প্রাকৃতিক শান্তি! - আমার বেড়াতে যাওয়া (পর্ব ০১)
প্রাকৃতিক শান্তি! - আমার বেড়াতে যাওয়া (পর্ব ০২)
প্রাকৃতিক শান্তি! - আমার বেড়াতে যাওয়া (পর্ব ০৩)
প্রাকৃতিক শান্তি! - আমার বেড়াতে যাওয়া (পর্ব ০৪)
প্রাকৃতিক শান্তি! - আমার বেড়াতে যাওয়া (পর্ব ০৫)
এত্তো বাদুড়! বিশাল এই গাছটায় একটাও পাতা নাই; মূলত গাছটা মৃত; কিন্তু দূর থেকে দেখে বোঝার উপায়ই নেই যে গাছে কোন পাতা নেই। বরং দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন গাছটা পাতায় ভরা। শত শত নয়, হাজারে হাজারে বাদুড় ঝুলে আছে গাছটায়।
এমন বাদুড় ভরা গাছ আরও কয়েকবার দেখেছি। তবে রমনা পার্কে বাদুড় দেখার এক্সপেরিয়েন্স ছিলো ইউনিক! কারণ রমনা পার্কে ছোট ছোট দুইটা গাছে বাদুড় থাকবার কারণে খুব ভালো করে এবং কাছ থেকে দেখতে পেয়েছিলাম। যে ছবিটি যোগ করা হলো, এটি আমার নিজের হাতে তোলা রমনা পার্কের বাদুড়ের ছবি!
বাদুড়ের হিসু করার স্টাইল একদমই ইউনিক। ডানার উপরের দিকে কোন একটা অংশ দিয়ে ডাল ধরে ঝুলে পড়ে, এরপর ঝুলে ঝুলে হিসু করে। এমন যখন ডালে বসে, তখন কিন্তু পা উপরে, আর মাথা নিচে দেয় (ছবির মত) কিন্তু যখন হিসু করে, তখন দেখলে মনে হবে দুই হাত দিয়ে ডাল ধরে ঝুলে আছে।
রমনা পার্কে যেদিন বাদুড়ের ছবি তুলেছিলাম, ঐদিনই বিকালের দিকে না জানি দুপুরের দিকে তুলেছিলাম এই প্যাঁচা দম্পতির ছবি।
ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে। চলেন, সুন্দরবন থেকে বেড়িয়ে আসি!
সুন্দরবনে প্রথম যেবার গেলাম, সেবারের গল্প পরে হবে; আগে দ্বিতীয়বারের গল্প বলি। মোংলাপোর্ট বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নামলেই সামনে ঘাট, সেখান থেকে ট্রলার ভাড়া করা যায়। গ্রষ্ম-বর্ষায় ট্রলার ভাড়া এক রকম, শীতে আর এক রকম, শীতে একটু বেশী থাকে। তবে আমরা যখন গিয়েছি শীতের সময়ই; কিন্তু ভাড়া পেয়েছি বর্ষার ভাড়া! কারণ আগামীকাল ২০০৯ এর নির্বাচন।
তিনজন মিলে ৪০জন ধরে এমন একটা ট্রলার ভাড়া করে তাতে চেপে বসলাম। এক পাশ থেকে মংলা নদী, অন্য পাশ থেকে রূপসা নদী, মিলে এক সাথে হয়েছে পশুর নদী। শীতের সময়েই নদীতে যেই ঢেউ দেখলাম, বর্ষার সময় অবস্থা কি হবে তা আন্দাজ করতে পারলাম। করমজলে এসে নামলাম। আমাদের একজন কোন মতেই ট্রলার থেকে নামতে রাজি না। তার ধরণা নিচে নামলেই তাকে বাঘে খাবে! শেষ পর্যন্ত যখন আমি আর অন্য একজন নেমে গেলাম; সে কিছুটা বাধ্য হয়েই নামলো। পরে জানতে পেরেছিলাম মাঝির ছেলে তাকে ভয় দেখিয়েছে যে ট্রলারে বসে থাকলে কুমিরে ধরবার সম্ভাবনা আছে!
তবে শেষ পর্যন্ত তাকে করমজলের মুখে সরকারী অফিসের সামনে রেখেই আমরা দু'জন পথে বাড়লাম। সুন্দর করে পথ করে রাখা; আমরা দুজন সে পথ ছেড়ে নেমে গেলাম মাটিতে। সুন্দরবনের মধ্যে আগে চলার অভ্যাস নাই বলে বেশ আস্তে আস্তে আগাতে হলো। ভয় হচ্ছিলো পথ হারানোর; তাই মাটি দিয়ে গাছের গায়ে দাগ কাঁটতে কাঁতে এগুলাম। প্রায় ২০-২৫ মিনিট হাটার পর সামনে একটা ছোট্ট খালের মত। এখানে না আছে মানুষের শব্দ; না আছে ট্রলারের শব্দ। শুধু বাতাস, পাখি আর বাঁদরের শব্দ। চোখ বন্ধ করে মাটিতে শুয়ে পড়লাম। ঠান্ডার মধ্যে ঠান্ডা মাটি; কিন্তু মনে হচ্ছিলো যেন কত আরম দায়ক। বাঁদরের এক ডাল থেকে আর এক ডালে যাওয়ার শব্দও যেন খুব আপন মনে হচ্ছিলো।
ক্যাঁ ক্যাঁ ক্যাঁ করে কোন একটা পাখি উড়ে গেলো খুব কাছ দিয়েই। কোন একটা ফল বা মরা ডাল পানিতে ঝপ করে পড়লো। খুব সম্ভবত কাছেই টিয়া পাখির ডাক শোনা গেলো, অন্তত সে রকমই দাবী আমার সাথের জনের। শোয়া থেকে উঠে হালকা রোদ পড়ে এমন জায়গায় গাছের গায়ে হেলান দিয়ে আমরা শব্দ শুনতে লাগলাম। এখানে শ্বাসমূলের কারণে বসাটাই কষ্টের। তবে সময় যেন আমাদের জন্য থমকে গিয়েছে। খুব কাছ দিয়েই একটা হরিণ হেটে গেলো। এ এলাকার হরিণ বেশ মিশুক! ডাক দিলেই চলে আসে। করমজলে ঘুরতে আসা মানুষের হাতে বাদাম খায়!
একটা বড় কোন জাহাজ পঅঅঅঅ করে শব্দ করে প্রাকৃতিক শান্তির এই শব্দের মধ্যে ছেদ কাটলো; কিন্তু তারপরও মনে হচ্ছিলো এটা যেন একটা সুন্দর কোন ছন্দ।
আমাদের সময়ের হুস হলো ফেলে আসা বন্ধুর কলে। খুব সম্ভবত আমাদের এই শান্তি থেকে ছিনিয়ে নিতেই মোবাইলের নেটওয়ার্ক এতদূরেও কাজ করছিলো। হেঁটে ফেরৎ আসবার পথে দুজনের সাথে দেখা হলো।এ এলাকায় বাঘ খুব একটা আসে না; এ তথ্যটা আগে জানা ছিলো বলেই আমরা একলা ভিতরে ঢুকতে সাহস করেছিলাম। কিন্তু তাদের হিসাব মতে মাত্র ঘন্টা খানেক আগেই এদিকে বাঘ এসেছে। বাঘের পায়ের ছাপও দেখলাম কাঁদার ভিতরে। এই প্রথম গাঁয়ে কাটা দিয়ে উঠলো! আমি সরল মানুষ বিশ্বাস করে নিলাম বাঘ এসেছিলো; আমার বন্ধু বিশ্বাস করতে নারাজ।
খুব ইচ্ছা ছিলো বাঘের গর্জন শুনি। শুনেছিলাম ঠিকই; তবে সেটা সুন্দরবনে নয়।
(যারা বাঘের গর্জন শুনতে চান; তারা বোটানিক্যাল গার্ডেনে খুব ভোরে চলে যাবেন; অপেক্ষা করতে থাকবেন; ইন শা আল্লাহ শুনতে পাবেন)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৪