somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাকৃতিক শান্তি! - আমার বেড়াতে যাওয়া (পর্ব ০২)

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখানে এলাম যেভাবেঃ পর্ব ০১

বাস এসে যেখানে থামলো, জায়গাটার নাম ফলতিতা। ফল কেন তিতা হলো, আর সেটা কেনই বা জায়গার নাম হলো সেটা হিসাব করবার আগেই আব্বার তাড়া খেয়ে আমরা দ্রুত নামলাম, চেক করে দেখলাম যে সব ব্যাগ ঠিক আছে কি না। আব্বা নিয়ে ঢোকালেন একটা রেষ্টুরেন্টে। বাঁশের মাচার উপর রেষ্টুরেন্ট! নিচে তাকাতেই গলা শুকিয়ে যাবার উপক্রম। মাটি থেকে অন্তত ১০/১২ ফিট উঁচুতে এই মাচা। আর তার পরেই অনেক নিচুতে খাল। এখানেই আমার সাথে পরিচয় ঘটে দানাদার নামের একটা মিষ্টির। ছোট্ট একটা মিষ্টি, রসালো, তার উপরে চিনির দানা ও গুড়া। এই জিনিষ মুখে পুরে শান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে যাবার কথা যে কারোই।

ফলতিতার এই ঘাট থেকে আমাদের নৌকায় উঠতে হবে। এই নৌকাগুলিতে ছাউনি দেওয়া থাকে। বয়সে যারা বড় তাদের ভিতরে সোজা হয়ে বসতে একটু কষ্টই হয়। এক নৌকায় ৮-১০জন উঠে। এই নৌকা গুলির একটা বিশেষ নাম আছে, টাবুরে নৌকা। সাধারন নৌকার উপরেই ছই (রোলের মত গোল করে ছাদ) দিয়ে দিলেই সেটা টাবুরে নৌকা; মানুষ আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহার হয়।

টানা ৩-৪ ঘন্টা নৌকায় থাকতে হবে জেনেই ফলতিতা নামের সাফল্য বুঝতে পারলাম! কিন্তু খাল ছেড়ে যখন নৌকা বিলে ঢুকলো, আমার মনে হতে থাকলো এখানে ৩-৪ ঘন্টা কাটানো খুবই কম; অন্ততকাল এখানে কাটাতে পারলেই যেন শান্তি। বাতাসের যে গন্ধ থাকে, সেদিন প্রথম জানলাম। সেদিন প্রথম জানলাম যে পড়ন্ত বিকেলে সূর্যে যেমন আগুন ধরে যায়, তেমনি সবুজের সমারোহে চোঁখ ধাধিয়ে যায়। সামনে যদ্দুর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ আর সবুজ।

আরও একটু এগিয়ে যেতেই খেয়াল করলাম আশেপাশে তেমন কোন শব্দ নেই। নৌকার ভিতর আমাদের কথাবার্তাও তখন বিরক্তির লাগছিলো। নৌকার বৈঠার সাথে পানির খেল-তামাশার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, সবুজের মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া আর পাখির কিচির মিচির মিলিয়ে এমন একটা পরিবেশ তৈরী হলো যা আমি সারাজীবন চেষ্টা করলেও লিখে প্রকাশ করতে পারবো না। আব্বা বললেন পানির দিকে লক্ষ্য করে তাকাতে।

পানির ভিতরে তাকিয়ে ধাক্কা খেলাম, নদী/বিলের পানি এত স্বচ্ছ হয়? ৫-৭ ফিট পানির নিচের অদ্ভুত এক জগৎ আমার সামনে। এই জগৎ যে পৃথীবিতে আছে তা জানা ছিলো না। শত শত লতাপাতার মত কি কি যেন। টলমল পানি, তার উপর সূর্যের আলোর চিক-চিক আর নিচে অদ্ভুত অচেনা এক জগৎ।

হঠাৎই নৌকার নিচ থেকে একটা সাপ চলে গেলো, লালটুকটুকে! জানতে পারলাম এটাকে 'পান সাপ' বলা হয় এখানে। পানের পিকের মত লাল বলে। জীবনে প্রথমবারের মত সাপ দেখে না চমকে থাকলাম, বরং বলা চলে মনে মনে দোয়া করতে থাকলাম এমন সাপ যেন আরও দেখা যায়। সে যাত্রায় অবশ্য পান সাপ আর দেখি নি; তবে অন্য কয়েক রকমের সাপ দেখেছিলাম, এমনকি কেউটে (মাঝির কথা অনুযায়ী) দেখেও কেমন যেন আনন্দ লেগেছিলো।

নৌকা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে চেচড় বনের মধ্যে দিয়ে। এই চেচড় জিনিষটা প্রথম দেখা, আমরা যেমন স্ট্র দিয়ে ড্রিংকস খাই, তেমন দেখতে, তবে অনেক লম্বা। মধ্যে খানে বাঁশে যেমন জয়েন্ট থাকে, তেমন জয়েন্ট, ছোট ছোট; তবে বাঁশে যেমন বাইরে থেকে দেখা যায়, তেমনটা চেচড়ে দেখা যায় না। এটি দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ পাটি বুনে, সুন্দর সুন্দর ঝাপি এবং বক্স বানায়। এমনকি ঘরের চাল দেওয়ার জন্যও এটিকে শুকিয়ে ব্যবহার করা হয়।

নৌকার পাটাতনে শুয়ে ছইয়ের ফাঁকার মধ্যে দিয়ে বাইরে আঙ্গুল চালান করে দিলাম; ইচ্ছা আঙ্গুল দিয়ে চেচড় গুলিকে ধরবো। মাঝি মানা করলেন। মসৃণ সুদর্শন এই চেচড় গুলি বেশ মারাত্বক, একই জায়গায় বার বার লাগতে থাকলে নাকি হাত খুব বাজে ভাবে কেটে যেতে পারে।

মাঝি বৈঠা ছেড়ে চইড় ধরেছেন। চইড় হচ্ছে বাঁশ, লম্বা বাঁশ; এটা দিয়ে নৌকাকে একপ্রকার ঠেলেই নিয়ে যাওয়া হয়। চেচড় বনের মধ্যে দিয়ে বৈঠা দিয়ে নৌকা চালানো আর নিজেকে খুঁটির সাথে বেধে রেখে দৌড়ানো একই কথা। প্রতিবার চইড় পানিতে ফেললে অদ্ভুত একটা শব্দ হয়, নৌকা একটা ধাক্কা খেয়ে এগিয়ে চলে, দুলে উঠে। মৃদু বাতাস, চইড়ের ঝপাত করে পড়ার শব্দ, নৌকার সাথে পানির মিলনের শব্দ আর চেচড়ের সাথে নৌকার যুদ্ধের শব্দ মিলিয়ে এমন একটা আবহ হলো যেন মনে হলো আমি হারিয়ে গেছি শব্দের দেশে।

হঠাৎই কানে এলো চিঁ চিঁ শব্দ। ছই থেকে মাথা বের করে আকাশে চিল দেখতে পেলাম, চিল কিভাবে পানির মধ্যে ঝাপিয়ে পড়ে মাছ ধরে তাও দেখলাম। এর মধ্যে কানে এলো মানুষের কথাবার্তার শব্দ। আমরা তখন একটি বাজারের কাছে। বিটিভির মাটিও মানুষের উপস্থাপক শাইখ সিরাজের একটি অনুষ্ঠানে এই বাজারটি দেখেছি; এ অঞ্চলের মানুষের এখন দিন রাত কেটে যায় চিংড়ি মাছ চাষের ব্যস্ততায়। শামুকের পঁচা গন্ধ এসে নাকে ঢুকলো।

বাজার পেরুতেই আবার বিল এই বিলে শাপলা দেখে প্রথম বুঝলাম চোয়াল ঝুলে পড়া কাকে বলে। শত শত শাপলার সৌন্দর্য্যের কথা জানতে চান? সেটা না হয় পরের পর্বে বলি? নাকি?

যেখানে যাচ্ছি (৩য় পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×