somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কামেহামেহা, মানোয়া পাহাড় এবং আলোহা। পর্ব-৩(ঘ)।

০৫ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোদোমাতাল ও নারীলিপ্সু


(আগের অংশটুকুর জন্য এখান থেকে পড়ে আসতে হবে)


সুজাত যখন হনলুলু ছেড়ে মিশিগানে চলে গেলো, তখন আমি আমার রিসার্চ নিয়ে বেজায় ব্যস্ত। ইতিমধ্যে আমার বিবাহ-পর্ব কমপ্লিট। নদীর নামের একটি মেয়ের সাথে। পুতুল খেলার মতো তার সাথে ঘর-সংসার করি।

প্রতিদিন ল্যাবে গিয়ে মাথা কুটি। ডেটা চাই, ডেটা। চলে নতুন এক্সপেরিমেন্টের সাধনা। এর সাথে পাল্লা দিয়ে সংসারে চলে নিত্য নতুন রান্নাবান্নার প্রচেষ্টা। অবশ্য সেখানে আমি গবেষক নই, সেখানে আমি গিনিপিগ। (এই রকম গিনিপিগ হতে পারাটা অবশ্য ভাগ্যের ব্যাপার। ফিসফিস করে বলি, আমার স্ত্রী একজন দুর্ধর্ষ রাঁধিয়ে।)

সুজাত মাঝেমাঝে ফোন করে। সে তখন পোস্ট-ডক্টোরাল রিসার্চ করছে একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীতে। এই জিনিসটি একটু খাপছাড়া। সাধারণতঃ লোকেরা তাদের পোস্ট-ডক্টোরাল রিসার্চ এর কাজটি করে যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রফেসরের আন্ডারে কেননা সেখানে তারা দ্রুত অনেকগুলো পেপার পাবলিশ করতে পারে। তখনকার আমলে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীরা তাদের রিসার্চের ফলাফল একদমই পাবলিশ করতে চাইতোনা।

সুজাত কাজ করছিল আলৎসহাইমার রোগটির উপর। সে আমলে খুবই একটি দারুন বিষয় ছিল এটি। কিন্তু ওই যে বললাম সে তার কাজের কোন কিছুই পাবলিশ করতে পারছে না কোন জার্নালে। ব্যাপারটি নিয়ে সে বেশ মনোকষ্টে ছিল।

ইতিমধ্যে আমাদের ঘরে আমার স্বপ্নেদেখা মেয়েটির জন্ম হয়েছে। কাজ থেকে আমি বাসায় ফিরবার পরে তিনজনে মিলে সারাক্ষণ হুটোপুটি করি। সময় কেটে যায় পাখীর ডানায় ভর করে।

একদিন সুজাতের ফোন এলো।
"হ্যালো-কেমন আছ?"
"ভাল আছি সুজাত। থিসিসটাকে মোটামুটি বাগে এনে ফেলেছি। তোমার কি অবস্থা?"
"আমার অবস্থা ভালই। দুটো খবর আছে।"
"কহিয়ে জনাব।"
"নাম্বার ওয়ান- বিয়ে করেছি।"
"তাই নাকি! কোথায়? কবে? কাকে?"
"বৌয়ের নাম সালমা। ও আর আমি অনেক আগে একসাথে কলেজে পড়তাম। ও ইন্ডিয়া থেকে পি এইচ ডি করে এখানে এসেছে।"
"খুবই ভাল খবর। আমি তো মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম যে তুমি আবার কোন মিশিগান কন্যার চক্করে না পড়ে যাও। যাই হোক-আর দুই নম্বর খবরটি কি? বাচ্চা হবে সালমার?"
সুজাত এ কথায় খুবই আনন্দ পায়। সে হা হা করে হাসে।
"আরে না-না, কেবলই তো বিয়ে হোল। আমরা সামনের সপ্তাহে হানিমুনে যাচ্ছি।"
"তাতে আমার কি? হানিমুনে যাচ্ছো, যাও। হ্যাভ আ গুড টাইম।"
"হানিমুনে আমরা হাওয়াই আসছি। ইট উইল বী গুড টু সী ইউ।"

এতক্ষণে রহস্য পরিষ্কার হইলো।

পরের সপ্তাহেই সস্ত্রীক সুজাতের আগমন। ডিনার খেতে বাসায় ডেকেছিলাম। সেই আগের দিনের মতো আড্ডা চালাই আমরা দুজন। মহিলাবৃন্দও তাদের আলাপচারীতা চালিয়ে যান সমান তালে। সালমাও খুবই মিশুকে টাইপের মেয়ে।

সুজাতকে আড়ালে ডেকে বললাম, "তোমার ঘরে কি জ্যাক সাহেবের আনাগোনা এখনো চলছে?"
"জ্যাক সাহেব আবার কে? আমার বসের নামতো মাইকেল।"
"আরে আমি জ্যাক ড্যানিয়েলস এর কথা বলছি। তোমার প্রিয় হুইস্কি।"
"সুশশ।" সুজাত আমার মুখে হাত চাপা দেয়। "ওকথা বলা যাবে না।"
"সেকি? কেন?"
"ওসব ছেড়ে দিয়েছি বহু আগে। মিশিগানে যাবার পরপরই। সালমা ওসবের কিছু জানেওনা।"
"এখন একদম বন্ধ?"
"হ্যাঁ-একদম বন্ধ। তখন খুব একা একা লাগতো বলে নাইটক্লাবে যেয়ে ওসব খেতাম।"

শুনে ভালই লাগলো আমার। যাক, অন্ততঃ একটা মদখোর কমলো এই পৃথিবীতে।

তারপর কেটে গেছে বহুদিন। আমরা হনলুলু ছেড়ে চলে গেছি ক্যানাডাতে। সেখানে কয়েকটি বছর থাকবার পর আবার ফিরে আসি আমেরিকাতে। এর মধ্যে মাঝেসাঝে ফোনে কথা হয় সুজাতের সাথে। সেও তার চাকরি বদলেছে। এখন সে অন্য কোম্পানীতে চাকরি করে। রিসার্চেরই কাজ। একই জায়গাতে সালমারও চাকরি হয়েছে। একদিন খবর দিল যে তাদের মেয়ে হয়েছে একটা। চিঠিতে ছবিও পাঠালো গোটা কয়েক।

একবার আমি একটা কনফারেন্সে গেলাম সান ফ্রান্সিস্কো। সুজাতরা তখন ওই এলাকারই আশেপাশে কোথাও থাকে। আমার আসবার খবর শুনে বললো যে তাদের বাসায় যেতে হবে। হাতে সময় বেশী ছিলনা বলে সে প্রস্তাবে সাড়া দেওয়া হয়নি। তাকে বললাম, বরং তুমি একদিন সন্ধ্যেবেলা আমার হোটেলে এসো। আমরা কাছাকাছি কোন একটা জায়গাতে বসে কথা বলতে বলতে রাতের খাবার খেয়ে নেবো।

সন্ধ্যেবেলা সুজাত সাহেব এলেন। তাকে দেখে চমকে উঠি। এতদিন পরেও ব্যাটাচ্ছেলে দেখতে একদম আগের মতোনই আছে। বয়সের কোন ছাপই পড়েনি। কোন স্পেশাল তাবিজ-কবচের কেরামতি কিনা জিজ্ঞেস করলাম তাকে। সে একগাল হাসে। তার গাড়ীটাও ঝকঝকে নতুন। বুঝলাম সে ভালই আছে।

"কি জাতীয় খাবার খাবে?" সুজাত জিজ্ঞেস করে।
"দুদিন ধরে ভাত খাইনি, বার্গার আর স্যান্ডউইচের উপর আছি। কাছাকাছি কোথায় গিয়ে চারটে ভাত যদি খেতে পারতাম।"
"চলো, তাহলে কোন ইন্ডিয়ান আর না হলে থাই রেস্টুরেন্টে যাই।"

বেশীক্ষণ খুঁজতে হোলনা ভাগ্যক্রমে। মিনিট দশেক ড্রাইভ করেই মিলে গেল একটা "তাজমহল" মার্কা রেস্টুরেন্ট।

ভিতরে ঢুকে খাবার অর্ডার দেবার সময়ে সুজাত একটু মুখ কাঁচুমাচু করে বললো, "আমি কিন্তু কিছুই খাবোনা। তুমি শুধু তোমার নিজের জন্যে অর্ডার দাও।"
"মানে? তুমি কি দাম নিয়ে ভাবছো? নো চিন্তা ভাই- আমি খাওয়াচ্ছি তোমাকে। যা খুশী অর্ডার করো।"
"না না, দাম দেওয়া নিয়ে কোন সমস্যা নেই। আমি আসলে বাইরে কোথাও খাইনে একদম।"

হঠাৎ মনে পড়লো যে অনেকেই খাদ্যদ্রব্যের হালাল-হারাম নিয়ে খুঁতখুঁত করেন। হয়তো বা সুজাতও এখন বাইরের খাবার হালাল না হলে খায় না।

"তুমি যদি খাবার হালাল কিনা এই চিন্তায় থাকো, তাহলে তুমি বরং ভেজিটেরিয়ান কিছু একটা নাও।"
"না হালাল-হারাম নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। আমি বাইরে কোথাও খাইনা।"
"কেন? বাইরের খাবারের দোষটা কি?"
"বাইরের খাবার খাওয়া একদম বারন আমার জন্য।"
"কে বারণ করেছে? সালমা? আমাকে ফোনটা দাওতো। ওকে বলে দেই যে একদিন আমার সাথে খেলে এমন কোন মহাভারত অশুদ্ধ হবে না।"
"না সালমা বারণ করেনি।"
"তাহলে কে করেছে?"
"তুমি খাওনা আগে। আমি বলছি।"

ঘটনাটি খেতে খেতে শুনলাম।

বছরখানেক আগের কথা। সুজাত কাজে গেছে। ল্যাবে একটা গুরুত্বপূর্ণ এক্সপেরিমেন্ট চলছে। পাশে টেবিলের সহকর্মী বললো, "তোমার চোখ দুটো কেমন লাল মনে হচ্ছে। কাল রাতে বেশী টেনেছো নাকি?"
সুজাত বলে, "টানাটানির জীবন শেষ হয়েছে অনেক আগে।"
"চোখ তো অনেক লাল। ঘটনা কি? ইনফেকশন হতে পারে তাহলে। ডাক্তারের অফিস থেকে ঘুরে এসো নাহয়।"

সুজাতের তেমন কোন খারাপ লাগছিলনা, কিন্তু তারপরেও সহকর্মীর ঠেলায় পড়ে সে গেল ডাক্তারের কাছে। এখানে তো আবার ডাক্তার আসবার আগে আসে তার অ্যাসিস্টেন্ট। সে এসে পালস দেখে, তাপমাত্রা মাপে, ব্লাড-প্রেসার চেক করে। এসব শেষ করার পর রোগীদের বসে থাকতে হয় আরো মিনিট দশেক। তারপর আসে ডাক্তার।
সুজাতের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হোল। ডাক্তার মুহুর্তের মধ্যে এসে হাজির। সুজাততো মহা খুশী। বাহ-ক্লিনিকটি তো বেশ এফিসিয়েন্ট মনে হচ্ছে।

ডাক্তারের প্রথম প্রশ্ন ছিল, "তুমি ক্লিনিকে এসেছো কিভাবে?"
সুজাত অবাক। তার সাথে চোখ লালের কি সম্পর্ক? তারপরেও সে উত্তর দিল, "গাড়ীতে করে এসেছি আমি।"
ডাক্তারের পালটা প্রশ্ন, "কে ড্রাইভ করেছে? তুমি নাকি অন্য কেউ?"
আরে মর জ্বালা! একি ডাক্তার নাকি ড্রাইভিং লাইসেন্স অফিসের একজামিনার?
"আমিই গাড়ী চালিয়ে এসেছি।"
"বলো কি? কি সর্বনাশের কথা!" ডাক্তার ভিরমি খায় সুজাতের উত্তর শুনে।

সুজাতের এবার ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে। "তুমি কি দয়া করে বলবে যে এই জাতীয় প্রশ্নের অর্থ কি?"

ডাক্তার গম্ভীর হয়ে বসে থাকেন কিছুক্ষণ, তারপর বলেন,"তোমার ব্লাড-প্রেসার ভয়াবহ রকমের বেশী। তোমার যে এখনো স্ট্রোক হয়নি, তাতেই আমি অবাক হচ্ছি। আবার যখন শুনলাম যে তুমি এই অবস্থায় নিজে গাড়ী চালিয়ে এসেছো, তখন আমি মনে মনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছি যে রাস্তায় তুমি দু চারটে লোককে মেরে বসোনি।"

ব্লাড-প্রেসার, স্ট্রোক, এসব কি বলছে ডাক্তার? সুজাত ভ্যাবলার মতো বসে থাকে। তাদের পরিবারের কারোরই তো এরকম কোন রোগ-বালাই নেই। সুজাত নিজেই হাল্কা-পাতলা গড়নের মানুষ, তার উপর সে খুব একটা হাই-ফ্যাট খাবারও খায়না।

ডাক্তার কথা বলে আবার।"তোমাকে এই মুহুর্তে হসপিটালাইজ করা দরকার। তোমার অবস্থা খুবই খারাপ। এই মুহুর্তে যদি তোমার স্ট্রোক হয় তাহলে আমি মোটেও অবাক হবোনা। আমি নার্সকে এ্যাম্বুলেন্স ডাকতে বলেছি।"

সুজাতের মাথা ঝিম ঝিম করতে থাকে। তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে তার তিন বছরের শিশুকন্যাটির মুখ।

হাসপাতালে গিয়ে সুজাতের আরো একগাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাঝখান দিয়ে যেতে হোল। তাতে ধরা পড়লো যে সুজাতের আসল সমস্যা হচ্ছে যে তার দুটো কিডনীই একদম শেষ। তাদের কাজ না করার কারণেই সুজাতের রক্ত নিয়মিত পরিষ্কার হচ্ছে না। এবং সে কারণেই তার ব্লাড-প্রেসার এইরকম আশংকাজনক রকম বেশী।

তাহলে এখন চিকিৎসা কি? পার্মানেন্ট চিকিৎসা হচ্ছে কিডনী ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট, আর যতদিন সেটা না হয় ততদিন পর্যন্ত কিডনী ডায়ালিসিস।

এইপর্যন্ত বলে সুজাত একটু ম্লান হাসলো। আমার ততক্ষণে খাওয়া মাথায় উঠেছে। এসব কি বলছে সুজাত? এত অল্পবয়সে কিডনী নষ্ট হয়ে গেল ছেলেটির?

সুজাত মাথা নীচু করে একটি চামচ নিয়ে আনমনে নাড়াচাড়া করে। "এখন আমাকে সপ্তাহে দু দিন যেতে হয় ডায়ালিসিস করাতে। প্রতিবার সময় লাগে চার ঘন্টা করে। সপ্তাহে আটটি ঘন্টা আমি ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকি চুপ করে। ভাবি হোয়াই মী? খাওয়া-দাওয়ার একগাদা রেস্ট্রিকশান, মাঝে মাঝে বড় অসহ্য লাগে। আমার সারাটা জীবনই বোধহয় এভাবেই কাটবে।"
"কেন? কিডনী ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করলে তো আর ডায়ালিসিস করতে হবে না।"
"কিডনী ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করার জন্য অনেক দিন দেরী করতে হয়। দশ-পনেরো বছর। আমার এই অবস্থায় অতখানি সময় আমি পাবো কিনা জানিনা।"

এ কথার কোন জবাব হয়না। আমি চুপ করে থাকি।

সুজাত এবারে একটু হাসে। "দেখেছো-আমি কি রকম গোটা পরিবেশটা বিষন্ন করে দিলাম। এই জন্যেই ওই সব কিছু বলিনি তোমাকে কোনদিন। ভাগ্যকে মানতে তো হবেই আমাদের সবার। তাওতো ভাল যে আমি আমেরিকাতে আছি, যদি ইন্ডিয়াতে থাকতাম তাহলে বোধহয় এতদিনে মারাই যেতাম। ডায়ালিসিস করার অত পয়সা কোথায় পেতাম আমি?"

হয়তো বা তাই।

"আমি খুব একটা কমপ্লেইন করিনা এ নিয়ে। শুধু একটা জিনিস খুউব খারাপ লাগে। ইন্ডিয়াতে আর কোনদিন বোধহয় যেতে পারবো না আমি। ওখানে ডায়ালিসিস সেন্টারগুলোর যা অবস্থা তাতে দুদিনেই ইনফেকশন হয়ে মারা যাবো। বাবা-মা, ছোট ভাই-বোনদেরকে দেখিনি বহুদিন। ব্যাপারটা কেমন না? একটা অসুখের জন্য আমি বোধহয় চিরকালের মতো আমার ফ্যামিলি থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। আমার জন্যে সালমাও যেতে পারছেনা। সে আমাকে কিছু বলেনা, কিন্তু আমিতো বুঝি।"

সেই সন্ধ্যের পর সুজাতের সাথে আমার আর দেখা হয়নি। তারপর কেটে গেছে আরো অনেকগুলো বছর। আমি এবং সে দুজনেই কাজের জায়গা বদলেছি কয়েকবার। মাঝেসাঝে শুধু তার সাথে ফোনে কথা হোত। আমি বা সে কেউই সুজাতের শারিরীক অবস্থা নিয়ে কথা বলিনা। দুজনেই বুঝি।

শুধু একবার সে বলেছিল যে তার শারীরিক অবস্থা আরো একটু খারাপ হয়েছে। এখন তাকে সপ্তাহে তিন দিন যেতে হয় ডায়ালিসিস করানোর জন্যে।

এমনিই চলছিল। একদিন সন্ধ্যেবেলা ফোন এল। নাম্বার দেখে বুঝলাম সুজাতের বাড়ীর ফোন নাম্বার। ভয়ে ভয়ে ফোন তুলি।
"হ্যালো।"
"সুজাত বলছি।" আমার বুক থেকে একটি বড় ভার যেন নামে।
"কি খবর তোমার? অনেকদিন কথা হয়নি।"
"আজই বাসায় ফিরলাম হাসপাতাল থেকে।"
"সে কি? হাসপাতালে কেন? সালমার শরীর ভালতো?"
"আমার কিডনী ট্র্যান্সপ্ল্যান্টটা অবশেষে হোল এ মাসে। মনে হচ্ছে সাকসেসফুল। টিস্যু রিজেকশনের প্রাথমিক ভয়টা কেটে গেছে।"
"দ্যাটস সাচ আ গুড নিউজ, সুজাত।" আমি জোরে চেঁচিয়ে বলি।
ওপাশ থেকে সুজাতও হাসে। "জানতাম তুমি খুব খুশি হবে খবরটা পেয়ে।"
"আমার খুব ভাল লাগছে। তারপর এখন কি? সেলিব্রেশান কি ভাবে করবে?"
"আমি একটু আগে টিকিট কেটেছি। দেশে যাবার টিকিট। আমার মা আমার জন্যে পথ চেয়ে বসে আছে। তাকে আমি কতবছর দেখিনি।"

এ কথায় কেন যেন আমার চোখে জল আসে। আহা-ঈশ্বর তুমি তাড়াতাড়ি ছেলেটিকে তার মায়ের কাছে যেতে দাও। আমি যেন কল্পনায় দেখতে পাই দৃশ্যটি। সুজাতকে বুকে জড়িয়ে তার মা কাঁদছেন। সুজাত হাসছে, কিন্তু তার চোখ দিয়ে অবিরল পানি পড়ছে। সে কিছু বলছে না। চোখের পানির চেয়ে বড় ভাষা আর কিইবা হতে পারে?

(এরপর নতুন পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১:১৮
১৪টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×