আজ আর রবিনের গল্প নয় । (কারণ, রবিন অলরেডি আমাকে অনেক বিপদে ফেলে দিয়েছে
একজন প্রিয় মানুষ অসুস্থ শুনে তাকে দেখতে যাবার অভিপ্রায়ে আমার এ যাত্রা । গিয়েছিলাম ধানমন্ডিতে । যাবার বেলায় তেমন একটা অসুবিধা না হলেও আসবার সময় বাঁধল বিপত্তি
যাই হোক, 'মালঞ্চ' নামের একটা বাস আসছে দেখেই আমি ঝটপট একটা টিকেট কাটলাম । ভেবেছিলাম সাইন্সল্যাব পর্যন্ত যাব । তাই টিকেটও কাটলাম সাইন্সল্যাবের । ভাড়া নিল ৮ টাকা । কিন্তু বাসের গায়ে শাহবাগ লেখা দেখে মাথায় একটা দুষ্টুবুদ্ধি চাপল
শুক্রবারের দিন । ছুটির দিন । রাস্তা-ঘাটে জ্যাম হবার কথা ছিল না । কিন্তু বিধি-বাম । সাইন্সল্যাবের কাছে আসতেই বুঝলাম, এখন ছুটিরদিনেও জ্যাম হওয়া খুব স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে
১ম ব্যক্তি : " আমগো দ্যাশ ক্যামনে উন্নতি করবো কন মিয়াবাই? সয়ালবেলা দুই গন্ডা যায় জ্যামে আর রাইতের বেলা যায় দুই গন্ডা । মোডমাড চাইর গন্ডা । ডাকা শওরে এহন মোড দুই কোডি মাইনষের বাস।
তাইলে ডেলি হিসাবে আড কোডি গন্ডা টাইম লস অয় আমগো । বিদ্যাশ হইলে মাইনষে হাগল হইয়া যাইত ।"
২য় ব্যক্তি : "হে হে ... আমরা তো পাগলই, তাই না? কি কন ভাইরা ..."
এমন সময় বাসে বেশ কয়েকজন যাত্রী উঠলেন । তাদের মধ্যে একজন ছিলেন বেশ বয়স্ক একজন ভদ্রলোক । পরনে সাদা পায়জামা, পাঞ্জাবি । মাথার চুলগুলো একদম ধবধবে সাদা । একনজরে দেখে খুবই পরহেজগার ধরনের মনে হল। উনি ঠিক আমার সিটের পাশে এসে দাঁড়িয়ে রইলেন ।
এত ভীড়ের মধ্যে এই রকম একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে যাবেন, আর আমাদের মত তরুণরা বসে বসে আরাম করে যাব!
- বাবা, তোমার গ্রামের বাড়ি কোথায় ?
- জ্বী, খুলনায় ।
- তো কি করা হয় এখানে ?
- জ্বী, পড়াশুনা করি ।
- ওহ...তা বাবা, কোথায় পড় তুমি ?
- জ্বী, বুয়েটে ।
বুয়েটের নাম শুনতেই উনি বেশ খুশি হলেন । বোঝা গেল, হয়ত কোনো বিশেষ কারণেই উনার এই আনন্দ । আমার অনুমান মিথ্যা ছিল না ।
- বেশ বেশ । তা বাবা, কোন সাবজেক্টে পড়ো ?
- জ্বী, কম্পিউটার সায়েন্সে ।
- আমার বড় ছেলেটাও বুয়েট থেকে পাশ । এখন আমেরিকায় আছে ।
- জ্বী, উনি কোন সাবজেক্টে পড়তেন?
- মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং- এ ।
এরপর প্রায় একনাগাড়ে উনি বলে চললেন উনার অনেক আশা-হতাশার কথা আর আমি শুধু শুনতে লাগলাম। বুয়েট, মেডিক্যাল -এর ছাত্রছাত্রীদের কাছে আসলেই সবার প্রত্যাশা অনেক বেশি - এ কথা আগেও বহুবার শুনেছি, তবে চাক্ষুস দেখার বা শোনার অভিজ্ঞতা হয়নি মোটেই । আজ হল । আমি শুনছিলাম আর ভাবছিলাম কি দিতে পারলাম এই দেশটাকে আর দেশের মানুষকে । শুধুই তো দিনরাত সেই ক্যারিয়ার ভাবনা । উনার সেই কথাগুলো এখনো কানে বাজছে , "বাবা, তোমরাই আমাদের গর্ব । তোমরাই সব । তোমরাই পারো এই দেশটাকে বদলে দিতে ..."
এসব ভাবতে ভাবতে আর শুনতে শুনতে কখন যে কাঁটাবনের কাছে এসে পড়েছি খেয়ালই করিনি । চাচার কাছ থেকে দোয়া চেয়ে আর বিদায় নিয়ে নেমে পড়লাম বাস থেকে । শাহবাগ পর্যন্ত হেঁটেই আসলাম । পথে শুধু সেই কথাগুলোই বারবার ভাবছিলাম । আমাদের নিয়ে উনাদের এত আশা, আর আমরাই কি-না সুযোগ বুঝে বাসের ভাড়া ফাঁকি দিই । ছিঃ ...এত নিচে নেমে গেছি আমরা । নিজের উপর খুব রাগ লাগছিল আমার ।
রাতের বেলা শাহবাগে রিকশা পাওয়াই যে দায় হয়ে পড়েছে কে তা জানত । বিশেষ করে পলাশীর দিকে তো কেউ আসতেই চায় না । ভাড়া চাওয়া তো বহুদূরের কথা । যাই হোক, বহু কষ্টে একটা রিকশা পেলাম । কিন্তু মুশকিল হল, রিকশা চাপতেই পাশ থেকে একজন বলে উঠল, "ভাই, তুমিও কি বুয়েট যাবে? আমাকে নেবে সাথে? আমি তিতুমীর হলে যাবো ।" আমি কিছুটা ভয় পেলাম । ছিনতাইকারী টাইপের নয় তো
ভয়ে ভয়ে কথা বলা শুরু করলাম । জানতে পারলাম, উনি সিভিল '০৪ । সবেমাত্র পাশ করে এখন চাকরির জন্য দরখাস্ত করছেন । পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো । ৭-৮ টা জায়গায় সি.ভি ড্রপ করে এখন পর্যন্ত ১ জায়গা হতে কল পেয়েছেন । দেশের বর্তমান জব-মার্কেটের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বললেন, "আসলে বাইরে থেকে সিভিলের অবস্থা ভালো বললেও ভালো জব পাওয়া এখন বেশ কঠিন"। আমি সি.এস.ই জেনে বললেন সি.এস.ই-দের তো এখন খুব ভালো অবস্থা । তবে এখন থেকেই ক্যারিয়ারের ব্যাপারে সিরিয়াস হতে বললেন । কথা বলতে বলতে আমাদের রিকশা এসে তিতুমীর হলের গেটের সামনে এসে দাঁড়াল । আমি ভাড়া দিতে নাছোড়বান্দা ছিলাম । কিন্তু বড়ভাই হাত চেপে ধরলেন, বললেন, "আমি থাকতে তুমি কেন ভাড়া দেবে?" শুনে ভালো লাগল । সিনিয়ররা জুনিয়ররা একসাথে থাকলে সিনিয়র ভাইরাই সব স্পন্সর
আরো অনেক কিছু লেখার ইচ্ছে ছিল । কিন্তু পারলাম না । লেখাটা বেশি ভালো হয়নি । তবু চেষ্টা করলাম । সবাই ভালো থাকবেন । এই শুভকামনায় শেষ করছি ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



