somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাকৃতিক শান্তি! - আমার বেড়াতে যাওয়া (পর্ব ০৩)

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখানে এলাম যেভাবেঃ পর্ব ০১ | এখানে এলাম যেভাবেঃ পর্ব ০২

'আক্কা!' শব্দটা শুনে পিছনে তাকালাম। একটু হকচকিয়েই গিয়েছিলাম। হোক্কা বা হুক্কা শুনেছি; আক্কা কি?
----------------------------------------------------------------
শাপলা যেখানে হয়েছে, এখানের পানিটা অগভীর এবং একটু কালচে ধরণের। তবুও নিচে অনেক কিছুই দেখা যায়। আর এই কালচে পানির উপরে ভেসে আছে শত শত, উহু, মনে হয় হাজার হাজার শাপলা। সবুজ, বেগুনী, সাদা, লাল..... শত শত শাপলা। দেখে কোন ভাবেই মনে হবে না যে এগুলি একা একাই হয়েছে; বরং মনে হচ্ছে কোন রাজার কোন নামকরা মালি যেন সুন্দর ভাবে এদের সাজিয়ে রেখেছেন। কতগুলি ছোট আকারের শাপলার পর একটা বড় শাপলা। খুব সম্ভবত, খুব সম্ভবত এখানেই প্রথম পদ্ম দেখেছিলাম। দুপুর হওয়াতে শাপলা গুলি কেমন যেন আধা আধা ফুটে ছিলো। মাঝি বললো যে খুব ভোরে, যখন সুর্য্য উঠে তখন নাকি আরও সুন্দর লাগে।

মধ্যেখানে অন্য একদিনের কথা বলিঃ একদিন আমার মেঝ চাচাকে নিয়ে গিয়েছিলাম, ফজরের আযানের সময় বের হয়ে একদম ভোর নাগাদ পৌছে গেলাম শাপলা বিলে। দিগন্ত রেখায় যখন সূর্য আর্ধেক উঠলো, প্রথমবারের মত বইয়ে-গল্পে-কবিতায় পড়া সূর্য্যদয়ের মর্ম বুঝলাম। বিশাল বিল, যদ্দুর চোখ যায় সদ্য ফোঁটা শাপলাল ঝাঁক। চোখ ধাঁধিয়ে যাবার মত অবস্থা! স্পষ্ট মনে আছে সেদিন এই দৃষ্ট দেখে মন ভালো হবার পরিবর্তে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো; প্রতিদিন কেন দেখতে পাই না সেই দুঃখে।

'আক্কা!' শব্দটা শুনে পিছনে তাকালাম। একটু হকচকিয়েই গিয়েছিলাম। হোক্কা বা হুক্কা শুনেছি; আক্কা কি? পরে জানতে পেরেছিলাম 'ও কাকা' এর সর্ট ফর্ম বা কখনও কখনও সরাসরি 'কাকা'কেই আক্কা বলা হয়! নৌকার পাটাতনে শুয়ে শাপলা ছেড়ার চেষ্টা করছিলাম, তখনই মাঝি নিষেধ করলেন। কারণ শাপলার পাতার উপর নাকি সাপ থাকে পাতার নিচেও নাকি থাকে। গত সপ্তাহেই একজনকে কেটেছে। মারা যায়নি অবশ্য। আমি হাত সরিয়ে নিলাম, সাপের কামড় খাবার কোন শখ নাই।

আব্বার কাছে শুনলাম এইখানেই নাকি ছোটবেলায় প্রায় দিন ভোরে আসতেন। ঘরে চাল না থাকায় এই শাপলার উপরেই ভরসা করতে হতো। শাপলাগুলির ভিতরে এক ধরণের গুড়া গুড়া দানা পাওয়া যায়; এটাকে ঢ্যাপ বলে। এই ঢ্যাপ সিদ্ধ করলে কিছুটা ভাতের মত একটা খাবার হয়। অন্তত বেঁচে থাকা যায়। বড় শাপলা গুলির মধ্যে বেশী পাওয়া যায়।

একটি মাঠের মধ্যে দিয়ে কিছু মানুষ যদি একই পথ ধরে হাটে, কিছু দিনের মধ্যে সেখানে একটা দাগ পড়ে যায়, মানুষের হাঁটার দাগ; বিলের শাপলার মধ্যেও তেমন কিছু দাগ দেখা গেলো, নৌকার দাগ। যেসব জায়গা দিয়ে নৌকা গিয়েছে সে সব জায়গার শাপলা গুলি নষ্ট হয়ে দাগ হয়ে গিয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে একবার এক জায়গায় দাগ হলে ঐ জায়গা দিয়েই অন্য নৌকা গুলি সাধারণত চলে, চলার পথ সহজ হবে বলে।

নৌকায় ওঠার সময় কিছু খাবার কিনে ওঠা হয়েছিলো। প্রকৃতি দেখতে দেখতে আর আব্বার কাছে তার বিভিন্ন স্মৃতির গল্প শুনতে সব খেয়ে ফেলেছি। তখনই ছোটবোন কথা বললো, তার নাকি খিধা লেগেছে! এই বিলের মধ্যে খাবার পাবো কোথায়? মজার একটা অপ্রাসঙ্গিক গল্প বলি; আমার ছোট বোন আমার আব্বাকে ডাকতো আম্মা বলে, আর আম্মাকে ডাকতো আব্বা বলে। কিন্তু খিধার যন্ত্রনায় হোক আর অন্য কোন কারণে হোক, সে আব্বাকে আব্বা এবং আম্মাকে আম্মা ডাকা শুরু করলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই নৌকা খালের মধ্যে ঢুকে গেলো, খুব একটা চওড়া খাল নয়। ধানমন্ডি আবাসিক এরিয়ার মধ্যে যে রাস্তা গুলি, অতটুকু চওড়া হবে। খালের দুপাশে হিন্দু এলাকা। কিছু কিছু বাড়ির রান্নাঘর থেকে ধোঁয়া উঠছে; আর আমার বোন সেগুলির দিক তাকিয়ে 'ও ভাত, ভাত, আয়, আয়' বলে করুন সুরে ডাকছে :( এই দৃশ্যটা আমাদের বাড়ির সবাই আজ ২২ বছর পরও মনে রেখেছে। যাই হোক, খাবারের একটা ব্যবস্থা করা গেলো। খাল দিয়ে নৌকা এগিয়ে চলেছে।

'আব্বু, ঐটা কি কুমির?', আমি চিৎকার করে উঠলাম, কিছু একটা খুব দ্রুত গতিতে পানিতে নেমে গেলো.....
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×