। অনেকে হয়ত ছ্যাঁত করে উঠবেন, এ 'সামান্য' ঘটনায় কেন বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে! আমার বিচারে এটা সামন্য ঘটনা নয়। তাই আমি এ দাবিটা করছি। এবং এটাও বলছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্রী হলে মধ্যরাতে পুলিশ গেট ভেঙ্গে ঢোকার পরে এটার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়েছিল বলেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়নি। একই বিশ্ববিদ্যালয়য়ে কোটা আন্দোলন, বৈশাখি উৎসব, ক্যাম্পাসের ভেতরে নারীর হয়রানির বহু খবর আমরা জানি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্তের ভেতর দিয়ে সে সব ঘটনাকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে গুম করে দেয়া হয়েছে।

২. ঘটনার পরপরই এর সুষ্ঠু বিচার করা। এটার জন্যও একটি বিশেষায়িত তদন্ত এবং বিচার সেল গঠন করা উচিৎ। কিছু ঘটনায় ধরে মেরে ফেলার চেয়ে, আমার কাছে একটা অপরাধীর অপরাধ নিশ্চিত হবার পর তার প্রকাশ্য শাস্তি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে একটা সমাধান হতে পারে।

৩. নারীদের আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিৎ এবং এটি সরকারিভাবেই করা উচিৎ। কারণ প্রাথমিকভাবে নিজেকে সুরক্ষার চেষ্টা তিনি করতে পারবেন।

৪. নারীর প্রেম, আবেগ এবং বাস্তবতার সমন্বয়ের জন্য কাউন্সেলিং করা উচিৎ। এটা কেন বলছি, অনেকে আবেগে পড়েও এ ধরণের সঙ্কটে পড়েন। ক'দিন আগে বান্দরবানে এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে। প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গণধর্ষিতা হয়েছেন একজন নারী। তাই প্রেম, আবেগ এবং নিজেকে মানিয়ে নেবার সক্ষমতার একটা বুদ্ধিভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিৎ।

৫. আমাদের সবার নৈতিক শিক্ষটা জরুরী। গাছের যেমন যত্ন তেমন ফল হবে। এটাই স্বাভাবিক। তাই সঠিক চর্চা করতে হবে আমাদের। ধর্ম আপনি যেটিই অনুসরন করুন না কেন, সে অনুসারেই আপনি দিন যাপন করুন। আপনার সন্তানকে তা শেখান। ধর্ম মানলে মানুষ খারাপ কাজ করে না। আমি যেহেতু মুসলিম। তাই মুসলিম ধর্মের কথা বলি-- নিয়মিত নামাজ পড়লে মনে খারাপ চিন্তা আসে না। এটা ধর্মের কথা। এবং এটা ধর্ম অনুসারিদের কাছে প্রমাণিত সত্য। অন্যসব ধর্মেও নৈতিকতার কথা বলা আছে। সবাই আশা করি সেটি মানলে ধর্ষণ কমে আসবে।

কেউ হয়ত বলবেন নারীর পোশাক, তার আচরণ কারণেও ধর্ষণ ঘটছে! আমি এটার সাথে একেবারেই দ্বিমত করি। সমস্যা আমাদের মগজে। পোশাকে নয়। সবাই নৈতিকতা এবং আইন মানার চেষ্টা করি। ধর্ষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দলীয় বিবেচনায় নয়, মানুষ হিসাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। ইন দ্য নেম অফ পলিটিক্যাল পার্টি --- ধর্ষণ বরদাশত করা কোনভাবেই ঠিক হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১২
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×