এখানে এলাম যেভাবেঃ পর্ব ০১
এখানে এলাম যেভাবেঃ পর্ব ০২
এখানে এলাম যেভাবেঃ পর্ব ০৩
এখানে এলাম যেভাবেঃ পর্ব ০৪
বৈশাখ মাসের গরমের মধ্যেও আমার কাঁধে, বড় ভাইয়ার কাঁধে আর আমার মেঝ কাকার কাঁধে কেন কাঁথা (খ্যাতা) চাপানো হলো বুঝলাম না! এমনিতে এখানে বিদ্যুৎ নেই; তার উপর বৈশাখ মাস, বিলে পানিও নেই। সেহেতু গ্রামে আসার কোন ইচ্ছাই তেমন ভাবে কাজ করছিলো না। তবে সবাই যেহেতু যাচ্ছে, তাই আসতে হলো। সারাদিন মৃদুমন্দ বাতাস থাকলেও ঘরের ভিতর মাত্রাতিরিক্ত গরম। আব্বা সবাইকে বললেন আমরা মাছের ঘেরের মধ্যেখানে যে ঘর আছে; ওটায় ঘুমাবো। কিন্তু এই খ্যাতা কেন?
গ্রীষ্মের সময় সাপের উপদ্রব গ্রাম অঞ্চলে খুব বাড়ে, তাই আমরা সন্ধ্যা নামার আগে আগেই ঘেরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ঘেরের ঘর পর্যন্ত পৌছাতে মিনিট দশেক লাগে। ডান পাশে খাল, যেটায় ইয়া বড় গুইসাপটা দেখেছিলাম, আর বাম পাশে আমার আব্বার চাচাতো ভাইদের ঘের। এর মধ্যেখানে প্রায় দুই-তিন হাত চওড়া এবং নিচ থেকে প্রায় ৮/১০ হাত উঁচু আইল; এর উপর দিয়েই হেটে যেতে হবে। আর আইলের প্রায় আর্ধেকই দখল করে থাকে কোন লতা-পাতা-ঘাস, না হয় একটা দুইটা ছোট খাট গাছ।
আমাদের মত শহুরে বাচ্চা পোলাপাইনের জন্য রাস্তাটা বড়ই ডেঞ্জারাস; কিন্তু গ্রামের যে কোন ন্যাদা-প্যাদা সহ যে কারও জন্যই রাস্তাটা বেশ চওড়া! কত চওড়া? হয়ত তারা সংসদ ভবনের সামনের মানিক মিয়া এভিনিউয়ের মতই চওড়া ভাবেন; না হলে কেউ সাইকেল নিয়ে এই রাস্তায় ঢুকে?
যাই হোক, ঘেরে পৌছানোর পর সূর্য ডোবা দেখলাম। সমুদ্রের মাঝে নয়, দূর-দুরান্তের নারিকেল গাছের সারির পিছন দিয়ে এত্তো বড় একটা লাল বৃত্ত কাঁপতে কাঁপতে ডুবে গেলো। আস্তে আস্তে বাতাস বইছে; অন্যরকম এক শান্তি। আব্বা-আম্মা-চাচা-চাচীর মুখ থেকে বেশ অনেক গল্প শোনা হলো। পরিস্কার আকাশে এক সময় একটা চাঁদ উঠলো, পূর্ণিমা নয়, আর্ধেক চাঁদ; কিন্তু চাঁদের আলোয় সব যেন দেখা যাচ্ছে। দূর থেকে অন্য ঘেরের পাহারাদারদের হাঁক-ডাক। অদ্ভুত এক পরিবেশ। এই পরিবেশের মধ্যেই হারিকেন জ্বালিয়ে ভাত খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু খ্যাতার বিষয়টা মাথায় ঢুকলো না। এই গরমের মধ্যে এত্তোগুলান খ্যাতা যে আনা হলো, তার কি হবে? আনবার কারণই বা কি?
রাত তখন প্রায় ১২ কি ১টা; আম্মা আমার-ভাইয়ার আর বোনের গায়ে খ্যাতা টেনে দিলেন! এর আগে আমাদের শীতে ধরছিলো বলা চলে। জ্বী হ্যাঁ; বৈশাখ মাসে শীত। মূলত ঘের গুলি অনেক দূর দুরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে; দূরের শহরের গরম বাতাস পানির সাথে মিলে মিশে এগুতে এগুতে গ্রামের মধ্যে যেতে যেতে ঠান্ডা হয়ে যায়। এতটাই ঠান্ডা হয় যে বৈশাখ মাসের গরমে খ্যাতা গায়ে ঘুমানো লাগে।
বৈশাখ মাসে সাধারণত ঘেরের ভিতরে পানিতে টইটুম্বুর থাকে না; যেমনটা বৃষ্টি বা বৃষ্টি পরবর্তী কয়েক মাস থাকে। সাধারণত ঘের গুলির ৩ পাশে গভীর করে পরিখার মত খোঁড়া হয়, শীতের শুরু থেকে যখন পানি কমতে থাকে; মাছেরা ওখানে আশ্রয় নেয়। সকালে উঠে বিষয় গুলি যখন আব্বার কাছ থেকে শুনছিলাম; তখন মনে হচ্ছিলো যে পুরে ঘের পানিতে ভরা থাকলে রাতের বাতাস এর থেকেও ঠান্ডা হতো?
গ্রাম ঘুরে দেখার জন্য এই সময়টা মোক্ষম। কেননা রাস্তা শুকনা; বৃষ্টি নাই; কুয়াশা নাই। গ্রাম দেখতে বের হলাম আমরা। বিকালের দিকে হঠাৎ করে আমার কাকা দুরের একটা গাছ দেখিয়ে বললেন যে ঐ গাছে কোন পাতা নাই। গাছটা মৃত। কিন্তু আমরা দিব্বি ঐ গাছে পাতা দেখতে পেলাম। কি ছিলো গাছে?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৪