ব্লগার রোকসানা লেইস লিখেছেন নাম সমাচার টাইটেলে একটি পোষ্ট। উনি সেখানে দারুন করে কিছু উদাহরণ দিয়েছেন। এই পোষ্টকে উনার পোষ্টের একটা কমেন্ট হিসাবে দেখতে পারেন।
উনার লেখায় কমেন্ট করতে গিয়ে দেখলাম কমেন্টটা উনার পোষ্টের থেকে বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই আলাদা করেই পোষ্ট দেওয়া।
একাধিক নাম
আমাদের এলাকায় এক মেয়ে ছিলো, ডাক নাম রুমানা। আর সার্টিফিকেটের নাম খুব সম্ভবত ফারিয়া রহমান। মেয়েটা গান গাইতো। আমাদের এলাকা থেকে সে-ই প্রথম শিল্পী হিসাবে বেতারে গান গাওয়ার সুযোগ পেলো। প্রোগ্রামটা সরাসরি সম্প্রচারের ছিলো।
তো নির্দিষ্ট দিনে আমরা সবাই রেডিও কানে বসে আছি। রুমানা আর গান গায় না! সন্ধ্যায় যখন রুমানা তার পিতা-মাতাকে নিয়ে এলাকায় ফিরলো, সবাই হাসাহাসি, রুমানা নাকি গান গাওয়ার চান্স পায় নাই। আমার আব্বা জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সার্টিফিকেটের নাম কি? তখন বোঝা গেলো আসল ঘটনা। এলাকার কেউই তার ঐ নামটা জানে না।
আমার আব্বা খুব সতর্কতার সাথে আমাদের একটাই নাম রেখেছেন। পুরা নামের শুরুতে যে নাম, সেটাই আমাদের ডাকনাম বা রোকসানা আপুর লেখা মতে "ভালো নাম"!
কাছাকাছি নাম
আমার চার মামার চার ছেলের নাম যথাক্রমে রিকো, সিকো, ইকো, ঝিকো! আমার আব্বা তাদের সাধারণত কো বলে ডাকেন। ঈদ বা কোন কারণে সবাই একসাথ হলে আব্বা জোরে কো বলে ডাক দেন, এরপর যাকে দরকার তাকে বেছে নেন!
আমার দাদা চেষ্টা করেছিলেন আমার আর আমার বড় ভাইয়ের নাম এমন মিলিয়ে রাখতে। আব্বা পিতার প্রতি সম্মান রেখে নাম গুলি আমাদের পুরা নামের ভিতরে রেখেছেন ঠিকই; কিন্তু খুব কড়া করে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন আমাদের ভাই-বোনেদের নাম। ফলে ঐ অংশ বাদই পড়ে গেছে।
আরবদের নাম
সৌদী আরবে আসবার পর খেয়াল করলাম এখানে নামটা সবার এমন ভাবে হয়ঃ
নিজের নাম + পিতার নাম + দাদার নামের প্রথম অক্ষর + বংশের নাম
অর্থাৎ কারও নাম যদি পাসপোর্ট বা ন্যাশনাল আইডি কার্ডে Mohammad Asiri T Alqathani হয়, তার অর্থ হচ্ছে তার নাম Mohammad, তার পিতার নাম Asiri, দাদার নামের শুরু T দিয়ে এবং বংশের নাম Alqathani।
সৌদীতে আসা বিদেশীদের নামও এভাবেই আইডি কার্ডে চলে আসে, শুধু দাদার নামের অংশে পুরা নাম লেখা হয়। আমার পরিচিত একজনের নাম এসেছে "মোহাম্মদ মোহাম্মদ মোহাম্মাদ হাসান"। যদিও হাসান তাদের বংশের নাম না, তবুও ওটাই ফরম্যাটে পড়ে বংশের নাম হয়ে গেছে।
কুয়েতের লোকজন অবশ্য নিজের নাম বাদে বাবা-দাদার নামের প্রথম অক্ষরই ব্যবহার করে।
শেষ নাম বা বংশের নাম না থাকা
বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ আসেন সৌদীতে, যাদের নাম একটাই! হাসান, রফিক, সবুজ ইত্যাদি। তাদের নামের দ্বিতীয় অংশ নাই! এটাকে আগে আরব দেশ গুলিতে খুব খারাপ ভাবে নেওয়া হতো। বর্তমানে তারা দেখতে দেখতে অভ্যস্ত। তাদের হিসাবে সাধারণত জন্ম পরিচয়হীন মানুষেরই বংশ নাম থাকে না!
আমার সন্তানদের নাম
ঐ যে বললাম, দাদার দেওয়া নাম পুরা নামের ভিতরে রাখতে গিয়ে আমার এবং আমার ভাইয়ের নাম বেশ বড় হয়ে গেছে। কিন্তু আমি এবং আমার ভাই, আমাদের নিজেদের বাচ্চাদের বেলায় খুব সতর্কতার সাথে একটাই নাম রেখেছি, সাথে বংশ নাম। ব্যাস। সব খানে সেভাবেই চলছে। অবশ্য সৌদী রেসিডেন্সি কার্ডে মধ্যেখানে আমারদের নাম ঢুকে গেছে।
আজব কিছু নামের সিষ্টেম
আফ্রিকার দেশ গুলিতে ফাতিমাকে ইংরেজীতে লেখা হয় Fadduma উচ্চারণ কিছুটা ফাত্তিমা হয়। প্রথম দেখে অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু যখন মনে পড়লো ইন্ডিয়াতে সবাই "ছোড় দো আচঁল" কে "chod do anchal" লিখে, তখন আর অবাক হই নাই!
মজার নাম-আজব নাম
ব্লগার রোকসানা লেইস এর পোষ্টে ব্লগার শায়মা লিখেছেনঃ
"আপু আজকাল নতুন বাচ্চারা যখন ভর্তি হয় নতুন নতুন নাম দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছে উঠে। কোনো কোনো নাম উচ্চারণ করবো কেমনে ভেবেই আমি শেষ। কই থেকে যে খুঁজে খুঁজে বের করে আজকালকার বাবা মায়েরা বাচ্চাদের নাম! বাপরে!!"
পুরাপুরি একমত। এখনকার নাম-ধাম দেখলে ভয় লাগে।
আমার ছোট খালু তার মেয়ের নাম রেখেছেন নিক্তি। উনি জামাত-শিবির বিদ্বেষী একজন মানুষ। উনাকে বললাম, খালু, জামাত-শিবির অপছন্দ করেন, আর নাম রেখেছেন তাদের মার্কার (দাড়িপাল্লা) অনুযায়ী? খালু একটু বিরক্তই হয়েছিলেন। কয়েক বছর পর তার ছেলে হলো, নাম দিলেন নিতল! আমি এবার গম্ভীর ভাবে বললাম, ধনবান বাপের ছেলে হয়েছে 'তলা বিহীন ঝুড়ি'। এরপর অবশ্য খালু আমার সাথে কখনও মজা করেন নি!
এ লেখা লেখার স্বার্থে বাংলা নাম দিয়ে সার্চ দিতেই পেলাম কিছু অদ্ভুত নাম। যেমনঃ
০১। আদাভান
০২। অর্কভ
০৩। অ্যাম্র (এটা মূলত আরবী নাম আমর থেকে এসেছে)
০৪। ভদ্রক
০৫। ব্র্যান্ত
০৬। চাহেল
০৭। দীক্ষান্ত
০৮। একাচিথ
০৯। গাদিন
১০। পোশা
থাক বাবা, নামের বাহার দেখলে কষ্ট হয়।
আপাতত নাম নিয়ে কপচাকপচি এখানেই বন্ধ করি। বেশী বাড়াবাড়ি না হয়ে যায়!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:০২